কাউকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় যে তার কাছে সবথেকে মূল্যবান জিনিস কি, সে যদি নিতান্তই বোকা না হয়ে থাকে তাহলে বলবে যে তার “জীবন”। এটাই মনে হয় জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা। সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ ভেবে এসেছে যে কিভাবে সে এই প্রকৃতিতে বেশি দিন টিকে থাকবে, ভালভাবে টিকে থাকবে, বেশি দিন বেঁচে থাকবে। শুধু মানুষই নয়, আসলে এটাই যেন প্রতিটা জীবের চিরন্তন আশা-আকাঙ্ক্ষা। এর প্রধান কারণ সম্ভবত, আপাত দৃষ্টিতে প্রকৃতি কাওকেই অফুরন্ত সময় দেয়নি বেঁচে থাকার জন্য। তাতে আবার বিভিন্ন প্রকার রোগ-বালাই প্রকৃতির এই কাজটা আরও সহজ করে দিচ্ছে যেন দিন কে দিন। যত দিন যাচ্ছে, ততই বিভিন্ন প্রকার রোগের উদ্ভব হচ্ছে এবং সবথেকে কঠিন সত্য হচ্ছে রোগগুলো আরও কঠিনতর হচ্ছে। ভাবটা এমন যেন, রোগেরও যেন ঘিলু (Brain) জিনিসটা আছে তাই তারা বুঝে শুনে নীরবে আমাদের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে। আজ যে অসুখটার প্রতিষেধক বের হয়েছে, কাল আবার এই রোগটি অন্যভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। তাই আমাদেরও তাদের মত করে ওষুধের ডোজ বাড়িয়ে বা পরিবর্তন করে পাল্লা দিতে হচ্ছে কিন্তু এভাবে আর কতদিন! প্রতিনিয়ত চলছে মানুষ এর সাথে এইসব রোগ-বালাই এর যুদ্ধ কিন্তু এর তো একটা শেষ থাকা প্রয়োজন এবং সেই সময়টা সম্ভবত এসে গেছে। এই নিয়েই আজকের লেখা।
জিন থেরাপি কি?
প্রত্যেকটা জীবদেহ অসংখ্য কোষ দিয়ে তৈরি এবং প্রত্যেকটা কোষ নির্দিষ্ট ও সমপরিমাণ জিন বহন করে। জিনগুলো কোষের ভিতরে খুব সূক্ষ্মভাবে কাজ করে। একটি জীবের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুরনের সময় উক্ত জিনসমূহ প্রতিটি পৃথকভাবে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য প্রকাশে বাধ্য থাকে। জিনগুলো এসব বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটায় বিভিন্ন প্রকার প্রোটিন উৎপাদনের মাধ্যমে। এখন প্রশ্ন হল যদি এইসব জিনে কোন ত্রুটি থাকে তাহলে কি হতে পারে! সহজেই অনুমেয়, ত্রুটিপূর্ণ জিন দ্বারা উৎপাদিত প্রোটিনও ত্রুটি যুক্ত হবে এবং ফলাফল হিসাবে এর প্রভাব পড়বে বৈশিষ্ট্য প্রকাশে। এভাবে জিনের পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন প্রকার জিনগত রোগের সৃষ্টি হতে পারে। জিন থেরাপি আসলে এক ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি যার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার বংশগত বা জিনগত রোগ নিরাময় করা হয়। অন্যভাবে বললে জিন প্রকৌশলের (Genetic Engineering) মাধ্যমে মানুষের ত্রুটিপূর্ণ কোন জিনকে স্বাভাবিক জিন দ্বারা প্রতিস্থাপন করাকে জিন থেরাপি (Gene Therapy) বলে। এ প্রক্রিয়ায় রোগের জন্য দায়ী জিনটা বাদ দেয়া হয় অথবা সেটাকে একটা ভাল জিন দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়। আর ঠিক এ কারণেই জিন থেরাপি খুবই নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা। জিন থেরাপি সাধারণ রোগ নিরাময় পদ্ধতি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা কারণ বিভিন্ন প্রকার ওষুধ প্রয়োগে শুধু রোগের লক্ষণ ও বাহ্যিক সমস্যা গুলো কমে যায় কিন্তু অসুখটি পুরাপুরি নিরাময় হয়না, যে কারণে