মানুষের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা

অসংখ্য শহর, হরেক রকমের মানুষের সমন্বয়ের যেন গড়ে উঠে একটি রাষ্ট্র। সেই রাষ্ট্রকে প্রতি মুহূর্তেই অসংখ্য প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়। রাষ্ট্রের নাগরিকদের সেই প্রতিকূলতা থেকে দূরে রাখা মূলত রাষ্ট্রেরই কর্তব্য। আর রাষ্ট্র ব্যবস্থা সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য নিয়োজিত থাকে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। তাদের মূলত কাজই হচ্ছে অভ্যন্তরীণ ও বাহিরের অপশক্তির হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা। মূলত বড় রকমের বিপর্যয় দেখা দিলে দেশে আর্মি নামানো হয়, যারা কিনা অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের থেকেও দেশকে শক্ত হাতে বর্হিশক্তির আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।  প্রসঙ্গক্রমে যেন চলে আসলো আমাদের মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার কথা।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ব্যাপার চলে আসা মানেই যেন অ্যান্টিবায়োটিকের নাম চলে আসা। অ্যান্টিবায়োটিক যেন লড়ে যায় দেহের ভেতরের ক্ষতিকারক উপাদানের বিরুদ্ধে। কিন্তু কখনো কখনো দেখা যায় দেহের ভেতরে থাকা কিছু ক্ষতিকারক অনুজীবের আক্রমণে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর ঠিক তখনই আবির্ভাব ঘটে ব্যাকটেরিয়ফাজের। এর মাধ্যমে যেন দেহের অভ্যন্তরে নতুন করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। একটি রাষ্ট্রে বড় রকমের বিপর্যয় নামলে যেমন আর্মি নামানো হয়, ঠিক তেমনি ব্যাকটেরিফাজ মানবদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়ে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করে এবং সেই সাথে সর্বক্ষণিকভাবে প্রহরীর ভূমিকায় নিয়োজিত থাকে।

একটি রাষ্ট্রকে বহিঃশক্তির আক্রমণ ও অভ্যন্তরীণ অপশক্তির চাপ সামলে চলতে হয়। শত প্রতিকূলতা ও চড়াই-উতরাই পেরিয়েই টিকে থাকতে হয় একটি রাষ্ট্রকে। মনস্তাত্বিকভাবে দৃঢ় ও সঠিক পরিকল্পনা প্রয়োগই পারে মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়ে রাখতে। আচমকা জর্জরিত যেন সীমান্তের ওপার থেকে লক্ষ্য ভেদ করা শত্রু পক্ষের একের পর এক আক্রমণে।দেশ (মানবদেহ / শরীর) রক্ষার্থে দেশের (মানবদেহে) অভ্যন্তরীণ সামরিক সেনা (অ্যান্টিবায়োটিক, সামরিক বাহিনী তথা ব্যাকটেরিওফাজ) থেকে শুরু করে সকল প্রকার প্রশাসনিক ব্যবস্থা জোরদার করায় হয়েছে। বহিরাগত আক্রমণকে (ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ) প্রতিহত করার জন্য আরো একটি মুখ্য বিষয় হলো নিজেদের পরিকল্পনার যথাযথ বাস্তব প্রয়োগ (অ্যান্টিবায়োটিক)। 

বহিরাগত শত্রুর আক্রমণ ছাড়াও দেশে (মানবদেহে / কোষে / শরীরে) অভ্যন্তরীণ কিংবা দেশের ভেতরে দাংগা-হামলা লাগানোর জন্য কিছু পক্ষ থেকেই যায়। দেখা যায় যে দেশের অভ্যন্তরে (মানবদেহে) যতগুলো কোষ আছে তার থেকেও ১০ গুণ বেশি ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। মূলত এর মধ্যে কিছু ব্যাকটেরিয়া (যেনো দেশের অভ্যন্তরে থাকা দেশেরই বিরুদ্ধে শত্রুর ভূমিকা পালন করে থাকে। লুকিয়ে থাকা এই শত্রুদের মন বোঝা বড্ড দায়! এরা যেনো ওঁতপেতে থাকে দেশের অভ্যন্তরেই অস্থিতিশীল পরিবেশ (রোগ সৃষ্টি করে) তৈরি করতে। একবার অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলেই বরং তাদের জয়জয়কার। ফায়দা হাসিল করে নিজ কার্য সম্পাদন করাতেই এরা ব্যতিব্যস্ত। তবে একটি দেশে সকলেই (ব্যাকটেরিয়া) তো আর দেশের (মানবশরীরের) ক্ষতি করেনা। বরং কিছু (উপকারী ব্যাকটেরিয়া গুলো) দেশের (মানবদেহে) নানা রকম উপকারে আসে এবং সেই সাথে জনসেবায় নিজেদের নিয়োজিত রাখে।

