মঙ্গল গ্রহ হলো সূর্যের নিকটতম হিসেবে সৌরজগতের চতুর্থ গ্রহ। সূর্য থেকে এর দুরত্ব হলো প্রায় ২৩ কোটি ৬৪ লক্ষ কিলোমিটার। এর পরের গ্রহ হলো বৃহস্পতি এর দুরত্ব প্রায় ৭৮ কোটি কি.মি.।
এই দুই গ্রহের মাঝখানে বিশাল এক ফাঁক আছে। জ্যোতির্বিদের কাছে যা অস্বাভাবিক। মধ্যযুগে অনেক জ্যোতির্বিদ মনে করতেন এই দুই গ্রহের মাঝেখানে আরো একটি গ্রহ আছে। ১৭৭২ সালে জোহান বোডে নামক জার্মানীর বিজ্ঞানী একটি সুত্র বের করলেন।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2022/07/image.jpeg?resize=402%2C537&ssl=1)
১৭৭২ সালে আবিস্কার করা বোডের সুত্র পুনর্বাস্তবায়ন করেন আরেক বিজ্ঞানী জোহান টাইটাস। তিনি প্রথমে সূর্য থেকে দুরত্ব অনুসারে গ্রহগুলোকে সাজান এবং প্রত্যেকটি গ্রহের নীচে তিনি প্রথমে ০ তারপরে ৩, ৬, ১২, ২৪, ৪৮, ৯৬, ১৯২ ইত্যাদি সংখ্যা লিখলেন এবং প্রত্যেকটি সংখ্যার সাথে ৪ যোগ করলেন, এবং এতে পরপর যে সংখ্যা পাওয়া গেল এর প্রত্যেকটিকে ১০ দিয়ে ভাগ করলেন। এখান থেকে যে সংখ্যা গুলি পাওয়া গেল, তা হলো সূর্য থেকে প্রতিটি গ্রহের দুরত্ব (জ্যেতির্বিদ্যায় ব্যাবহত একক অনুযায়ী এই একক হলো সূর্য এবং পৃথিবীর মধ্যেকার গড় দুরত্ব)। এর পরিমাপ হলো ১৪৯,৫৯৭,৮৭০ কি.মি. অথবা ৪৯৯ আলোক সেকেন্ড (৪৯৯ সেকেন্ডে আলো যতটা দুরে যায়)।
বোডের নিয়ম অনুযায়ী মঙ্গল ও বৃহস্পতির মধ্যে যে ফাঁক আছে, সেখানে একটি গ্রহের থাকার কথা যার সংখ্যা হবে ২৪। বোডের সুত্র অনুযায়ী সূর্য থেকে এই গ্রহটির দুরত্ব ২.৮ জ্যেতির্বিদ্যার একক হওয়ার কথা। সাথে সাথে বিভিন্ন দেশের জ্যোতির্বিদরা বড় বড় দুরবীন দিয়ে আকাশে এই গ্রহটির সন্ধান শুরু করলেন। যে কোন আকারের বস্ত বা গ্রহ যাই হোক না কেন, মানুষের দীর্ঘ অনুসন্ধানে ধরা পরবে না এটা হতে পারে না।
অবশেষে ১৮০১ সালের পহেলা জানুয়ারী ইতালীয় জ্যোতির্বিদ পিয়াজি আকাশে নতুন একটি বস্তু দেখতে পেলেন। বস্তুটি ছিল খুব অস্পস্ট ও ছোট। প্রথমে তিনি এই বস্তুটিকে মনে করলেন ধূমকেতু। তিনি তখন বস্তুটিকে খুব ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন। তিনি দেখতে পেলেন বস্তুটি দিক পরিবর্তন করছে।
বোডের নিয়ম অনুযায়ী দুই গ্রহের মধ্যবর্তী যে ফাঁক ছিল তা পুরণ করে দিল। বস্তুটি মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝামাঝি অবস্হান করে এবং সূর্যকে ৮ বছর ৮ মাসে একবার প্রদক্ষিণ করে। বস্তুটি সূর্য থেকে ২.৮ একক দুরে। তখন বোডে আশা করছিলেন যে এটি হয়তো অষ্টম মুখ্য গ্রহ হবে।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2022/07/image.gif?resize=500%2C500&ssl=1)
কিন্ত দেখা গেল বস্তুটি কোন গ্রহ নয়। বরং এটি হাজার হাজার গৌণ গ্রহের মধ্যে একটি। এই সব গৌণ গ্রহদের কে বলে গ্রহাণু (Asteroids) বা গ্রহাণুপুঞ্জ।
গ্রহাণু হল ছোট, পাথুরে বস্তু যা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। যদিও গ্রহাণুগুলি গ্রহের মতো সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, তবে তারা গ্রহের তুলনায় অনেক ছোট।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2022/07/image-1.gif?resize=800%2C450&ssl=1)
