কোয়ান্টাম তত্ত্বের সূচনা, বিব্রত ম্যাক্স প্লাঙ্ক (এবং কোয়ান্টামকে বোঝার চেষ্টা)

লেখাটি বিভাগে প্রকাশিত

 


স্বপ্নের কথা

এক স্বপ্নের মাঝে গাড়ি চালাচ্ছিলাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম, গাড়ির স্পিডের আচরণ কেমন যেন অন্যরকম। এক্সেলেটরে চাপ দিলে স্পিড ক্রমাগত বাড়ছে না। বরঙ হঠাৎ হঠাৎ ৫/ ১০ করে বাড়ছে। উদ্বেগের বিষয়। কোয়ান্টাম জগতে চলে এলাম নাকি?

 

ভূমিকার কথা
লোহাকে তাপ দিলে তা গরম হয়ে লাল রঙের আলো ছড়ায়। কামারশালায় আমাদের পরিচিত অভিজ্ঞতা। তাপমাত্রা বাড়াতে বাড়াতে তা একসময় সাদা আলো ছড়ায়। কামারশালাতে যারা যান নি – তারা তো ইলেক্ট্রিক বাল্ব দেখেছেন নিশ্চই। এই জাদুর প্রদীপে একই ঘটনা ঘটে – টমাস আলভা এডিসনের বিখ্যাত আবিষ্কার। এখানে বিদ্যুত নামের এক দৈত্য ধাতুর কুন্ডলীর (ট্যাঙস্টেন ফিলামেন্ট) মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় এতটাই উত্তপ্ত হয় যে তা আলো ছড়ায়।

প্লাঙ্কের কথা

1900 সালের কথা। বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্লাঙ্ক কাজ করছিলেন উত্তপ্ত বস্তু নিয়ে। উত্তপ্ত কোন বস্তু হতে বিভিন্ন রঙের অর্থাৎ বিভিন্ন কম্পনের যে আলো (বিকিরণ) বের হয়, তার তীব্রতা নির্ণয়ের একটা সমীকরণ তিনি বের করলেন। এবং বিখ্যাত হয়ে গেলেন – এর জন্য নোবেল পুরষ্কার পেয়ে গেলেন 1917 সালে। আমরা সে সব সমীকরণে যাবো না, কিন্ত ঐ সমীকরণ আসলে কি বলে তা আমরা জানতে পারি। তার আগে কিছু সাধারণ ধারণা আমরা দেখতে পারি।

ঘটনা ১) ঠান্ডা বরফের মাঝেও পানির অণু থাকে, আবার তরল পানিতেও একই অণু থাকে। দুই অবস্থাতে অণু তো একই। তাহলে একবার বরফ কঠিন, অন্যবার তরল পানি হওয়ার রহস্যটা কি? আসলে যে কোন অণু সবসময়ই কাঁপে। যখন আমরা তাপ দেই, এই কম্পন বেড়ে যায়। এই কম্পন বেড়ে যায় বলেই বরফের ভেতরের পানির অণুগুলো ছোটাছুটি শুরু করে – বরফ গলে যায়।

ঘটনা 2) একেক বস্তুর ক্ষেত্রে কোন নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোন অণুর কম্পন নির্দিষ্ট।
এ আবার কোন কথা?
একটা বেশ গরম কোন বস্তুর হয়তো আলো ছড়াচ্ছে। তারমানে তার ভেতরের অণুগুলোর একটা কম্পনাঙ্ক আছে। প্ল্যাঙ্ক এ ধরণের ঘটনা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখলেন যে একটা অবাক করা ধারণাকে স্বীকার করে নিতে হচ্ছে। তা হলো, কোন অণুর কেবল নির্দিষ্ট কিছু কম্পণশক্তি থাকতে পারে। এ শক্তিগুলোর মাঝামাঝি কোন শক্তি কখনোই সে ধারণ করতে পারবে না। বিষয়টা অবাক করা কেন? ধরেন আপনি ইন্টারনেট হতে কোন ফাইল ডাউনলোড করছেন। যদি আপনি দেখেন যে, ডাউনলোড স্পিড কেবল 5, 10, 15, 20, 25 কেবিপিএস ইত্যাদি  কিন্তু এদের মধ্যখানে কোন মান যেমন 7, 12.5 ইত্যাদি হচ্ছে না তাহলে কি আপনি অবাক হতেন না? বলতেন না, আরে এটা আবার কি? স্পিড লাফায় লাফায় বাড়ছে কমছে কেন? স্পিড তো নিরবচ্ছিন্ন হওয়ার কথা। তাহলে কি স্পিড খন্ডায়িত?

