অক্টোবর, ১৯৫৩। উত্তর ইংল্যান্ড।
৩৩ বছর বয়সী মিস ম্যাক (Mrs. McK, ছদ্মনাম) স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমবারের মতো রক্ত দিতে যান নিকটস্থ একটি ব্লাড ক্লিনিকে। রক্তদানের পর নিজেদের ছোটখাটো প্রয়োজন সেরে দুজনই ফিরে আসেন বাসায়। ততক্ষণে ক্লিনিকে দান করা রক্ত পৌঁছে যায় ল্যাবরেটরীতে, স্ক্রিনিং টেস্টের জন্য। স্ক্রিনিং টেস্টের পর রিপোর্ট হাতে পেয়ে চোখ বুলাতেই চমকে ওঠেন ল্যাবম্যান! মনের অজান্তেই বলে ওঠেন – এ কি? একই ব্যক্তির শরীরে যে বইছে দুটি ভিন্ন রক্তের গ্রুপ! বায়োলজিক্যালি যা পুরোপুরি অসম্ভব।
পুনরায় টেস্টের তোড়জোড়
রিপোর্টে ভুল এসেছে ভেবে পুনরায় টেস্টটিউবে রক্ত নিয়ে পরীক্ষা করতে বসে পড়লেন তিনি। এবার বেশ সময় নিয়ে, মনযোগ সহকারে সম্পন্ন করলেন পরীক্ষাকার্য। কিন্তু না, এবারও ফলাফল অভিন্ন! রাতের নীরব নিস্তব্ধ পরিবেশে ল্যাবম্যানের মাথায় তখন উঁকি দেয় অদ্ভুতুড়ে সব চিন্তা! ভাবেন- কী আছে এই রক্ত-রহস্যের অন্তরালে?
এমন ভাবনার মূলোৎপাটনে ব্লাড ব্যাগটি তৎক্ষণাৎ সুরক্ষিত স্থানে সংরক্ষণ করেন তিনি। পরদিন নিজেই নিয়ে যান সেখানকার প্রসিদ্ধ এক ব্লাড গবেষণাগার “Medical Research Council Blood Group Unit in England”-এ। সেসময় সেখানে কর্মরত ছিলেন দু’জন বিজ্ঞ গবেষক, রবার্ট রেইস (Robert Race) ও রুথ সেঞ্জার (Ruth Sanger)। রিপোর্টে উঠে আসা ফলাফল ও ল্যাবম্যানের কাছে ঘটনার ইতিবৃত্ত শুনে আঁটঘাট বেঁধে তারা দু’জনই নেমে পড়লেন রহস্যের পানে।
মেডিকেল টেস্ট রিপোর্টগুলোকে একপাশে ফেলে এবার তারা গ্রহণ করলেন ভিন্ন পন্থা। চলে আসলেন মিস ম্যাক-এর পারিবারিক ইতিহাসের খোঁজে। জানতে চাইলেন তার সাথে অতীতে ঘটে যাওয়া বিচিত্র যত ঘটনা। শুনলেন, মিস ম্যাক যমজ হিসেবে জন্মেছিলেন। তার সঙ্গে জন্মেছিল একজন ভাই, যে কি-না জন্মের তিন বছরের মাথায় মারা যায়। দুর্ঘটনায় নয়, বরং শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণেই মৃত্যুবরণ করে সে!
