মানুষ হিসেবে জন্ম হয়েছে আপনার। আপনি জন্মসুত্রে মানুষ ‘The Homo sapiens’। আচ্ছা এক মুহূর্ত ভাবুন তো আপনি মানুষ নন। আপনি হচ্ছেন কোন এক অণুজীব। হয়তো ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক কিংবা ভাইরাস জাতের কেউ। কেমন হত আপনার জীবন তখন? চলেন একটু কল্পনা করে দেখি তো!
আপনি হয়তো তখন কোন মানুষের অন্ত্রের ভিতর খাবার ভেঙ্গে হজমে সাহায্য করছেন, ভিটামিন তৈরি করে দিচ্ছেন। (যদি ব্যাকটেরিয়া হতেন) লোকটা হয়তো মনের আনন্দে মুরগির রান চিবুচ্ছে! সে হয়তো জানেই না আপনার কথা! রাগে দুঃখে অপমানে হয়তো আপনি গাইতেন ‘ভালোবাসা দিলাম শুধু, ভালোবাসা পেলাম না’। একইভাবে আপনি মাটিতে নাইট্রোজেন যোগাচ্ছেন যাতে মানুষ ভালো শাক সবজি পায়, মাটি থেকে নাইট্রোজেন বাতাসে ছেড়ে দিয়ে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করছেন। কিন্তু অথর্ব আর গর্দভ মানব রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করে আপনাকেই মেরে ফেলছে। আহ! এত কষ্ট! এই বিশ্বাসঘাতকতায় আপনার প্রাণ তখন হয়তো বিষিয়ে উঠত।
আপনাদের মধ্যে বিদ্রোহীরা তখন স্বজাতির প্রতি মানবের এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াত!( হতে পারে ব্যাকটেরিয়া কিংবা ভাইরাস) শুরু হত মানুষের বিরুদ্ধে গোপন ষড়যন্ত্র! খাবার, পানি, বায়ু নানা ভাবে মানুষসহ অন্যান্য পশুর শরীরে ঢুকে তাদের নাজেহাল করে ছাড়তেন আপনারা! অবশেষে যদি কেউ মারা যেত তখন নগ্ন উল্লাসে ফেটে পড়তেন। তবে মানুষও তো এত সহজ জিনিস না! তার শরীরে আছে নানা সৈন্য-সামন্ত(এন্টিবডি,শ্বেতকনিকা) যারা আপনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করত। রক্তক্ষয়ী সে যুদ্ধে আপনাদের অনেকেই নিহত হতেন! সে শোকে হয়তো তখন মর্সিয়া সঙ্গীত বাজত! কিন্তু যুদ্ধে জয়ী হলে ঠিকই মানব দেহের বারটা বাজিয়ে ছাড়তেন!
কিন্তু কথায় বলে না ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’। তাই মাঝে মাঝে আপনাদের( অণুজীবদের) ভিতর লেগে যাবে মারামারি হানাহানি। আপনাদের অনেক ব্যাকটেরিয়া ভাইকে হত্যা করবে মীরজাফর ভাইরাস! তারা ব্যাকটেরিয়ার শরীরকে ছিন্নভিন্ন করে সে ঘরকেই বানাবে নিজের ‘আতুর ঘর’( ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার দেহে প্রবেশ করে তা বংশবৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করে। অবশেষে তার দেহ ভেঙ্গে বেরিয়ে আসে) । সেখানে জন্ম দেবে আরও ভাইরাসের। কি সাংঘাতিক ব্যাপার!
তবে হিংসা ভালোবাসা আর বিশ্বাসঘাতকতায় ভরপুর আপনাদের সেই অণুজীব জগতটি কিন্তু দারুণ আশ্চর্যজনক! মানুষ আপনাদের এত জানতে চাচ্ছে তবুও আপনারা মুখ লুকিয়ে আছেন কেন? এখন একটু ধরা দিন না মানুষদের কাছে!
আরে ভুলেই গিয়েছি আপনি তো আবার মানুষ ‘The Homo Sapiens’ না হলে এতক্ষণ আমার লেখা পড়লেন কিভাবে!!
(রাতে ঘুম আসছিলো না তাই মজা করতে লেখা শুরু করেছিলাম। কিছুক্ষণ পর দেখি লেখা বেশ বড় হয়ে গিয়েছে। বেশ মজা পেলাম! সেই মজাটা আপনাদের সাথে একটু শেয়ার করলাম আর কি! )
Leave a Reply