food plate dawn glass

কৃত্রিম ডিএনএতে বিবর্তন পর্যবেক্ষণ: বিবর্তন প্রতিষ্ঠায় আরো একধাপ

লেখাটি , বিভাগে প্রকাশিত

বিবর্তন প্রতিষ্ঠার পথে আরো একধাপ এগিয়ে গেলো বিজ্ঞান। প্রথমবারের মত বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে বিবর্তনের রসায়ন পর্যায়ের পরীক্ষা চালিয়েছেন এবং আবিষ্কার করেছেন যে, রাসায়নিক ভাবেই বিবর্তন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এই গবেষণার মাধ্যমে বোঝা গেলো মহাবিশ্বের অন্যকোথায় প্রাণের বিকাশ ঘটলে সেখানেও স্বাভাবিক রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় প্রাণের বংশবৃদ্ধি এবং বিবর্তন ঘটবে এবং তার জন্য পৃথিবীর অনুরূপ ডিএনএ বা আরএনএ-র দরকার হবে না। এই সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি অতিসম্প্রতি ‘সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন ক্যমব্রিজের MRC Laboratory of Molecular Biology এর গবেষক ফিলিপ হলিগার।

DNA এবং RNA হচ্ছে পৃথিবীতে জীবের বংশবিস্তার এবং শারীরবৃত্তীয় কাজের মূল ভিত্তি। জীবের বংশগতীয় যাবতীয় বৈশিষ্ট্য DNA তে কোডের মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করা থাকে। DNA-এর এই কোড RNA এর মাধ্যমে বংশধরের বৈশিষ্ট্যে প্রকাশ পায়। যেকোন জীবের বংশধরের সূচনা হয় একটি মাত্র কোষ থেকে। সেই একটি মাত্র কোষে পিতা-মাতা উভয়ের অর্ধেকটা করে বৈশিষ্ট্য DNA এর মাধ্যমে মাঝে প্রবিষ্ট থাকে। সেই কোষটি ক্রমে বিভাজিত হয়ে একটি থেকে দুটিকোষ, দুটি থেকে চারটি কোষ এভাবে বৃদ্ধি পেতে পেতে একসময় পূর্ণাঙ্গ জীবের সৃষ্টি করে। DNA আসলে একটি বিশালাকার অনু এবং এই অনুটির গঠন মইয়ের মত। এই মইটি লম্বায় দুই তিন মিটার পর্যন্ত হতে পারে। তবে এই মইয়ের আকারটি সরলভাবে থাকে না, থাকে পাকানো অবস্থায়। নিচের ছবিটি এবং দেড় মিনিটের ভিডিওটি দেখলে ব্যাপারটি পরিষ্কার হবে।

মইয়ের ধাপগুলো তৈরি হয় কিছু নাইট্রোজেন বেজ (nitrogen base: এক ধরনের ক্ষারীয় পদার্থ) দ্বারা। একটি ধাপ তৈরি করতে মইয়ের কাঠামোর দুই পাশ থেকে দুটি ক্ষারীয় গ্রুপ এসে যুক্ত হয়। এই ক্ষারীয় গ্রুপগুলোর কম্বিনেশনই বৈশিষ্ট্যের কোড হিসেবে কাজ করে। আর মইয়ের দুইপাশের কাঠামো তৈরি হয় রাইবোজ (RNA) বা ডিঅক্সিরাইবোজ(DNA) নামক চিনির অনু দিয়ে। এই চিনির অনুগুলো ফসফেট গ্রুপের মাধ্যমে পরপর যুক্ত হয়ে মইয়ের দুপাশের কাঠামো তৈরি করে। নিচের ছবিটি দ্রষ্টব্য।

RNA | Podcast | Chemistry World

এখন, এই গবেষকবৃন্দ যা করেছেন তা হল তাঁরা চিনির অনুগুলোকে বদলে দিয়েছেন। এই কাজে তাঁরা ৬টি ভিন্ন ধরনের চিনির অনু ব্যবহার করেছেন এবং এই পরিবর্তিত DNA এর নাম দিয়েছেন XNA (Xenonucleic acid)।