পিয়াজি তার আবিস্কৃত গৌন গ্রহটির নাম দিলেন সিরেস (Ceres)। এর ব্যাস ৯৫০ কি.মি.। এটি সবচেয়ে বড় গ্রহাণু, সিরেসের ভর গ্রহাণুপুঞ্জের সব গ্রহাণুর মোট ভরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2022/07/image-2.gif?resize=601%2C600&ssl=1)
জার্মান গণিতবিদ গাউস কক্ষপথ গণনার এক নতুন গাণিতিক উপায় উদ্ভাবন করেন। তিনিই পিয়াজির আবিস্কৃত বস্তুটির কক্ষপথ সার্থকভাবে গননা করেন। পরের কয়েক বছরের মধ্যেই আরো তিনটি গ্রহাণু আবিস্কৃত হয়। ১৮০২ সালে পালাস (Palls), ১৮০৪ সালে জুনো (Juno), এবং ১৮০৭ সালে ভেস্তা (Vesta)।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2022/07/image-3.gif?resize=345%2C345&ssl=1)
এই ভেস্তা সৌরজগতের দ্বিতীয় বড় গ্রহাণুর ব্যাস ৫৩০ কি.মি.। এই গ্রহাণুটিকে খালি চোখে দেখা যায় যদি আকাশে এর অবস্থান জানা থাকে।
এরপর ১৮৪৫ সালে আরো একটি গ্রহাণু আবিস্কার করা হলো এর নাম এস্ট্রিয়া (Astraea)। এর ব্যাস ১৬০ কি.মি.। এরপর থেকে প্রতি বছর আবিস্কারের সংখ্যা বাড়তে লাগলো।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2022/07/image-4.gif?resize=630%2C599&ssl=1)
টেলিস্কোপের সাথে ক্যামেরা লাগিয়ে ছবি তোলার পরে সেই ছবিতে ঝাকে ঝাকে গ্রহাণুর সন্ধান পাওয়া গেল। পরবর্তীতে উপগ্রহের মাধ্যমে তোলা ছবিতে দেখা গেল মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মাঝখানে বিশাল একটি গ্রহাণু বলয় রয়েছে।
সৌরজগতের গ্রহরা যেভাবে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, এইসব গ্রহাণুরাও ঠিক সেই ভাবেই সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। গ্রহাণুদের কক্ষপথ উপবৃক্তাকার (Ellipse: অনেকটা ডিমের খোলসের মত)। আবার কিছু গ্রহাণুর কক্ষপথ বৃত্তাকার। গ্রহাণুদের প্রত্যেকের কক্ষপথের তল পৃথিবীর কক্ষপথের যে তল তার সঙ্গে মিলে যায়।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2022/07/image-5.gif?resize=600%2C529&ssl=1)
বেশিরভাগ গ্রহাণুই অনিয়মিত আকারের। যদিও কিছু প্রায় গোলাকার, এবং সেগুলি প্রায়শই গর্ত বা গর্তযুক্ত।
১৫০টিরও বেশি গ্রহাণুর একটি ছোট সহচর চাঁদ রয়েছে বলে জানা যায় (কিছুতে দুটি চাঁদ রয়েছে)। এছাড়াও বাইনারি (দ্বৈত) গ্রহাণু রয়েছে, যেখানে প্রায় সমান আকারের দুটি পাথুরে দেহ একে অপরকে প্রদক্ষিণ করে। পাশাপাশি ট্রিপল গ্রহাণু ব্যবস্থাও রয়েছে।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2022/07/image-6.gif?resize=800%2C450&ssl=1)
গ্রহাণুদের তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায় সি, এস এবং এম।
সি-টাইপ (কন্ড্রাইট) গ্রহাণুগুলি সবচেয়ে বেশি সংখ্যক । এগুলি সম্ভবত কাদামাটি এবং সিলিকেট শিলা দ্বারা গঠিত এবং দেখতে গাঢ়। এগুলি সৌরজগতের সবচেয়ে প্রাচীন বস্তুগুলির মধ্যে একটি।
এস-টাইপ (“পাথর”) সিলিকেট উপাদান এবং নিকেল-লোহা দিয়ে গঠিত।
এম-টাইপগুলি ধাতব (নিকেল-লোহা) বস্তু দিয়ে গঠিত। গ্রহাণুগুলির গঠনগত পার্থক্যগুলি সূর্য থেকে কতটা দূরে তৈরি হয়েছিল তার সাথে সম্পর্কিত।
