বর্তমান কোভিড-১৯ মহামারী পেক্ষাপটে “ভাইরাস” একটি বহুল আলোচিত ও আতঙ্ক সৃষ্টিকারী শব্দ। কিন্তু, কখনো কি মনে হয়েছে নামটির উদ্ভব কিভাবে হলো? কিংবা কেনই বা একে আমরা ভাইরাস বলি?
আসলে, ভাইরাস শব্দটি এসেছে ইতালির একটি শব্দ “ওয়েইস-ও-(এস-)” থেকে যাকে ল্যাটিন শব্দে রূপান্তরিত করলে “ভাইরাস” নামটি পাওয়া যায়। অর্থাৎ, ল্যাটিন ভাষা হতে ধার করা একটি শব্দ হলো এই ভাইরাস। ইতালিয়ান শব্দটির অর্থ ছিলো বিষাক্ত তরল। কিন্তু, ভাইরাস শব্দটির অর্থ হলো, বিষ কিংবা গাছের রস কিংবা, আঠালো-তরল কিংবা, এক ধরনের শক্তিশালী জ্যুস। আদিকালে রোগ সৃষ্টিকারী যে কোন বিষাক্ত পদার্থকেই ভাইরাস বলা হত। প্রথম আবিষ্কারের ঘটনাটি পড়লে এ নামের পিছনের বিষয়টা সহজে অনুধাবণ করা সম্ভব হবে।
ভাইরাসের ধারণা কোথা থেকে এলো?
১৮৮২ সালে যখন জার্মান রোগ বিশেষজ্ঞ রবার্ট কোচ যক্ষ্মার পিছনে ব্যাকটিরিয়াম আবিষ্কার করেছিলেন, তখন তিনি অণুজীবের মাধ্যমেই যে রোগের সৃষ্ট এরকম একটি সংক্ষিপ্ত নির্দেশনাও দিয়েছিলেন। এটি “জীবাণু-তত্ত্বের” জন্য একটি বায়ুপ্রবাহ ছিল, যা আধুনিক ধারণা দিয়েছিলো রোগজীবাণুই আমাদের অসুস্থ করে। তার এই তথ্য কেবলমাত্র চিকিৎসার ক্ষেত্রকেই কাঁপায়নি, বরং উদ্ভিদবিদরাও এটিকে লক্ষ্য করেছেন।
যার ফলশ্রুতিতে দেখা যায়, ১৮০০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে যখন মোজাইক রোগের এক ঝাপটায় ইউরোপীয় তামাক ফসল হুমকির মধ্যে পড়েছিল, তখন উদ্ভিদ রোগ বিশেষজ্ঞরা এর মূল কারণটি সনাক্ত করতে বের হন। কয়েক দশক ধরে, কেবলমাত্র একজন অগ্রবর্তী-চিন্তাবিদ উদ্ভিদবিদ, মার্টিনাস বেইঞ্জেরিন্ক বুঝতে পেরেছিলেন যে উৎসটি ব্যাকটিরিয়া বা ছত্রাকের সংক্রমণ নয়, বরং এটা একেবারে আলাদা কিছু ; একটি ভাইরাস। তখন পর্যন্ত ভাইরাস সম্পর্কে ধারণা কিন্তু কোন চিকিৎসা-বিজ্ঞানের মাধ্যমে আসে নি, বরং উদ্ভিদবিদ্যায়: উদ্ভিদের অধ্যয়নেই শুরু হয়েছিলো। ভাইরাসগুলি এত ছোট — এবং এত বিস্ময়কর যে, তাদের উপস্থিতির সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক সর্বসম্মতির জন্য কয়েক দশক সময় লেগেছিলো৷
আজ, আমরা জানি ভাইরাসগুলি বায়ু, মহাসাগর এবং মাটির প্রায় যে কোনও জায়গায় পাওয়া যায়। কিন্তু, এর মধ্যে একটি ক্ষুদ্র শতাংশ হ’ল বিপজ্জনক জীবাণু যা রোগের কারণ, যেমন বর্তমানে SARS-CoV2 নামে পরিচিত করোনা ভাইরাস বিশ্বব্যাপী মহামারী সৃষ্টি করেছে।
