১.
যদি আপনি ঠিকমতো খেয়াল করে না থাকেন, গত কয়েক বছরে জিনোমিকসবিদ্যায় অনেক কিছুই ঘটে যাচ্ছে। যেমন এখন কোন মানুষের জিনোম পড়ে সেখানে থাকা সকল ভুল সংশোধন করা সম্ভব। শুনতে ভীতিকর মনে হতে পারে, কিন্তু জিনোমিকসের অজস্র রেকর্ড আছে বিজ্ঞান-কল্পকাহিনীকে বাস্তবে পরিণত করার। ক্যামব্রিয়ান জেনোমিকসের সিইও অস্টিন হেইনজ গর্ব নিয়ে যেমনটা বলেছেন – ‘যা কিছুই জীবিত সকলকেই আমরা নতুন করে লিখতে চাই।’
মাত্র ২০১০ সালে মেরিল্যান্ডে ক্রেইগ ভেন্টরের নের্তৃত্বে আমারা কৃত্রিম জিনোমিকসের যুগে প্রবেশ করি। তাঁরা তখন সিন্থিয়া তৈরি করেছিলেন – যা হলো বিশ্বের প্রথম ব্যক্টেরিয়া যার মাতা (এক অর্থে) কম্পিউটার। ব্যক্টেরিয়াটি খুবই সরল, তার ডিএনএ মাত্র কয়েক কোটি অক্ষর (নিউক্লিক এসিড বেস) দিয়ে লেখা। কিন্তু ডিএনএটি অনেক দূর পর্যন্ত বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে এর সাথে কৃত্রিম ইস্ট ও কৃত্রিম কীট প্রকল্পের কাজ এখন চলছে।
সিন্থিয়ার জন্মের দুই বছর পর সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তি এতটাই উন্নত হয়ে গেল যে তা সাইবেরিয়ার এক হিমায়িত গুহায় খুঁজে পাওয়া গোলাপ-রাঙা হাড় থেকে ৮০,০০০ বছর পুরনো মানব-প্রজাতীর জিনোম সিকোয়েন্স করতে ব্যবহৃত হয়েছে। এ মানবগোষ্ঠী এখন ডেনিসোভান নামে পরিচিত। ২০১৫ সালে যুক্তরাজ্য তিন-জনকের সন্তান জন্মদানকে আইনত বৈধ ঘোষণা করে। মানে এমন সন্তান যার একজন জৈবমাতা, একজন পিতাসহ আরেকজন মাতা রয়েছেন। এ দ্বিতীয় মাতা সুস্থ মাইটোকন্ড্রিয়াল জিনোম দান করেন, যে মাইটোকন্ড্রিয়া সকল মানব কোষের শক্তি-কারখানা।
জীববিদ্যাকে আমরা এখন যেভাবে জানি তা বদলে ফেলার মতো শক্তি রাখে নতুন প্রযুক্তিগুলো। একই সাথে এরা বিভিন্ন নৈতিক-বিতর্ককেও পুনরায় জাগিয়ে তুলে পরিচালিত করছে। শুধু সাধারণ মানুষরাই নয়, বড় বড় বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রায়ই তাঁদের অস্বস্তির কথা প্রকাশ করছেন। গত বছরের এপ্রিলে যখন চীনের একটি গবেষণাপ্রবন্ধ মানব-ভ্রুণে ডিএনএ পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করলো, ‘CRISPR/Cas9’-এর মতো খটোমটো একটা শব্দ টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উন্মত্ততা ছড়ালো। CRISPR/Cas9 হচ্ছে এক ধরণের প্রোটিন-আরএনএ মিশ্রণ। এ মিশ্রণটি ব্যক্টেরিয়া আক্রমণকারী ভাইরাসেদের প্রতিহত করে। ঠিকমতো পরিবর্তন করলে এ মিশ্রণ কোষের ভেতরে ডিএনএ-র সুনির্দিষ্ট অংশ সম্পাদনার জন্য অভাবনীয় নির্ভূলতার সাথে বিজ্ঞানীদের সহায়তা করে। উদাহরণ দেয়া যায় কিভাবে এই প্রযুক্তি মানব জিনোমে ঢুকে পড়া এইচআইভি ভাইরাসের ডিএনএ কেটে বের করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে, কিংবা স্ত্রী-মশকীর লিঙ্গ পুরুষে রূপান্তরিত করা হয়ছে ম্যালেরিয়ার বিস্তার রোধ করার জন্য।
