অল্প কিছু দিন আগে ওয়েব টেলিস্কোপ গ্লাস জেড-১৩ নামের মহাবিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীনতম গ্যালাক্সি আবিস্কার করে সারা পৃথিবীতে হইচই ফেলে দিয়েছিলো। ওয়েব এবার নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙে দিয়েছে।
এর আগে আবিস্কৃত গ্লাস জেড-১৩ ছিলো ১৩.৫ বিলিয়ন বছরের পূর্বের গ্যালাক্সি। এটি বিগ ব্যাং-এর ৩০০ মিলিয়ন বছর পরে সৃষ্টি হয়েছিলো। আর বর্তমানে আবিস্কৃত গ্যালাক্সিটি বিগ ব্যাং-এর মাত্র ২৩৫ মিলিয়ন বছরের মধ্যে গঠিত হয়েছিলো। স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এমনটাই দাবী করেছেন।
এডিনবার্গ গ্রুপটি আকাশের একটি বিস্তৃত ক্ষেত্র সমীক্ষা করছে। যা ওয়েব বর্তমানে কসমিক ইভোলিউশন আর্লি রিলিজ সায়েন্স (CEERS) সার্ভে নামে পরিচিত। বিজ্ঞানীরা এই গ্যালাক্সীর নাম দিয়েছে সিয়ার্স-৯৩৩১৬ (CEERS- 93316)।
মহাজাগতিক বস্তুটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৫ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দুরে বলে মনে করা হয়। বিজ্ঞানীদের দ্বারা চিহ্নিত পূর্ববর্তী সবচেয়ে দূরবর্তী গ্যালাক্সি GN-z11 থেকে প্রায় ৩২ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে।
এই বস্তুটি অত্যন্ত ক্ষীণ। কিন্তু ওয়েবের অত্যাধুনিক ইনফ্রারেড ক্যামেরায় এটি উজ্জ্বল হিসাবে ধরা দেয়। এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী সোফি জুয়েল এবং ক্লারা পোলক নতুন আবিষ্কৃত ছায়াপথের একটি রঙিন চিত্র তৈরি করেছেন৷
অবশ্য এ একটি প্রাথমিক প্রার্থী। ফলাফল নিশ্চিতকরণের জন্য একটি ফলো-আপের প্রয়োজন হবে৷ ওয়েব পর্যবেক্ষণ থেকে ঘোষিত প্রাথমিক প্রার্থীদের এখনও সম্পূর্ণ বর্ণালী পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি।
এই প্রক্রিয়াতে একটি গ্যালাক্সি থেকে আসা আলোকে তার উপাদানের রঙের বর্ণালীতে টুকরো টুকরো করা হয়। মহাজাগতিক ইতিহাসের সময়কালে কীভাবে দৃশ্যমান আলো ইনফ্রারেডে প্রসারিত হয়েছে তার স্পষ্টতম ধারণা পাওয়া যাবে। এই কাজটি সম্পূর্ণ হওয়ার পরেই দূরত্বের দাবিগুলি সর্ম্পকে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় সূক্ষ্ম সেন্সর জেমস ওয়েব টেলিস্কোপেই রযেছে।
আশা করা হচ্ছে এই প্রকল্পটি বিজ্ঞানীদের “মহাবিশ্ব প্রথম আলো” দেখার অনুমতি দেবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিদ্যার স্কুলের ক্যালাম ডনান বলেছেন “আমরা একটি টেলিস্কোপ ব্যবহার করছি যা এই ধরনের বস্তুকে সঠিকভাবে শনাক্ত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল এবং এটি আশ্চর্যজনক। এটি আমাদের ১৩.৫বিলিয়ন বছরেরও বেশি আগে প্রথম নক্ষত্র এবং ছায়াপথগুলির গঠনের দিকে ফিরে তাকানোর অনুমতি দেয়। নিঃসন্দেহে, এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণের শুরু, যা এই অবিশ্বাস্য যন্ত্রটি ব্যবহার করে আগামী সপ্তাহ, মাস এবং বছরগুলিতে করা হবে।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্টিনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিভ ফিঙ্কেলস্টেইন বলেন, মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে। বস্তুর আলো আমাদের কাছে পৌঁছাতে যে সময় নেয়, সেই বস্তুগুলো অনেক কমে গেছে। তাই তাদের অবস্থান আজ প্রথম আলো নির্গত হওয়ার চেয়ে অনেক বেশি দূরে।
ওয়েব জুনের শেষের দিকে বিজ্ঞানের কার্যক্রম শুরু করেছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এর ছবি থেকে দূরবর্তী বস্তু খুঁজে পাচ্ছেন। যদি ওয়েব পরিকল্পিত কর্মক্ষমতা অর্জন করে, তবে বিজ্ঞানীরা ওয়েবের মাধ্যমে এমন বস্তু দেখতে পাবেন যেগুলি বিগ ব্যাং-এর প্রায় ১০০ মিলিয়ন বছর পরে অস্তিত্ব ছিল।
রেডশিফট শব্দটি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মহাজাগতিক দূরত্ব নিয়ে আলোচনা করার সময় ব্যবহার করেন। এটি এমন একটি পরিমাপ যা মহাবিশ্বের তরঙ্গদৈর্ঘ্যে লাল তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের সম্প্রসারণের দ্বারা একটি বস্তু থেকে যেভাবে আলো “প্রসারিত” হয়েছে তা বর্ণনা করে। একটি গ্যালাক্সির জন্য নির্ধারিত রেডশিফ্ট নম্বর যত বেশি হবে, এটি তত বেশি দূরবর্তী এবং মহাজাগতিক ইতিহাসে এটি তত আগে দেখা হচ্ছে।
তথ্যসুত্রঃ
Scottish astronomers push James Webb deeper back in time
Astronomers photograph deepest ever galaxy on James Webb telescope
CEERS-93316 is at a distance of 35 billion light years from the Earth – Techchrom
Leave a Reply