১৮৫৭ সালে, নেদারল্যান্ডের কৃষকেরা অর্থনীতিতে গুরুত্ব রাখা রাখা ফসল: তামাকের একটি নতুন রোগের হুমকির মধ্যে পড়ে । পাতাগুলিতে নানা বর্নের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গাঢ় সবুজ, হলুদ এবং ধূসর বর্ণের লক্ষণ ফুঁটে উঠে, ফসলের মাঠে এধরনের আক্রান্তের ফলে কৃষকেরা ৮০ শতাংশ ফসল হারাতে শুরু করে। তামাকের বড় ক্ষেতগুলি যা প্রতিবার একই ফসল চাষ করা হত সেগুলিও আক্রান্ত হয়ে পড়ত। যদি একবার রোগটি কোন কৃষকের মাঠে পৌঁছাতো, তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ত। টেক্সাসের এএন্ডএম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ ভাইরাসবিদ কারেন-বেথ শোলথোফ বলেছিলেন— “এটি ছড়িয়ে পড়া ছিলো খুব সহজ”। “আপনি যদি গ্রিনহাউসে বা আপনার বাগানটায় যদি সেখানে থাকে এবং আপনি একটি পায়ের পাতার মোজার মধ্যে দিয়েও পানি দেন এবং মোজাটা কোনভাবে যদি আক্রান্ত গাছকে স্পর্শ করে, তবে এর ফলে তার পাশের গাছটিও আক্রান্ত হয়ে পড়বে”।
নেদারল্যান্ডের উদ্ভিদ রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যাডল্ফ মায়ার 1879 সালে এই রোগটি নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন এবং এর নাম দিয়েছিলেন “তামাকের মোজাইক রোগ”। তিনি কোচের নির্দেশিকাগুলি ব্যবহার করার চেষ্টা করেছিলেন। এর কারণ অনুসন্ধানের জন্য পাতা থেকে ক্রমাগত জীবাণুটি আলাদা এবং পুনরায় তা দিয়ে সংক্রমণের চেষ্টাকরেছিলেন। কিন্তু মায়ার একটি সমস্যায় পড়ে গিয়েছিলেন৷ যদিও তিনি দেখাতে পেরেছিলেন যে, একটি অসুস্থ তামাক পাতার রস একটি স্বাস্থ্যকর পাতায় রোগের সংক্রমণ করতে পারে। কিন্তু তিনি জীবাণুটির বিশুদ্ধ বংশবিস্তার ও তা থেকে দায়ী অণুজীবটি অণুবীক্ষণের নিচে শনাক্ত করতে পারেন নি। আসলে, তখন ভাইরাস দেখার জন্য সরঞ্জামগুলির অস্তিত্বই ছিল না। অনেকটা এটি ছিল কেবল অদৃশ্য ছোঁয়া।
১৮৮৭ সালে উদ্ভিদবিদ দিমিত্রি ইভানভস্কি যখন তামাক মোজাইক রোগ নিয়ে গবেষণা করেছিলেন, তখন তিনি অন্যরকম পন্থা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি আক্রান্ত পাতার রস সূক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত চীনামাটির ফিল্টার দ্বারা ছাঁকেন যার মধ্যে দিয়ে ব্যাকটেরিয়া আটকা পড়ত। কিন্তু, যখন ইভানভস্কি পরিস্রুত রস একটি সুস্থ তামাকের পাতায় রাখেন, তখন এটি রোগাক্রান্ত হয়ে হলুদ হয়ে যায়। যা তিনি 1892 সালে প্রকাশ করেছিলেন। তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন যে, এই বিষটি ফিল্টার ভেদ করে যেতে পারে বা এমন ব্যাকটেরিয়া যা এ পদ্ধতিতে আটকানো যায় না।
