এনজাইম কি

লেখাটি বিভাগে প্রকাশিত

বকবক করার জন্যে আপনাদের সামনে আবার চলে এলাম। আসার কারণ কয়েকদিন ধরে একটা বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি। বিষয়টা হল এনজাইম (Enzyme) । প্রশ্ন আসতেই পারে এনজাইম কি? এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে চলুন একটু গল্প করে নিই।

আমরা প্রতিদিন এত এত খাবার খাই। এই সকালে নাস্তা করছি তো দুপুরে মোরগ পোলাও খাচ্ছি। বিকালে আবার চা নাস্তা। তারপর আবার রাতের পেট পূজা। আচ্ছা আমরা যে খাবারগুলো খাচ্ছি এবং অনবরত খেয়েই চলছি খাবারগুলো আসলে যাচ্ছে কোথায়? বলতে পারেন হজম হয়ে যাচ্ছে! কিন্তু কে করছে একাজ বলুন তো? হা ঠিক বলেছেন, এনজাইম! এনজাইম আমাদের খাবারগুলোকে ভেঙ্গে দেহের গ্রহণের উপযোগী করে তুলছে। আমরা সকালে নাস্তা করার পর তা থেকে আমরা শক্তি পাচ্ছি। তারপর আমরা পুরো উদ্যমে দিনের কাজগুলো করছি। এই সকালের খাবার থেকে আমাদের শক্তি জোগানো ও চাহিদা পূরণের কাজটি কিন্তু করছে এনজাইম। তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম এনজাইম খাবারকে দেহের গ্রহণের উপযোগী করে তুলে।

এনজাইমের একটিভ সাইট ও সাবস্ট্রেট বসার খোপ
এনজাইম একটিভ সাইট ও এনজাইম-সাবস্ট্রেট কমপ্লেক্স

গল্প আপাতত বন্ধ করি! এখন ঐ প্রশ্নের উত্তর দিই যা প্রথমে তুলেছিলাম, “এনজাইম কি?”। এনজাইম হলো জৈব অনুঘটক যা কোষীয় বিভিন্ন বিক্রিয়ার গতি বাড়িয়ে দিতে পারে। বেশিরভাগ এনজাইম হল প্রোটিন। আর অল্প কিছু সংখ্যক হল RNA। আমাদের দেহে যেসব বিক্রিয়া হয় তা এনজাইম ছাড়াও ঘটতে পারে কিন্তু তা এত ধীর গতিতে হবে যে তখন মৃত্যু অবধারিত। এনজাইম বিক্রিয়ার গতি লক্ষগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। যা আমাদের বেঁচে থাকার জন্যে অপরিহার্য!

এখন প্রশ্ন আসতে পারে এনজাইম কি এক ধরণের? তাহলে একটা পাল্টা প্রশ্ন করা যেতে পারে যে, আমরা কি একই ধরণের খাবার খাই? উত্তর হল, না! আমরা নানা ধরণের খাবার খাই, যেমন আছে শর্করা, স্নেহ, আমিষ। তাই স্বাভাবিকভাবেই এনজাইমও অনেক ধরণের। এক ধরণের খাবার হজমে একটি এনজাইমই কাজ করে। অন্য ধরণের খাবার সে এনজাইম হজম করতে পারে না। কেন পারে না তা একটু পড়েই বলছি! এর আগে জেনে নিই কোন এনজাইম কোন ধরণের খাদ্য উপাদান ভাঙ্গতে সাহায্য করে। পেপসিন এনজাইম শুধুমাত্র আমাদের পাকস্থলীতে পাওয়া যায় যার কাজ হচ্ছে প্রোটিনকে ভাঙ্গা। এমাইলেজ শর্করা (Starch) ও লাইপেজ স্নেহ পদার্থ ভাঙ্গে। কিন্তু লাইপেজ কখনও শর্করা কিংবা প্রোটিন ভাঙ্গবে না। এর কারণ জানার আগে চলুন আমরা এনজাইম সম্বন্ধে আরও একটু জেনে নিই।

এনজাইমে অ্যাক্টিভ সাইট (Active Site) নামে একটা খোপের মত জায়গা আছে। ওখানে সাবস্ট্রেট (Substrate) আঁটকে যায়। এর আগে বলে নিই সাবস্ট্রেট কি!