পরে আবার রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। কিন্তু জিন থেরাপির মাধ্যমে নির্দিষ্ট রোগের জন্য দায়ী ত্রুটিপূর্ণ জিন গুলিকে ভালো জিন দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়। যাতে করে ক্ষতিকর প্রোটিনের স্থলে শরীর সঠিক এনজাইম (Enzyme) বা প্রোটিন (Protein) উৎপাদনে সক্ষম হয়। প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে এই চিকিৎসা পদ্ধতির পার্থক্য হলও জিন থেরাপির মাধ্যমে শুধু রোগের উপশমই করা হয় না জিনের বৈশিষ্ট্য-গত ত্রুটি দূর করে একে সমূলে নিবারণ করা হয়।
এ সম্পর্কে আরো পড়ুন: - ক্রিসপার ও জিনোম সম্পাদনা - ক্রিসপার শিশুর জন্ম-বিতর্ক - পৃথিবীর সব জিনোম-তথ্য নিয়ে আমরা যা করতে পারি
১৯৯০ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে আশান্তি দেসিল্ভা নামের ৪ বছরের এক বালিকার উপরে সর্বপ্রথম জিন থেরাপি প্রয়োগ করা হয়। দেসিল্ভার শরীর জন্মগত ভাবে এডেনোসিন ডিএমাইনেজ (Adenosine Deaminase) তৈরিতে অক্ষম ছিল যা দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য অতীব জরুরী। দেসিল্ভার দেহে জিন থেরাপির সফল প্রয়োগ হয়েছিল তবে ফলাফল স্থায়ী হয়নি। বর্তমানকালে জিন থেরাপি কয়েকটি রোগের ক্ষেত্রে বেশ ভালো ফলাফল দিয়েছে যদিও এখনো তা গবেষণার আওতাধীন, সেগুলো হল: সিস্টিক ফাইব্রোসিস (Cystic Fibrosis), ক্যান্সার (Cancer), এইডস (AIDS), সিকেল সেল অ্যানেমিয়া (Sickle Cell Anemia), অস্টিওপরেসিস (Osteoporosis), হিমোফিলিয়া (Hemophilia), পারকিনসন্স ডিজিজ (Parkinson’s Disease) ইত্যাদি।
জিন থেরাপির প্রকারভেদ
কার্যকারিতার উপর ভিত্তি করে জিন থেরাপি প্রধানত দুইভাবে ভাগ করা যায়: দেহকোষ জিন থেরাপি (Somatic Cell Gene Therapy) এবং জননকোষ জিন থেরাপি (Germline Gene Therapy)।
দেহকোষ জিন থেরাপি: নাম থেকেই অনুমান করা কঠিন নয় যে এই জিন থেরাপি দেওয়া হয় দেহকোষে (Somatic Cell)। অর্থাৎ, জিন থেরাপি যখন দেহকোষের ক্রোমোজোমে দেওয়া হয় তখন সেটাকে দেহকোষ জিন থেরাপি বলা হয়। দেহকোষ জিন থেরাপিতে রক্ত কোষ বা ত্বকের কোষ জাতীয় শরীরের কোষে পরিবর্তন আনা হয়। এই পদ্ধতিতে শরীর থেকে কোষ সংগ্রহ করে তাতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে তাকে আবার শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয় অথবা শরীরে অবস্থিত কোষেই সরাসরি পরিবর্তন আনা হয়। হ্যামোফিলিয়া (Hemophilia) বা থ্যালাসেমিয়া (Thalassemia) রোগের চিকিৎসায় এই পদ্ধতি বেশ কার্যকর। এই পদ্ধতিতে কয়েক বিলিয়ন সংখ্যক হাড়ের কোষ সংগ্রহ করা হয়। তারপর তাতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে তাকে আবার শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। এতে নতুন করে যেসব রক্ত কোষ তৈরি হয় তাতে পরিবর্তিত জিনের বৈশিষ্ট্য গুলো প্রকাশ পায়। দেহকোষ জিন থেরাপির মাধ্যমে কৃত পরিবর্তন গুলো শুধুমাত্র রোগীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, বংশগতির ধারাকে প্রভাবিত করে না। অর্থাৎ, পরবর্তী বংশধরে রোগটি আবার ফিরে আসতে পারে।