তবে দেশের অভ্যন্তরে (মানবদেহে) অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ (ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া) এবং দেশের বহিরাগত শত্রুরা ক্রমাগত সচেষ্ট ভূমিকা পালন করে। সমাজের (মানবশরীরে) নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে যেনো অভ্যন্তরীণ সামরিক শক্তি ও তার সরঞ্জাম (ব্যাকটেরিওফাজ) এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের (অ্যান্টািবায়োটিক) তৎপরতা বাড়ানো হয়। তবে এদের সাথে পাল্লা দিতে শত্রুপক্ষরাও (ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া) বেশ পটু।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তথা পুলিশ (অ্যান্টিবায়োটিক) কিছু প্রশিক্ষণ ও পরিকল্পনার অভাব থাকার কারনে দেখা যায় যে উন্নত প্রযুক্তি ও পরিকল্পনার (ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক সেবন ও অ্যান্টিবায়োটিকের সম্পূর্ণ ডোজ সম্পন্ন না করায়েই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে) অভাবে অরাজকতা সৃষ্টিকারীরা (ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া) প্রতিকূল পরিবেশে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হচ্ছে এবং ওদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ হয়ে উঠছে। ফলাফলস্বরুপ সমাজে (মানবদেহে) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে এবং সেই সাথে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা কমে যাচ্ছে।

এমতাবস্থায় সমাজের অভ্যন্তরে যেনো অরাজকতা বেড়ে চলেছে। যা কিনা দিনকে দিন ভয়াবহতায় রূপ নিচ্ছে এবং সমাজে শান্তি বিনষ্ট হচ্ছে। সামজের (মানবদেহের) শান্তি ফিরিয়ে আনতে সামরিক বাহিনীর (ব্যাকটেরিওফাজ) তৎপরতা বাড়ানোর জন্য সরকার থেকে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা জাড়ি করা হয়। ব্যাকটেরিওফাজ মূলত মানবদেহের কোনো ক্ষতি করে না। এরা যেন বলা যায় সর্বক্ষনিকভাবে প্রহরীর ভুমিকায় নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখে। এদের কাজ হলো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করা ও তাদের মেরে ফেলা। সামরিক বাহিনীরা (ব্যাকটেরিওফাজ) সাধারণত খুব বিচক্ষণ ও প্রশিক্ষিত। সুনির্দিষ্ট ভূমিকায় ব্যপকভাবে প্রশংসিত সবসময় ব্যাকটেরিওফাজ। এরা খুবই বিচক্ষণ ও সুনির্দিষ্টভাবে শত্রুপক্ষকে (নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়াকে) লক্ষ্য করে করে শিকার করে এবং তাদের জালে বন্দি করে  থাকে। একইসাথে এটাও বলে রাখা শ্রেয়, ব্যাকটেরিওফাজ (সামরিক বাহিনীরা) মানবদেহের ( রাষ্ট্রের কিংবা জনগণের) বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করে না। এদের কাজই হলো  রাষ্ট্র ও তার জনগণকে (মানবদেহকে) প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করা।

এভাবেই সামরিকবাহিনীরা (ব্যাকটেরিয়ফাজ) যেনো নিতান্তই মহানায়কের ভূমিকা পালন করে রাষ্ট্রের ( মানবদেহ ) ভূখন্ড রক্ষা করে এবং সেই সাথে যুদ্ধ জয়ের সাহসি গল্প রচনা কররা মধ্য দিয়ে ( অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ নামক সমস্যা হতে উত্তরনের পথ দেখায় )।

তথ্যসূত্র: 

  • Microbiology: An Introduction, Gerard J. Tortora , Berdell R. Funke , Christine L. Case, 12th Edition,2014.
  • উচ্চ মাধ্যমিক উদ্ভিদবিজ্ঞান বই, আবুল হাসান, ২০২০ সংস্করণ
  • Prescott’S Microbiology [Paperback] [Mar 01, 2017] Willey 10th Edition

লেখাটি 139-বার পড়া হয়েছে।

ই-মেইলে গ্রাহক হয়ে যান

আপনার ই-মেইলে চলে যাবে নতুন প্রকাশিত লেখার খবর। দৈনিকের বদলে সাপ্তাহিক বা মাসিক ডাইজেস্ট হিসেবেও পরিবর্তন করতে পারেন সাবস্ক্রাইবের পর ।

Join 897 other subscribers