পূর্বপুরুষের খোঁজে

লেখাটি বিভাগে প্রকাশিত

দীর্ঘদিন ধরেই বিজ্ঞানীদের মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। স্যাপিয়েন্সদের সঙ্গে প্রাচীন প্রাগৈতিহাসিক মানুষদের সম্পর্কটা কোথায়? পৃথিবীর অভিযাত্রায় আমরা কখনই একা ছিলাম না। ইতিহাসের একটা বড় সময় জুড়ে আমাদের সাথে ছিল আমাদের আরও দুই জ্ঞাতী ভাই, নিয়ানডার্থাল  আর ডেনিসোভান। তাদের সাথে আমাদের সামঞ্জস্যতা কোন জায়গায়? উত্তর পেতে হলে খুঁজে পেতে হবে আমাদের পূর্বপুরুষের হদিস। বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত খুঁজে চলেছেন প্রাচীন মানব-ফসিল। নিত্য নতুন আবিষ্কার প্রমাণ করছে, এতদিন আমরা মানব প্রজাতির বিবর্তন ভেবে আসছি ভুল পথে। এ বিষয়ে মত-দ্বিমতের অভাব নেই। তবে বিংশ শতকের শেষ দশকে, অধিকাংশ বিজ্ঞানীই কয়েকটা ব্যাপারে একমত হয়েছেন। প্রথমত, পৃথিবীতে হোমো স্যাপিয়েন্সদের আগমন ঘটেছে বড়জোর কয়েক লাখ বছর আগে। সেকারণেই বর্তমান মানুষদের মধ্যে এত বেশী জিনগত মিল দেখা যায়। দ্বিতিয়ত, স্যাপিয়েন্সদের উদ্ভব ঘটেছে আফ্রিকায়। এর পেছনে যুক্তি হচ্ছে, আধুনিক মানুষদের মধ্যে যত ধরণের জিনগত বৈচিত্র্য দেখা যায় তার বেশীরভাগই উপস্থিত আছে আফ্রিকান মানুষদের জিনপুলে। সবশেষে, নিয়ানডারর্থাল  আর স্যাপিয়েন্স একই সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হয়েছে। আমাদের সেই সাধারণ পূর্বপুরুষকে ডাকা হয় অ্যান্সেস্টর-এক্স নামে। 

নিয়ানডারর্থাল  আর স্যাপিয়েন্স একই সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হয়েছে।

এই সবগুলো পয়েন্টকে এক করলে যা দাঁড়ায়- কয়েক লাখ বছর আগে, আমাদের সাধারণ পূর্বপুরুষরা বাস করত আফ্রিকা আর ইউরোপে। তারপর আফ্রিকায় এই অ্যান্সেস্টর-এক্স’দের একটা ছোট জনগোষ্ঠী দীর্ঘ সময় ধরে তাদের মূল জনগোষ্ঠী থেকে আলাদা হয়ে বিবর্তিত হয়। আর এভাবেই আফ্রিকান এই ছোট জনগোষ্ঠী থেকে উদ্ভব হয় আধুনিক স্যাপিয়েন্সদের। অন্যদিকে প্রায় একই সময়ে ইউরোপে অ্যান্সেস্টর-এক্স’দের একটা ছোট জনগোষ্ঠী থেকে বিবর্তিত হয় নিয়ানডারথালরা। তারপর স্যাপিয়েন্স আর নিয়ানডারথালরা ছড়িয়ে পড়তে থাকে চারদিকে। পৃথিবীর মাটি থেকে অবশিষ্ট অ্যান্সেস্টর-এক্স’দের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার কারণ এই দুই মানুষ প্রজাতি। আর সবশেষে নিয়ানডার্থলদের হটিয়ে সমগ্র পৃথিবীর রাজ্যপাট হাতিয়ে নিলো হোমো স্যাপিয়েন্সের দল। 

