ভাইরাস এবং ভ্যাক্সিন এখন বলা যায় “ভয় এবং ভরসা” শব্দ দুইটির সাথে বেশি যায়। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে আমরা বুঝতে পেরেছি ভাইরাস যতটা না সহজলভ্য, ভ্যাক্সিন ততটাই মূল্যবান আর কষ্টসাধ্য৷ পাশাপাশি কোভিড-১৯ মহামারীর কারণেই গত কয়েক মাসে জনসাধারণ অনেকগুলি বৈজ্ঞানিক শব্দের সাথে পরিচিত হয়েছে। যেমন: কোয়ারেন্টাইন বা সঙ্গনিরোধ, লকডাউন, মাস্ক বা মুখোশ পরিধান, সামাজিক দূরত্ব ইত্যাদি। এসব শিখতে গিয়েই আমাদের ভাইরাস সংক্রামণ কমাতে PCR পদ্ধতিতে ভাইরাস সনাক্তকরণের মতো সুক্ষ্ম বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া জানতে হয়েছে। তবে, সাম্প্রতিক সময়ের খবরে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়বে “এম-আরএনএ (mRNA) ভ্যাক্সিন” শব্দটি। দুইটি কোম্পানির তৈরি mRNA-ভ্যাক্সিন করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য ফলাফল দেখিয়েছে। অবশ্য আপনি যদি জীববিজ্ঞানে পড়াশোনা না করে থাকেন তবে এই “বার্তাবাহক বা মেসেঞ্জার রাইবোনিউক্লিক-এসিড” (mRNA) বেশ কঠিন একটা শব্দ মনে হবে। এমনকি ভ্যাক্সিন গবেষণার সেক্টরেও দশ বছর আগে আপনি যদি বলতেন, mRNA দেহে প্রবেশ করিয়ে আপনি মানুষকে সংক্রামণ থেকে রক্ষা করতে পারবেন, তাহলে বিজ্ঞানীরা আপনার দিকে বেশ কটু ভাবেই তাকাতো এতটুকু বলাই যায়৷
কিভাবে এম-আরএনএ ভ্যাক্সিন কাজ করে??
ভ্যাক্সিনের কাজ হলো ভাইরাসের যে অংশটি রোগ তৈরীতে দায়ী, তার সাথে আমাদের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে চিনিয়ে দেয়া। সাধারণ ভ্যাক্সিনগুলি দুর্বল ভাইরাস কিংবা ভাইরাসের বিশুদ্ধ প্রোটিন থেকে তৈরী করা হয়৷ তবে, mRNA ভ্যাক্সিন হলো এদিক থেকে আলাদা। ভাইরাসের কোন প্রোটিন মানব দেহে প্রবেশ করানোর পরিবর্তে জেনেটিক উপাদান- mRNA প্রবেশ করানো হয়, যা থেকে ভাইরাসের প্রোটিন উৎপন্ন হয়।
mRNA হলো জীবিত কোষের একটি উপাদান যা DNA এর জিন-সিকুয়েন্সকে প্রোটিনে রূপান্তরে সাহায্য করে। আর কোষের গাঠনিক উপাদান প্রোটিন দিয়ে তৈরি। DNA এর একটি অংশ mRNA তে রূপান্তিত হয় যা কোষের দ্বারা “পঠিত/read” হবার পরে প্রোটিনে পরিণত হয়। আর mRNA ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে বাহুর পেশীতে এই জেনেটিক উপাদান অনুপ্রবেশের ফলে দেহের পেশীর কোষগুলো একে ভাইরাসের প্রোটিনে রূপান্তরিত করে৷ এপদ্ধতিটি SARS-CoV-2 ভাইরাসের বংশগতির ক্রিয়াকলাপেরই নকল। ভ্যাক্সিন হিসাবে mRNA অংশটি দেহে প্রবেশের পর ভাইরাসের প্রোটিনে পরিণত হয়৷ যা রোগ তৈরী করা ছাড়াই আমাদের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সত্যিকারের ভাইরাসের গঠন সম্পর্কে পরিচিত করে দেয়৷ এটি রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী অ্যান্টিবডি তৈরীতে সহায়তা করে, যা পরবর্তীতে ব্যক্তি আক্রান্ত হলে সহজেই ভাইরাসটিকে দমন করতে পারে৷ তবে, এই সংশ্লেষিক-mRNA বংশগতীর উপাদান হলেও পরবর্তী প্রজন্মে স্থানান্তরিত হয় না৷ ভ্যাক্সিন অনুপ্রবেশের পরে পেশী কোষের মাধ্যমেই প্রোটিন অণু তৈরী হয় যা ২৪-৪৮ ঘন্টা এবং সর্বোচ্চ অল্প কিছুদিন স্থায়ী হয়।
