একটি বোতাম চাপার মাধ্যমে হার্ড ডিস্ক এবং অপটিক্যাল ড্রাইভ এ গিগাবাইট পরিমাণ তথ্য জমা করে রাখা যায়। কিন্তু ফ্লপি ড্রাইভ এবং চৌম্বকীয় টেপস এর মতো প্রযুক্তি গুলোর পুরোনো হয়ে যাবার সময় এসে গেছে। কারণ বর্তমানে গবেষকরা ব্যাকটেরিয়ার ডিএনএ তে বৈদ্যুতিকভাবে ডিজিটাল ডাটা সংরক্ষণ এর পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। এর মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী ভাবে ডাটা জমা করে রাখা যাবে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং গ্ল্যান্ডস্টোন ইন্সটিটিউট এর জৈব প্রকৌশলী শেঠ শিপম্যান বলছেন এটি সত্যিকার অর্থেই একটি দারুণ পদক্ষেপ যা কিনা বাণিজ্যিক বিকাশের ক্ষেত্রে বিপ্লব আনবে।
ডিএনএ কে ডাটা সংরক্ষণের জন্যে বাছাই করার পেছনে বিভিন্ন কারণ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল এর বিশাল ঘনত্ব। সর্বোচ্চ ঘনত্বের একটি হার্ড ড্রাইভ থেকেও ডিএনএ অণু ১০০০ গুণ বেশি ঘনত্ব বিশিষ্ট হয়। একটি লবণ দানার আয়তনের সমপরিমাণ ডিএনএ অণুতে প্রায় ১০ টি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ডিজিটাল ছায়াছবি ধারণ করে রাখা সম্ভব। সেই সাথে ডিএনএ যেহেতু জীবকোষের উপাদান তাই এটি সহজলভ্য এবং ডাটা পড়তে ও লিখতে সুবিধাজনক এবং সাশ্রয়ী।

ডিএনএ তে ডাটা সংরক্ষণ করে রাখার ধারণা নতুন নয়। সাধারণত ডিজিটাল ডাটা বাইনারি ফরমেটে থাকে। বাইনারি হচ্ছে ০ এবং ১ এর সমন্বয়ে ঘটিত একটি ডিজিটাল সংখ্যাপদ্ধতি। একে মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজ এ ব্যবহার করা হয়। প্রথমে ডিজিটাল ডাটা কে জৈব কোড এ রূপান্তরিত করতে হয়। ডিএনএ অণু তে থাকা নাইট্রোজেনাস বেস ( এডিনিন, সাইটোসিন , থায়মিন , গুয়ানিন) এর তিনটি করে স্বতন্ত্র বিন্যাস কে বলা হয় জৈব কোড। ডিএনএ সিনথেসাইজার ব্যবহার করে বাইনারি ডিজিটাল কোড কে জৈব কোডে রূপান্তরিত করা হয়। বাইনারি কোড ফাইল এর দৈর্ঘ্য যত বেশি হবে এই প্রক্রিয়ায় ভূল হবার সম্ভাবনা তত বেশী। সেজন্যে গবেষকরা বাইনারি কোড ফাইল কে কতগুলো খণ্ডে ভাগ করেন তারপর সেগুলো কে ডিএনএ সুতায় ২০০ থেকে ৩০০ বেস পেয়ার এর ভেতর লেখেন। তারপর ডিএনএ সিকোয়েন্সার ব্যবহার করে পুনরায় ডাটা গুলোকে যুক্ত করেন। এই প্রযুক্তিটি ব্যয়বহুল। এক মেগাবাইট তথ্য সিকোয়েন্সিং করতে ৩৫০০ ডলার খরচ লাগে। তাছাড়া সময় এর প্রবাহে তথ্য মুছে যাবার সম্ভাবনা থাকে।