জননকোষ জিন থেরাপি: অনুরূপ ভাবে, জিন থেরাপিতে যখন জননকোষ ব্যবহার করা হয় তখন সেটাকে জননকোষ (Germ Cell) জিন থেরাপি বলা হয়। জননকোষ জিন থেরাপিতে জননকোষ দুটিকে স্বাভাবিকভাবেই নিষিক্ত হতে দেওয়া হয় তারপর নিষিক্ত ডিম্বাণুতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে তাকে আবার মাতৃগর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়। অতঃপর এই নিষিক্ত ডিম্বাণুটি যে ভ্রূণ গঠন করবে তার সমস্ত কোষে উক্ত ভাবে পরিবর্তিত জিনটি ছড়িয়ে যাবে ফলশ্রুতিতে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সফল হলে নবজাতকের সমস্ত কোষে পরিবর্তিত জিনটি উপস্থিত থাকে এবং প্রয়োজনীয় কার্য সম্পাদনে সক্ষম হয়, কারণ আমরা জানি নিষেকের ফলে উৎপন্ন ডিপ্লয়েড (2n) এককোষী কোষ থেকেই কোষ বিভাজনের মাধ্যমে পূর্ণ প্রাণীটি বিকশিত হয়। ধারণা করা হয় জননকোষ জিন থেরাপির মাধ্যমে সকল বংশগত রোগ (Genetic Disease) পুরোপুরি ভাবে বিতাড়িত করা সম্ভব এবং এই প্রক্রিয়ায় করা পরিবর্তন পরবর্তী বংশধরে স্থানান্তরিত হয় তাই রোগের পুনরায় ফিরে আশার সম্ভাবনা নাই। আর তাই এই ধরনের পরিবর্তন চিরস্থায়ী এবং বংশগতির ধারাকে সরাসরি প্রভাবিত ও পরিবর্তন করে।
আবার কাজের ধরনের উপর ভিত্তি করে জিন থেরাপি কে প্রধানত দুই ভাবে ভাগ করা যায়। নিচে উভয় পদ্ধতিতে সম্পর্কে সামান্য বর্ণনা দেওয়া হল: এক্স ভিভো (Ex Vivo) এবং ইন ভিভো (In Vivo)।
এক্সভিভো জিন থেরাপি: এই প্রক্রিয়ায় প্রথমে দায়ী জিন ধারণকারী কোষ বা টিস্যুটিকে কেটে বাহিরে আনা হয়, এবং গবেষণাগারে উপযুক্ত পরিবেশে এই কোষের উপর জিন থেরাপি দেওয়া হয়। ফলাফল ভালো হলে কোষ বা টিস্যুটিকে পুনরায় দেহে স্থাপন করা হয়। এক্ষেত্রে সাধারণত নন-ভাইরাল বাহক ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিটি সর্বাপেক্ষা উত্তম কিন্তু যথেষ্ট জটিলতা এবং সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
ইনভিভো জিন থেরাপি: এই প্রক্রিয়ায় কোষ দেহে থাকা অবস্থাতেই থেরাপি দিতে হয়। এক্ষেত্রে জিনটি সরাসরি রোগীর দেহে প্রবেশ করাতে হয় এবং তা প্রকাশের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা রাখতে হয়। বাহক হিসাবে ইনভিভো জিন থেরাপিতে বিভিন্ন প্রকার ভাইরাল পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
জিন থেরাপির মুল প্রক্রিয়া
ক্ষতিকর জিনটি ভালো জিন দিয়ে প্রতিস্থাপন করাই জিন থেরাপির মুল কাজ কিন্তু এটি তো মুখে বললেই হয়ে যাবেনা, এর জন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি। তবে রিসেসিভ (Recessive) জিনের ক্ষেত্রে শুধু জিনটি নির্দিষ্ট জায়গায় বসালেই হয় কিন্তু ডমিন্যান্ট (Dominant) জিনের ক্ষেত্রে শুধু খারাপ জিনটির প্রতিস্থাপনই শেষ নয়, বরং পাশাপাশি জিনটি জিনোম থেকে পুরোপুরি অপসারণ করতে হয় বা অকার্যকর করতে হয়। এখন কাজ হল, ত্রুটিপূর্ণ জিনটির স্থলে কাঙ্ক্ষিত ভালো জিনটির প্রতিস্থাপনের লক্ষ্যে সেটি নিউক্লিয়াসে অনুপ্রবেশ করানো এবং ক্রোমোজোমের (Chromosome) সাথে সংযুক্তকরন। এটা করার জন্য প্রধানত বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস (Virus) ব্যবহার করা হয় যাদের কে বাহক (Vector or Carrier) বলা হয়। ভাইরাস রোগ সৃষ্টি করে তাই বাহক হিসাবে ব্যবহারিত ভাইরাসটির যে জিনটি ক্ষতিকর সেটা রি-ইঞ্জিনিয়ারিং (Recombinant DNA Technology) করে বাদ দেওয়া হয় তবে স্বাভাবিক আক্রমণের ক্ষমতা অটুট রাখা হয় এবং কাঙ্ক্ষিত ভালো জিনটি বাহকের জিনোমের