ক্রিসপারের একজন সহপ্রস্তুতকারী ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনিফার ডওডনা নৈতিক বিতর্কগুলো ঠিকমতো পর্যালোচনা না করে মানব জিনোম সম্পাদনা কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করেন। তবে চীনকে এজন্য ধন্যবাদ দিতে হয় যে “জাহাজ অন্তত যাত্রা শুরু করে দিয়েছে”। অবশ্য ক্রিসপার প্রযুক্তিটি শখের-জীববিজ্ঞান চর্চাকারীদের হাতেও চলে গেছে। গবেষণা সাময়িকী ন্যাচার-এর একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে ক্রিসপার নিয়ে নাড়াচাড়া করা ‘বায়োহ্যাকার’ গোষ্ঠির সদস্যদের কথা উঠে এসেছে। যদিও ঐ প্রতিবেদনে সাক্ষাৎকার দেয়া উৎসাহী-সৌখিন ক্রিসপার দিয়ে ঠিক কি করতে চান তা পরিস্কার করে বলতে পারেন নি।
আরো পড়ুন: ১. ক্রিসপার-শিশুর জন্ম-বিতর্ক : পৃথিবী কি জিনোম-সম্পাদিত শিশুদের স্বাগত জানাবে? ২. ক্রিসপার ও জিনোম সম্পাদনা ৩. বায়োহ্যাকার বদলে দিলেন নিজের ডিএনএ
বংশগতি নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে আমাদের সামর্থ্য একটি ক্রান্তিসীমায় পৌঁছে গেছে। এ বিষয়টি খেয়াল করলে আগামী কয়েক বছরে এ সামর্থ্য কোন পর্যায়ে যাবে তা ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখাটা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন, ডিএনএ কি শক্তি-উৎপাদন সংক্রান্ত কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমাধান দিতে পারবে? একটি প্রকল্পের কথা উল্লেখ যায় যার লক্ষ্য গাছকে এমন কৌশলে পরিবর্তন করা যেন তা অন্ধকারে জ্বল জ্বল করে। আপনি এখনই ইন্টারনেটে আগে থেকেই এরকম জিনিস কেনার ফরমাশ দিয়ে রাখতে পারেন। অন্তত এর আগাছা সংস্করণটি কেনার ফরমাশ দিতে পারেন। গাছকে উপযুক্ত আদিরূপ (প্রোটোটাইপ) হিসেবে ব্যবহার করা অনেক ঝামেলার। কারণ গাছ পরিপক্ব হতে বেশ সময় নেয়। তবে হয়তো এমন দিন বেশি দূরে নয় যখন আমরা দেখবো রাস্তাঘাটের দুইপাশে অন্ধকারে জ্বলজ্বলকরা গাছপালা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে। ফলে হয়তো রাস্তার বাতি বিলুপ্তপ্রায় হয়ে যাবে, যেমন হয়েছে শক্তি-খেকো অনেক ‘পুরোনো’ প্রযুক্তি।
কিন্তু এ উদাহরণগুলো অন্যান্য প্রকল্পের মতো নয় যেগুলো হয়তো বৈপ্লবিক হয়ে দাঁড়াবে। এগুলো পরবর্তী পাঁচ বা দশ বছরের মধ্যে শুরু হবে। ভেন্টর শুকরের ফুসফুস ভিন্নভাবে বদলাতে চাচ্ছেন। উদ্দেশ্য হলো যাতে বদলানো ফুসফুস মানবদেহে অঙ্গস্থাপনের জন্য ব্যবহার করা যায়। এ প্রকল্প সফল হলে তার বৃহত্তর প্রভাব কি হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। ইউরোপে প্রতি দশজনে একজন ফুসফুসের রোগে মারা যান। এছাড়াও ভেন্টর মঙ্গলগ্রহে ডিএনএ সিকোয়েন্সারের পাঠানোর মাধ্যমে প্রাণ অনুসন্ধানের প্রতিযোগীতায় নেমেছেন। এছাড়া তিনি “জৈব-টেলিপোর্টেশন” পদ্ধতি তৈরির চেষ্টা করছেন। এর উদ্দেশ্য মঙ্গল গ্রহে প্রাপ্ত অণুজীবের ডিএনএ সিকোয়েন্স করে তার জিনোম পৃথিবীতে থ্রিডি-প্রিন্টারের মাধ্যমে তৈরি করা। এই পদ্ধতি উল্টোপথেও কাজ করতে পারে। ভেন্টর ও এলন মাস্ক এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে থ্রিডি-প্রিন্টারের মাধ্যমে পৃথিবীর অণুজীবগুলো তৈরি করে মঙ্গলগ্রহকে পৃথিবীর মতো রূপান্তরিত করার কথা বলছেন। এই কল্পনা হয়তো আত্মা-কাঁপিয়ে দিতে পারে। তবে ভেন্টর ও মাস্ক এরকম অবিশ্বাস্য কার্যকলাপ করার মতো পরিস্থিতিতে রয়েছেন (উদাহরণসরূপ ভেন্টরের সিন্থিয়া বা কৃত্রিম জিনোম কিংবা সর্বপ্রথম মানব জিনোম সিকোয়েন্সের গল্প বলা যায় – অনুবাদক)। যাই হোক, আমাদের এই যাত্রা হয়তো পৃথিবী থেকেই শুরু করাই ভালো হবে।
২.