গ্রহাণুদের সজ্জার মাঝে মাঝে ফাঁক দেখা যায়,এই ফাঁককে বলা হয় কার্কউড ফাঁক (Kirkwood gap)। বিজ্ঞানী কার্কউড প্রমাণ করেন যে বৃহস্পতির প্রভাবে এ ধরনের ফাঁকের সৃষ্টি হয়।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2022/07/image.png?resize=1000%2C1000&ssl=1)
গ্রহাণুদের নামকরনের ব্যাপারে একটি নিয়ম কঠোর ভাবে মেনে চলা হয়। অবশ্য প্রথম দিকে যেসব গ্রহাণু আবিস্কৃত হয়েছিল তাদের নাম বদলানো হয়নি। বর্তমানে যদি কোন নতুন গ্রহাণুর সন্ধান পাওয়া যায়, যেটি মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝামাঝি আছে, তাহলে তার নাম এমন ভাবে রাখতে হবে যাতে নামের শেষে a অক্ষরটি থাকে, যেমন গ্রহাণু রিসিয়া (Ricca)। যেসব গ্রহাণু সূর্যের কাছাকাছি এসে পড়ে তাদের নামের শেষে থাকে us। কিছু গ্রহাণু আছে যারা সূর্য এবং বৃহস্পতির সমদূরর্বর্তী। এদের বলা হয় ট্রোজান (Trojan) গ্রহাণু ।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2022/07/image-7.gif?resize=300%2C300&ssl=1)
১৭৭২ সালে গনিতবিদ ল্যাগরাঞ্জ হিসাব করে দেখান যে বৃহস্পতির কক্ষপথের কাছাকাছি দুটি বিন্দু থাকবে। যে বিন্দু দুটিতে সূর্য, বৃহস্পতি ও গ্রহাণু সমবাহু ত্রিভূজ সৃষ্টি করে সেই দুটিই হবে ল্যাগরাঞ্জ নির্দেশিত বিন্দু। বৃহস্পতির ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্টগুলি এমন অঞ্চল যেখানে একটি গ্রহাণু বৃহস্পতি এবং সূর্যের সমান সমান আকর্ষণে প্রদক্ষিণ করতে পারে।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2022/07/image-3.png?resize=600%2C615&ssl=1)
এই দুটি বিন্দুতে যে গ্রহাণুরা আছে, তারা বৃহস্পতির সাথে একই কক্ষপথে সামনে ও পিছন থেকে একই সময় সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলছে। এদের কে বলে ট্রোজান গ্রহাণু। ১৯৫৯ সালের মধ্যে এই রকম ১৪টি ট্রোজান গ্রহাণু আবিস্কার করা হয়েছে। এর একটির নাম হলো অ্যাকিলিজ।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2022/07/image-2.png?resize=730%2C352&ssl=1)
বৃহস্পতির দুরত্ব খুব বেশি বলে বড় আকারের ট্রোজান গ্রহাণু ছাড়া ছোট আকারের গ্রহাণু আবিস্কার করা অনেক অসুবিধা জনক। এই জন্য ধারণা করা হয় অনেক ট্রোজান গ্রহাণু অনাবিস্কৃত থেকে গেছে।
বেশির ভাগ গ্রহাণুর গড়ে ২.৬৬ একক দূর থেকে সূর্যের চারিদিকে ঘোরে। আমাদের সৌরজগতে প্রচুর গ্রহাণু রয়েছে। তাদের বেশিরভাগই প্রধান গ্রহাণু বেল্টে অবস্থিত মঙ্গল এবং বৃহস্পতির কক্ষপথের মধ্যে একটি অঞ্চল। তবে অন্য গ্রহদের মত গ্রহাণুদের গতিবিধি সুশৃঙ্খল নয়।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2022/07/image-1.jpeg?resize=600%2C360&ssl=1)
গ্রহদের কক্ষপথের তুলনায় গ্রহাণুদের কক্ষপথ অনেক বেশী উপবৃত্তাকার। উল্টাপাল্টা কক্ষে চলায় এদের জুড়ি মেলা ভার। এই গ্রহাণুদের দল পৃথিবীসহ সৌরজগতের অন্যসব গ্রহদের জন্য আতঙ্কের বিষয়।