সাথে যোগ করা হয়। অতঃপর ভাইরাসটিকে রোগীর দেহে অনুপ্রবেশ করানো হয়। এরপর ভাইরাসটি তার নিজস্ব ক্ষমতায় বা প্রক্রিয়ায় টার্গেট কোষকে আক্রমণ করে এবং তার জিনোমটি কোষের নিউক্লিয়ার ক্রোমোজোমের সাথে সংযোজন করে অথবা কোষে স্বাধীন ভাবে অবস্থান করে জিনের প্রকাশ ঘটায়। এক্ষেত্রে ভাইরাস দিয়ে শুধু মাত্র সেই সকল কোষগুলো কে আক্রান্ত করা হয় যা রোগের জন্য দায়ী যেমন ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ইনসুলিন তৈরি করা জিনটিতে ত্রুটি থাকার ফলে ঠিক মতো তৈরি হয়না বা ইনসুলিনের রাসায়নিক কাঠামো (Chemical Structure) পরিবর্তনের কারণে ঠিকঠাক কাজ করেনা। ইনসুলিন তৈরি করে অগ্ন্যাশয়ের ল্যঙ্গারহান্স কোষ গুচ্ছের বেটা-কোষসমূহ। সুতরাং, এক্ষেত্রে শুধুমাত্র বেটা কোষ গুলোকে জিন থেরাপি দিলেই সঠিক ইনসুলিন তৈরি হবে এবং ডায়াবেটিস রোগ নিরাময় হবে। এখানে একটি ব্যাপারে একটু বিস্তারিত না লিখলেই নয় তা হল জিন থেরাপিতে ব্যবহারিত বাহক। বাহক ভাইরাল বা নন-ভাইরাল দুই রকমই হতে পারে তবে বেশীরভাগ সময় ভাইরাসকেই ব্যবহার করা হয় কারণ ভাইরাস প্রাকৃতিক ভাবেই তাদের জিন মানবদেহে সংযোজন করতে পারে এবং বিজ্ঞানীরা ভাইরাসের এই ক্ষমতাই কাজে লাগান। সাধারণত তিন ধরনের ভাইরাস কে জিন থেরাপিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যথা: রেট্রোভাইরাস (Retrovirus), এডিনোভাইরাস (Adenovirus), এবং এডিনো-এসোসিয়েটেড ভাইরাস (Adeno-Associated Virus)। এদের অল্প বিস্তার বর্ণনা নিচে দেওয়া হল।
রেট্রোভাইরাস: বিজ্ঞানীরা সর্বপ্রথম জিন থেরাপির কাজে রেট্রোভাইরাস ব্যবহার করেন। এটি এক প্রকার আরএনএ ভাইরাস তাই এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা কাঙ্ক্ষিত ভালো জিনটির আরএনএ প্রতিলিপিটি সুনির্দিষ্ট প্রমোটার সহ (প্রমোটার হল এক বিশেষ ধরনের জিন যা একটি নির্দিষ্ট জিনের বৈশিষ্ট্য প্রকাশে সুইচ হিসাবে কাজ করে যা নির্দিষ্ট ওষুধ প্রয়োগের দ্বারা চালু বা বন্ধ করা হয়) ভাইরাস জিনোমের সাথে যুক্ত করেন। রেট্রোভাইরাস কোষে প্রবেশের পর রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেজ (Reverse Transcriptase) নামক এক ধরনের এনজাইম নিঃসরণ করে যা তাদের আরএনএ জিনোমের অনুরূপ একটি ডিএনএ তৈরি করে এবং নতুন তৈরিকৃত ডিএনএ কে ইন্টিগ্রেজ (Integrase) এনজাইমের সহায়তায় পোষক কোষের নিউক্লিয়ার ক্রোমোজোমের সাথে যুক্ত করে। তবে এই ভাইরাসের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে যেমন এটি খুব নিখুঁত ভাবে কোষের ক্রোমোজোমের উপর কাজ করতে পারেনা তাই ভালো কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কিছু সম্ভাবনা থেকেই যায় যে কারণে রেট্রোভাইরাসের ক্ষেত্রে এক্সভিভো (Ex Vivo) পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
এডিনোভাইরাস: কোষের নির্দিষ্ট জায়গায় জিন প্রতিস্থাপন না করতে পারলে অনেক প্রকার সমস্যা তৈরি হয়। এ সমস্যা থেকে বাচার জন্য বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাস ব্যবহার করে থাকেন। এই ভাইরাস দ্বারা পরিবাহিত জিনটি নিউক্লিয়ার ক্রোমোজোমের সাথে যুক্ত হয়না বরং স্বাধীন ভাবে কোষে অবস্থান করে এবং ট্রান্সক্রিপ্শনের মাধ্যমে সঠিক প্রোটিন তৈরি করে। তবে এক্ষেত্রে জিনের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়না তাই এটি নতুন জন্মানো কোষগুলোতে পুনরায় দেওয়ার প্রয়োজন হয়। বর্তমানে, যকৃত ও জরায়ু ক্যান্সারের জিন থেরাপিতে এই ভাইরাস ব্যবহারিত হয়।
