কীভাবে গ্রহাণু শনাক্ত করলেন ক্যাম-সাস্টের তরুণ গবেষকেরা

লেখাটি বিভাগে প্রকাশিত

সূর্যের চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে ছোট ছোট কিছু পাথর। এদের ডাকা হয় গ্রহাণু বলে। ছ শ মাইল থেকে শুরু করে  ধূলিকণার সাইজের গ্রহাণুও আছে। সাধারণত এদের খুঁজে পাওয়া যায় মঙ্গল আর বৃহস্পতি গ্রহের কক্ষপথের মাঝে এষ্টেরয়েড বেল্টে। তবে বৃহস্পতি গ্রহের দুই পাশেও আছে কিছু গ্রহাণু। এদের প্রধান গ্রহাণু বলে। কোত্থেকে আসল এসব গ্রহাণু? ধারণা করা হয়, অনেক আগের কোনো বিরাট আকারের গ্রহের ধ্বংসাবশেষ হচ্ছে এসব গ্রহাণু। কখনো কখনো অভিকর্ষের টানে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে এগুলো। আর তখনই কেবল বিজ্ঞানীদের দূরবীক্ষণ যন্ত্রে ধরা দেয় এসব গ্রহাণু।     

ক্যাম-সাস্টের গবেষণা দলের ছবি।

সম্প্রতি নাসার পাঠানো কিছু ছবি বিশ্লেষণ করে প্রলিমিনারি গ্রহাণু শনাক্ত করেন ক্যাম-সাস্টের কিছু তরুণ গবেষক। স্বীকৃতিস্বরূপ তারা পেয়েছেন নাসার সনদপত্র। এরা সবাই-ই পড়াশোনা করছেন সিলেট শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। গবেষণা দলটির নেতৃত্বে ছিলেন কে এম শরীয়তউল্লাহ, তিনি তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভগে ৩য় বর্ষে অধ্যয়নরত। এছাড়াও ছিলেন- সামিউল ইসলাম মুগ্ধা, সাদিয়া তাসনিম মীম, চঞ্চল রায়, কাজী নুসরাত তাসনীম। তারা মূলত আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান অনুসন্ধান কোলাবোরেশন- আইএএসসি (IASC) কর্তৃক আয়োজিত একটা ক্যাম্পেইন এ অংশ নিয়েছিলেন। ক্যাম্পেইনের অংশদারিত্বে ছিল নাসা এবং প্যান-স্টারস। 

শরীয়তউল্লাহ জানান, ক্যাম্পেইনে নাসা তাদের মহাকাশের কিছু ছবি পাঠায়। তারা এই ছবিগুলো অ্যাস্ট্রোনমিকা নামে একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিশ্লেষণ করেন। এভাবে তারা প্রিলিমিনারি গ্রহাণু শনাক্ত করতে সক্ষম হোন। তাদের পাওয়া ফলাফল চলে যাবে নাসার কাছে। শরীয়তদের মতো সিটিজেন সায়েন্টিস্টদের শনাক্ত করা প্রিলিমিনারি গ্রহাণু পরবর্তী পাঁচ-ছয় বছর ধরে প্যান-স্টারস নামক টেলিস্কোপ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করবেন নাসার বিজ্ঞানীরা। দীর্ঘমেয়াদী পর্যবেক্ষণের পরেই একমাত্র নির্ধারিত করা হবে যে এই শনাক্তকৃত বস্তু আসলেই গ্রহাণু কি না।

গবেষণা দলের নেতৃত্বে ছিলেন কে এম শরীয়তউল্লাহ, তিনি সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভগে ৩য় বর্ষে অধ্যয়নরত।

শরীয়তউল্লাহ বলেন,

“এই ক্যাম্পেইনে প্রথমে অনেকগুলো ছবি দেয়। আমাদের ১২টার মতো ছবি দেয়া হয়েছিলো। প্রথমের ছবিটা মূলত অনুশীলন করার জন্য। ওই টেস্ট ছবিটা থেকে আমাদের বিশ্লেষণের ফলাফল আইএএসসি ক্যাম্পেইনে জমা দিতে হয়। সেটা সফলভাবে উত্তীর্ণ হলে আসল ছবি দেয়া হয় বিশ্লেষণ করার জন্য।”

মূলত তাদের একাডেমিক সেমিস্টারের একটা প্রজেক্ট চলছিল মেশিন লার্নিং নিয়ে। শরীয়তউল্লাহর কাজ ছিল ইমেজ প্রসেসিং এর। তিনিই গ্রহাণু শনাক্তকরণের এই প্রজেক্ট নিয়ে প্রথমে ভাবেন। পরিকল্পনা ছিল, মেশিন লার্নিং মডেলে কিছু ছবি ইনপুট করা হবে। মডেল গ্রহাণু শনাক্ত করতে সাহায্য করবে। তাদের কাছে মডেল ছিল। কিন্তু গাইডলাইন ছিল না। অনেকটা সেকারণেই তারা আইএএসসি’র এই ক্যাম্পেইনে যুক্ত হোন। ক্যাম্পেইনে নাসা তাদের অ্যাস্ট্রোনমিকা সফটওয়্যার ব্যবহার করে কি করে গ্রহাণু শনাক্ত করতে হয় সে বিষয়ে দরকারি নির্দেশিকা দেয়। এই নির্দেশিকা অনুসরণ করে তারা প্রিলিমিনারি গ্রহাণু শনাক্ত করেন।