গ্রহাণুগুলির কক্ষপথ বৃহস্পতির বিশাল মাধ্যাকর্ষণ দ্বারা পরিবর্তিত হতে পারে মাঝে মাঝে মঙ্গল বা অন্যান্য বস্তুর সাথে ঘনিষ্ঠ মুখোমুখি হওয়ার মাধ্যমে। এই এনকাউন্টারগুলি গ্রহাণুগুলিকে মূল বেল্ট থেকে ছিটকে দিতে পারে এবং অন্যান্য গ্রহের কক্ষপথের ভিতরে দিয়ে মহাকাশে ফেলে দিতে পারে।
যেমন গ্রহাণু ইরোস তকক্ষপথে চলাকালিন এক সময় পৃথিবীর ১৪,০০০,০০০ মাইলের মধ্যে এসে যায়। ইরোসের ব্যাস ৮ কি.মি. এবং লম্বায় ৩১ কি.মি.।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2022/07/image-2.jpeg?resize=760%2C838&ssl=1)
হিদালগো গ্রহাণুর কক্ষপথের ব্যাস সবচেয়ে বড় ৫৩১,০০০,০০০ মাইল যা পৃথিবীর কক্ষপথের ব্যাসের তিনগুণ। এটি পথ চলতে চলতে শনি গ্রহের কাছাকাছি চলে যায়। সবচেয়ে ছোট গ্রহাণু এডোনিস ১৯৩৬ সালে পৃথিবীর ১,৫০০,০০০ মাইলের মধ্যে এসে গিয়েছিল। এর ব্যাস আধামাইলের মত।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2022/07/image-8.gif?resize=220%2C220&ssl=1)
গ্রহাণু হারমেস আবিস্কারের দুই দিনের মধ্যে পৃথিবীর ৫০০০,০০০ মাইলের মধ্যে এসে গিয়েছিল। অনেকে মনে করেন যে হারমেস এমন একটি কক্ষপথ অনুসরণ করে যার ফলে এটি যে কোন সময় পৃথিবীর ২২১,০০০ মাইলের মধ্যে এসে যেতে পারে।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2022/07/image-9.gif?resize=279%2C196&ssl=1)
৩০০ মিটার বা তার চেয়ে বড় কোন গ্রহাণু পৃথিবীকে আঘাত করলে বিশাল এলাকা ধংস হয়ে যাবে যা একটি মহাদেশের সমান। আর এক মাইল বা তার থেকে বড় গ্রহাণুর সাথে সংঘর্স হলে কম বেশী সমগ্র পৃথিবী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সবচেয়ে ছোট গ্রহাণু এডোনিসের সাথেও যদি পৃথিবীর ধাক্কা লাগে তবে কয়েকটি শহর ধংস হয়ে যাবে। অতীতে এইসব গ্রহাণুরা পৃথিবী পৃষ্ঠে আঘাত করেছিল। ধারণা করা হয় এদের কারনেই পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়েছিল।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2022/07/image-10.gif?resize=498%2C278&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2022/07/image-11.gif?resize=777%2C437&ssl=1)
বিপথগামী গ্রহাণু বা গ্রহাণুর টুকরো অতীতে পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহগুলিতে আছড়ে পড়েছে। এগুলো গ্রহগুলির ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস পরিবর্তন করতে এবং পৃথিবীতে জীবনের বিবর্তনে প্রধান ভূমিকা পালন করছে৷
বিজ্ঞানীরা ক্রমাগত পৃথিবীর নিকটে ছুটে আসা গ্রহাণুগুলি পর্যবেক্ষণ করেন, যাদের পথ পৃথিবীর কক্ষপথকে ছেদ করে। বিপদজনকভাবে কাছাকাছি আসা গ্রহাণুগুলি (যা পৃথিবীর কক্ষপথের দূরত্ব প্রায় ২৮ মিলিয়ন মাইল এর মধ্যে আসে) তা বিধ্বংশী বিপদ ডেকে আনতে পারে৷
নিয়ার আর্থ অবজেক্ট নামে নাসার আলাদা একটা বিভাগ আছে সেখান থেকে এদেরকে দিন রাত ২৪ ঘন্টা সবসময় পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখা হয়। তাছাড়াও আমাদের ভাগ্যেও ভাল যখন এই গ্রহাণুগুলি পৃথিবীর কক্ষপথের ভিতরে এসে পড়ে তখন পৃথিবী কক্ষপথের সেই জায়গায় থাকে না। যদিও ১৪০ মিটারের বেশি বড় আকারের কোন পরিচিত গ্রহাণু পরবর্তী ১০০ বছরের মধ্যে পৃথিবীতে আঘাত করার উল্লেখযোগ্য তেমন কোন সম্ভাবনা নেই।