এডিনো-এসোসিয়েটেড ভাইরাস: এই ভাইরাস সবথেকে কার্যকর কারণ এটি বিভাজনরত এবং অবিভাজনরত সব ধরনের কোষকেই আক্রান্ত করতে পারে উপরন্তু এই ভাইরাসটি মানবদেহে পাওয়া যায় তাই এটি দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় কোন প্রভাব ফেলে না। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল এটি ১৯ নাম্বার ক্রোমোজোমের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় জিন সংযুক্ত করতে পারে। মানবদেহের হিমোফিলিয়া রোগের চিকিৎসায় এটিকে ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। তবে এটিও সমস্যার ঊর্ধ্বে নয় কারণ এটি এতই ক্ষুদ্র যে প্রাকৃতিকভাবে মাত্র দুইটি জিন বহন করতে পারে।
ভাইরাস ছাড়াও কোষে জিন ট্রান্সফারের অন্য উপায়গুলো হল: নগ্ন বা প্লাজমিড ডিএনএ ইনজেকশন (Naked DNA Injection), জিন গান (Gene Gun), ইলেক্ট্রোপোরেশন (Electroporation), ম্যগ্নেটোফেকশন (Magnetofection), সনোপোরেশন (Sonoporation) ইত্যাদি। প্লাজমিড (বৃত্তাকার ব্যক্টেরিয়াল ক্রোমোজোম) ডিএনএ ইনজেকশন পদ্ধতিতে প্রথমে প্লাজমিডে (Plasmid) কাঙ্ক্ষিত জিনটি যুক্ত করা হয় তারপর সেটিকে কোষের কাছাকাছি রাখা হয় যাতে কোষ তার স্বাভাবিক নিয়মে অন্যকিছুর সাথে সাথে প্লাজমিডটাও ভিতরে টেনে নেয়। এক্ষেত্রে কোষের কর্তৃক প্লাজমিড গ্রহণের হার খুব কম। অন্যান্য পদ্ধতিগুলোও প্রায় একই রকম শুধু বাড়তি কিছু প্রক্রিয়া যোগ করা হয়েছে কোষ কর্তৃক প্লাজমিড ডিএনএ গ্রহণের হার বাড়ানোর জন্য। যেমন, ইলেক্ট্রোপরেশনে কোষের সূক্ষ্ম ছিদ্র গুলো একটু বড় করার জন্য ইলেকট্রিক ভোল্ট বা ইলেকট্রিক শক প্রদান করা হয় যাতে প্লাজমিডটি সহজে কোষে প্রবেশ করতে পারে। জিন গানের ক্ষেত্রে, জিনকে ধাক্কা দিয়ে কোষের ভিতরে প্রবেশ করানো হয়, তবে এ পদ্ধতিতে জিনকে ঠিক রাখার জন্য প্রথমে প্লাজমিডটিকে গোল্ড পার্টিকেল দ্বারা এমনভাবে আবৃত করা হয় যেন কোষের পাতলা পর্দায় গোল্ড পার্টিকেলটি আটকে থাকে এবং প্লাজমিডটি ভিতরে প্রবেশ করে। অনুরূপ ভাবে, ম্যাগ্নেটোফেকশনে, জিনটিকে একটি চৌম্বক পদার্থের সাথে সংযুক্ত করা হয়, অতঃপর এটিকে চুম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে কোষের ভিতর প্রবেশ করানো হয় এবং সনোপোরেশন পদ্ধতিতে অতি উচ্চ মাত্রার শব্দতরঙ্গ (Ultrasonic Frequency) দ্বারা প্লাজমিড বা জিনটিকে কোষে প্রবেশ করানো হয়।
যাহোক, জিন থেরাপির নন-ভাইরাল পদ্ধতি গুলো ভাইরাল পদ্ধতির থেকে ভালো হতে পারতো কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা থাকায় সেটা আপাতত সম্ভব হচ্ছেনা।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে জিন থেরাপির কিছু উল্লেখযোগ্য অবদান
জিন থেরাপি খুব সাম্প্রতিক চিকিৎসা পদ্ধতি এবং বলতে গেলে জিন থেরাপি কেবল ঘোমটা খুলে মুখটা বের করেছে বাকিটা এখনও অজানা ও অনাবিষ্কৃত। কেবল জন্ম নিলেও ইতোমধ্যে জিন থেরাপি তার ক্ষমতা দেখানো শুরু করেছে। তার কিছু অবদান নিচে দেওয়া হল:
অতি সম্প্রতি ২০১০ সালের শেষের দিকে, ফ্রান্সের ১৮ বছর বয়স্ক এক রোগীকে জিন থেরাপি দিয়ে বেটা-থ্যালাসেমিয়া রোগ থেকে সারিয়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। এই রোগীর ক্রোমোজোমে বেটা-হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য দায়ী জিনটি ত্রুটিপূর্ণ বা অনুপস্থিত ছিল। বেটা-হিমোগ্লোবিনের অনুপস্থিতির কারণে রক্ত পুরোপুরি কার্যক্ষম ছিলনা ফলে কিছু দিন পরপর তার দেহে বাইরে থেকে রক্ত দেওয়া লাগতো। জিন থেরাপির মাধ্যমে উক্ত জিনটির স্থলে ভালো জিনটি বসানো হয়েছে ফলে বেটা-হিমোগ্লোবিন যুক্ত রক্ত তার দেহেই উৎপন্ন হচ্ছে। এক্ষেত্রে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করেও এটা সারানো সম্ভব কিন্তু ১০০% অনুরূপ অস্থিমজ্জা পাওয়া খুব দুষ্কর উপরন্তু অপারেশন ও অনেক জটিল। জিন থেরাপি দেওয়ায় তার পরবর্তী বংশধরে এই রোগটি আর প্রবাহিত হবেনা।
জিন থেরাপির দ্বারা দৃষ্টিহীনতাও দূর করা সম্ভব। ব্রিটিশ চিকিৎসক সম্প্রতি এমন দাবিই করেছেন। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে জেনেটিক থেরাপির মাধ্যমে প্রায় দৃষ্টিহীন হতে যাওয়া ব্যক্তিদেরও সারিয়ে তুলেছেন তাঁরা। এই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করে চোখের কোষে জিনের প্রবেশ ঘটিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এতে আলো শনাক্তকারী কোষগুলো উদ্দীপ্ত হয়। চিকিৎসকদের বিশ্বাস, এই চিকিৎসা দিয়ে একপর্যায়ে পুরোপুরি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদেরও সুস্থ করে তোলা যাবে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবার্ট ম্যাকলারেন এই গবেষণা কাজের নেতৃত্ব দেন। তিনি জানান, জনাথন উইয়াট (৬৩) নামে এক ব্যক্তি জিনগত সমস্যা করোইডেরেমিয়াতে আক্রান্ত ছিলেন। এই রোগে আক্রান্ত হলে চোখের পেছনে অবস্থিত আলো শনাক্তকারী কোষগুলো ধীরে ধীরে মরে যায়। তবে অস্ত্রোপচারের পর দেখা গেছে তাঁর দৃষ্টিশক্তির উন্নতি হয়েছে।
এসব ছাড়াও পরীক্ষামূলক ভাবে কিছু ক্ষেত্রে হিমোফিলিয়া, ক্যান্সার ও পারকিন্সন্স ডিজিজ ও নিরাময় করা সম্ভব হয়েছে। তবে এগুলো এখনো গবেষণাগারেই সীমাবদ্ধ তাছাড়া বিভিন্ন নৈতিক কারণে (Ethical Issue) মানুষে সরাসরি জিন থেরাপি প্রয়োগে অনেক সমস্যা রয়ে গেছে।
সকল রোগ কি জিন থেরাপি দিয়ে নিরাময় সম্ভব!
অবশ্যই না। কারণ জিন থেরাপি কাজ করে জিন নিয়ে, জিনের পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন ইত্যাদি নিয়ে তাই জিন থেরাপি প্রধানত জেনেটিক রোগগুলো নিরাময় করতে পারবে। বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীরের কোষে অভিব্যক্তি (Mutation) ঘটে যার ফলে নানা ধরনের অসুখ হয় যেমন ক্যান্সার, জিন থেরাপি এসব রোগের একটা স্থায়ী সমাধান হতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন রোগ হয় ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার কারণে যেগুলো জিনের পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত সেসব রোগ ও এর মাধ্যমে সারানো সম্ভব যেমন এইডস। জন্মগত বিভিন্ন রোগ যেগুলো জিনের অভিব্যক্তির কারণে হয়ে থাকে যেমন, জন্মগত অন্ধ, মানসিক প্রতিবন্ধী, বর্ণান্ধ (Color Blindness), হিমোফিলিয়া, থ্যালাসেমিয়া, মাথায় টাক পড়া (Baldness) ইত্যাদি রোগ থেকে জিন থেরাপির দ্বারা পুরোপুরি এবং স্থায়ীভাবে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
জিন থেরাপি কি সম্পূর্ণ নিরাপদ?