২০২০ সালের মধ্যে অনেক হাসপাতালেই জেনোমিক ঔষুধ বিভাগ খুঁজে পাওয়া যাবে। সেখানে আপনার বংশগতির নিজস্ব গঠন অনুযায়ী চিকিৎসা থেরাপি তৈরি করা হবে। সামান্য রক্ত থেকে আপনার সমগ্র বংশগতির রেসিপি বের করার জিন সিকোয়েন্সার ছোট হয়ে ইউএসবি ড্রাইভের মতো আকারে চলে আসবে। সুপার মার্কেটের শেলফে পাওয়া যাবে বাসায় ডিএনএ টেস্ট করার জন্য বহনযোগ্য প্রোব। হয়তো বিষয়টা তখন ঔষুধ ও কসমেটিকসের মাঝামাঝি কোনকিছুতে পরিণত হবে। এ প্রোবগুলো দিয়ে আপনার নবজাতক শিশু খেলাধুলায় ভালো হবে কি না তা থেকে শুরু করে নতুন কেনা বেড়ালটি কোন প্রজাতির কিংবা আপনার রান্নাঘরের টেবিলের উপর যথেষ্ট পরিমাণে “ভালো ব্যক্টেরিয়া” রয়েছে কি না, ইত্যাদি বিষয় পরীক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত হবে। আপনার অন্ত্রে বসবাসরত অণুজীবের গুণগত মান বা এ ধরণের ব্যক্তিগত ডিএনএ-কেন্দ্রিক কাহিনী তখন বিভিন্ন ককটেল পার্টিতে গালগল্পের বিষয়ে পরিণত হবে।
এখনকার হিসাব অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে শতকোটি মানুষের জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়ে যাবে। এটি বিশেষ করে ক্যান্সার জেনোমিকসের ক্ষেত্রে বিষ্ফোরক বৃদ্ধির সূচনা করবে। অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস্ যেমন জেনোমিক চিকিৎসার প্রথম দিকের একজন গ্রাহক ছিলেন। যখন তাঁর ক্যান্সার হয়েছিলো তখন তিনি নিজের জিনোম সিকোয়েন্সিং করেছিলেন। অন্যরাও তাকে অনুসরণ করবে। আমাদের জিন কি বলে তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আমরা দিনকে দিন আগ্রহী হবো। এঞ্জেলিনা জোলি যেমন স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি উপড়ে ফেলার জন্য তাঁর দুইটি স্তনই কেটে ফেলেছেন। তেমনই সমাজ একসময় অনেকগুলো জিনের অবস্থা বিশ্লেষণ না করে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা ভাবতেই পারবে না। ইতিমধ্যেই একটি গবেষণায় ‘এঞ্জেলিনা জোলি প্রভাব’ মাপা হয়েছে। এ প্রভাবে স্তন ক্যান্স্যারের ঝুঁকি নির্ণয়ের জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করতে আসা মহিলার সংখ্যা এঞ্জেলিনা জোলির বক্তব্য প্রকাশের পর দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
ভালো হোক বা মন্দ হোক আমরা ক্রমেই ডিএনএ দিয়ে নিজেদের চেনাতে থাকবো। আলঝেইমার রোগের এ পর্যন্ত জানা সবচেয়ে বড় বংশগতীয় নির্ণায়ক ApoE জিনের গোপনীয়তা বিষয়ক বিতর্কে এর পূর্বচিহ্ন ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে। ২০০৭ সালে ডিএনএ-র গঠন আবিষ্কর্তাদের মধ্য অন্যতম জেমস ওয়াটসন বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসাবে নিজের জিনোম সিকোয়েন্স করান। তাঁর ApoE জিনটি আলঝেইমারের ঝুঁকি বহন করে কি না তা জানতে তিনি অস্বীকার করেন। হয়তো তাঁকে তাঁর মায়ের মতো একই ভাগ্য বরণ করতে হবে এ ভয় পেয়েছিলেন, যিনি ডিমনেশিয়া (স্মৃতিভ্রংশ) রোগে মারা গিয়েছিলেন। অন্য দিকে জিনোম-তথ্য মুক্ত করে দেয়া উচিত – এ মতের অন্যতম প্রবক্তা জন উইলব্যাঙ্ক নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন যে তাঁর জিনোম-প্রোফাইল আলঝেইমার রোগের একটি ঝুঁকি বহন করে। সমাজে এসব দ্বিধা মোকাবেলা করতে নতুন রীতির প্রচলন করতে হবে। তবে ওয়াটসন নাকি উইলব্যাঙ্ক – সমাজ কোন পথে যাবে সেটাই দেখার বিষয়।
আমেরিকার ভবিষ্যৎদ্রষ্টা ও উদ্যোক্তা পিটার ডায়মান্ডিস যাকে বলেন ‘নিখুঁত জ্ঞান’, ডিএনএ সেই দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক পরিবর্তনে গভীরতর অবদান রাখবে। ডায়ামান্ডিস মূলত সর্বত্র-উপস্থিত ক্যামেরা নিয়েই চিন্তা করেছিলেন:
ট্রিলিয়ন-সংখ্যক সেন্সর দিয়ে সব জায়গা থেকে (স্বচালিত গাড়ি, কৃত্রিম উপগ্রহ, ড্রোন, পরিধানযোগ্য গ্যাজেট, ক্যামেরা) তথ্য নিয়ে আপনি যখন ইচ্ছা, যেখান থেকে ইচ্ছা, যা ইচ্ছা তা সম্পর্কে জানতে পারবেন, আর সে তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারবেন প্রশ্নোত্তর ও অন্তর্দৃষ্টি লাভ করার জন্য।
খেয়াল করে দেখুন তিনি যা বোঝাতে চাচ্ছেন তা কিছু কিছু ক্ষেত্রে সুনিশ্চিত। যেমন ভূগোল। স্যাটেলাইট ইমেজিং প্রযুক্তির কারণে আমরা পৃথিবীর সমগ্র পৃষ্ঠ দেখতে পাই। এখন কোন অনাবিষ্কৃত অঞ্চল নেই। পৃথিবীর মানচিত্র এখন সম্পূর্ণ। তেমনি আমরা বংশগতি নিয়েও একই আশা করতে পারি। ডিএনএ পরীক্ষা এতটাই ব্যপ্তিশীল হবে যে তা সমাজের চিকিৎসাব্যবস্থা, আইনগত ও সামাজিক ভিত্তিকে রূপান্তরিত করে দেবে। যদি সার্বজনীন জিনোম সিকোয়েন্সিং শুরু হয়, তখন মানব সম্পর্ককে দুর্বোধ্য করে রাখা কিংবা আমাদের ডিএনএর বিষয়বস্তুকে উপেক্ষা করা একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়বে।
ভবিষ্যতে কি ঘটতে পারে তার নিদর্শন ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যপী দেখা যাচ্ছে। অপরাধ প্রমাণের জন্য ডিএনএ পরীক্ষা এখন কষ্টিপাথরের মতো গ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে। একজন সাম্ভাব্য অপরাধীকে চিহ্নিত করার জন্য এখন কেবল একটি চুল, আঙুলের ছাপ, বা ব্যবহৃত পানির গ্লাস লাগে। এফবিআই-এর CODIS তথ্যভান্ডারে কয়েক কোটি ডিএনএ প্রোফাইল আছে যার বিপরীতে মিল খোঁজা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সুরক্ষিত গোষ্ঠি পোষা প্রাণী থেকেও ডিএনএ নমুনা দাবী করে। যেসব মালিক তাদের পোষা প্রাণীকে সাধারণের জন্য ব্যবহার্য স্থানে মলত্যাগ করতে দেয় তাদেরকে জরিমানা করা হয়। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে শুধু পরিস্কার-না-করা বর্জ্য থেকে নমুনা নিয়ে পোষা প্রাণীর নথির সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে। হংকং-এও একই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় অপরিচ্ছন্নতাকারীদের সনাক্ত করার জন্য। চিউইং গাম বা টিস্যুর মতো আপনার স্পর্শ করা, চর্ব্য কিংবা চোষ্য বস্তু নির্ধারিত ডাস্টবিন ভিন্ন অন্য কোথাও ফেললে হয়তো আপনার চেহারার প্রতিরূপ সংকলিত পোস্টার কোন বাসস্টপেজে আবিষ্কার করে ফেলতে পারেন (যার নিচে লেখা ‘একে ধরিয়ে দিন’)। এটি একটি সাম্প্রতিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেখানে ডিএনএ থেকে মুখায়বের বাস্তব-সম্মত ত্রিমাত্রিক পুনর্গঠন করা যায়।
এর পর কি হতে পারে? হয়তো একটি কেন্দ্রীয় জিনোমিক রেজিস্ট্রি খুব দূরের কোন কল্পনা নয়। এটি অবশ্য সংক্ষিপ্ত পরিসরে এখনই বিদ্যমান। স্বেচ্ছাসেবামূলক ভাবে প্রাথমিক গ্রাহকদের মধ্যে এর চর্চা হচ্ছে। এখন বেশ কয়েকটি মিলিয়ন-জিনোম প্রজেক্ট রয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়াতে 23andMe নামক এক ভোক্তা-কেন্দ্রীক জেনেটিক্স কোম্পানীর গ্রাহকদের সংখ্যা এক মিলিয়নেরও অধিক ছড়িয়ে যেতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতীয় পর্যায়ে জিনোমিকস উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে আইসল্যান্ডের মতো দেশ নের্তৃত্ব দিচ্ছে। আইসল্যান্ড ইতিমধ্যে তাদের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের জিনোমে কি রয়েছে তা বের করে ফেলেছে বা অনুমান করেছে। তাদের প্রক্রিয়ার পুরোটাই ছিলো স্বেচ্ছাসেবী প্রক্রিয়ার। অন্যদিকে কুয়েত সন্ত্রাস-বিরোধী উদ্যোগ হিসেবে তাদের সকল অধিবাসীর ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক ঘোষণা করেছে।
এ ধরণের জিনোমিক সংগ্রহশালার সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিণতি কি হতে পারে তা আমার ভবিষ্যদ্বানী-ক্ষমতার বাইরে। এ বিষয়ে কিছুটা বিপদশঙ্কা তৈরি হওয়া অনুচিত হবে না। কারণ যদি কোন প্রযুক্তি রাষ্ট্র কিংবা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের হাতে গিয়ে তার অপব্যবহার হয় তার মধ্যে জিনোমিকসও পড়বে। তবে আমার আগ্রহের জায়গাটা মূলত বৈজ্ঞানিক। তাই পৃথিবীর সকল মানুষের জিনোম সিকোয়েন্সের আর্কাইভ অন্যতম বৈজ্ঞানিক সম্পদ হিসেবে পরিগণিত হবে। কিন্তু জিনোমিকসের অর্জন আরো বড় হতে পারে। সে তুলনায় এরকম মানব জিনোম-আর্কাইভ উপরিতলে একটা আঁচড়ের সমান হবে।
৩.