ধরুন আমরা পেপসিন এনজাইম নিয়ে কথা বলছি। আগেই বলেছি পেপসিন প্রোটিনকে ভাঙ্গে। তাই পেপসিনের অ্যাক্টিভ সাইটে কে আটকাবে বলুন তো! হা ঠিক বলেছেন প্রোটিন! তাহলে পেপসিনের জন্যে প্রোটিন হল সাবস্ট্রেট। সহজ ভাষায় বললে এনজাইমের অ্যাক্টিভ সাইটে যারা আঁটকে যায় তারাই সাবস্ট্রেট। আঁটকে যাওয়া সাবস্ট্রেট ভেঙ্গে গিয়ে কিংবা জোড়া লেগে প্রোডাক্ট (Product) তৈরি করে। প্রত্যেকটি আলাদা এনজাইমের অ্যাক্টিভ সাইটের আকার আলাদা। তাই লাইপেজে কেবল স্নেহ (Fat) যুক্ত হতে পারে। কারণ তার Shape শুধু Fat এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এজন্যই আলাদা আলাদা এনজাইমের দরকার!

সাবস্ট্রেট ভেঙে প্রোডাক্ট
সাবস্ট্রেট ভেঙ্গে প্রোডাক্ট

আগেই বলেছিলাম জীবদেহে এনজাইম প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। মানে বিক্রিয়ার গতি বাড়িয়ে দেয়। আসলে এনজাইম যেটা করে তা হল বিক্রিয়ার সক্রিয়ন শক্তি বা Activation Energy কমিয়ে দেয়। আচ্ছা ব্যাপারটা একটু সহজ করে বলছি। আমরা যদি কোন গাড়িতে আস্তে করে ধাক্কা দিই গাড়িটি কি নড়বে? অবশ্যই না! গাড়িটি নড়ার মত একটা ন্যূনতম ধাক্কা দিলে তবেই গাড়িটি নড়বে। বিক্রিয়ার ক্ষেত্রেও এরকম ন্যূনতম শক্তি দরকার হয় বিক্রিয়া ঘটার জন্যে। এনজাইম সেই শক্তির পরিমাণ কমিয়ে দেয় ফলে এর অনেক কম শক্তি দিলেও বিক্রিয়াটি যায়। তাপমাত্রা বা pH বাড়ানোর দরকার হয় না!

এনজাইম যেভাবে বিক্রিয়ার সক্রিয়ণ শক্তি কমিয়ে দেয়
এনজাইম যেভাবে এক্টিভেশন-এনার্জি কমিয়ে দেয়। ছবি: সুজয় কুমার দাস

এনজাইম সম্পর্কে আরও পরিস্কার ধারণা পেতে এই ভিডিও দেখেতে পারেন।

তথ্যসূত্রঃ

* Microbiology an introduction by Tortora, Funk , Case
* Lehninger Principle of Biochemistry
* ভিডিওগুলিও অনেক সাহায্য করেছে
* ছবিগুলো ভিডিও থেকে নেয়া হয়েছে

লেখাটি 11,831-বার পড়া হয়েছে।


আলোচনা

Responses

  1. তোমার লেখা ভালো হচ্ছে। ওয়ার্ডপ্রেস এডিটর থেকে ছবিগুলোর সাইজ একটু ছোট করে দিয়ো। কন্টেন্ট অারেকটু সমৃদ্ধ করা যায় কিনা দেখো।