বিষয়টা হয়তো সহজে বোঝা যাবে তখন; যদি কেউ যদি বলে যে তার বয়স হলো খন্ডিত। তার বয়স নিরবচ্ছিন্ন করে বাড়ে না। হঠাৎ হঠাৎ দেখা যায় তার বয়স ৫ বছর ১০ বছর করে বাড়ছে। তাহলে তার বয়সকে বলতে হবে কোয়ান্টাম বয়স!

তো, ম্যাক্স প্লাঙ্কও খুব অবাক হলেন ব্যাপারটাতে। তিনি দেখলেন, কোন অণুর এই নির্দিষ্ট শক্তি হলো hv (টীকা 1) এর পূর্ণ গুণিতক। এ শক্তি হতে পারে 2hv, 3hv, 4hv কিন্তু কখনোই 3/2hv, 2.5hv ইত্যাদি ভগ্নাংশ কিংবা দশমিক নয়।

প্লাঙ্ক শুধু অবাক হন নি। তিনি অত্যন্ত বিব্রতও ছিলেন এ ঘটনায়। কারণ শক্তির পূর্ণ গুণিতক হলে তো আর শক্তি নিরবিচ্ছিন্ন থাকে না। শক্তি হয়ে যায় বিচ্ছিন্ন। এটাতো আমরা সাধারণ জাগতিক জীবনের সাথে খাপ খায় না। আমরা দেখি জলের ধারা বিচ্ছিন্ন। একটা গাড়ি যে কোন স্পিড অর্জন করছে নিরবচ্ছিন্নভাবে। আমাদের ডাউনলোড স্পীডও পাচ্ছি নিরবিচ্ছিন্ন – বাড়ছে কমছে, যে কোনমান অর্জন করছে। নিরবচ্ছিন্নর উল্টো ধারণা হলো খন্ডায়ন, বা কোয়ান্টানাইজেশন। অণুর ক্ষেত্রে শক্তির যে এই সুনির্দিষ্ট কিছু বৈধ মান থাকা হলো শক্তির কোয়ান্টানাইজেশন। এই ধারণাটা নিয়ৈ ম্যাক্স প্লাঙ্ক এতটাই বিব্রত ছিলেন যে ব্যার্থ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন এই ধারণাটিকে তার তত্ত্ব হতে সরানোর! কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল এবং গণিত তাকে এই কাজটি করতে দেয় নি।
(অতীব দুঃখের বিষয় প্লাঙ্ক তার এই তত্ত্বের জন্যই কি না নোবেল পেলেন!)

পরবর্তীতে আরেক মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইন প্লাঙ্কের এই কাজকে আরো বিকশিত করেন।

টীকা ১
h প্লাঙ্কের ধ্রুবক
v আসলে ভি নয়, গ্রীক মিউ, যাকে দিয়ে কম্পনাঙ্ক প্রকাশ করা হচ্ছে।

লেখাটি 774-বার পড়া হয়েছে।

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য লেখা

  • আদতেই কি ফিরে এসেছে ডায়ার নেকড়ে?

    আদতেই কি ফিরে এসেছে ডায়ার নেকড়ে?

  • ভুল নিদানে সন্তান হত্যার দায়ঃ একটি করুণ কেস স্টাডি

    ভুল নিদানে সন্তান হত্যার দায়ঃ একটি করুণ কেস স্টাডি

  • কমোডো ড্রাগন: উপকথার ড্রাগনদের পৃথিবীতে বিচরণ!

    কমোডো ড্রাগন: উপকথার ড্রাগনদের পৃথিবীতে বিচরণ!

  • মহাবিশ্বের জ্যামিতি ও অন্তিম পরিণতি

    মহাবিশ্বের জ্যামিতি ও অন্তিম পরিণতি

  • খাদ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি: কতটা ভয়ংকর?

    খাদ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি: কতটা ভয়ংকর?

  • অ্যান্ট-ম্যানের ‘মিনিচুরাইজেশন প্রযুক্তি’ কতদূর (পর্ব-২)

    অ্যান্ট-ম্যানের ‘মিনিচুরাইজেশন প্রযুক্তি’ কতদূর (পর্ব-২)


নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান? হোস্টিং ও ডোমেইন কেনার জন্য Hostinger ব্যবহার করুন ৭৫% পর্যন্ত ছাড়ে।

আলোচনা

Response

  1. Valo legeche, tobe aro jante chai… 🙂

Leave a Reply

ই-মেইল নিউজলেটার

বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবর সম্পর্কে আপডেট পেতে চান?

আমরা প্রতি মাসে ইমেইল নিউজলেটার পাঠাবো, মাসে একবার। নিউজলেটারে সাম্প্রতিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবরাখবর নিয়ে বিশ্লেষণ থাকবে। এছাড়া বিজ্ঞান ব্লগে কি কি লেখা আসলো, কি কি কর্মযজ্ঞ চলছে, সেটার খবরও থাকবে।







Loading