নিউট্রিনো: মহাবিশ্বের ভূত
২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের কথা, তখনকার সময়ে নিয়মিত বিভিন্ন পত্রিকার সাপ্তাহিক বিজ্ঞান পাতার মাঝে ঘুরাঘুরি…
কালপুরুষ
রাতের আকাশ বড়ই সুন্দর।বিশেষ করে শীতের সময়ে তাকে আরো ভয়াবহ সুন্দর লাগে। তারাগুলো দেখে মনে হয় তারা যেন বিভিন্ন মজাদার আকার ধারণ করে। কখনো সিংহ, কখন বিছা; আরো কত কি! তেমনি আজ বলবো একটি মজাদার আকৃতির কথা। তার নাম কালপুরুষ। একে ইংরেজিতে Orion বলা হয়। একে দেখতে অনেকটা শিকারির মত মনে হয়। তার এক হাতে ঢাল আর আরেক হাতে মুগুর। কটিতে রয়েছে খাপ খোলা তলোয়ার। গ্রিক মিথোলজিতে এর একটা মজার কাহিনী আছে। গ্রীক দেবী আর্তেমিস হলো মৃগয়া, বন্য জন্তু, তেপান্তর, শিশু জন্ম, কুমারীত্ব, কিশোরীদের রক্ষাকারী, মেয়েদের রোগদাত্রী ও রোগ মুক্তি দানকারী। চন্দ্রদেবী সেলেনার পাশাপাশি চাঁদের দেবী হিসেবে তাকেও ভাবা হয়। হরিণ ও সাইপ্রেস বৃক্ষ ছিলো তার কাছে ঐশ্বরিক ও পূজনীয়। যৌবন প্রাপ্ত অস্পর্শিত দেবী আর্তেমিস কোন পুরুষকে তার কাছে ঘেষতে দিতো না। দেবী আর্তেমিসের প্রতি অনেক দেবতা ও মানুষ আকর্ষিত ছিলো। কিন্তু শুধুমাত্র তার শিকারের সঙ্গী ওরিয়ন আর্তেমিসের হৃদয় জয় করতে পেরেছিলো। এপোলো প্রেমের এ খবর শুনার পর ক্রোধ দমন করতে পারলো না; কারণ আর্তেমিস প্রেমে পড়েছিলো একজন মরণশীল সাধারণ মানুষের। এপোলো সংকল্প করলো যে, সে এই প্রেমকে আর অগ্রসর হতে দেবে না। এপোলো একটি বৃশ্চিক বা বিচ্ছু পাঠালো ওরিয়নকে হত্যা করার জন্য। ওরিয়ন তার সমস্ত তীর দিয়ে এবং শেষ পর্যন্ত তরবারি দিয়ে দৈত্যকে হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো। তারপর নিজেকে বাঁচাতে ওরিয়ন সাগরে ঝাঁপ দিলো এবং সাঁতার কাটতে থাকলো। এরপর আর্তেমিস তীর-ধনুক হাতে যখন সে স্থানে উপস্থিত হলো তখন দেবতা এপোলো তাকে বিভ্রান্ত করলো। সে আর্তেমিসকে বললো – তুমি সাগরে যে কালো বুদ্বুদ ডুবতে ও ভাসতে দেখছো ওটা একটা জঘন্য ব্যক্তির মাথা; সে তোমার একজন কুমারীকে ধর্ষণ করেছে, হত্যা করো তাকে। আর্তেমিস বিশ্বাস করলো এপোলোর কথা, তীর ছুড়লো জলে ভাসা মাথা লক্ষ্য করে। তীর ছুড়ে হত্যার পর সে আবিষ্কার করলো – এ আর কেউ নয়, তার প্রিয় ওরিয়ন। তারপর আর্তেমিস প্রিয় মৃত ওরিয়নকে আকাশের নক্ষত্রপুঞ্জে স্থান করে দিলো এপোলোর হিংসা ও মিথ্যাকে অমর করে রাখতে। এপোলোর সে বৃশ্চিকটিরও স্থান হলো আকাশে, এখনো সে তাড়া করে ফেরে ওরিয়ন বা কালপুরুষ নামের নক্ষত্রপুঞ্জকে। আকাশের দুই জায়গায় বা মেরুতে স্থান দেয়া হয়েছে তাদের, যাতে করে তারা কখনো আর যুদ্ধে লিপ্ত না হতে পারে। কালপুরুষ মন্ডলের তারাগুলোকে একটু চেনা যাক তাহলে।
আকাশে কালপুরুষকে চেনার সহজ উপায় আছে। দক্ষিণ এর আকাশে প্রথমে খুজতে হবে একটি সামন্তরিক এবং এর মাঝ বরাবর থাকবে পরপর তিনটি উজ্জ্বল তারা। ছবিতে ভালোভাবে দেওয়া আছে। একবার চিনতে পারলে সহজে এটা চোখে পড়বে।
রেফারেন্সঃ
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%B7_%E0%A6%AE%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1%E0%A6%B2
http://www.somewhereinblog.net/mobile/blog/farzul/29720484
কালপুরুষ এর আসল আকৃতি
কালপুরুষ প্রিয় মণ্ডল, রাতের আকাশে দেখলেই তাকে ভিড়ে চেনা মুখের মতো মনে হয়। এর আরবী সম্ভবত আদম সুরত। যেটা মজা লাগে, অধিকাংশ তারামণ্ডলী প্রাচীন গ্রীক, ভারতীয় ও মিশরীয়রা একই ধরনের ছবি কল্পনা করতো। তবে তাদের সাথে গল্প ভিন্ন।
চমৎকার গোছানো পোস্ট! বিজ্ঞান ব্লগে স্বাগতম!
অসাধারণ একটি প্রবন্ধ। শীতের রাতে কালপুরুষ আসলেই ভয়াবহ সুন্দর। পুরাণের গল্পটি জানাছিলো না। লেখককে ধন্যবাদ লেখাটি উপহার দেয়ার জন্য। আমার মত সকল নক্ষত্র প্রেমীদের লেখাটি ভাল লাগবে আশা করি।
ধন্যবাদ সবাইকে। সামনে আরো কিছু তারামন্ডল সম্পর্কে লেখা তুলে ধরার চেষ্টা করবো।