আমরা এখন পৃথিবীর সমগ্র ডিএনএ-কে একসাথে ভাবতে শুরু করেছি। মানুষসহ সকল প্রাণ একটিমাত্র ব্যবস্থার মধ্যে বিদ্যমান। এ ব্যাবস্থাটি সৌরজগতের মধ্যে একটি “ক্ষীণ নীল বিন্দু” বা পৃথিবীতে বিরাজমান। এই সকল ডিএনএ সম্ভারকে একটি নাম দেয়া যাক। এখন থেকে এটাকে ডাকা যাক সমগ্র জৈবসংকেত।
বিজ্ঞানীরা সবে মাত্র এ জৈবসংকেতের আকার হিসাব করেছেন। এ পৃথিবীতে বিভিন্ন জীবের সমষ্টি একসাথে করলে এ জৈবসংকেতের পরিমাণ ±৩.৬ × ১০৩১ মিলিয়ন বেস-জোড় (base-pair) ছড়িয়ে যায়। ব্যক্টেরিয়া থেকে শুরু করে মৌমাছি হয়ে পাখি – সকল জীবের জিনোমের আকারকে প্রাণীর সংখ্যা দিয়ে গুণ করলে তার পরিমাণ হয় ৫০ বিলিয়ন টন ডিএনএ। এ পরিমাণ জৈবসংকেত দিয়ে খুব সহজেই ১ বিলিয়ন জাহাজের কনটেইনার-বাক্সের মধ্যে ভরে ফেলা যাবে।
সমগ্র জৈবসংকেতের ঠিক কতটুকু আমরা জানি? খুবই সামান্য। আমরা পৃথিবীর প্রাণ-বৈচিত্র্যে উদ্বেলিত ও নিমজ্জিত হয়ে থাকি। বিশেষকরে যখন জীববৈচিত্রের অদৃশ্য সংখ্যাগুরু অণুজীবের কথা আসে। আমরা সম্প্রতি উপলদ্ধি করতে পেরেছি যে আমাদের অন্ত্রে ট্রিলিয়ন সংখ্যক অণুজীব দিয়ে ভর্তি। শুধু তাই নয়, পৃথিবীরও একই অবস্থা। এককোষী অণুজীব পৃথিবীর ৫০% জৈবভর ও ৯৯% জেনেটিক বৈচিত্র্য ধারণ করে। এ অণুজীবরা অতিপ্রাচীন। এরা পৃথিবীর জৈবরাসায়নিক চক্রগুলো পরিচালনা করে থাকে, পৃথিবীতে জীবন প্রতিপালনে সাহায্য করে, আর এদের অধিকাংশ এখনো অজানা।
কিন্তু এ পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। এ শতাব্দীর অন্যতম অর্জন হবে সমগ্র জৈবসংকেতের চরিত্র অনুধাবন করা। বিভিন্ন প্রজাতীর জিনোমের শুধু একটা সাদামাটা তালিকা তৈরি করা নয়, বরং সমগ্র জৈব-সম্প্রদায়ের মিথস্ক্রিয়ার ধরণ (প্যাটার্ন) উন্মোচন করা। এ জৈবসংকেতের আকার অনুমান করার মাধ্যমে একটি দরজা খুললো মাত্র। আমরা বুঝতে আরম্ভ করবো কিভাবে অতীতে এর গঠনবিন্যাসের উত্থান-পতন হয়েছে আর ভবিষ্যতে এটি কিভাবে পরিবর্তিত হবে। জৈবসংকেত কিভাবে কাজ করে তা আমরা বুঝতে শুরু করবো।
২০৫০ সালের মধ্যে আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত শুধু মানব জিনোম বৈচিত্র্যের উপর নয়, বরং পৃথিবীর জৈববৈচিত্র্যের উপরে দখল লাভ করা। শ্রেণীবিন্যাসের জনক ক্যারোলাস লিনিয়াস ১৭৩৫ সালে সিস্টেমা ন্যাচারা প্রকাশের মাধ্যমে শ্রেণীবিন্যাসের কাজটি শুরু করেছিলেন। আমাদেরকে ডিএনএ-ভিত্তিক সিস্টেমা ন্যাচারা তৈরির কাজ শেষ করতে হবে। মূল প্রশ্ন হলো পৃথিবীর জেনেটিক সম্পদের কতটুকু তখন পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকে। স্মিথসনের গ্লোবাল জিনোম ইনিশিয়েটিভের মতো প্রকল্প প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এখনো বেঁচে থাকা জীবের নমুনা হিমায়িত করে রাখতে। যাতে ভবিষ্যতে এদের ডিএনএ সিকোয়েন্স করা যায়। উদ্দেশ্য প্রথমতঃ ভবিষ্যতের সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তি অনেক সস্তা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা। এছাড়া প্রজাতীগুলো বিলুপ্তু হয়ে গেলেও যাতে তাদের জিনোম সংরক্ষিত থাকে সে ব্যবস্থা নেয়া।