এটা সায়েন্স-ফিকশনের মত কিংবা তাত্ত্বিক ব্যাপার মনে হলেও সম্প্রতি আমরা জানতে পেরেছি এটি সম্ভব। গবেষণাগারের পেট্রি প্লেটে ব্যাকটেরিয়ার মত ভাইরাসের চাষাবাদ করা (জীবিত কোষ ব্যতিত) না গেলেও, বাস্তবিক জীবনে পরীক্ষাগারে এর প্রয়োগ এই mRNA পদ্ধতিতে করা সম্ভব হয়েছে। কোভিড-১৯ এর যে দুটি ভ্যাক্সিন (ফাইজার আর মডার্নার কোম্পানির তৈরীকৃত ভ্যাক্সিন) ক্লিনিকাল ট্রায়ালের তৃতীয় ধাপে পৌছানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে তা ছিলো এই mRNA-ভ্যাক্সিন। কারণ, করোনার জন্যে দায়ী SARS-CoV-2 ভাইরাসটির জেনেটিক উপাদান জানার সঙ্গে সঙ্গেই যে কোম্পানিগুলি এই পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলো, তারা সহজেই ভাইরাসের mRNA তৈরীতে সক্ষম হয়েছিলো৷ এছাড়া, প্রচলিত পদ্ধতিতে ভ্যাক্সিন তৈরী করা খুবই সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
কেন প্রচলিত ভ্যাক্সিনের চেয়ে mRNA ভ্যাক্সিন বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
যদিও প্রচলিত পদ্ধতিতে ভ্যাক্সিন তৈরী সম্পর্কে প্রচুর গবেষণা রয়েছে তবু এটি অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ। পাশাপাশি কোভিড-১৯ এর মত মহামারীর ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে এ পদ্ধতি কাজে আসে না৷ উদাহরণ হিসাবে বলা যায় ইনফ্লুয়েন্জা ভাইরাসের কথা৷ প্রচলিত ভ্যাক্সিন তৈরীর জন্যে এই ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের প্রজাতি শনাক্ত করতে লেগেছিলে ৬ মাস। আর, ভ্যাক্সিন তৈরীর জন্যে ভাইরাসটিকে হাইব্রিড-ভাইরাসে তৈরী করতে সময় লেগেছে ৩ সপ্তাহের মত। যে হাইব্রিড ভাইরাসটি ছিলো কম ক্ষতিকর তাকে মুরগীর ডিমের ভিতর প্রবেশ করিয়ে তৈরী করতে হত৷ হাইব্রিড ভাইরাসটি অনেকগুলো নিষিক্ত ডিমের মধ্যে ঢুকিয়ে আরো সংখ্যা বৃদ্ধি করতে কয়েক দিনের জন্য রাখা হত। অতঃপর, ডিম থেকে ভাইরাসযুক্ত তরল সংগ্রহ করে, ভ্যাকসিনের ভাইরাসগুলি নিষ্ক্রিয় করে ফেলা হতো। একদম শেষে ভাইরাসের প্রোটিনগুলি বিশুদ্ধ করতে দীর্ঘ সময় ব্যয়ের মাধ্যমে ভ্যাক্সিন তৈরী হতো ।
mRNA ভ্যাক্সিনের গবেষণা প্রচলিত ভ্যাক্সিন থেকে দ্রুত করা যায়। কারণ, অসংক্রামিত ভাইরাস কিংবা ভাইরাসের বিশুদ্ধ প্রোটিন তৈরীর মত জটিল বিষয় এখানে নেই। ভ্যাক্সিনের জন্য mRNA তৈরী জৈবিক সংশ্লেষের পরিবর্তে রাসায়নিকভাবেই উৎপন্ন করা যায়। যার ফলে পুনরায়-নকশা তৈরী কিংবা অত্যাধিক মাত্রায় উৎপাদন করাও সহজ।
কোভিড ভ্যাক্সিনে আশার বিপরীতে কোন দুশ্চিন্তা কি রয়েছে?
