কোখের পর থেকে …
সময়কাল ১৮৯২। নতুন শতাব্দীর দাঁড়প্রান্তে দাঁড়িয়ে পৃথিবীকে নতুন উপহার দিলেন রাশান বিজ্ঞানী দিমিত্রি আইভানোভস্কি। সত্যি বলতে এক নতুন অণুজীবি দুনিয়াই উপহার দিয়ে বসলেন তিনি।আবিষ্কৃত অণুজীবটিকে আমরা এখন ভাইরাস নামে জানি। তবে মজার ব্যাপার হল, আইভানোভস্কি নিজেই জানতেন না যে তিনি ভাইরাস আবিষ্কার করেছেন। মোজাইক রোগের কারণ জানতে এক গবেষণায় আক্রান্ত তামাক পাতার রসকে তিনি পরিস্রাবণ করেন চেম্বারল্যান্ড ফিল্টারের মধ্য দিয়ে যার ভেতর দিয়ে কোন ব্যাক্টেরিয়া পার হতে পারেনা। আইভানোভস্কি যখন দেখলেন সেই পরিস্রুত রস আবার অনাক্রান্ত তামাক পাতায় ঘষলে নতুনভাবে সংক্রমণ ঘটাতে পারে তখন তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন যে সে সময়ের জানাশোনা ব্যাক্টেরিয়ার চেয়ে এই সংক্রমণশীল অণুজীব আরো ক্ষুদ্র আকারের কোন ব্যাক্টেরিয়া। পরবর্তীতে ১৮৯৮ সালে আলাদাভাবে করা এক পরীক্ষায় ওলন্দাজ বিজ্ঞানী মার্টিনাস বেইজারিংকও একই ফলাফল পান। তিনিই সর্বপ্রথম ভাইরাস আলাদা এক ধরণের অণুজীব এমন প্রস্তাব করেন। বেইজারিংক এর কাছ থেকেই আমরা প্রথম জানতে পারি যে ভাইরাসের বংশবৃদ্ধির জন্যে কোষের প্রয়োজন। ১৯৩৫ সালে ওয়েন্ডেল স্ট্যানলি ক্রিস্ট্যালাইজেশান এর মাধ্যমে সর্বপ্রথম টোবাকো মোজাইক ভাইরাস দেখতে পান।এর পর আরো অনেক ভাইরাসই আবিষ্কৃত হয়েছে আর সেই যাত্রা চলছেই।
টোবাকো মোজাইক ভাইরাস
সময়কাল ১৯১৫। প্রথমবারের মত ব্যাক্টেরিয়াকে আক্রমণকারী ভাইরাস আবিষ্কার করেন ইংরেজ ব্যাক্টেরিয়োলজিস্ট ফ্রেডেরিক টোর্ট। পরবর্তিতে আক্রমণকারি এইসব ভাইরাসকে প্রথমবারের মত ‘ব্যাক্টেরিয়োফেইজ’ নাম দেন ফরাসি-কানাডিয়ান বিজ্ঞানী ফেলিক্স ডি’হেরেল।
ফেলিক্স ডি’হেরেল (মাঝে) সর্বপ্রথম ব্ব্যাক্টেরিওফেইজের নামকরণ করেন ।
সময়কাল ১৯২৮। ক্ষতিকর অণুজীবসমাজের উপর আরেকটি ধাক্কা এবং রোগ আর সংক্রমণের উপর মানুষের আরেক দফা বিজয় সূচিত হল এ সময়ে। কাজ করতে করতে আকষ্মিকভাবেই এক অসাধারণ আবিষ্কার করে ফেললেন আলেকজান্ডার ফ্লেমিং। হাসপাতালে কাজের প্রয়োজনে জন্মানো Staphylococcus aureus এর প্লেটে তিনি দেখলেন কিছু ছত্রাক জন্মেছে যার আশে পাশে ঘেঁষার সাহস দেখাচ্ছে না কোন Staph. । ব্যাপারটা ফ্লেমিংকে ভাবিয়ে তুলল। তাই ছত্রাকটিকে নিয়ে বিস্তারিত জানতে তাঁর অফিসের নিচ তলায় ছত্রাক বিশেষজ্ঞ La Touche এর সাহায্য চাইলেন। Touche তাঁকে জানালেন যে ছত্রাকটি পেনিসিলিয়াম। ফ্লেমিং তাই পেনিসিলিয়াম নিঃসৃত ব্যাক্টেরিয়ানাশী পদার্থের নাম দিলেন পেনিসিলিন যা কিনা মানুষের শনাক্ত করতে পারা প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক। পরবর্তিতে ফ্লেমিং এর আবিষ্কৃত পেনিসিলিনকে মানুষের জন্যে ব্যবহার উপযোগি করতে ভূমিকা রাখেন অস্ট্রেলিয়ান বিজ্ঞানী হাওয়ার্ড ফ্লোরি আর জার্মান বিজ্ঞানী আর্নস্ট চেইন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আহত অনেক সৈন্যের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয় পেনিসিলিনের কারণে। ১৯৪৫ সালে এই অসাধারণ কাজের সম্মান হিসেবে তাঁরা নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হন।
১৯২৮ সালেই ব্রিটিশ ব্যাক্টেরিওলজিস্ট ফ্রেডরিক গ্রিফিথের পর্যবেক্ষণের দ্বারা জীবনের গূঢ় রহস্য জানার পথে আরেক বিশাল লাফ দিল বিজ্ঞানসমাজ। নিউমোনিয়ার জীবাণু Streptococcus pneumoniae নিয়ে করা গ্রিফিথের গবেষণা ডি.এন.এ. যে বংশগতির বাহক সে ইঙ্গিত দিল পৃথিবীকে। গ্রিফিথ তাঁর আবিষ্কারের নাম দেন “ট্রান্সফর্মিং প্রিন্সিপাল” যা এভারি, ম্যাক্লিয়ড, ম্যাকার্টির পর্যবেক্ষণে ডিএনএ বলে প্রমাণিত হয় ১৯৪৩ সালে। আলফ্রেড হার্শি আর মার্থা চেইজ এর তেজষ্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহার করে T2 ব্যাক্টেরিয়োফেইজ নিয়ে ১৯৫২ সালে করা যৌথ গবেষণার ফলাফল নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে যে বংশগতি এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে পরিচালিত হওয়ার জন্যে ডি.এন.এ-ই দায়ী। অবশ্য কিছু ভাইরাসের বংশগতি প্রবাহে আর.এন.এ ও দায়ি বলে জানা গেছে পরবর্তীতে। (অসমাপ্ত)
Leave a Reply