সেসময়ের মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী, মায়ের গর্ভে ভ্রুণ অবস্থায় ম্যাক ও তার ভাইয়ের মধ্যে ভিন্নধর্মী Haemopoietic Stem Cell Infusion ঘটে। ফলে, ভূমিষ্ট হবার পরও এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয় তাদের মাঝে। এবং জন্মের তিন বছরের মাথায় Intrinsic Haemolytic Anaemia নামক বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ভাইটি। ম্যাকের ভ্রুণে ইনফিউশন এর প্রভাব কম থাকায় বেশকিছু শারীরিক জটিলতা নিয়েও বেঁচে যায় সে। এভাবে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে, মিস ম্যাকই হন প্রথম শনাক্তকৃত কাইমেরিক (Chimeric) মানুষ, যে কি-না বহন করেছে তার যমজ ভাইয়ের অস্তিত্ব। যদিও তখনো মূলোৎপাটন হয়নি কাইমেরিজমের কারণ ও সত্যিকার রহস্য।
রহস্য সমাধানে প্রথম ঘটনা
এই ঘটনার প্রায় পঞ্চাশ বছর পর, ২০০২ সালের শুরুর কথা। আমেরিকার ছোট্ট একটি শহরে স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করতেন লিডিয়া ফেয়ার চাইল্ড। একদিন তুচ্ছ একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে তাদের ভেতর তৈরি হয় মনোমালিন্য। সৃষ্টি হয় সম্পর্কে টানাপোড়েন। একসময় বিষয়টি গড়ায় বিচ্ছেদের পর্যায়ে। সেসময় লিডিয়া ছিলেন সাত মাসের সন্তানসম্ভবা। এরূপ পরিস্থিতিতেই বিবাহবন্ধন ছিন্ন হয় তাদের। বাড়ি থেকে বিতারিত হন লিডিয়া। আশ্রিত হন বাবার বাড়িতে।
কিছুদিন পর সন্তানদের অভিভাবকত্বের আশায় আদালতে আবেদন করেন লিডিয়া। আদালত নির্দেশ দেন, লিডিয়া ও তার দাবিকৃত সন্তানদের ডিএনএ টেস্টের। নির্দেশনা অনুযায়ী রিপোর্টও জমা হয়। আদালতে হাজির হন লিডিয়া। কিন্তু না, ডিএনএ রিপোর্টে লিডিয়ার সঙ্গে তার সন্তানদের ডিএনএ-র কোনোরূপ মিল খুঁজে পাওয়া গেলো না! মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো লিডিয়ার। এটা কী করে সম্ভব! তার সদ্য সাবেক স্বামীও পুরোপুরি ভ্যাবাচ্যাকা। তবে, মামলায় বিজয়ী হতে নিজেকে সে যথা সম্ভব সংযত রাখে।
স্বাভাবিকভাবেই আদালতে তখন নকল মায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন লিডিয়া। স্বার্থোদ্ধারের জন্য প্রতারক হিসেবে সাব্যস্ত হন তিনি। তবে, লিডিয়ার আইনজীবী অনুরোধ করেন, তৃতীয় সন্তানের জন্ম পর্যন্ত সময় দেবার। আদালত রাজি হয়, স্থগিত করেন রায়। তবে, প্রদান করেন একটি শর্ত- গর্ভবতী লিডিয়া সন্তান জন্মদানের সময় সেখানে উপস্থিত থাকবেন একজন ম্যাজিস্ট্রেট। সদ্য ভূমিষ্ট সন্তানের ডিএনএ-র সঙ্গে মিলিয়ে দেখবেন লিডিয়ার ডিএনএ।
দেখতে দেখতে চলে এলো সেই কাঙ্ক্ষিত সময়। প্রসব বেদনায় কাতর লিডিয়াকে নেওয়া হলো অপারেশন থিয়েটারে। শর্ত অনুযায়ী সঙ্গে গেলেন একজন নারী ম্যাজিস্ট্রেট৷ সুস্থভাবেই লিডিয়া জন্ম দিলেন ফুটফুটে এক কন্যাসন্তান। সদ্য ভূমিষ্ট শিশুটির ডিএনএ পরীক্ষা করা হলো৷ এবার রিপোর্ট দেখে ম্যাজিস্ট্রেটের চক্ষু চড়কগাছ! লিডিয়ার সঙ্গে এই সন্তানের ডিএনএ-রও কোনো মিল নেই!
এবার লিডিয়া ফেয়ার চাইল্ডের ভাগ্যাকাশে দেখা দিলো বীভৎস মেঘের ঘনঘটা। পুরোপুরি ফেঁসে গেলেন তিনি। দোষ? -অর্থের বিনিময়ে অন্য দম্পতির ভ্রুণ নিজের গর্ভে স্থাপন করে নিজের স্বামীকে ধোঁকা দিয়েছে সে। আর তাই আদালত থেকে কারাবরণের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয় লিডিয়াকে। যদিও সদ্য জন্মানো শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে তাকে দেওয়া হয় কিছুদিনের ফুরসত।
সময় পেড়িয়ে যায়, সবাইও মোটামুটি ভুলতে বসেছে লিডিয়া ফেয়ার চাইল্ডের ঘটনা। কিন্তু, অকস্মাৎ একদিন পত্রিকার পাতায় লিডিয়ার আইনজীবীর দৃষ্টি কাড়ে ছোট্ট একটি আর্টিকেলে। সেখানে তিনি দেখতে পান, লিডিয়ার মতোই অন্য একজন মা নিজের সন্তানের ডিএনএ-র সঙ্গে নিজের ডিএনএ-র মিল খুঁজে পাচ্ছেন না। বিষয়টি নিয়ে একদল গবেষক গবেষণার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এর সমাধানে দ্রুতই লেগে পড়েন কাজে। একসময় উদ্ধারও করেন ঘটনার পেছনের জল্পনা। গবেষণার ফলাফল- ঐ মা আসলে কাইমেরিজমের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন মানবী।
কাইমেরিজম কী?