সিস্টেমা ন্যাচারা-র আধুনিক সংস্করণ থেকে যে বিভিন্ন প্রজাতীর মধ্যকার প্রকৃত বিবর্তনীয় সম্পর্ক উন্মোচিত হবে শুধু তাই নয়। বরং বাস্তুসংস্থান অনুযায়ী সম্পর্কিত জিনোম কিভাবে মিথষ্ক্রিয়া করে তাও জানা যাবে। এ মুহূর্তে আমরা এখনো তালিকা তৈরির অবস্থায় আছি। আমরা নিয়নন্ডারথাল মানব থেকে শুরু করে পশমী ম্যামথ কিংবা নিউ ইয়র্কের ভূগর্ভস্থ পথের অণুজীবের ডিএনএ সিকোয়েন্স পড়েছি। একটি আগ্রহোদ্দীপক ক্ষেত্রে আমরা কিছুটা উন্নতি করছি তার একটা উদাহরণ দেয়া যাক। “পান্ডার জৈবসংকেত”-এর উল্লেখযোগ্য অংশ এখন আমাদের জানা। এর মধ্যে রয়েছে বর্তমান সকল পান্ডার ২ শতাংশের জিনোম, তাদের প্রাথমিক খাবার বাঁশ, ও পান্ডার মাইক্রোবায়োমের নমুনা। মাইক্রোবায়োমটি সেলুলোজ হজম করে বলেই শ্বাদন্তের অধিকারী মাংশাসী পান্ডা উদ্ভিদভোজীদের মতো বেঁচে থাকতে সাহায্য করে (কোন জায়গায় সকল অণুজীবকে একাসথে বলা হয় মাইক্রোবায়োম। এমন মাইক্রোবায়োম না থাকলে পান্ডা উদ্ভিদ খেয়ে হজম করতে পারতো না)।
তবে আমাদের আরো বহুদূর যেতে হবে। পৃথিবীতে ২০ মিলিয়নের অধিক প্রজাতী রয়েছে। ভূ-মাইক্রোবায়োম প্রকল্প একাই ৯ মিলিয়নের সংখ্যক অণুজীব প্রজাতীর তালিকা তৈরি করেছে। এ প্রকল্পটি এরকম অনেকগুলো প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম যারা জীবন বৃক্ষের বিভিন্ন ডালপালার সদস্যদের ডিএনএ সিকোয়েন্সিং করছে। অবশ্যই এটা একটা বিশাল গবেষণা। বলা যায় ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তর বৈজ্ঞানিক অভিযান – অাক্ষরিক অর্থেই একটি ভূ-জিনোম প্রকল্প।
যে গবেষকগণ জৈব সংকেতের আকার অনুমান করেছেন, তারা ডিএনএ-কে সফটওয়্যারের রূপক দিয়ে ব্যাখ্যা করছেন। যদি সকল প্রাণের ডিএনএ থাকে এবং তা যদি পৃথিবীর সাথে পরস্পর সংযুক্ত থাকে, তাহলে পৃথিবীর বাস্তুসংস্থানের পুরোটাকে তুলনা করা যায় একটি দৈত্যাকার কম্পিউটারের সাথে। উদাহরণসরূপ বলা যায়, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল প্রাণের কারণেই অক্সিজেন দিয়ে পূর্ণ হয়েছে। অক্সিজেন তৈরি হয় উদ্ভিদ ও অণুজীবের ডিএনএ-সফটওয়্যারে লেখা প্রোগ্রাম অনুসারে সূর্যালোক ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সমন্বয়ে সালোকসংশ্লেষণের রাসায়নিক প্রক্রিয়া পরিচালনার মাধ্যমে। পৃথিবীকে বিভিন্ন ব্যবস্থার মাধ্যমে দেখার প্রতি এই পদ্ধতি আমাদের অন্যান্য কষ্টকর গণনার ক্ষেত্রে সাবলম্বি করে। যেমন যদি বলা হয় এই কম্পিউটারটির প্রক্রিয়াজাতকরণ ক্ষমতা হলো ডিএনএ সিকোয়েন্স থেকে প্রোটিন তৈরির হারের সমান। এ হিসাব অনুযায়ী এই দৈত্যাকার কম্পিউটার চিনের টিয়ানহে-২ কম্পিউটারের তুলনায় ১০২২ গুণ বেশি ক্ষমতা রাখে (এটি লেখার সময় টিয়ানহে-২ ছিলো সবচাইতে দ্রুততম সুপার-কম্পিউটার)। আধুনিক সমাজ কম্পিউটার নিয়ে একটু বেশি মাত্রায় উদ্বেল। আর এখন আমাদের ভাবতে হচ্ছে আমরা একটা বড় কম্পিউটারের মধ্যে বসবাস করছি, অন্তত রূপক অর্থে। আমরা যদি এই রূপক গ্রহণ করি, তাহলে আমাদের এটাও মেনে নিতে হয় যে এ কম্পিউটার কিভাবে কাজ করে তার সম্পর্কে খুব সামান্যই জানি।
৪.