    1. সৈয়দ মনজুর মোর্শেদ Avatar
      সৈয়দ মনজুর মোর্শেদ

      ধন্যবাদ ভাইয়া :)! ঠিক আছে ছোট করে দিচ্ছি। কন্টেন্ট সমৃদ্ধ করার চেষ্টা থাকবে।

      1. সৈয়দ মনজুর মোর্শেদ Avatar
        সৈয়দ মনজুর মোর্শেদ

        ভাইয়া ওয়ার্ডপ্রেস এডিটর তো খুঁজে পাচ্ছি না 🙁

  2. খান ওসমান Avatar
    খান ওসমান

    লেখার বিষয়টা জরুরী। কিন্তু এনজাইম নিয়ে লেখায় বা লেকচারে আমি একটা ঝামেলা খুঁজে পাই সবসময়। এমনভাবে কতগুলা উদাহরণ দেয়া হয় যে কোন ছাত্র, যে এনজাইম কি জানেনা, সে মনে করতে পারে এনজাইমের একমাত্র কাজ হল খাদ্য ভেঙে পরিপাকে সাহায্য করা।
    ব্যাপারটা কিন্তু অন্যভাবে বোঝালে আরও ভাল হয়। যেমন ডিএনএ বা আরএনএ কপি তৈরিতে সাহায্য করে যেই পলিমারেজ, সেটাও কিন্তু একটা এনজাইম। লাইগেজও একটা এনজাইম। কাইনেজও একটা এনজাইম। কোষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এদের কোন কোনটা অপরিহার্য।
    পেপসিন প্রোটিন সংশ্লেষ করেনা, বরং প্রোটিনকে ভেঙে ফেলে।

    1. খান ওসমান Avatar
      খান ওসমান

      আর আপনি মনে হয় সংশ্লেষণ টা ভুলভাবে ব্যবহার করছেন। যেসব এনজাইমের নাম দিলেন সবগুলিই প্রোটিন ভাঙে। সংশ্লেষ করে না।

      1. সৈয়দ মনজুর মোর্শেদ Avatar
        সৈয়দ মনজুর মোর্শেদ

        ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়ার জন্যে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া 🙂 ভুলগুলো ঠিক করে নিব আর DNA ও RNA এর কপির ব্যাপারটিও লেখায় যোগ করে নিব।

        ভাইয়া, সংশ্লেষণ শব্দটি যদি একটু ব্যাখ্যা করতেন তাহলে ভালো হত :)।

        আর আমি বয়সে আপনার অনেক ছোট। আমাকে তুমি করে বলবেন 🙂

  3. সংশ্লেষণ মানে এ্যানাবলিক
    অর্থাৎ ক্যাটাবলিক তথা বিশ্লেষণ এর বিপরীত।
    খুব ভালো লাগলো, অসাধারণ প্রচেষ্টা।

  4. Imran Hossain Avatar
    Imran Hossain

    ভাল লাগলো

  5. ফুয়াদ হাসান Avatar
    ফুয়াদ হাসান

    লেখাটা ভালো লেগেছে ।কিন্তু ছবিগুলো দেখতে পারছি না।যদি দেখার সুযোগ করে দিতেন ,তাহলে কৃতার্থ হতাম ।।

  6. Raihan Hossen Avatar
    Raihan Hossen

    সুসুন্দর হইছে। কিন্তু ছবি দেকতে পারসি না

    1. মাহমুদ Avatar
      মাহমুদ

      ভালো হয়েছে।
      তার পরও কেমন কঠিন মনে হচ্ছে।

Leave a Reply

ই-মেইলে গ্রাহক হয়ে যান

আপনার ই-মেইলে চলে যাবে নতুন প্রকাশিত লেখার খবর। দৈনিকের বদলে সাপ্তাহিক বা মাসিক ডাইজেস্ট হিসেবেও পরিবর্তন করতে পারেন সাবস্ক্রাইবের পর ।

Join 910 other subscribers