মানুষের দেহের প্রায় সব কোষেই নিউক্লিয়াস থাকে। কোষের মধ্যখানে বলের মত যেখানে ডিএনএ একটা পর্দা দিয়ে আবৃত সেটাই নিউক্লিয়াস। শুধুমাত্র লোহিত রক্তকণিকা বা রেড ব্লাড সেল এ কোন নিউক্লিয়াস নাই, তাই ডিএনএ ও নাই। এই কোষটির কারনেই আমাদের রক্ত লাল। (রক্তের অন্য কোন রঙ হলে কেমন দেখাতো বলুন তো?) কিন্তু কেন এই কোষে কোন নিউক্লিয়াস নাই সেটা আলোচনা করি।
লোহিত রক্তকণিকা একধরনের জীবকোষ যার কাজ হল রক্তের মাধ্যমে ফুসফুস থেকে দেহের কোষ থেকে কোষে অক্সিজেন পরিবহন করা। অক্সিজেন পরিবহন করতে সাহায্য করে একটা প্রোটিন, নাম হিমোগ্লোবিন। এই প্রোটিন গ্লোবিন ফ্যামিলির, কিন্তু হিম নামক একটা যৌগ বহন করে বলে এর নাম হিমোগ্লোবিন। হিম যৌগটি লৌহ বা আয়রন বহন করে, যার রঙ লাল। তাই রক্ত লাল দেখায়। আবার এই হিমই অক্সিজেনকেও বহন করে। ফলে আমাদের দেহে অক্সিজেন পরিবহনের জন্য হিমোগ্লোবিন প্রোটিন থাকা অপরিহার্য।
হিমোগ্লোবিন প্রোটিনে হিম দেখতে পাচ্ছেন
হিমের মধ্যে আয়রন এবং অক্সিজেন থাকে
স্টেম সেল থেকে লোহিত রক্তিকণিকা তৈরি হয়। স্টেম সেল হল একধরনের মাতৃকোষ যেখান থেকে বিভিন্ন ধরনের কোষ তৈরি হয়। আমাদের মেরুরজ্জুতে এরা থাকে সাধারনত। লোহিত রক্তকণিকা তৈরির স্টেম সেল এ কিন্তু ডিএনএ আছে। কিন্তু লোহিত রক্তকণিকা তৈরি হওয়ার সময় এরা ডিএনএকে ঠেলে বের করে দেয়। তার একটা কারন আছে। লোহিত রক্তকণিকা ভর্তি থাকে হিমোগ্লোবিন দিয়ে। এত বিপুল পরিমানে থাকে যে অন্য কোন কোষেই শুধুমাত্র একধরনের প্রোটিন এত বেশি পরিমানে থাকার কোন উদাহরণ নাই। আর এতগুলি হিমোগ্লোবিন জায়গা দেয়ার জন্য স্টেম সেল থেকে তৈরি হওয়ার সময় লোহিত রক্তকণিকা নিজের ভেতর থেকে নিউক্লিয়াস বের করে দেয়। তবে এর আরেকটা কারণ আছে। সঠিকভাবে বায়ু পরিবহনে সাহায্য করার জন্য লোহিত রক্তকণিকাকে খুব চিকন রক্তনালীর মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সেজন্য এরা চ্যাপ্টা আকারের হয়। নিউক্লিয়াস দিয়ে মাঝখানটা ভরা থাকলে সেটা করতে পারতোনা। আবার তাহলে হিমোগ্লোবিনও পর্যাপ্ত থাকতোনা কোষে।
স্টেম সেল থেকে কতধরনের রক্তের কোষ তৈরি হচ্ছে দেখতে পাচ্ছেন
এবার একটু অন্য প্রসঙ্গ। ম্যালেরিয়া জীবাণু তাদের জীবনচক্রের এক পর্যায়ে লোহিত রক্তকণিকাকে আক্রমণ করে। বেঁচে থাকার জন্য তারা হিমোগ্লোবিনকে ভেঙে খাদ্যে রূপান্তরের অভিনব উপায় খুঁজে বের করেছে। কিন্তু হিমোগ্লোবিন প্রোটিনে কোন আইসোলিউসিন (এক ধরনের এমিনো এসিড, এমিনো এসিড দিয়ে প্রোটিন গঠিত) নাই। ফলে জীবাণু লোহিত রক্তকণিকার ভিতরে থেকে তার আবরণীকে এমনভাবে পরিবর্তন করে যে সেটা রক্তরস থেকে আইসোলিউসিন গ্রহণ করতে পারে। আবার হিমোগ্লোবিনকে ভাঙলে হিম যৌগটি বের হয়ে যাবে, যেটা জীবাণুটির জন্য ক্ষতিকর। তাই ম্যালেরিয়া জীবাণু এই হিমকে পরিবর্তন করে একটা যায়গায় বেঁধে রাখে। কুইনাইন ঔষধের নাম তো শুনেছেন। ধারনা করা হয় এই কুইনাইন জীবাণুর হিম সংরক্ষণে বাধা দেয়, ফলে জীবাণু মারা যায়। যদিও বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে প্রায় সব ম্যালেরিয়া জীবাণু কুইনাইন থেকে প্রতিরক্ষার উপায় খুঁজে পেয়েছে।
Leave a Reply