শিল্পীর কল্পনায় হোমো হাইডেলবার্গেনসিস।

এই হাইপোথিসিসের সত্যতা কতটুকু তার প্রমাণ পেতে হলে, খুঁজে পেতে হবে আমাদের সেই অ্যান্সেস্টর-এক্স’দের  ফসিল। ১৯৮০ সালে লন্ডনের নেচারাল হিস্ট্রি অব মিউজিয়ামের ক্রিস স্ট্রিংগার দাবী করেন, তিনি আমাদের সাধারণ পূর্বপুরুষদের ফসিল খোঁজে পেয়েছেন। স্ট্রিংগার দীর্ঘদিন ধরে, নিয়ানডার্থল এবং স্যাপিয়েন্সদের মাথার খুলি নিয়ে গবেষণা করে আসছেন। উদ্দেশ্য এই দুই গ্রুপের মানব প্রজাতির মধ্যে কি কি বৈশিষ্ট্যের মিল আছে তা উদ্ঘাটন করা। কেননা এই দুই মানব প্রজাতির উদ্ভব যদি একই সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে হয়, তাহলে নিশ্চিত ভাবে এদের মধ্যে কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য থাকবে।  উভয় গ্রুপই এই বৈশিষ্ট্য গুলো পেয়েছে একই পূর্বপুরুষ এর কাছ থেকে। সেরকমই কিছু মিল হচ্ছে, উভয় প্রজাতিরই বেশ বড় সাইজের মস্তিষ্ক আছে। মাথার খুলির দুই পাশে যেখানে কান থাকে, সেই জায়গার টেমপোরাল হাড়ের গড়ন উভয় প্রজাতিতেই একইরকম। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এইসব মিল তৃতীয় আরেকটা হোমিনিন ফসিলেও পাওয়া গেছে। এর বৈজ্ঞানিক নাম হোমো হাইডেলবার্গেনসিস। তিন থেকে পাঁচ লাখ বছর আগে এরাও বাস করত আফ্রিকা আর ইউরোপে। স্ট্রিংগার ভেবে বসেছিলেন, হাইডেলবার্গেনসিস-ই হচ্ছে আমাদের সেই  অ্যান্সেস্টর-এক্স। 

হাইডেলবার্গেনসিস-ই কি আমাদের অ্যান্সেস্টর-এক্স?  

২০১০ সালে স্ট্রিংগারের এই ভাবনায় চিড় ধরে। সে বছর স্পেনের সিমা দে লস হুয়েসোসে হাইডেলবার্গেনসিস’দের জীবাশ্ম নমুনা খুঁজে পাওয়া যায়। এসব জীবাশ্ম নমুনা থেকে বেশ স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায়, আদি নিয়ানডার্থলদের সঙ্গে হাইডেলবার্গেনসিসদের সবচাইতে বেশী মিল আছে। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ডিএনএ বিশ্লেষণ এই বক্তব্যকে আরো বেশী জোরদার করে। তাছাড়া হাইডেলবার্গেনসিসদের উদ্ভব ঘটে আজ থেকে সাড়ে চার লাখ বছর আগে। কিন্তু আমাদের সাধারণ পূর্বপুরুষরা সাড়ে সাত লাখ বছর আগে থেকেই পৃথিবীর মাটিতে ঘুরে বেড়াত। ২০১৯ সালে নিয়ানডার্থল আর স্যাপিয়েন্সদের দাঁত নিয়ে গবেষণা বলছে, অ্যান্সেস্টর-এক্সরা বাস করত আট লাখ কিংবা তারও আগে থেকেই। সুতরাং হাইডেলবার্গেনসিস কোনোভাবেই আমাদের অ্যান্সেস্টর-এক্স হতে পারে না। 

তবে অ্যান্সেস্টর-এক্স দাবীদার এমন আরেকটা প্রার্থীও হাজির ছিল। এদের বৈজ্ঞানিক নাম- হোমো অ্যান্টেসেসর। সিমা দে লস হুয়েসোস থেকে মাত্র শ খানেক মিটার দূরেই পাওয়া যায় এদের ফসিল। গবেষণা বলে,  এরা বাস করত আট থেকে সাড়ে আট লাখ বছর পূর্বে। তাহলে সময় গণনা অনুসারে, অ্যান্টেসেসরদের আমাদের অ্যান্সেস্টর-এক্স হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। যদি তাই-ই হয় তাহলে এরা মানব বিবর্তনের পালে নতুন হাওয়া যোগ করবে। হোমো অ্যান্টেসেসর হবে সবচাইতে প্রাচীন আধুনিক গড়নের মুখাবয়ব বিশিষ্ট মানব প্রজাতি। এদের নরম আর সমতল গালের হাড় আধুনিক স্যাপিয়েন্সদের সাথেই বেশী সাদৃশ্যপূর্ণ। কিন্তু নিয়ানডারথালদের শক্ত গালের হাড়ের সাথে খুব একটা সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। কিন্তু অ্যান্সেস্টর-এক্স নিয়ে প্রচলিত হাইপোথিসিস বলছে ভিন্ন কথা। অ্যান্সেস্টর-এক্স’দের সাথে আধুনিক স্যাপিয়েন্সদের খুব কমই মিল থাকার কথা। অ্যান্টেসেসরই যদি আমাদের সাধারণ পূর্বপুরুষ হয়, তাহলে আমাদের তথাকথিত আধুনিক মুখায়বয়ব হবে সবচাইতে প্রাচীন গড়নের মুখাবয়ব। আর নিয়ানডার্থলদের মুখায়বয়ব হবে আমাদের থেকেও আরও বিবর্তিত এবং আধুনিক গড়নের। 

