মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্বের অধ্যাপক নাইজেল হিউজ রচনা করেছেন মনীষার পাথরের বন । জীবাষ্ম আর জীবাষ্মায়ন মনীষার পাথরের বন বইটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। বিলুপ্ত জীবসমূহের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রমাণগুলোকেই বলা হয় ফসিল বা জীবাস্ম। সবাইকে বিশেষ করে কিশোর কিশোরীদের কাছে ভূত্ত্ববিদ্যার সঙ্গে পরিচিত করানোর উদ্দেশ্যে জিওলোজিক্যাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার উদ্দ্যোগে বইটি প্রকাশিত। লেখক তাঁর নিজস্ব পাঠ্যবিষয় ভূতত্ত্বের মূল বিষয়কে জনবোধ্য বিজ্ঞানের ভাষায় সহজ ঢঙে তুলে ধরেছেন। বইটির অনুবাদ করেছেন ড.দীপেন ভট্টাচার্য। দীপেন ভট্টাচার্যের সরল সাবলীল শব্দ বিন্যাস বইটিকে অনেক মনোগ্রাহী করে তুলেছে। বিশেষ করে অনুবাদকের রচিত দিতার ঘড়ি বা অভিজিৎ নক্ষত্রের আলো কিংবা ব্লগের লেখাগুলো যাদের পড়বার সুযোগ হয়েছে তারা হয়তো অবহিত আছেন দীপেন ভট্টাচার্যের বাংলা শব্দশৈলী ও কুশলতা সম্পর্কে। আর যারা বাংলাতে জনপ্রিয় বিজ্ঞানের বই প্রকাশ বা লেখালেখি করেন তাঁদের বইটি থেকে অনেক কিছু নেয়ার আছে। বইটির মলাট, বাঁধাই ও রতি বসুর অলংকরণ বইটিতে যুক্ত করেছে নান্দনিক সৌন্দর্য। পশ্চিমবঙ্গ থেকে মনফকিরা মনীষার পাথরের বন বইটি প্রকাশ করেছে। ঢাকার আজিজ সুপার মার্কেটের বইয়ের দোকানে বইটি পাওয়া যায়।
মনীষার পাথরের বন বইটির কেন্দ্রে রয়েছে মনীষা নামের এক কিশোরী ও তার এক অভিযান কাহিনি।মনীষা বীরভূমের এক প্রত্যন্ত গ্রামে থাকে। গ্রামের এক পাশে বিরাট এক পাথর সে দেখেছে বহুকাল ধরে পড়ে আছে। গ্রামের লোক একে নাম দিয়েছে গাছ পাথর। মনীষার অদম্য কৌতূহল। সে জানতে চায় গাছ পাথরের রহস্য। গাছ কীভাবে পাথর হলো- এই জিজ্ঞাসা তার মনকে আলোড়িত করে। চারপাশের মানুষজনের কাছ থেকে সে উত্তর পেতে সচেষ্ট। বৃদ্ধ আদিবাসীর গল্পে সে জানতে পারে বীরভূমে নাকি একসময় পাথরের গাছের বন ছিলো। গ্রামের বাউলগানের আসরে বিপদত্তারণ বাউলের গানেও সে শোনে গাছ পাথরের কথা। কেউ বলে কিরমানি বাবা নামের এক সাধক্যের মন্ত্রেতন্ত্রে গাছ পাথর হয়ে যায়। আবার এমন গল্পও আছে যে বীরভূমের কোটাসুর গ্রামে ভীম ও বকাসুর যুদ্ধ হয়। গাছপাথর আসলে বকাসুরের হাড় বা ভীম ছড়িয়ে দিয়েছিল বীরভূমের বিভিন্ন প্রান্তে। এসব কাহিনিগুলো মনীষার জিজ্ঞাসু মনকে শান্ত করেনা। কোন অলৌকিকতার মধ্যে মনীষা উত্তর খোঁজেনা। মনগড়া কল্পনার —
সাথে সত্যিকারের পৃথিবীর কোন সম্পর্ক নেই। তার যুক্তিবাদী মন জোর দেয় যুক্তি, বিচার ও পর্যবেক্ষণের উপর। সে নিজে নিজে গাছপাথরের রহস্য উদ্ধারের চেষ্টায় মশগুল হয়ে পড়ে। গল্পের আরেকটি চরিত্র বানীদি মনীষাকে বলে, গাছপাথরেও এক ধরনের ভাষা আছে, সেই ভাষা বুঝতে হবে। আর তা বোঝার জন্য তাদেরকে ভালো করে লক্ষ্য করতে হবে, অনেক প্রশ্ন করতে হবে। তিনি বললেন, পৃথিবীকে বুঝতে হলে এমনভাবেই এগোতে হয়। দার্শনিক দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় বিজ্ঞান কি ও কেন বইটিতে যেমনটি বলেছেন- আমি যদি প্রকৃতিকে জানতে চাই, বুঝতে চাই, তাহলে আমার পক্ষে সর্বপ্রথম দরকার প্রকৃতিকে দেখা- শুধু চোখ দিয়ে দেখা নয়, চেখে দেখা, শুঁকে দেখা, ছুয়ে দেখা, শুনে জানা।…বিশ্বাস নয়। মানা নয়। সংষ্কার বাদ দিয়ে ভালো করে দেখা। কেবলমাত্র অনুসন্ধিৎসু মন ও পর্যবেক্ষণের শক্তিকে অবলম্বন করেই মনীষা উদঘাটন করে গাছ পাথরের রহস্য। মনীষার পাথরের বনে সঙ্গী হয়ে তার সাথে বিজ্ঞানের অভিযাত্রায় যোগ দিতে পারে যে কেউই।
Leave a Reply