এতক্ষণে পাঠকদের নিশ্চয় মনে হচ্ছে জিন থেরাপি তো খুব সোজাসাপ্টা একটা ব্যাপার কিন্তু বাস্তবে এর থেকে কঠিন এবং জটিল ব্যাপার আর আছে কিনা সন্দেহ, আসল ব্যাপারটা এখানে খুব সহজ ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। গবেষকরা এখনো নিশ্চিত নয় যে জিন থেরাপি কতটা নিরাপদ কারণ এটা জিন নিয়ে কাজ করে আর জিনের সামান্য পরিবর্তন অনেক বড় কিছু করে ফেলতে পারে আবার একটা জিন অনেক ক্ষেত্রে একাধিক জিন বা বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে (Polymorphism) তাই একটা নির্দিষ্ট জিন পরিবর্তন করতে গিয়ে অন্য অনেক বড় ত্রুটির সৃষ্টি হতে পারে। জিন থেরাপিতে ভালো জিনটিকে একটা সুনির্দিষ্ট জায়গায় বসাতে হয়, ঠিকঠাক জায়গায় না বসাতে পারলে বড় ধরনের কোন ক্ষতি হতে পারে। জিন থেরাপিতে বিভিন্ন রকমের ভাইরাস কে বাহক হিসাবে ব্যবহার করা হয়, এই বাহক ভাইরাস খারাপ কোষকে আক্রমণ না করে ভালো কোষকে আক্রমণ করতে পারে। অনেক সময় যদি ভাইরাস বাহক নির্দিষ্ট কোষকে আক্রমণ না করে রোগীর জননকোষ আক্রমণ করে তাহলে তার পরবর্তী বংশধরও ক্ষতির কবলে পড়তে পারে। তাছাড়া জিনের সামান্যতম পরিবর্তন ক্যান্সার পর্যন্ত সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া, আমাদের শরীরের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (Immune System) আছে, শরীরে অপরিচিত কিছু প্রবেশ করলেই এটা তাদের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করে দেয়, তাই জিন থেরাপির ক্ষেত্রে যখন বাহক শরীরে প্রবেশ করা হয় তখন হিতে বিপরীত হতে পারে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে সরাসরি ভূমিকা রাখতে হলে জিন থেরাপিকে এসব জটিলতা দূর করতে হবে। বিজ্ঞানীদের আরও কার্যকর বাহক খুঁজে বের করতে হবে যা আরও বেশি সংখ্যক কোষের উপরে কাজ করতে পারে, নতুন পন্থা উদ্ভাবন করতে হবে যেন আরও বেশি সংখ্যক বাহক উৎপাদন করা যায় এবং আরও কার্যকর প্রমোটার খুঁজে বের করতে হবে যেন যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন উৎপাদিত হয়। তবে জিন থেরাপি যেহেতু অনেক নতুন একটা পদ্ধতি তাই এর সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাবের কারণে অনেক সাধারণ বিষয় হয়ত অনেক জটিল মনে হচ্ছে কিন্তু ভবিষ্যতে হয়ত আজকের অনেক সমস্যাই আর সমস্যা থাকবেনা।
জিন থেরাপির ভবিষ্যৎ
জিন থেরাপি এখনো আতুর ঘর থেকে বাইরে বের হয়নি কিন্তু এর মধ্যেই বিজ্ঞানীরা তার প্রেমে পড়ে গেছে এবং তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে। জিন থেরাপি এমন একটা পদ্ধতি যেটা দিয়ে অসম্ভবকে জয় করা সম্ভব। পৃথিবীতে অন্ধ, বধির, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, স্মৃতিভ্রষ্টটা শব্দগুলোর অস্তিত্ব আর যেন থাকছে না। অনেক দুরারোগ্য ব্যাধি যেমন হাঁপানি, ডায়াবেটিস, হিমোফিলিয়া ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে জিন থেরাপি বিজ্ঞানীদের চোখে আশার আলো জ্বেলে দিয়েছে, স্বপ্নের সোনার হরিণ যেন ধরা দিল বিজ্ঞানীদের হাতে। মানুষ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রাণী হওয়া সত্ত্বেও মানবদেহে অনেক ত্রুটি বিদ্যমান যা অনেক নিম্নমানের প্রাণীতে অনুপস্থিত, যেমন, মানুষের চোখ খুব দুর্বল সে তুলনায় অক্টোপাস বা আমাদের চিরচেনা কুকুর, বিড়ালের চোখ অনেক উন্নত, বয়স বাড়ার সাথে মাংসপেশি ও হাড়ের ক্ষয় শুরু হয় এটাও একটা বিরাট সমস্যা। দেখা গেছে আমাদের দেহ ত্রিশ বছর পার না করতেই হাড়ের ক্ষয় (Bone Decay) শুরু হয় ফলে হাড়ের ভঙ্গুরতা বৃদ্ধি পায় এবং একটা সময় অস্টিওপরেসিস (Osteoporosis) মত রোগের উদ্ভব হয়, মানুষের উপরের অংশের ভর নিচের অংশ পুরোপুরি নিতে পারেনা যে কারণে বৃদ্ধ বয়সে