শিল্পীর কল্পনায় হোমো অ্যান্টেসেসর।

স্ট্রিংগারের মতে অ্যান্টেসেসর নিজে আমাদের সাধারণ পূর্বপুরুষ না। এই যাবত অ্যান্সেস্টর-এক্স’দের নিয়ে যত ধরনের অনুমান করা হয়েছে সবগুলো মাথায় রেখে   ২০১৬ সালে স্ট্রিংগার একটা হাইপোথিসিস দাঁড় করান। এর সারসংক্ষেপ হচ্ছে, অ্যান্সেস্টর-এক্স’দের মুখাবয়ব অনেকটা হোমো অ্যান্টেসেসর’দের মতন, দাঁতের গড়ন নিয়ানডার্থলদের মতন। আর মাথার খুলি ইতালির সেপ্রানোতে পাওয়া আদিম হাইডেলবার্গেনসিস এর খুলির মতন। স্ট্রিংগার মনে করেন, নিশ্চয় এরকম মানব ফসিল  কোথাও না কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে। বিজ্ঞানীরা অনুসন্ধান চালিয়ে যাবেন। তবে কিছু গবেষক এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন। তারা ছমাস ধরে সুপারকম্পিউটারে একটা ক্লাইমেট মডেল দাঁড় করান। উদ্দেশ্য কি করে তাপমাত্রা আর অনাবৃষ্টি গত দুই মিলিয়ন বছর ধরে বিভিন্ন হোমিনিন প্রজাতির রিসোর্সকে আকৃতি দিয়েছে তা পুনর্নির্মাণ করা। বিজ্ঞানীরা এই মডেল থেকে প্রাপ্ত ফলাফলকে সমন্বয় করেন হাজার সংখ্যক ফসিল আর প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমানাদির সঙ্গে। ইতিহাসে হোমো স্যাপিয়েন্সসহ ছ’টা মানব প্রজাতির অবস্থান কোন জায়গায় আর কোন স্থানে তা বোঝাটাই হল আসল উদ্দেশ্য। তাদের গবেষণালব্ধ ফলাফল বলে, আফ্রিকায় প্রাচীন হাইডেলবার্গেনসিস’দের থেকেই স্যাপিয়েন্সদের উৎপত্তি।  

তবে বর্তমানে অধিকাংশ গবেষকের মত হল, হাইডেলবার্গেনসিস’দের সবচেয়ে বেশী সাদৃশ্য দেখা যায় আদিম নিয়ানডার্থালদের সাথেই। সুতরাং হাইডেলবার্গেনসিসরা মোটেও আমাদের সাধারণ পূর্বপুরুষ হতে পারে না। কিন্তু না, এই গল্প নতুন দিকে  মোড়  নিয়েছে। আমরা এতদিন ধরে মানুষদের বিবর্তন প্রক্রিয়াটা ভুলভাবে বোঝেছি। আফ্রিকার একটা ছোট এলাকা থেকে স্যাপিয়েন্সদের উৎপত্তি, এই ধারণায় খুব বেশী ভরসা করা যায় না। ফ্রান্সের টুলুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লুনেস চিকি এবং নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি আরভিং মেডিকেল সেন্টারের ডেভিড গোল্ডস্টেইন, আজ থেকে বিশ বছর আগে একটা রিভিউ পেপার লেখেন। তাদের দাবি জিনগত বিশ্লেষণ বলে হোমো স্যাপিয়েন্সরা একটা বিস্তৃত ভৌগোলিক অবস্থান জুড়ে ছড়িয়ে ছিল। এরা বিবর্তিত হয়েছে মেটাপপুলেশন হিসেবে। পুরো স্যাপিয়েন্স জনগোষ্ঠী আবার বিভক্ত ছিল অনেকগুলো সাবপপুলেশনে। এসব সাবপপুলেশনের মধ্যে জিনের বিনিমিয় ঘটেছে। প্রতিটা সাবপপুলেশনেই একটা স্বতন্ত্র জিনগত বৈশিষ্ট্য ছিল যা তাদেরকে অন্যদের থেকে আলাদা করে। দেখতেও তারা আলাদা ছিল। 