ডাচ অনুজীব বিজ্ঞানী বেইঞ্জেরিংক আলাদাভাবে ইভানভস্কির মতো প্রায় একই রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন, তবে তিনি এসেছিলেন এক অন্যরকম সিদ্ধান্তে। তিনি জিলেটিন নামক দ্বিতীয় আরেকটি ফিল্টার ব্যবহার করেন যার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়— ব্যাকটেরিয়া ফিল্টারে আটকে যায় তবে রহস্যজনক মোজাইকের-কারণ-জীবাণুটি ফিল্টারভেদ করে ছড়িয়ে পড়ে, যা ব্যাকটেরিয়া নয়। তবে, তিনি আরেকটি বিষয় প্রমাণ করেন যে- জীবাণুগুলি আক্রান্ত পাতার মাধ্যমে ছড়াচ্ছে। কিন্তু, আশ্চর্যজনকভাবে, আক্রান্ত পাতার সাহায্য/সংস্পর্শ ব্যতিত নতুন কোন পাতায় এটি ছড়াতে পারে না৷
১৮৮৯ সালে যখন তিনি তার অনুসন্ধানগুলি প্রকাশ করেছিলেন, বেইঞ্জেরিংক এটিকে “পরিস্রুত কন্টাজিয়াম ভিভাম ফ্লুইডাম” বা, একটি সংক্রামক—”জীবন্ত-তরল” নামে অভিহিত করেছিলেন। সংক্ষিপ্তরূপে, তিনি এই নতুন ধরণের রোগজীবাণুকে বিশেষভাবে উল্লেখ করার জন্য, এই তরল বিষকে বোঝাতে ল্যাটিন থেকে ধার করা “ভাইরাস” শব্দটি চালু করেছিলেন।
ভাইরাসের স্বভাব-প্রকৃতি
মানুষ কিংবা অন্যান্য প্রাণী-উদ্ভিদের মত ভাইরাসের জীবন-প্রকৃতি এত জটিল নয় বরং সহজ-সরল। প্রতিটি প্রাণীর টিকে থাকা কিংবা বিস্তারের মাধ্যম হলো “বংশ-বৃদ্ধি”। ভাইরাসেরও বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় হলো পোষককে আক্রমণ করে বংশ বিস্তার। এক্ষেত্রে, হয়ত আমাদের জীবন-ব্যবস্থা জটিল প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হয়। কিন্তু, ভাইরাসের এই প্রকৃতি হলো একটি সরল রেখার মত।
ভাইরাসগুলি কেবলমাত্র কোনও কোষকে আক্রমণ করে প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ তারা কোষীয় কাঠামো নয়। সহজভাবে বললে দাড়ায়- তাদের নিজস্ব বংশ বা প্রতিলিপি তৈরির দক্ষতার অভাব রয়েছে। তাদের অন্যন্য সুগঠিত কোষের মত অত্যাবশ্যকীয় উপদান গুলির ঘাটতে রয়েছে। এ অভাব পূরণ করতেই তারা কোষের সাহায্য গ্রহণ করে। মূলত ভাইরাসগুলি কেবলমাত্র প্রোটিনের আবরনে মোড়ানো DNA বা RNA এর সমন্বয়ে গঠিত একটি ক্ষুদ্র প্যাকেট, যে প্রোটিনের আবরণকে ক্যাপসিড বলা হয় । অনেকটা দোকান থেকে কেনা All Time ব্রান্ডের দশ টাকার পাউরুটির মত৷ যেখানে, রুটি হলো dna/rna আর বাহিরের প্লাস্টিকের প্যাকেটটি হলো প্রোটিনের আবরণ। যদিও, রুটি যেরকম বড়, DNA/RNA ঠিক ততটাই ছোট, প্যাকেটের ভিতরে। তবে, কখনো আবার প্রোটিনের বাহিরে আরেকটি আবরণ (Enveloped ) থাকে কোন কোন ভাইরাসের। যেমনঃ DNA ভাইরাসের মধ্যে- হার্পিস ভাইরাস, পক্স ভাইরাস; RNA ভাইরাসের মধ্যে-করোনা ভাইরাস, রেট্রোভাইরাস, ফ্লাভিভাইরাস, হেপাটাইটিস-ডি ভাইরাস ইত্যাদি। অর্থাৎ, All Time এর পাউরুটি আবার কোন পলিথিন ব্যাগে রাখার মত অবস্থা।
চিত্র: ভাইরাসের গঠন
তবে, অতিরিক্ত গ্লাইকো-লিপিড/গ্লাইকো-প্রোটিনের আরেকটি বহিঃআবরণ (Enveloped) থাকায় ভাইরাসটি শক্তিশালী হবার কথা হলেও বাস্তবে দেখা যায় উল্টা ব্যাপার৷ এরকম হবার কারণটা আসলে কি?
