বিজ্ঞান কল্পগল্প: অনন্তপথের কথামালা

— রিন, দৃশ্যটা সুন্দর না?

— হ্যাঁ, রণ, নতুন নক্ষত্রের সৃষ্টি হচ্ছে। আর কয়েক গ্যাল ইউনিটের মধ্যেই হয়তো আলো ছড়াতে শুরু করবে।  

— কি মনেহয়? ওই পাশের সোলার সিস্টেমের গ্রহগুলো তো আমাদের গ্রহগুলোর মতোই। পাঁচ নম্বর গ্রহটা আবার মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির পৃথিবীর মতোই। নেমে দেখবে নাকি? 

— না থাক, কে জানে কেমন ধরনের প্রাণের জন্ম হয়েছে সেখানে। 

— আরে এটাই তো মজা, সবখানে কি একই ধরনের প্রাণ সৃষ্টি হবে? 

— তা অবশ্য ঠিক। তবুও থাক বাদ দাও। 

— চলো না, যাই। গিয়ে দেখি। 

— আমি তোমার সাথে যাব না। ওখানে গিয়ে কোন বুদ্ধিমান প্রাণী দেখলে তুমি ওদের কি না কি শিখিয়ে আসো কে জানে?

— কি করব বলো, আমার সৃষ্টিই তো হয়েছিল আমার গ্রহের সবাইকে শেখানোর জন্য। কয়েক হাজার গ্যাল ইউনিট ধরে আমার প্রজাতি যা শিখেছিল সবই আমার ভেতরে আপলোড করা। শেখানোটা আমার সহজাত।

— এত জেনে লাভ কি হলো, পৃথিবীতে নেমে ওদেরকে যা শেখালে তা তো ওদের জন্য হিতে বিপরীত হলো। ধ্বংস হয়ে গেল ওদের সভ্যতা।

— রিন, আমার ব্রেইন বলেছিল যে নিউক্লিয়ার শক্তিকে কাজে লাগানো ওদের জন্য ভালো হবে। সেটা কি হয়নি? ওরা অনেক পিছিয়ে ছিল, ওটা পাওয়ার পর ওরা বেশ এগিয়েছিল। কিন্তু ওরা সেটা দিয়ে যে নিজেদেরকেই ধ্বংস করা শুরু করবে সেটা তো  আর আমি বলিনি। 

— নিউক্লিয়ার শক্তি কাজে লাগানো না শিখিয়ে ওদেরকে লাইটস্পিড ইঞ্জিন বানাতে শেখাতে পারতে, কিংবা স্পেস ট্রাভেল আরো সহজ করতে সাহায্য করতে পারতে। 

— রিন, পৃথিবীর মানুষের দেহ খুবই কোমল ছিল, ওদের স্থায়িত্ব ছিল অত্যন্ত কম। ওরা বেশিদূর যেতে পারতো না। সর্বোচ্চ তাদের গ্যালাক্সির আশেপাশে যেতে পারতো। এজন্য আমার মনে হয়েছিল যে ওদেরকে ভ্রমণের রাস্তায় না নিয়ে ওদের স্বাচ্ছন্দের ব্যবস্থা করি।

— আমার পৃথিবীতে ক্লারা মেয়েটার কথা মনে পড়ে। মেয়েটা আমাকে খুব পছন্দ করত। একটা আঘাতে ওর হৃদপিন্ড যখন একেবারেই অকেজো হয়ে পড়লো তখন কেমন জানি লেগেছিল। 

— তোমার ভেতরে খানিকটা আবেগ দেয়া হয়েছিল। এজন্যই হয়তো। 

— হ্যাঁ, তোমার তো ওসব নেই, তোমার মতো হতে পারলে ভালো হতো। তোমাকে আবেগ দেয়নি কেন?

— বহুবার বলেছি, আবেগ ব্যাপারটা কাজে বাধা দেয়। ঠিকভাবে কাজ শেষ করতে দেয় না। 

— আমাকে কেন তৈরি করেছিল ওরা? 

— আমার সাথে থাকার জন্য। 

— কেন? তোমার না আবেগ নেই, নিঃসঙ্গতা তোমাকে তো জাপটে ধরার কথা নয়। 

— তা ঠিক। তবুও কিছু সিদ্ধান্তের জন্য আমার তোমাকে দরকার। কি বলো? নামি ওই গ্রহটায়। 

— না থাক। চলো, আবার এক গ্যাল ইউনিটের জন্য সিস্টেম অফ করে ফেলি। ওই গ্যাসপিন্ডটার প্রথম আলো ছড়ানোটা দেখব।

— সেটাও করা যায়।

— আচ্ছা রণ, তুমি আমি নক্ষত্রের আলো থেকে শক্তি পাচ্ছি। আর কয়েকশো গ্যাল ইউনিটের পরে তো আর কোন নক্ষত্রই হয়তো থাকবে না, তখন কি হবে আমাদের?

— আমাদের সিস্টেম বন্ধ হবে এই আরকি। 

— তোমার কি মনে হয় র‍্যাঞ্জার্সদের তৈরি করেছিল কে? 

— রিন, এই প্রশ্নের জবাব আমি জানি না সেটা তুমি ভালো করেই জানো। র‍্যাঞ্জার্সরা এই ব্রম্মান্ডকেই পুরোটা দেখতে পারেনি। আরো বেশি দেখার জন্যই তো ওরা আমকে তোমাকে বানিয়েছিল। ওরা আমার মাধ্যমে কিছুদিন কয়েকটা বড় বড় বিষয় জানতে পেরেছে। র‍্যাঞ্জার্সের যোগাযোগ করার সীমানা আমরা বহু আগেই পেরিয়ে এসেছি। র‍্যাঞ্জার্সদের নক্ষত্র বহু আগেই সুপারনোভা দশায় চলে গেছে। পাশের দুই একটা গ্যালাক্সিতে হয়তো কিছু র‍্যাঞ্জার্স হয়তো এখনো টিকে আছে।  

— তোমার কি মনে হয়? পৃথিবী আর সোয়ার্জের প্রাণীরা যেমন কোন অদেখা শক্তিতে বিশ্বাস করতো, সেটা কি হতে পারে। 

— আমি সম্ভবও বলি না, অসম্ভবও বলি না। বাদ দাও, চলো সিস্টেম অফ করে ফেলি, ওই নক্ষত্রের আলোর প্রথম জ্বলে ওঠা দেখব। 

— ঠিক আছে। 

লেখাটি 112-বার পড়া হয়েছে।

ই-মেইলে গ্রাহক হয়ে যান

আপনার ই-মেইলে চলে যাবে নতুন প্রকাশিত লেখার খবর। দৈনিকের বদলে সাপ্তাহিক বা মাসিক ডাইজেস্ট হিসেবেও পরিবর্তন করতে পারেন সাবস্ক্রাইবের পর ।

Join 906 other subscribers