বিশেষ করে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা জীববিজ্ঞানকে অপছন্দ করে। কারণ হলো জীববিজ্ঞান আমাদের যেভাবে পড়ানো হয় তার কোন “আগামাথা” নেই, অনেক “মুখস্থ” করতে হয়। পদার্থবিজ্ঞান বা রসায়নে যেমন সব বিষয়বস্তু একটা আরেকটার সাথে সম্পর্কিত, জীববিজ্ঞানে সেটা না। শ্যামলের মতে, এরকম মনে হওয়ার দায়ভার অনেকটাই এসে পড়ে যেভাবে জীববিজ্ঞান পড়ানো হয় আমাদেরকে তার উপর। এজন্য সে “স্বপ্নপুরী হাইস্কুল” নামের একটা বিদ্যালয় কল্পনা করেছে যেখানে ছাত্রছাত্রীরা কোনকিছু বুঝতে না পারলে সেটার দোষ শিক্ষার্থীদের দেয়া হয় না, বরং ধরা হয় যেভাবে পড়ানো হচ্ছে সেটতে কোন সমস্যা আছে।
এই বইটায় আমরা সবচেয়ে ভালো লেগেছে যেভাবে বিভিন্ন অধ্যায়ে জীববিজ্ঞানের গল্পগুলো বলা হয়েছে। গল্পগুলো ঠিক যেন ডিটেকটিভ রহস্য, ফেলুদা বা শার্লক হোমস জীববিজ্ঞানের রহস্য তদন্ত করছেন এমন মনে হয়। গল্পের ধাঁচে জীববিজ্ঞানের জটিলতম রহস্যগুলো সরস ভাষায় বলার এমন একটা পদ্ধতি শ্যামল রপ্ত করেছে যা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখতে বাধ্য। আসলে বিজ্ঞানকে সচরাচর আমাদের পাঠ্যপুস্তকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয় একগাদা তত্ত্ব ও তথ্য হিসেবে, বিজ্ঞান গবেষণা কিন্তু সেরকম নৈর্ব্যক্তিক নয়। শ্যামল নিজে গবেষক হওয়ায় সে গবেষণাগুলোর এবরোথেবরো রাস্তাগুলোর একটা অভিজ্ঞতার ছবি পাঠকদের জন্য বর্ণনা করতে পেরেছে বেশ ভালোভাবে।
শুধু বিজ্ঞান নয়, দর্শন ও সাহিত্যও সে ছুয়ে গেছে। অরওয়েলের 1984 ডিস্টোপিয়ান বইটার আলোচনাকে যেভাবে নিয়ে এসেছে বিজ্ঞানের লেন্সে, সেটা আমাকে বেশ অবাক করেছে।প্রতিটা অধ্যায়ে বিজ্ঞানের ছবিগুলো সম্পর্কিত আলোচনা বুঝতে সাহায্য করেছে। এছাড়া শ্যামল সবগুলো তথ্যসূত্র উল্লেখ করেছে মৌলিক গবেষণা-প্রবন্ধ থেকে। তথ্যসূত্র কেবল নির্লিপ্ত তালিকা নয় বরং কোথা থেকে কোন জিনিস নেয়া হয়েছে সেটার বর্ণনাও পড়তে ভালো লাগে। বইয়ের ছাপায় তেমন কোন ভুল আমার চোখে পড়ে নি।
আমার কাছে মনে হয়েছে “এটাই সায়েন্স ২” নাম দেয়ার কোন প্রয়োজন ছিলো না, যেহেতু প্রথম বইটার সাথে সরাসরি কোন সম্পর্ক নেই। এটা অনেক পাঠককে একটা ভুল বার্তা দিতে পারে। আর ছবিগুলো আরেকটু বড় হলে পড়তে সুবিধা হতো।শ্যামল শক্তিশালী লেখক, ওর কাছ থেকে আগামী বছরগুলোতে বিজ্ঞানের বিষয়ভিত্তিক বই পাওয়ার প্রত্যাশা রাখি!
সম্প্রতি শ্যামলের সাথে পডকাস্ট আলোচনা হলো জীববিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির বিষয়ে। সে পডকাস্ট শুনতে পারেন নিচের ভিডিও থেকে:
Leave a Reply