জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড নিয়ে দুই ধরণের কন্টেন্টের বড়ই অভাব ছিল! সে দু’টো হলো গাইডলাইন আর নমুনা প্রশ্ন। আমি ইতিমধ্যে একটা গাইডলাইন এবং নমুনা প্রশ্ন (১ম পর্ব) নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আজকে নমুনা প্রশ্নের ২য় পর্ব নিয়ে আসলাম। চলো, শুরু করা যাক!
১. রাফিন একটি ডকুমেন্টারিতে শৈবাল ও ছত্রাকের সহাবস্থানে গঠিত একটি উপাদান দেখলো, যেটি পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই টিকে থাকতে পারে। এই সহাবস্থানে জীবদ্বয়ের মাঝে ধনাত্মক আন্তঃক্রিয়া ঘটে থাকে।
A. উপাদানটি শুধুমাত্র যৌন জননের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে
B. এই সহাবস্থানে শৈবালের কারণে সবসময় ছত্রাক বঞ্চিত হয়
C. উপাদানটি বিষাক্ত হওয়ায় এটি ব্যবহারযোগ্য নয়
D. উক্ত সহাবস্থানে মিউচুয়ালিজম সংঘটিত হয়
সমাধানঃ
A. আমরা জানি যে শৈবাল ও ছত্রাকের সহাবস্থানকে লাইকেন বলে, যাকে অনেকে প্রকৃত উদ্ভিদও বলে থাকে। এটির জনন পদ্ধতি ৩ ধরণেরঃ অঙ্গজ, যৌন ও অযৌন। অর্থাৎ, এদের বংশবৃ্দ্ধি শুধুমাত্র যৌন জননের উপর নির্ভর করে না। সুতরাং, এই অপশনটি False.
B. লাইকেনে ছত্রাক ও শৈবাল দু’জনেই উপকৃত হয়। ছত্রাক পরিবেশ থেকে জলীয় বাষ্প ও খনিজ লবণ সরবরাহ করে আর শৈবাল সেটা দিয়ে সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য প্রস্তুত করে। এছাড়াও ছত্রাক প্রজননেও ভূমিকা রাখে। আর সব মিলায়ে শৈবাল আর ছত্রাক দু’জনেরই ফায়দা হয়, কেউ সাধারণত বঞ্চিত হয় না। অর্থাৎ, এই অপশনটি False.
C. প্রথমত লাইকেন কোনো বিষাক্ত পদার্থ বা জীব নয়। খাদ্য ও ঔষধ হিসেবে, লিটমাস ও অ্যালকোহল তৈরি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে লাইকেন ব্যবহৃত হয়। সুতরাং, এই অপশনটি False.
D. লাইকেনের মধ্যে শৈবাল-ছত্রাকের মধ্যে যে মিথস্ক্রিয়া ঘটে থাকে, তা মূলত ধনাত্মক আন্তঃক্রিয়া। আমরা জানি, ধনাত্মক আন্তঃক্রিয়া সাধারণত ২ ধরণেরঃ মিউচুয়ালিজম ও কমেনসেলিজম। যদি দু’টি জীব সহাবস্থান করে এবং পারস্পারিক নির্ভরশীলতা ও কর্মকান্ডের মাধ্যমে উভয়ই উপকৃ্ত হয়, তবে সেই মিথস্ক্রিয়াকে মিউচুয়ালিজম বলা হয়। শৈবাল ও ছত্রাকের সহাবস্থানে উভয়ই উপকৃ্ত হয়, যেটি মিউচুয়ালিজমের একটি উৎকৃ্ষ্ট উদাহরণ। অর্থাৎ, এই অপশনটি True.
২. জারিফ কৃষি অধিদপ্তরের একটি অনুষ্ঠান থেকে জানতে পারল যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে উদ্ভিদেরা রোগাক্রান্ত হতে পারে। এর ফলে উদ্ভিদের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসে।
A. পরিবেশ দূষণ উদ্ভিদের রোগ সৃষ্টির কারণ হতে পারে না
B. শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার পরিবর্তনের পাশাপশি বাহ্যিক পরিবর্তনও ঘটতে পারে
C. রোগ সৃষ্টিকারী পরজীবীদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হলো ব্যাকটেরিয়া
D. টিস্যু কালচারের মাধ্যমে রোগাক্রান্ত অংশ থেকে সুস্থ ও উন্নত জাতের উদ্ভিদ উৎপাদন করা সম্ভব
সমাধানঃ
A. পরিবেশ দূষণের কারণে উদ্ভিদদেহে ক্ষতিকর ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ প্রবেশ করতে পারে, যেগুলো উদ্ভিদের প্রাণরাসায়নিক ও শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রমে বাধা প্রদান করে রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সুতরাং, এই অপশনটি False.
B. বিজ্ঞানী Agrios এর মতে, রোগাক্রান্ত উদ্ভিদের বাহ্যিক পরিবর্তন ঘটে এবং ফলন হ্রাস পায়। একারণে আমরা বিভিন্ন উদ্ভিদের পাতাকে বিবর্ণ ও কান্ডকে দুর্বল হতে দেখি। অর্থাৎ, এই অপশনটি True.