কাইমেরিজম (Chimerism) হচ্ছে, ভিন্ন ভিন্ন জাইগোট থেকে ভিন্ন ভিন্ন রকমের টিস্যু মিলিতে হয়ে একক জীবের জন্মলাভ। এই একক জীবটিকে বলা হয় কাইমেরিক (Chimeric)। কাইমেরিক মানুষের শরীরে একজনের নয়, বরং দুই বা ততোধিক মানুষের জিনোম বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ এ ধরনের মানুষের শরীরে উপস্থিত থাকে দুই বা ততোধিক ভিন্ন ডিএনএ-সেট। যার মানে, একক দেহে দ্বৈত সত্তার অবস্থান!
শুনতে অদ্ভুত লাগছে না, তাই-না? ভাবছেন, এটা কি আদৌ সম্ভব! হ্যাঁ, অবশ্যই সম্ভব। এটি শুধু মানুষের মধ্যেই নয়, বরং গাছ বা ফুলেরও রয়েছে কাইমেরিক অস্তিত্ব।
সাধারণত, স্বাভাবিক মানুষদের বেলায় ডিএনএ নকশা (profile) সকল কোষে একই রকম দেখা যায়। অর্থাৎ একজন স্বাভাবিক মানুষের মুখের লালায়, থাইরয়েড গ্রন্থিতে বা জনন কোষে একই রকম ডিএনএ থাকে। কিন্তু যারা কাইমেরিক মানুষ, তাদের বেলায় এটি পুরোপুরি ব্যতিক্রম! তাদের মুখের লালায় ও জনন কোষে শনাক্ত হয় দুই বা ততোধিক ডিএনএ প্রোফাইল। এভাবেই কাইমেরিক জীবদের দেহে থাকে দুটি ভিন্নরকম ডিএনএ ব্যবস্থা।
পুনরায় বিচারকার্য
ফিরে আসা যাক লিডিয়া ফেয়ার চাইল্ডের ঘটনায়। লিডিয়ার আইনজীবী গবেষণার এ ফলাফল দেখে তখনই আপিল করেন আদালতে। দাবি করেন, লিডিয়াও একজন কাইমেরিক মানুষ। তার শরীরেও বইছে দু’টি ভিন্নরকম ডিএনএ। আপিল অনুযায়ী আবারও টেস্ট করা হয় লিডিয়ার ডিএনএ। হ্যাঁ, সত্যি সত্যিই লিডিয়ার দেহে পাওয়া যায় দু’টি ভিন্ন ডিএনএ-র অস্তিত্ব। যার সাথে তার সন্তান, তার মা এমনকি তার নানীর ডিএনএ-ও হুবহু মিলে যায়। সন্তানদের মাতৃত্ব অধিকারের সত্যতা প্রমাণিত হয়। বেকসুর খালাস পান লিডিয়া। সেই সাথে ফিরে পান নিজের সন্তানদের অভিভাবকত্বের স্বাদ।
এখন প্রশ্ন হতে পারে, কেনই বা প্রথম বারের টেস্টে ডিএনএ নমুনা মেলে নি? আসলে প্রথম টেস্টের সময় লিডিয়ার যে জৈবিক নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিলো তা ছিলো তার লালার কোষ। এটাকে ডিএনএ সেট A ধারী কোষ বিবেচনা করা হয়। অথচ, তার সকল বাচ্চা যে ডিএনএ পেয়েছে তা ছিল লিডিয়ার জনন কোষের। যা ডিএনএ সেট B হিসেবে পরিচিত। যেহেতু লিডিয়া কাইমেরিক, তাই তার এই দুই কোষের ডিএনএ সেটে ছিল ভিন্নতা।
কাইমেরিজমের কারণ
কাইমেরিজমের অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তবে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য — টুইন কাইমেরিক বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যখন দু’টো জাইগোট পাশাপাশি মাতৃগর্ভে অবস্থান করে, তখন অনেক সময়ই একটি জাইগোট অপর জাইগোট টিকে আংশিক বা পুরোপুরি শোষণ (Absorbe) করে বসে। ফলে, আংশিক শোষণ হওয়া জাইগোট থেকে ত্রুটিপূর্ণ বা ক্ষণজন্মা বাচ্চার জন্ম হয়। যেমনটি হয়েছিল মিস ম্যাক ও তার ভাইয়ের সাথে।