তাই দীর্ঘ সময়ের জন্যে তথ্য সংরক্ষণ করে রাখার জন্যে বিজ্ঞানীরা কোনো জীব কোষে যেমন ই.কোলি ব্যাকটেরিয়ায় ডাটা সংরক্ষণ করার কথা ভাবছেন। ২০১৭ সালে, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিস্টেম বায়োলজিস্ট হ্যারিস ওয়াং এর নেতৃত্বে একদল গবেষক ক্রিসপার জিন সম্পাদনার পদ্ধতি ব্যবহার করে ই.কোলি ব্যাকটেরিয়ায় একটি ফ্রুক্টোজ সিগন্যাল প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন। তারা লক্ষ্য করেন ফ্রুক্টোজ এর উপস্থিতিতে ই.কোলি এর প্লাজমিড এ জিন ট্রান্সলেশান প্রক্রিয়ার হার বেড়ে যায়। বিজ্ঞানীরা এভাবে ই.কোলি এর ট্রান্সলেশান প্রক্রিয়া বাড়িয় দেন। তারপর তারা ক্রিসপার/ক্যাস পদ্ধতি ব্যবহার করে প্লাজমিড ডিএনএ কে কেটে টুকরো টুকরো করেন। এগুলোকে ব্যাকটেরিয়াল ডিএনএ এর যে অংশ পূর্ববর্তী ভাইরাল আক্রমন কে মনে রাখতে পারে সেখানে যুক্ত করেন। ব্যাকটেরিয়াল ডিএনএ তে আগেই উপরের পদ্ধতিতে ডিজিটাল কোডকে জৈবিক কোড এ রূপান্তরিত করে যুক্ত করে দেয়া হয়েছিল। প্লাজমিড ডিএনএ গুলোকে যুক্ত করার পর দেখা গেল ফ্রুক্টোজ এর উপস্থিতিতে ব্যাকটেরিয়াল ডিএনএ তে ট্রান্সলেশন এর হার বেড়ে যায় যা ডিজিটাল ১ কে নির্দেশ করে আর এর উল্টোটা ০ কে। কিন্তু এভাবে খুব কম পরিমাণ তথ্য কে সংরক্ষণ করা যায়। মাত্র একজোড়া বিট।

গবেষকরা আরো বেশি তথ্য সংরক্ষণ করার জন্যে তারা ইলেকট্রিক সিগন্যাল ব্যবহার করার কথা ভাবেন। সেজন্যে তারা ব্যাকটেরিয়াল ডিএনএ তে এমন কিছু জিন যুক্ত করেন যেগুলো ইলেকট্রিক সিগন্যালের প্রতি সাড়া দিয়ে ট্রান্সলেশান এর রেট বাড়িয়ে দেয়। আর একই রকম ভাবে তারা ০ এবং ১ কে ব্যবহার করে তথ্য পড়তে সক্ষম হোন।
এই পদ্ধতি ব্যবহার করে গবেষকরা ৭২ বিট এর সমন্বয়ে “Hello World!”বার্তাটি সংরক্ষণ করতে সমর্থ হয়েছেন। ওয়াং বলেন,” পদ্ধতিটি এখনও প্রক্রিয়াধীন। ডিএনএ তে পরিবৃত্তি কিংবা অনুলিপন ঘটলেও যাতে তথ্য মুছে না যায় সেজন্যে আমাদের আরো গবেষণা করতে হবে।”
তথ্যসূত্রঃ সায়ন্স ম্যাগাজিন।
আপনার লিখাটা খুব ভালো হয়েছে তবে বন্ধনীর ভেতরে যদি ট্রাণ্সলেশনের সঙ্গাটা থাকতো তাহলে সবার জন্যেই বুঝতে সুবিধা হতো। আমারও প্রায় মিস হয়ে যায় এসব তথ্য।
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ, আপু..❤
আমি প্রযুক্তিটা বুঝে উঠার চেষ্টা করছিলাম। তৃতীয় ছবিটা একটু ছোট হয়ে গেছে, বুঝতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এটা দেখে মনে হলো: মূলত ডিএনএর আকার পরিবর্তন করা হচ্ছে পাঁচটি ‘স্পেসার’ দিয়ে, তাই না? এগুলোকে আবার ইলেক্ট্রোফোরেসিস করে দেখার পর ব্যান্ডের প্যাটার্ন অনুযায়ী সংকেত পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে?
হ্যাঁ, ভাইয়া। ডিএনএ তে স্টোর করা বার্তাটি পুনরায় ডিকোডিং করা হচ্ছে।
আর গবেষণা সম্পর্কিত এর চেয়ে ভালো ছবি পাই নি। যদিও ছবিটা ছোট এবং বোঝতে একটু কষ্টকর!