Xeno Nucleic Acids (XNAs) and their structures. | Download Scientific  Diagram

এর পরের ধাপটি অত্যন্ত চমকপ্রদ। এই কৃত্রিম বা পরিবর্তিত নিউক্লিক এসিডটিকে প্রাকৃতিক পরিবেশে ছেড়ে দিয়ে তাঁরা দেখতে পেলেন কৃত্রিম XNA টি কোষস্থিত অন্য DNA ও RNA এর সাথে স্বাভাবিক interaction ঘটাচ্ছে। শুধু তাই নয়, এর পরপরই গবেষকবৃন্দ একটি অনন্যসাধারন ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেন। শুরুর দিকে যদিও কৃত্রিম XNA টির সক্রিয়তা কম থাকে কিন্তু বংশবিস্তারের সাথে সাথে এর সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। এই সক্রিয়তা বৃদ্ধির কারন হল বিবর্তন। গবেষকবৃন্দ পর্যবেক্ষণ করেন যে, অনুলিপির মাধ্যমে সংখ্যাবৃদ্ধির সাথে সাথে কৃত্রিম XNA টি বিবর্তিত হতে থাকে যা তাকে কোষস্থিত অন্যান্য উপাদানের সাথে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে। এই ঘটনাটি প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘটা বিবর্তনের অনুরূপ।

এই গবেষণাটিকে টিকে চিকিৎসা শাস্ত্রে একটি গুরুত্বপূর্ন অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর মাধ্যমে রোগ নিরাময় আরো সহজ সাধ্য হবে বলে গবেষকগণ মনে করছেন। সেই সাথে বর্হি:জগতে প্রাণের উদ্ভব ও বিকাশের সম্ভবনাও এর মাধ্যমে আরো একটু বেড়ে গেল।







বিজ্ঞান নিউজলেটার

যুক্ত হোন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞান নিউজলেটারে!
আমরা সাপ্তাহিক ইমেইল নিউজলেটার পাঠাবো। 
এ নিউজলেটারে বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবরাখবর থাকবে। থাকবে নতুন লেখার খবরও।


Loading

লেখাটি 389-বার পড়া হয়েছে।

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য লেখা

  • ডাইনোসর বিলুপ্ত না হলে কেমন হতো পৃথিবীর ভবিষ্যৎ

    ডাইনোসর বিলুপ্ত না হলে কেমন হতো পৃথিবীর ভবিষ্যৎ

  • মুরগির মাংসে শনাক্ত ইশেরিশিয়া আলবার্টিঃ  অজান্তেই বাড়ছে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের ঝুঁকি

    মুরগির মাংসে শনাক্ত ইশেরিশিয়া আলবার্টিঃ অজান্তেই বাড়ছে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের ঝুঁকি

  • আদতেই কি ফিরে এসেছে ডায়ার নেকড়ে?

    আদতেই কি ফিরে এসেছে ডায়ার নেকড়ে?

  • ভুল নিদানে সন্তান হত্যার দায়ঃ একটি করুণ কেস স্টাডি

    ভুল নিদানে সন্তান হত্যার দায়ঃ একটি করুণ কেস স্টাডি

  • কমোডো ড্রাগন: উপকথার ড্রাগনদের পৃথিবীতে বিচরণ!

    কমোডো ড্রাগন: উপকথার ড্রাগনদের পৃথিবীতে বিচরণ!

  • মহাবিশ্বের জ্যামিতি ও অন্তিম পরিণতি

    মহাবিশ্বের জ্যামিতি ও অন্তিম পরিণতি


নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান? হোস্টিং ও ডোমেইন কেনার জন্য Hostinger ব্যবহার করুন ৭৫% পর্যন্ত ছাড়ে।

আলোচনা

Responses

  1. Very interesting post…..and nice blog.

  2. ভিন্ন রসায়নও স্ব-প্রতিলিপিক্ষম অণু তৈরি করতে পারে এই পরীক্ষাটা তারই প্রমাণ।

    1. পুরোপুরি ভিন্ন রসায়নও বলা যায় না, তবে তারপরও আশাব্যাঞ্জক। অন্তত এটা বোঝা যাচ্ছে যে,কিছুটা ভিন্ন লাইনেও প্রাণের বিকাশ হতে পারে।

Leave a Reply