মূলত, ভাইরাসের এ বহিঃআবরণটি তাপমাত্রা, pH, ডিটারজেন্ট, অ্যালকোহল বা, লিপিডের দ্রাবকের দ্বারা সংবেদনশীল হয়ে থাকে। যখন কোনভাবে এ বহিঃআবরণটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয় সাথে সাথে ভাইরাসের বহিঃআবরনের সাথেই সংযুক্ত রিসেপ্টর-প্রোটিনটিও নষ্ট হয়ে যায়, যা কোষের রিসেপ্টরের সাথে সংযুক্ত হতে ব্যবহৃত হত। এ কারণে ভাইরাসটি কোন কোষের সাথে সংযুক্ত হতে পারে না বা, আক্রমণ করতে পারে না।
আসল ব্যাপারটিতে আসা যাক, ভাইরাসের কাজই হলো এমন একটি কোষের সন্ধান বা আক্রমণ করা যাতে তারা প্রভাব ফেলতে পারে। সহজ-কথায়,—
যখন কোনও ভাইরাস কণা একটি উপযুক্ত পোষকের দেহে প্রবেশ করে, তখন ভাইরাসের রিসেপ্টরগুলি পোষক কোষের ঝিল্লিতে সংবেদনশীল রিসেপ্টরগুলিতে আবদ্ধ হয়। একইসাথে কোষে তার চলনশীল-জেনেটিক উপাদান (DNA/RNA) অনুপ্রবেশ করায়। অতঃপর সে জেনেটিক উপাদান থেকে নতুন অসংখ্য প্রতিরূপ তৈরী করে। আর, এভাবেই সে টিকে থাকে। উদাহরণ হিসাবে, Retroviruses (যেমন: HIV) কে ধরা যায়, এ ভাইরাসের এক-সূত্রক RNA রয়েছে। যখন এটি পোষকের দেহে প্রবেশ করে তখন একটি এনজাইমের (Reverse Transcriptase) সাহায্যে এটি দ্বি-সূত্রক DNA তে পরিবর্তিত হয়৷ অতঃপর, এই ভাইরাসের নতুন DNA টি পোষক কোষের নিউক্লিয়াসে প্রবেশ করে এবং একটি এজাইমের (Integrase) সাহায্যে পোষকের DNA জিনোমের সাথে একীভূত হয়ে যায়, অর্থাৎ মিলে যায়। এরপর, পোষকের কোষের ভিতর প্রথমে DNA হতে RNA তৈরী হয় (Transcribed) এবং অতঃপর RNA থেকে প্রোটিন তৈরী হয় ( Translated)৷ পোষক কোষের অপর একটি এনজাইমের (RNA-পলিমারেজ) সাহায্যে আবার ভাইরাসের প্রথম গঠন এক সূত্রক RNA-জিনোমের নতুন কপি তৈরি করে। এরপর, নতুন ভাইরাসগুলি পূর্ণগঠিত হয় এবং কোষ থেকে প্রস্থান করে (Lytic/Lysogenic) এবং আবার পূর্বের ন্যায় এ প্রক্রিয়া শুরু করে এবং বংশবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখে।
কিন্তু, প্রশ্ন হলো কিভাবে ভাইরাসের এই জেনেটিক উপাদান গুলি পোষকের কোষে প্রবেশ করে?