পশ্চাৎ দিকে ব্যথা (Backpain), বাত সহ নানা রকম অসুখে ভুগি আমরা, মানব জিনোমে অনেক অপ্রয়োজনীয় জিন (Junk DNA) আছে যা অনেক ক্ষতিকর অভিব্যক্তি (Mutation) ঘটাতে পারে – জিন থেরাপির মাধ্যমে এসব ত্রুটি দূর করা যেতে পারে। বিজ্ঞান আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে কিন্তু মৃত্যুকে এড়াতে পেরেছে কি! অবাক হলেও সত্যি যে বিজ্ঞানীরা এখন মৃত্যুকে উপেক্ষা করতে চেষ্টা করছে, কারণ স্বাভাবিক মৃত্যুকে এক ধরনের জেনেটিক ডিজিজ বলা যেতে পারে এবং আশার কথা হল প্রাণিজগতের বেশ কিছু প্রাণী এই রোগ থেকে মুক্ত এবং তারা রীতিমত বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে মৃত্যুকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানোতেই পারদর্শী। এই প্রাণী গুলো হল-কচ্ছপ, জেলিফিশ, কিছু প্রজাতির বড় শামুক, হাইড্রা, গলদা চিংড়ি ইত্যাদি। প্রত্যেক প্রাণী একটা নির্দিষ্ট বয়সে যাওয়ার পর থেকে সে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয় অর্থাৎ মৃত্যুর হার বাড়তে থাকে, এটা প্রাণিজগতে খুব কমন ব্যাপার কিন্তু সবথেকে মজার বিষয় এই জীব গুলো একটা নির্দিষ্ট বয়স পার করার পর এদের মৃত্যুর হার কমতে থাকে, অর্থাৎ একটা প্রাপ্ত বয়স্ক কচ্ছপ আর একটি ২৫০ বছরের বুড়া (আমাদের হিসাবে) কচ্ছপ সব দিক থেকে হুবহু তরুণ কচ্ছপটির মতো। এই প্রাণীগুলো এটা কিভাবে করে তা বোঝার জন্য বিজ্ঞানীরা উঠে পড়ে লেগেছেন এবং তারা ভাবছেন কি করে এটা মানুষের ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যায়, সামান্য কিছু ক্ষেত্রে তারা সফলও হয়েছেন। আমার কথা গুলো কল্পবিজ্ঞান (Science-Fiction) মনে হতে পারে অনেকের কাছেই কিন্তু বিষয়টা এখন দিনের আলোর মতই সত্য এবং স্বচ্ছ। উৎসাহীরা গুগল স্কলারিতে (Google Scholar) অনুসন্ধান করে দেখতে পারেন, এ সম্পর্কিত অনেক গবেষণা পত্র পাওয়া যাবে।
উপসংহার
জিন থেরাপি এখনো গবেষণার আওতাধীন তাই এ সম্পর্কে ঠিকঠাক কিছু বলা কঠিন। তবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে চিকিৎসা হিসাবে জিন থেরাপি এক নতুন দিগন্ত, যে দিগন্তের কোন শেষ নেই এটা বললেও বোধহয় খুব একটা অত্যুক্তি হবেনা। এটা মানতেই হবে যে জিন থেরাপির এখনো অনেক সীমাবদ্ধতা আছে তবে সময়ের সাথে সাথে এর রূপ পূর্ণভাবে বিকশিত হবে এবং ভবিষ্যতে হয়ত চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি একক আধিপত্য বিস্তার করবে। গবেষকরা মনে করেন কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও চিকিৎসা ক্ষেত্রে এর ব্যবহার অবশ্যম্ভাবী। তারা মনে করেন জিনবাহিত রোগ নির্মূলে ও জিনের সাধারণ ত্রুটি দূরীকরণে জিন থেরাপিই হবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের শেষ দুর্গ। ভবিষ্যতের জিন থেরাপি হয়ত এমন এক সময়ের জন্ম দিবে যখন ক্যান্সার, এইডসের মতো রোগ গুলো বর্তমান সময়ের পোলিও রোগের মতো বিদায়াতঙ্কে ভুগবে। হয়ত এমন এক পৃথিবীর জন্ম দিবে যেখানের মানুষ রোগ শব্দটাই ভুলতে বসবে, তাদের ভিতর কোন দুর্বলতা থাকবেনা, হয়ত অমরত্বের স্বাদ ভোগ করবে মানুষ। যাহোক, ভবিষ্যৎ এক রহস্যময় অজানা জগত, আশা যেমন পূরণ হতে পারে আবার ভাঙতেও পারে কিন্তু বর্তমানের আবছা আলোয় দেখা পথের শিশুটিকে ভবিষ্যতের শাহেনশাহ্ ভাবতে দোষ কি! তাই আশায় আমরা বুক বাধতেই পারি।
তথ্যসূত্র
জিন প্রকৌশল ও জৈবপ্রযুক্তি – মোহাম্মদ ফারুক মিয়া
ব্যাড ডিজাইন – অভিজিৎ রায়
Gene Therapy – Web: http://ghr.nlm.nih.gov/info=gene_therapy/show/alltopics#availability
Human Gene Therapy – Web: http://www.twnside.org.sg/title/twr127b.htm
Gene Therapy Successes – Web: http://learn.genetics.utah.edu/content/genetherapy/gtsuccess/
Leave a Reply