ভিডিওতে যেই মুভিং অবজেক্ট টি দেখতে পাচ্ছেন তা একটি প্রিলিমিনারি অ্যাস্টেরয়েড। এই প্রিলিমিনারি অ্যাস্টেরয়েডটিই শনাক্ত করেছেন শরীয়তউল্লাহ’র টিম।

কোপারনিকাস অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল মেমোরিয়াল অব সাস্ট (ক্যাম-সাস্ট) সংগঠন সম্পর্কে শরীয়তউল্লাহ জানান, “অনেক আগে থেকেই, ২০১২ সাল থেকে ক্যাম-সাস্ট সংগঠনটির যাত্রা শুরু শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। জ্যোতির্বিজ্ঞান শেখা ও প্রচারের লক্ষ্যে এই সংগঠনটির যাত্রা। ২০১৮ সালে নাসা স্পেস চ্যালেঞ্জে টিম অলীক ছিলো যারা সারা পৃথিবীতেই প্রথম। তারা ক্যাম-সাস্টেরই সদস্য ছিলেন। তাদের কাজের ধারবাহিকতায়ই আমরা এই গবেষণাগুলো করছি। কিছুদিন আগেই আমরা একটা একটিভ গ্যালাকটিক নিউক্লিয়াই সংক্রান্ত একটি টেকনিক্যাল পেপারেও কাজ করেছি। ”

ক্যাম-সাস্টের তরুণ বিজ্ঞানীদের সাথে ড. তীব্র আলী স্যারের একটা অ্যাস্ট্রো- টকের ছবি

গ্রহাণু শনাক্তকরণ কেন এত জরুরি? নাসা কেন এইরকম ক্যাম্পেইন এর আয়োজন করে? উত্তর হচ্ছে, প্রায়ই এসব গ্রহাণু পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে। ছোট আকারের গ্রহাণু হয়ত সমস্যা না। কিন্তু যদি বেশ বড়সড় কোনো গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত হানে তার ফলাফল মোটেও ভাল হবে না পৃথিবীবাসির জন্যে। ধারণা করা হয়, পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়েছে এরকম এক গ্রহাণুর আঘাতেই। মঙ্গল আর বৃহস্পতির মাঝামাঝি অঞ্চলে এসব গ্রহানুর সংখ্যা অনেক বেশি। এতই বেশি যে, নাসার পক্ষে দ্রুত সময়ে এসব গ্রহাণু শনাক্তকরণ সম্ভবপর না। সেজন্যে নাসা এই ধরণের সিটিজেন সায়ন্স প্রোগ্রামের আয়োজন করে থাকে। উদ্দেশ্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সাধারণ নাগরিকদের জ্যোতির্বিজ্ঞানের গবেষণা শেখানো যাতে করে নাসার কাজ কিছুটা সহজ হয়। কি করে গ্রহাণু শনাক্ত করতে হয়, কি করে ছবি থেকে গ্যালাক্সি শনাক্ত করতে হয় ইত্যাদি। আইএএসসি-র এই ক্যাম্পেইন কয়েক মাস অন্তর প্রতি বছরই হয়। নতুনরাও যুক্ত হতে পারেন তাদের এই ক্যাম্পেইনে। সেজন্যে চোখ রাখতে হবে তাদের ওয়েবসাইটে।  

সুত্র- বিজ্ঞান ব্লগকে দেওয়া কে এম শরীয়তউল্লাহ’র সাক্ষাৎকার।

লেখাটি 133-বার পড়া হয়েছে।


নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান? হোস্টিং ও ডোমেইন কেনার জন্য Hostinger ব্যবহার করুন ৭৫% পর্যন্ত ছাড়ে।

আলোচনা

Responses

  1. রুফফা নূর জারিয়াহ Avatar
    রুফফা নূর জারিয়াহ

    wonderful

    1. Sujoy Kumar Das Avatar
      Sujoy Kumar Das

      ধন্যবাদ

Leave a Reply to রুফফা নূর জারিয়াহCancel reply

ই-মেইল নিউজলেটার

বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবর সম্পর্কে আপডেট পেতে চান?

আমরা প্রতি মাসে ইমেইল নিউজলেটার পাঠাবো, মাসে একবার। নিউজলেটারে সাম্প্রতিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবরাখবর নিয়ে বিশ্লেষণ থাকবে। এছাড়া বিজ্ঞান ব্লগে কি কি লেখা আসলো, কি কি কর্মযজ্ঞ চলছে, সেটার খবরও থাকবে।







Loading