আমরা এই বিশালাকার কম্পিউটারের কোডের বিভিন্ন অংশ পাঠোদ্ধারে ও ছোটখাট পরিবর্তনের দক্ষতা অর্জন করছি। তবুও চূড়ান্ত পরিণতি সম্পর্কে আমরা মূলত অন্ধ অবস্থায় রয়েছি। আমাদের সামনে ষষ্ঠ গণজৈববিলুপ্তি অপেক্ষা করছে, যার মাধ্যমে পৃথিবীর অন্তত ৭৫ শতাংশ প্রজাতী সংক্ষিপ্ত ভূতাত্ত্বিক-সময়ের মধ্যে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে। উদ্ভবের পর থেকেই আমরা এ জৈবসংকেতের প্রোগ্রামটাকে বদলাচ্ছিলাম। তবে এখন বদলানোর গতি অনেক বেড়ে গেছে। বিভিন্ন জিনোমিকস প্রকল্পের বিপদশঙ্কা ভুলে যান: আমরা বন উজাড় করে দিচ্ছি, মনো-কালচারে একক প্রজাতির শস্য চাষাবাদ করছি, মাছ এমনভাবে ধরছি যে তা বিলুপ্ত হয়ে যাবে দ্রুত, আর ক্রমাগত জমি দখলের জন্য বাকি জৈববৈচিত্র্য বিষাক্ত করে মেরে ফেলছি বা তাদের স্থানান্তরে বাধ্য করছি। এখন জৈব বিলুপ্তির গতি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার চেয়ে অন্ততঃ শতগুণ বেশি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে জৈববিলুপ্তি কম্পিউটারের হার্ডড্রাইভ মুছে ফেলার মতো ঘটনা। মুছে ফেলা তথ্য পুনরুদ্ধার করা যায় না।
যারা জিনোমিকসের ক্ষমতা নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন তারা মূলত ফরমায়েশি শিশু, জৈবসন্ত্রাসে, ইন্সুরেন্স অন্তর্ভূক্তি না করা, ডিএনএ বৈষম্য, কিংবা জেনেটিক নজরদারি নিয়ে ভীত। তবে হয়তো আমাদের অধিক চিন্তিত হওয়া উচিত এই বিষয়ে যে আমরা পৃথিবীর জৈবসংকেতকে বদলে দিচ্ছি আতঙ্কজনক গতিতে, এমনকি আসলে কি ক্ষতিটাই না করে করছি তা বিবেচনা না করেই।
২১০০ সালের দিকে সমগ্র জৈবসংকেত কি উল্লেখযোগ্যভাবে কৃত্রিম হয়ে যাবে? হয়তো এটা ধরে নেয়াটা অবিশ্বাস্য হবে না যে আমরা দেখবো শিল্পকারখানায় ফরমাশী জন্তু তৈরি হওয়ার সাথে সাথে চারপাশ থেকে প্রাকৃতিক জীব ক্রমাগত হারিয়ে যাচ্ছে। জিনোমিক্সের ভবিষ্যৎ কি অন্ধকারের ছায়ায় ঢেকে যাবে অথবা উজ্জ্বল আলোতে রোদ পোহাবে? তবে জৈবসংকেতের ব্যাপারে সবচেয়ে অসাধারণ বিষয় হলো এর সময়ের পাল্লা। জৈবসংকেত পৃথিবীতে সাড়ে তিনশ’ কোটি বছর আগে জীবনের উদ্ভবের সময় থেকে চলে আসছে। মানুষ যাই করুক না কেন, এটি কোন না কোন রূপে ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে ভালভাবেই। হয়তো এর মধ্যে মানুষেরই নতুন কোন প্রজাতি অন্তর্ভূক্ত হবে, আগামী প্রজন্মের পরিশ্রমের ফসলে, হয়তো কোন দূর্ঘটনায়, কিংবা পরিকল্পনায়, অধবা এ দুইয়েরই সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে।
ডন ফিল্ড অক্সফোর্ডে অবস্থিত বায়াডাইভার্সিটি ইন্সটিটিউটে একজন ফেলো। তাঁর সাম্প্রতিক বই হলো Biocode: The New Age of Genomics। এ লেখাটি Aeon এ প্রকাশিত Perfect genetic knowledge এর ভাষান্তর। অনুবাদটি আমার বই প্রাণের বিজ্ঞান: সাম্প্রতিক জীববিজ্ঞানের ভাবনা ভাষান্তর (২০১৭) থেকে নেয়া।
Leave a Reply