ভাইরাসের রিসেপ্টরটি কোষের রিসেপ্টরের সাথে সংযুক্ত হবার সাথে সাথেই তিন ধরণের প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে৷ যথা: জেনেটিক ইনজেকশন, ঝিল্লী/আবরনের ফিউশন, এন্ডোসাইটোসিস।
জেনেটিক ইনজেকশন প্রক্রিয়াটি ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ঘটে থাকে। তাই, বাকি দুটি সম্পর্কে জানা যাক। যেহেতু, প্রাণী সম্পর্কে আলোচনায় মুখ্য। এরপরে, দুটি জিনিস দুটিই ঘটতে পারে:
১. ঝিল্লি ফিউশন: এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে Enveloped ভাইরাস, পোষকের কোষগুলিতে প্রবেশ করে। এটিতে পোষক-কোষের ঝিল্লির সাথে ভাইরাস ঝিল্লির সংশ্লেষ বা, একত্রীকরণ (ফিউশন) জড়িত থাকে। যা ভাইরাসের পৃষ্ঠের ট্রান্সমেমব্রেন-প্রোটিন দ্বারা মধ্যস্থতা হয়।
২. এন্ডোসাইটোসিসের: যদি ভাইরাসটির Enveloped না থাকে তবে পোষক-কোষের ঝিল্লির সাথে ভাইরাসের সংযুক্তির ফলে একটি ভেসিকাল গঠনের সূচনা করবে যার ফলে ভাইরাসটি কোষে প্রবেশ করবে। মূলত কোষকে ধোঁকা দেয়া হয়, যে কোষের বাহিরে খাবার এসেছে৷ একবার কোষের মধ্যে ভ্যাসিকালটি খোলার পরে, ক্যাপসিডটি প্রোটিয়েজ (লাইটিক এনজাইম) দ্বারা ভেঙ্গে যায় ও DNA/RNA মুক্ত হয়।
তবে, গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো- কোষের সাথে ভাইরাসের সংযুক্ত হবার জন্যে যে রিসেপ্টর বিদ্যমান, তা ভিন্ন ভাইরাসের ক্ষেত্রে যেমন রিসেপ্টরের ভিন্নতা রয়েছে তেমনি আমাদের কোষেও। যেমন: আমাদের প্রতিরক্ষা কোষে (T-সাহায্যকারী কোষ, মনোসাইট, ম্যাক্রোফেজ, ডেনড্রাইটিক কোষ) CD-4 নামক রিসেপ্টর রয়েছে যার সঙ্গে HIV-1 ভাইরাসের গ্লাইকোপ্রোটিন ( gp120) রিসেপ্টর সংযুক্ত হয়। আবার, পোলিও ভাইরাসের রিসেপ্টর (স্পাইক) মানুষের CD155 রিসেপ্টরের সাথে সংযুক্ত হয়; মানুষের সর্দি-কাশির জন্য দায়ী Rhinovirus মানুষের ICAM-1 নামক রিসেপ্টরের সাথে সংযুক্ত হয়; করোনা গ্রুপের Sars-Cov-2 এর রিসেপ্টর (Spike protein) মানুষের মুখ এবং নাকের মিউকোসা, ন্যাসোফ্যারিংক্স, ফুসফুস, লিভার, কিডনি ইত্যাদিতে থাকা ACE-2 নামক রিসেপ্টরের সাথে সংযুক্ত হতে পারে। অর্থাৎ, কেবলমাত্র দুটি রিসেপ্টর পরিপূরক হলেই ভাইরাসও কোষের এ সংযুক্তি ঘটে। সংযুক্তি হবার পর উপরোক্ত পদ্ধতিতে জেনেটিক উপাদান কোষে অনুপ্রবেশ করে ও নতুন ভাইরাস উৎপন্ন করে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, পোষক ছাড়া ভাইরাস একাকী বংশ-বিস্তার করতে পারে না। অর্থাৎ, কোন কারণে পোষক না পেলে কার্যতই ভাইরাসের কর্মক্ষেত্র অনেকটা বিলীন হয়ে যায়। যেমনটি আমাদের দেশের পোলিও ভাইরাসের ব্যাপারে বলা যায়— “পোলিও মুক্ত” ৷ কেননা, ভাইরাসটি আক্রমণ ও বংশবিস্তার করার জন্যে পোষক দেহ খুজে পায় না। কারণ, তখন মানবদেহে ভ্যাক্সিনেশন পদ্ধতিতে অ্যান্টিবডির মাধ্যমে অনাক্রম্যতা সৃষ্টি হয়। আর এতে ভাইরাস বংশবিস্তার করার সুযোগ পায় না বলে রোগও তৈরী করতে পারে না ফলে পরাজয় ঘটে ভাইরাসের।
তথ্যসূত্রঃ
২. viruses-history-tobacco-mosaic-disease
Leave a Reply