আর যদি একটি জাইগোট অন্য জাইগোটটিকে পুরোপুরি শোষণ করে ফেলে, তখন একটিমাত্র বাচ্চারই জন্ম হয়। তবে, বাচ্চাটি উভয় জাইগোটের বৈশিষ্ট্য নিয়েই ভূমিষ্ট হয়। যেমনটা হয়েছিল লিডিয়া ফেয়ার চাইল্ডের সাথে। কেননা, লিডিয়া তার যমজ ভাইয়ের অস্তিত্ব বহনকারী কাইমেরিক। এভাবে ভিন্ন ভিন্ন জাইগোট থেকে জন্মলাভ করে কাইমেরিক বেবি।
বিভিন্ন প্রকারভেদ
কাইমেরিজমের রয়েছে ৪টি প্রকারভেদ। এগুলো হচ্ছে-
• টুইন কাইমেরিজম
এটি মূলত উপরে বর্ণিত ঘটনারই সারাংশ। ভ্রুণ অবস্থায় মায়ের শরীরে বিদ্যমান জাইগোট দুটি একটি আরেকটিকে আংশিক বা পুরোপুরি শোষণ করে নিলে তখন জন্ম নেয় টুইন বা যমজ কাইমেরিক বেবি। এরূপ পরিস্থিতিতে জন্ম নেওয়া বাচ্চাটির শরীরে তার নিজের ও তার জন্ম না নেওয়া ভাই-বোনের, মোট দুই সেট ডিএনএ থাকে।
• টেট্রা-গ্যামেটিক কাইমেরিজম
মাতৃগর্ভে একটি শুক্রাণু দ্বারা একটি ডিম্বাণু নিষিক্ত হয়ে জাইগোট তৈরি হয়, এটিই স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু, যদি দুটি শুক্রাণু দুটি ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করার পর একত্রিত হয়ে একটিমাত্র ভ্রুণে পরিণত হয়? হ্যাঁ, তখনই সৃষ্টি হয় টেট্রা-গ্যমেটিক কাইমেরিজমের। জন্ম নেওয়া শিশুরটির শরীরে থাকে দুই সেট ডিএনএ-র সরব উপস্থিতি।
• মাইক্রো কাইমেরিজম
মায়ের গর্ভাশয়ে ভ্রুণ থাকা অবস্থায় মা তার ভ্রুণের কিছু অংশ অজান্তে শোষণ করে ফেলতে পারে। অথবা, ভ্রুণটি মায়ের মায়ের কিছু কোষও শুষে নিতে পারে৷ এরূপ পরিস্থিতিতে ত্রুটিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এই কোষগুলো মা কিংবা শিশুর রক্তের মাধ্যমে কোনো অঙ্গে পৌঁছে স্থায়ীভাবে থেকে যায়। জন্ম নেয় মাইক্রো কাইমেরিক মানব সন্তান।
• কৃত্রিম কাইমেরিজম
ব্লাড ট্রান্সফিউশন, স্টেম সেল বা বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন, এসব ক্ষেত্রে জটিল সার্জারির সময় একজন মানুষের দেহে অন্য মানুষের কিছু কোষ থেকে যেতে পারে। সেখানে স্বাভাবিক পরিবেশে বৃদ্ধি পেতে পারে কোষের সংখ্যা। ফলে একজনের দেহে দুই সেট ডিএনএ দেখা যায়। যদিও বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে এ ধরনের ঘটনা কম দেখা যায়। এ ধরনের কাইমেরিজমে শুধু রক্তে দু’ধরনের ডিএনএ সেট দেখা যায়। কিন্তু অন্যান্য শারীরিক বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় না।
উদ্ভিদের ক্ষেত্রে কাইমেরিজম
গাছগাছালির ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন জাইগোট শোষণ হবার কোন ব্যাপার-স্যাপার নেই। তাহলে কিভাবে কাইমেরিক উদ্ভিদের জন্ম হয়? আসলে উদ্ভিদের বেলায় যা ঘটে, তা হলো- একটি নির্দিষ্ট ধরণের জাইগোট থেকেই ভিন্ন ভিন্ন রকমের টিস্যু গঠিত হয়। এর পেছনে কাজ করে মিউটেশন প্রভাব। ভিন্ন ভিন্ন রকমের ফুল-ফল পাবার জন্যও আমরা বিভিন্ন গাছপালায় যে কলম করে থাকি, সেটিও এক ধরণের কৃত্রিম Chimeric Plant এর উদাহরণ।