অনেকগুলো সতর্কতামূলক প্রশ্ন এখনো রয়েছে কোভিড-১৯ ভ্যক্সিন সম্পর্কে।যারা ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের সুরক্ষা কতদিন টিকে থাকবে? কিংবা, ভ্যাক্সিন আক্রান্ত হওয়া রোগীকে শুধু রক্ষা করতে নয় বরং তাদের আক্রমণ থামাতে এবং রোগটি ছড়িয়ে পড়া দমন করতে পারে কি? আবার, কোন নতুন ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে আমরা এর নিরাপত্তা ও প্রতিক্রিয়ার দিকটা বিবেচনা করি। সাধারণ ড্রাগ বা ঔষুধ দেয়া হয় অসুস্থ ব্যক্তির সুস্থতার জন্যে, কিন্তু ভ্যাক্সিন সুস্থ ব্যক্তিকে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা দেয়ার জন্য দেয়া হয়৷ ভ্যাক্সিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যদি হালকা এবং স্বল্প মেয়াদী হয়, তাহলেই সেটি গ্রহণযোগ্য। ভ্যাক্সিনের ফলে গুরুতর অসুস্থতা অবশ্যই ভয়ের ও পরিহার্য বিষয় । তবে, mRNA ভ্যাক্সিন অবশ্যই নিরাপদ হওয়া উচিত। আমাদের সকল কোষে সবসময়ই এর প্রাচুর্যতা দেখা যায়। পাশাপাশি mRNA বেশ ক্ষণস্থায়ী উপাদান৷ প্রোটিন তৈরী হবার পরে সহজেই এটি দ্রুত ভেঙ্গে যায়। এটি অস্থিতিশীল, একই সাথে সহজেই ভেঙ্গে ছোট উপাদানে পরিণত করা যায়। আবার, কখনো মানব দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থার দ্বারাও সহজেই ধ্বংস হয়ে যায়, যা মূল লক্ষ্যে পৌঁছানোতে বাঁধার সৃষ্টি করে। এমনকি, ল্যাবে mRNA নিয়ে কাজ করাও বেশ দুঃসাধ্য কেননা এটি দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে৷ একারণেই দেহে প্রবেশের পরে mRNA ভ্যাক্সিন বেশি সময় থাকে না৷
যেহেতু mRNA বংশগতীর একটি উপাদান সে কারণে জিনগত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মত ঝুঁকিও এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তবে, মানুষের কোষ অভ্যন্তরে DNA থেকে RNA তৈরী হয়, এর উল্টাটা ঘটে না। অর্থাৎ, পুনরায় RNA টি DNA তে পরিবর্তন এবং আমাদের জিনকে পরিবর্তন করতে পারে না৷ ব্যতিক্রম হিসাবে বলা যায় রেট্রোভাইরাস, যাদের একটা উদাহরণ HIV ভাইরাস৷ অবশ্য নিরাপত্তার এই আত্মবিশ্বাস অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই আসে৷ তবে, mRNA ভ্যাক্সিনের আরেকটি সমস্যা হলো সংরক্ষণের বিষয়টি৷ ফাইজারের mRNA ভ্যাকসিনটি মাইনাস (-) ৭০° সেলসিয়াসে সংরক্ষণ করতে হয় এবং ফ্রিজের স্বাভাবিক তাপমাত্রার বেশিতে ৫ দিনের মধ্যে ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। অন্যদিকে, মডার্নার ভ্যাক্সিনটি পরিবহন কিংবা দীর্ঘদিন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ঘরের কিংবা হাসপাতালের ফ্রিজের -২০° তাপমাত্রায় ৬ মাস পর্যন্ত রাখা যায়৷
ভ্যাক্সিন ট্রায়ালের সম্ভাবনাময়ী ফলাফল