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে গ্রহাণুদের কক্ষপথ সব সময় মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝখানে থাকে না। তবে কি পৃথিবীর সাথে কোন গ্রহাণুর ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা আছে? এর সম্ভাবনা খুবই কম বলা যায়।
তারপর ও যদি বিপদজনক আকারের কোন গ্রহাণু পৃথিবীকে আঘাত করার আগেই কিভাবে মোকাবেলা করা যায় সেই বিষয়ে অনেক আগে থেকেই বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন উপায় বের করার চেষ্টা করছে। এরই অংশ হিসাবে নাসা একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলো, যেখানে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা গ্রহাণুকে একটি মহাকাশযান ধাক্কা মেরে তার গতিপথ থেকে সরিয়ে দেবে।
এই পরীক্ষার অংশ হিসাবে ডার্ট-১ (Double Asteroid Redirection test) নামক একটি মহাকাশযানকে গত ২৪শে নভেম্বর ২০২১ সালে মহাকাশে পাঠানো হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ডার্ট আগামী বছর (২০২২) সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে বা অক্টোবরের শুরুতে তার কাজ করবে। মহাকাশযানটি প্রতি সেকেন্ডে ৬.৬
কিলোমিটার (১৫,০০০ মাইল প্রতি ঘন্টায়) গতিতে বাইনারী সিস্টেম গ্রহাণু ৬৫৮০৩ কে ধাক্কা মেরে এই পরীক্ষার ফলাফল দেখবে।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2022/07/image-3.jpeg?resize=590%2C350&ssl=1)
আবার কোন গ্রহাণু যখন পৃথিবীর কাছে চলে আসে তখন জ্যেতির্বিদরা নানা রকমের পরীক্ষা করেন। এই গ্রহাণুদের সাহায্য নিয়ে পৃথিবী থেকে সূর্যের দুরত্ব ভাল ভাবে মাপা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও নাসা (NASA) বড় গ্রহাণু ভেস্তা ও সেরেস কে পরীক্ষা করার জন্য উপগ্রহ পাঠিয়েছে এবং গ্রহাণু পৃষ্ঠে নভোচারী নামানোর চিন্তা করছে।
কিন্তু এই গ্রহাণুদের সৃষ্টি হলো কি ভাবে?
এখানে দুটি মতবাদ আছে। একটি হলো অতীতে কোন এক সময় দুটি ছোট গ্রহ পরস্পরের সাথে ধাক্কা লেগে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এই টুকরো গুলিই হচ্ছে এইসব গ্রহাণুরা।
অন্যটি হলো গ্রহাণুরা হলো সেই সব বস্তুকণা যাদের দ্বারা গ্রহ তৈরী হয়। কিন্ত বৃহস্পতির মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারনে এই বস্তুকণাগুলো একসাথে সংযুক্ত হয়ে গ্রহে পরিণত হতে পারে না। তবে এই মতবাদ গুলো সবই অনুমান।
পার্শ্ববর্তী গ্রহদের কক্ষপথের ওপর সমগ্র গ্রহাণুরা কি প্রভাব সৃষ্টি করছে তা অনুমান করে, তাদের সামগ্রিক ভর গণনা সম্ভব। গ্রহাণু বলয়ে সমস্ত গ্রহাণুর মিলিত মোট ভর পৃথিবীর চাঁদের চেয়ে কম।
সৌরজগতে লক্ষ লক্ষ গ্রহাণু রয়েছে তবে বর্তমান পরিচিত গ্রহাণুর সংখ্যা (গননা অনুযায়ী) ১,১১৩,৫২৭। তবে বিজ্ঞানীরা হয়তো কোনদিনই জানতে পারবে না, শেষ গ্রহাণুটি আবিস্কৃত হলো কিনা। তাছাড়া এদের অস্বীকার করার কোন উপায় নেই কারণ এরাও অন্যসব গ্রহদের মতই সৌর জগতের আদি বাসিন্দা।
তথ্যসুত্রঃ
Leave a Reply