কাইমেরিজমের বৈশিষ্ট্যে
কাইমেরিক মানুষদের দেহে-
• পাওয়া যায় দুই রকমের DNA।
• বিদ্যমান থাকে দুই প্রকার রক্ত প্রবাহ৷
• কখনো বা দেখা মিলে দুই বর্ণের চোখ।
• দেহের একেক অংশের রং হয় একেক রকম।
• বজায় থাকে দুইটি আলাদা ধরণের ইম্যুনিটি সিস্টেম।
• এক পাশের কাঁধ অপর পাশের কাঁধের চাইতে অপেক্ষাকৃত উঁচু বা নিচুতেও করে অবস্থান।
নানারকম প্রভাব
কাইমেরিক মানুষেরা যেমন আর দশটা স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে শারীরিকভাবে অনন্য, তেমনি কিছুকিছু ক্ষেত্রে তাদের মাঝে থাকে কিছু গঠনগত অসামঞ্জস্য। যেমন-
• তীব্র মাথাব্যথা।
• মেদবহুল স্বাস্থ্য।
• শারীরিক দুর্বলতা।
• মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক।
এছাড়াও জাইগোটের পূর্ণ শোষণের ক্ষেত্রে-
• মায়ের গর্ভাশয়ে থাকা যমজ বাচ্চা দু’টোর জাইগোট একই লিঙ্গের হলে, জন্মলাভ করা বাচ্চাটিও হবে একই লিঙ্গের। এক্ষেত্রে তার শরীরে অবস্থান করবে দুটো ভিন্ন ধরণের টিস্যু। আর যদি, যমজ বাচ্চা দুটোর জাইগোট ভিন্ন ভিন্ন লিঙ্গের হয়, তবে জন্মলাভ করা বাচ্চাটি হবে উভলিঙ্গ কাইমেরিক।
নামকরণের ইতিহাস
প্রাচীন গ্রিক পুরাণে রয়েছে কাইমেরা নামক এক ভিন্নরূপী প্রাণীর অস্তিত্ব, যার রয়েছে সিংহের মতো মাথা ও কেশরযুক্ত শক্তিশালী গর্দান। রয়েছে ছাগলের মতো পিঠ, মহিষের মতো পা এবং সর্পাকৃতির লেজ। অর্থাৎ, একই প্রাণীর শরীরে বহু প্রাণের স্পন্দন।
এছাড়াও, ভারতীয় পুরাণেও একই রকমভাবে খুঁজে পাওয়া যায় এক নৃসিংহ-এর বর্ণনা। নৃ অর্থ নর বা মানব। অর্থাৎ, একক দেহে মানুষরূপী সিংহ! এদের থেকেই মূলত ‘কাইমেরিজম’ নামের উৎপত্তি হয়েছিল।
কাইমেরিজম স্রষ্টার এক অনবদ্য সৃষ্টি রহস্য। মানব দেহ থেকে এ রহস্য পুরোপুরি নির্মূল করা অসম্ভব। তবে গবেষকদের অভিমত, রোগীকে তার অবস্থা সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা দিলে এবং লক্ষণগুলোর উপশমে নিয়মিত চিকিৎসা প্রদান করতে পারলে তার জীবনধারণ হবে অনেকটাই সহজ, প্রাণবন্ত ও স্বাচ্ছন্দ্যময়।
References:
- Lydia Fairchild- Alchetron
- The Chimera: The Hybrid Monster of Greek Mythology – Mythology Source
- Human and Non-Human Chimeras – Stanford Encyclopedia of Philosophy
- The Case of Lydia Fairchild and Her Chimerism (2002) – Embryo Project Encyclopedia
- Human Chimerism: A Guide to Becoming Two People at Once – Interesting Engineering
- Chimerism in the Immunohematology Laboratory in the Molecular Biology Era – Transfusion Medicine Reviews
- Natural History of Mixed Chimerism After Bone Marrow Transplantation with CD6-Depleted Allogeneic Marrow: A Stable Equilibrium – Science Direct.
Leave a Reply