মডার্নার mRNA-1273 নামক যে ভ্যাক্সিনটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তৃতীয় ধাপে পৌছায় তাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩০ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ অংশগ্রহন করেছিলো৷ এর মধ্যে ৯৫ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে মাত্র ৫ জনকে টিকা দেয়া হয়েছিলো, যেখানে ৯০ টি টিকা ছিলো প্লাসিবো (ভ্যাক্সিনের বদলে পানি)। এ সংখ্যার মাধ্যমে ৯৪.৫% কার্যকারিতা প্রকাশ পায়। যারা সত্যিকারের ভ্যাক্সিন পায় তাদের কাউকেই কোভিড-১৯ গুরুতরভাবে আক্রান্ত করতে পারে নি৷ তবে, যারা প্লাসিবো পায় তাদের ১১% গুরুতর আক্রান্ত হয়। একইভাবে, BNT162b2 নামক ফাইজার-বায়োএনটেকের যে ভ্যাক্সিনটি ক্লিনিকাল ট্রায়ালের তৃতীয় ধাপে পৌছায় সংক্রমণ প্রতিরোধে তার কার্যকরীতা ছিলো ৯০ শতাংশ৷ যেখানে, ৪৩,৫৩৮ জন অংশগ্রহন করেছিলো যার ৩০% ছিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এবং ৪২% ছিলো বাহিরের৷ পাশাপাশি mRNA ভ্যাক্সিন ছাড়াও আলোচিত আরো দুটি প্রচলিত ভ্যাক্সিনের কথা না বললেও ঠিক হবে না৷ যেমন: অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির “অ্যাস্ট্রাজেনিকা” এবং গামালিয়ার “স্পুটনিক-৫” যা ছকের মাধ্যমে চিত্রিত হয়েছে।
এই নতুন ভ্যাক্সিনের অতুলনীয় কর্মক্ষমতা বর্তমানে অন্যান্য যেসব ভ্যাক্সিনের গবেষণা চলছে তাদের সহজেই গ্রহণ করতে উৎসাহ দিবে৷ অবশ্য এটি নির্ভর করে অন্যান্যগুলি কিভাবে কাজ করবে এবং ফলাফলের শুরুটা কতটা কার্যকরী এবং দ্রুত গতির। তবে, এই mRNA ভ্যাক্সিন কি ভবিষ্যতে সকল ভ্যাক্সিনের প্রতিনিধিত্ব করবে কিনা সে প্রশ্নও তৈরি করে৷ যদি mRNA দিয়ে তৈরী এই করোনা ভাইরাসের ভ্যাক্সিন দ্রুত তৈরী করা যায় এবং ঠিকঠাক মত কাজও করে, তবে এই পদ্ধতি পরবর্তীতে কেন ব্যবহার করবো না? হয়ত, mRNA হয়ে উঠবে ভ্যাক্সিন তৈরির মূলধারার প্রক্রিয়া৷ mRNA নতুন ভ্যাক্সিন তৈরীর জন্য সেরা পদ্ধতি হোক বা না হোক এটা স্পষ্ট যে, বিশ্বব্যাপী মহামারীর বিপর্যয়ের এই অবস্থায় দ্রুতই নতুনত্বকে বরণ করতে উৎসাহিত করবে৷ একবছর আগেও মানুষ ভেবেছিলো ১বছরের মধ্যে ভ্যাক্সিন তৈরী ও ব্যবহার উপযোগী করা অসম্ভব একটি ব্যাপার৷ কিন্তু, ২০২০ এর ডিসেম্বরেই দুটি কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন কেন্দ্রীয়ভাবে অনুমোদন পাওয়ার পথে এবং আরো অনেকগুলি খুব বেশি দূরেও নেই৷ আমরা যদি এককভাবে কোন নায়ক বা নেতাকে এই mRNA ভ্যাক্সিনের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির জন্যে সম্মানিত করতে চাই সেটা সম্ভব নয়৷ mRNA ভ্যাক্সিন বহু বিভাগের বহু গবেষকের সহযোগী-প্রচেষ্টার ফসল। এমনকি ভ্যাক্সিনকে জনসাধারণের ব্যবহার উপযোগী করার জন্যেও এর ট্রায়ালের ব্যাপারে বহু সাহসী এবং পরোপকারী স্বেচ্ছাসেবীর প্রয়োজন৷ তবে, mRNA ভ্যাকসিনগুলি ইতিহাসের অংশ হতে যাচ্ছে। মানুষের বুদ্ধি, উদ্ভাবন এবং নিখুঁত পরিশ্রমের মাধ্যমে আমরা অবশেষে এই কোভিড-১৯ মহামারী বিপর্যয় থেকে মুক্ত হওয়ার পথে আছি।
তথ্যসূত্র:
১. Is this the beginning of an mRNA vaccine revolution? এডাম ফিন, গার্ডিয়ান
৪. How close are we to a safe, effective COVID-19 vaccine? স্টাফ রিপোর্ট, হাব, জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি
Leave a Reply