দিনদিন যতই নতুন নতুন ফসিল আবিষ্কার হচ্ছে, এই ধারণা তত গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। আফ্রিকায় দুই থেকে তিন লাখ বছর আগের পুরোনো মানব ফসিল পাওয়া গেছে। এদের সবকটাই স্যাপিয়েন্সদের মতন দেখতে। তবে প্রতিটারই কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সম্ভবত এরা এক একটা সাবপপুলেশনের প্রতিনিধিত্ব করছে। এরা নিজেদের মধ্যে আন্তঃপ্রজনন করে স্যাপিয়েন্সদের একটা মেটাপপুলেশনে পরিণত  করেছে। ২০১৮ সালে এই ধারণা সবার সামনে আসে। চিকি এবং ডেভিড এই আইডিয়ার নাম দেন প্যান-আফ্রিকান ইভ্যুলিউশন। জাম্বিয়ায় তিন লাখ বছরের পুরোনো একটা মাথার খুলির নমুনা পাওয়া যায়। গবেষণা বলছে, এটি হোমো হাইডেলবার্গেনসিসের। আজ থেকে তিন লাখ বছর আগে পুরো আফ্রিকা জুড়ে স্যাপিয়েন্সরা হেঁটে বেরিয়েছে। জাম্বিয়ার ফসিল বলছে সে সময় হাইডেলবার্গেনসিসরাও টিকে ছিল। গবেষকরা মনে করেন, হাইডেলবার্গেনসিসরা স্যাপিয়েন্সদের অ্যান্সেস্টর-এক্স না হলেও, এদের জিন নিশ্চয় আমাদের পূর্বপুরুষদের জিনপুলে মিশেছে। 

ড্রাগন ম্যান  

১৯৩৩ সাল। আংশিকভাবে চীন দখলে নিয়ে নেয় জাপানি সেনা। সে সময়  চীনের উত্তর-পূর্বাংশে হারবিনের ধারে একটা ব্রিজ নির্মাণের কাজ করছিলেন একজন স্থানীয় লোক। হঠাৎ করেই এক অবাককরা আবিষ্কার করে বসেন তিনি। মাটি খুঁড়তে গিয়ে একটা বেশ পুরোনো মাথার খুলি বেরিয়ে আসে। ভাগ্যিস লোকটা খুলিটার মর্ম বেশ ভালোভাবেই আন্দাজ করতে পেরেছিলেন। তাই খুলিটাকে জাপানি দখলদার বাহিনীর হাতে তুলে না দিয়ে, একটা পরিত্যক্ত কূপে পুতে ফেলেন তিনি। ২০১৮ সালের আগ অবধি খুলিটা সেখানেই পোতা ছিল। মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে সেই লোক খুলির ব্যাপারে তার পরিবারকে জানান। এরই মধ্য দিয়ে হারবিনের সেই খুলির খবর পৌঁছে যায় বিজ্ঞানীদের কাছে। প্যান-আফ্রিকান ইভ্যুলিউশন মডেলের গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, এই মডেলকে আমাদের অ্যান্সেস্টর-এক্স সহ অন্যান্য হোমিনিন সদস্যদের উৎপত্তি ব্যাখ্যায় প্রয়োগ করা যায়। এই মডেল অনুসারে, আমাদের নিকটতম পূর্বপুরুষ প্রজাতিরাও বিবর্তিত হয়েছিল তাদের পূর্বসূরি প্রজাতিদের সাব পপুলেশনের মধ্যে জিনের বিনিময়ের মাধ্যমে। কিন্তু পৃথিবীর কোথায় এই ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে? 

শিল্পীর কল্পনায় ড্রাগন ম্যান।

এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজে পেতে হলে, আন্তর্জাতিকভাবে বিজ্ঞানীদের মধ্যে সমঝোতা প্রয়োজন। বিশেষ করে পশ্চিম আর এশিয়ার বিজ্ঞানীদের মধ্যে। কিছু দশক জুড়ে এটা বেশ স্পষ্টভাবে বোঝা গেছে যে, এশিয়া মহাদেশেও মানব বিবর্তনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তেতো হলেও সত্য যে, দীর্ঘদিন ধরেই পশ্চিমা কিছু গবেষক এশিয়ার গবেষণাকে বিশ্বাস করতে পারেন না। তবে আশার কথা হচ্ছে যে, ইদানীং এই অবস্থা আগের চাইতে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। এখন এশিয়া আর পশ্চিমা গবেষকরা একসাথে অনেক ভালো ভালো গবেষণা করছেন। ফলে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী মহলের মনোযোগ আবার ফিরে গেছে হারবিনের সেই মাথার খুলির কাছে। বলাই বাহুল্য যে, প্রথম থেকেই হারবিনের ফসিল গুরুত্ব বিজ্ঞানীরা টের পেয়েছিলেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, হোমো অ্যান্টেসেসরদের মতন হারবিনের খুলিরও দারুণ মিল আছে আমাদের মুখাবয়বের সাথে। গত বছর বিজ্ঞানীরা হারবিনে পাওয়া ফসিলটার উপর একটা গবেষণাপত্র লেখেন। হারবিনে পাওয়া খুলিটা প্রায় দেড় লাখ বছরের পুরোনো। বিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করেছেন বিবর্তন বৃক্ষে হারবিনে পাওয়া ফসিলের অবস্থান কোথায় হবে। 

