তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান কি?

লেখাটি বিভাগে প্রকাশিত

স্যার আইজ্যাক নিউটনকে মনে আছে? তাঁর সময়ে ইউরোপের বড় বড় গির্জার মতো অসাধারণ স্থাপত্য নির্মাণের জন্য মানুষ বীজগণিত এবং জ্যামিতির ব্যবহার জানতো। গতিহীন-বেগহীন নড়াচড়া করে না এমন বস্তুদের নিয়ে কাজ করার জন্য বীজগণিত আর জ্যামিতি ভালো। কিন্তু যখন কোন গতিশীল, পড়ন্ত বস্তু (গ্রহ, চন্দ্র কিংবা কামানের গোলা) নিয়ে কাজ করতে হলে দরকার অন্য কিছুর। তখন নিউটন (এবং লাইবনিজ) আবিষ্কার করলেন ক্যালকুলাস। তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানীরা প্রকৃতির বিভিন্ন বিষয়কে ব্যাখ্যা করার গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন গণিতকে। নিউটনকে বলা হয় বিশ্বের প্রথমন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী। তাঁর সময়ে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানকে বলা হতো “প্রাকৃতিক দর্শন”।

বীজগণিত আর জ্যামিতি আকার মাপার জন্য ভালো …

… কিন্তু সময়ের সাথে বস্তুর গতি বুঝতে হলে চাই ক্যালকুলাস।

সবসময়েই সূর্য, গ্রহ, চাঁদ আর তারারা মানুষের কৌতুহল আকর্ষণ করে আসছে। একসময় বিজ্ঞানীদের কাছে এই মহাকাশের বস্তুগুলোর চলাচল অধরা রহস্যময়ী লাগতো। নিউটনের গতিসূত্র আমরা সবাই নবম-দশম শ্রেণীতে পড়ে থাকি। তাঁর গতিসূত্রের সাথে ক্যালকুলাস যেন মণিকাঞ্চন যোগ হয়ে উঠে। তিনি মহাকর্ষকে চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-তারার চলাচলের পেছনে শক্তি হিসেবে শনাক্ত করেন। দাঁড় করান গাণিতিক ব্যাখ্যা।  আজকের দিনেও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানীরা জানা গণিতের সীমারেখায় দাঁড়িয়ে কাজ করেন। অনেক সময় তাঁরা প্রয়োজন অনুসারে নতুন গণিত আবিষ্কারও করেন – নিউটনের মতো।

নিউটন একই সাথে তাত্ত্বিক এবং পরীক্ষা-নির্ভর বিজ্ঞানী ছিলেন। প্রকৃতি কিভাবে কাজ করে তা জানার জন্য তিনি টানা দীর্ঘ সময় পার করতেন নিজ স্বাস্থের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করেই।  নিউটনের গতিসূত্র আকাশ থেকে পড়া কোন নিয়ম নয়।  প্রকৃতিতে গতিশীল বস্তু কিভাবে কাজ করে – সেই পর্যবেক্ষণের ফলাফলকে নিউটন গণিতের সাহায্যে প্রকাশ করেছেন তার গতিসূত্রে।  তাঁর সময়ে পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণের সাথে সাথে তাত্ত্বিক গবেষণা একসাথে করা সম্ভব ছিলো। বর্তমানে পদার্থবিজ্ঞান তাত্ত্বিক এবং পরীক্ষাভিত্তিক – এই দুই ভাগে বিভক্ত। তাত্ত্বিকেরা প্রকৃতির এমন সব বিষয়কে গণিতের আলোকে ব্যাখ্যা করতে চান যা কিনা বর্তমানের প্রযুক্তিতে পর্যবেক্ষন কিংবা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব না। আজ যেসব তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানীরা জীবিত আছেন, তারা হয়তো তত্ত্বের প্রমাণ দেখে যেতে পারবেন না।  তাঁরা জানেন, প্রকৃতিকে শুধু গণিতের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করার কাজটা কতটা অনিশ্চিত।

লেখাটি 841-বার পড়া হয়েছে।


আলোচনা

Response

  1. সৈয়দ মনজুর মোর্শেদ Avatar
    সৈয়দ মনজুর মোর্শেদ

    ভালো লেগেছে। আরও লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

Leave a Reply

ই-মেইলে গ্রাহক হয়ে যান

আপনার ই-মেইলে চলে যাবে নতুন প্রকাশিত লেখার খবর। দৈনিকের বদলে সাপ্তাহিক বা মাসিক ডাইজেস্ট হিসেবেও পরিবর্তন করতে পারেন সাবস্ক্রাইবের পর ।

Join 910 other subscribers