C. উদ্ভিদের রোগের পেছনে বেশ কয়েকটি মুখ্য কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো জীবীয় কারণ। মূলত, পরজীবীদের মাধ্যমে রোগ ছড়ালে, তাকে জীবীয় কারণ বলা হয়। ব্যাকটেরিয়ার কারণে বিভিন্ন ধরণের রোগ সংক্রমিত হয়। যেমনঃ ধানের ব্লাইট, লেবুর ক্যাংকার, গমের টুন্ডু, তুলার পাতায় কোনাচে দাগ ইত্যাদি। কিন্তু, ভাইরাসের আক্রমণে আরও সাংঘাতিক রোগ হতে পারে। যেমনঃ তামাকের মোজাইক, ধানের টুংরো, টমেটোর বুশিস্ট্যান্ট ইত্যাদি। আবার মাইকোপ্লাজমাও কম ক্ষতি করে না। এরা পেপের বাঞ্চিটপ, মটরশুঁটির হলদে বামন, আলুর পার্পল টপ, তালের ক্ষয় ইত্যাদি রোগের জন্য দায়ী। পরিসংখ্যান ও গবেষণা থেকে দেখা গেছে, নেমাটোড ও মাইকোপ্লাজমা উদ্ভিদদেহে রোগ সৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। এছাড়াও ভাইরাসের আক্রমণও বিধ্বংসী হতে পারে। সে তুলনায় ব্যাকটেরিয়া অতটা ভয়ঙ্কর নয়। সুতরাং, এই অপশনটি False.
D. টিস্যু কালচারের জন্য সবসময় সুস্থ ও রোগমুক্ত উদ্ভিদকে নির্বাচন করা হয়। তাই কখনোই রোগাক্রান্ত উদ্ভিদের টিস্যুকে কালচার করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ, এই অপশনটি False.
৩. যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সবুজ উদ্ভিদ সূর্যশক্তি গ্রহণ করে কোষস্থ ক্লোরোফিলের সাহায্যে কার্বন ডাই অক্সাইড ও পানি সহযোগে শর্করা উৎপাদন করে, তাকে সালোকসংশ্লেষণ বলে। এই প্রক্রিয়ায় উপজাত হিসেবে অক্সিজেন বায়ুতে নির্গত হয়।
A. প্রক্রিয়াটি শুধুমাত্র পাতায় সংঘটিত হয়
B. সালোকসংশ্লেষণ একটি রেডক্স বিক্রিয়া
C. সালোকসংশ্লেষণ সম্পন্ন করতে গিয়ে উদ্ভিদ বিভিন্ন জৈব পদার্থ উৎপন্ন করে
D. অক্সিজেন সঞ্চিত পদার্থ হিসেবে দেহে থেকে গেলে বনজ উদ্ভিদ অধিকতর উপকৃ্ত হতো
সমাধানঃ
A. সালোকসংশ্লেষণ মূলত সবুজ পাতায় সংঘটিত হয়। কিন্তু, কচি বা সবুজ কান্ডেও কিছু মাত্রায় সালোকসংশ্লেষণ হয়ে থাকে। সুতরাং, এই অপশনটি False.
B. সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় পানি জারিত হয় এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বিজারিত হয়ে শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি করে। জারণ-বিজারণের এই ঘটনাটি যুগপৎ সংঘটিত হয়। তাই ফটোসিনথেসিসকে রেডক্স বা জারণ-বিজারণ বিক্রিয়া বলা যায়। অর্থাৎ, এই অপশনটি True.
C. আমরা জানি, সালোকসংশ্লেষণের আলোক নির্ভর পর্যায়ে উদ্ভিদের ক্লোরোপ্লাস্টের অভ্যন্তরে থাইলাকয়েড মেমব্রেনে থাকা ফটোসিস্টেমের কর্মকান্ডের ফলে ATP ও NADPH2 উৎপন্ন হয়। এ দু’টি শক্তি জোগানদায়ী জৈব পদার্থ। সুতরাং, এই অপশনটি True.
D. যদি অক্সিজেন উপজাত হিসেবে নির্গত না হতো, তবে অতিরিক্ত অক্সিজেনের চাপে বনজ উদ্ভিদ ক্ষতিগ্রস্ত হতো। তবে যেসব অঞ্চলে পানির সংকট, ঐসব এলাকার উদ্ভিদেরা দেহে অতিরিক্ত পানি সঞ্চয় করে রাখতে পারে। যেমনঃ ক্যাকটাস, ঘোস্ট প্ল্যান্ট ইত্যদি। অর্থাৎ, এই অপশনটি False.
তো, আজ এই পর্যন্তই। এই লেখাটাতে আমি ৩টি প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করেছি এবং দেখানোর চেষ্টা করেছি যে কীভাবে প্রশ্নের অপশন গুলো নিয়ে ভাবতে হয়। পরের পর্বতেও এরকম কিছু প্রশ্ন অপারেশন করব। পরবর্তী পর্বটা কিন্তু জটিল হবে!
Leave a Reply