হারবিনে পাওয়া ড্রাগন ম্যান এর মাথার খুলি।

চমকপ্রদ ব্যাপার হল, হারবিনে পাওয়া ফসিল একটা অচেনা প্রাচীন মানব জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত কোনো সদস্যের। নিয়ানডারথালদের তুলনায় স্যাপিয়েন্সদের সাথে এদের বেশী সাদৃশ্য দেখা যায়। একটা গবেষণা পত্রে চাইনিজ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স এর শিজুন নি এবং তার সহকর্মীরা দাবি করেন, হারবিনে পাওয়া মাথার খুলি সম্পূর্ণ আলাদা একটা মানব প্রজাতির। এর বৈজ্ঞানিক নাম হোমো লংগি। স্ট্রিংগার এর নাম দেন ড্রাগন ম্যান। হারবিনের মাথার খুলি নিয়ে গবেষণা চলমান। স্ট্রিংগার এর মতে স্যাপিয়েন্স আর নিয়ানডার্থলদের মতন ড্রাগন ম্যানও একই সময়ে অ্যান্সেস্টর-এক্স-দের থেকে বিবর্তিত হয়েছিল। তার মানে ড্রাগন ম্যান হচ্ছে হারিয়ে যাওয়া আমাদের তৃতীয় ভাই। গবেষকরা মনে করছেন, এই তৃতীয় গ্রুপটি ২০১০ সালে আবিষ্কৃত ডেনিসোভানদের রহস্য উদ্‌ঘাটনে সাহায্য করবে।  ডেনিসোভানরা হচ্ছে নিয়ানডার্থলদের এশিয়ান জ্ঞাতি ভাই। স্যাপিয়েন্সদের বিবর্তন সঠিকভাবে বুঝতে হলে এই মানব প্রজাতিগুলোর সাথে আমাদের মিল কিংবা অমিল কোথায় তা উদ্ঘাটন করতে হবে। স্যাপিয়েন্সদের উৎপত্তি নিয়ে গবেষণা করতে হলে পূর্ব এশিয়া হবে একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থান। 

নিঃসন্দেহে হারবিনের ফসিল আমাদের অ্যান্সেস্টর-এক্স’রা দেখতে কেমন ছিল সেটা বোঝার কাজটা আরও সহজ করে দিয়েছে। একই সাথে অ্যান্সেস্টর-এক্স’দের খোঁজে পাওয়ার কাজটা যে অতটাও সহজ হবে না সেটাও পরিষ্কার করে দিয়েছে ড্রাগন ম্যান এর ফসিল। পৃথিবীর কোন প্রান্তে সন্ধান মেলবে আমাদের সাধারণ পূর্বপুরুষদের ফসিল সেটা একটা বড় রহস্য। হতে পারে এদের খোঁজে পাওয়া যাবে  আফ্রিকায় কিংবা ইউরোপে। হতে পারে এদের সন্ধান মিলবে পূর্ব কিংবা পশ্চিম এশিয়ায়। 

তথ্যসূত্রঃ নিউ সায়ন্টিস্ট ম্যাগাজিন এর “সার্চ ফর অ্যান্সেস্টর-এক্স” প্রবন্ধ আলোকে লেখা।       

লেখাটি 182-বার পড়া হয়েছে।


আলোচনা

Response

  1. অনেক কিছু অতি সহজ ভাষায় বুঝিয়ে বলার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ !! অনেকেই এসব নিয়ে কাজ করতে চায় না পাছে মিথ্যে গালগল্পের অসাড়তা আমরা যেন জেনে ফেলি অথবা আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রাখা অযৌক্তিক চিন্তাধারা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চাই না বলে !!!

Leave a Reply

ই-মেইলে গ্রাহক হয়ে যান

আপনার ই-মেইলে চলে যাবে নতুন প্রকাশিত লেখার খবর। দৈনিকের বদলে সাপ্তাহিক বা মাসিক ডাইজেস্ট হিসেবেও পরিবর্তন করতে পারেন সাবস্ক্রাইবের পর ।

Join 897 other subscribers