মস্তিষ্ক গবেষণায় প্রায়শই বিভিন্ন প্রাণীকে মডেল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এর মাধ্যমে মানব মস্তিষ্কের জটিলতা ঠিক বোঝা যায় না। সে কারণে স্নায়ুবিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কে আঘাতপ্রাপ্ত বিভিন্ন রোগীদের কেস নিয়ে চিকিৎসা করার সময় তাদের মস্তিষ্কে আঘাতের ফলে যেসব জটিলতা তৈরি হয় তা বিস্তারিত লিপিবদ্ধ করে রাখেন।
গত দশকে মস্তিষ্ক গবেষণায় অভিনব ধরনের পরীক্ষা-পদ্ধতির ব্যবহার শুরু হয়েছে। এখন বিজ্ঞানীরা পরীক্ষাগারের পেট্রিডিশে ছোটখাটো মস্তিষ্ক চাষ করতে পারেন। এদেরকে বলা হয় ব্রেইন অরগানয়েড। অরগানয়েড শব্দটা এসেছে অরগান থেকে। অরগান মানে হলো অঙ্গ, আর অরগানয়েডের মানে দাঁড়ায় অঙ্গের মতো। অর্থাৎ, পেট্রিডিশে মস্তিষ্কের মতো ছোট একটা অঙ্গ-ধরনের টিস্যু বিভিন্ন পুষ্টিউপাদান সরবরাহ করে বড় করে তোলা ও বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।
টিস্যুকালচার ভিত্তিক গবেষণায় কলা-কোষ সাধারণত দ্বিমাত্রিক সমতলে একক কোষ স্তর হিসেবে বেড়ে উঠে। অন্যদিকে ব্রেন-অর্গানয়েড একধরনের ত্রিমাত্রিক গঠন। এসব ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক কিন্তু মানুষের মস্তিষ্কের সাথে তুলনায় কোন ভাবেই নিখুঁত নয়। তবে এদের মধ্যে যেসব কোষ আছে, সেগুলো প্রকৃত মস্তিষ্কেও দেখা মেলে। এদের সজ্জা-গঠন অপুর্ণাঙ্গ হলেও কিছুটা প্রকৃত মানব-মস্তিষ্কের সাথেও মিলে যায়। কিন্তু এসব ব্রেন অর্গানয়েডে রক্ত-নালিকা তৈরি হয় না, কিংবা মানুষের মস্তিষ্কের নিউরাল নেটওয়ার্কের মতো জটিল গঠনও লক্ষ্য করা যায় না। তাই ব্রেন অর্গানয়েড গবেষণা এখনো তার শৈশব পার করছে বলা যেতে পারে। কিন্তু এর মধ্যেই ব্রেন অর্গানয়েডের জগতে বেশ চমকপ্রদ কিছু অগ্রগতি ঘটে গেছে। এখনো পেট্রিডিশে মস্তিষ্কের মতো অঙ্গ বানিয়ে তারপর সেটাকে একটা কম্পিউটার চিপের সাথে যুক্ত করে নতুন একধরনের প্রযুক্তি শুরু হয়েছে যাকে বায়োকম্পিউটিং বলে।
ছোটবেলায় ডি-এক্স বল নামে একটা কম্পিউটার গেম খেলতাম। ডি-এক্স বল গেমটার পূর্বপুরুষ আবার পং নামে আরেকটা গেম। পং গেমটা কিন্তু অনেক পুরনো, ১৯৭২ সালে প্রথম ছাড়া হয় বাজারে। এটা আসলে টেনিসের একটা সিমুলেশন। কম্পিউটার স্ক্রিনের দুই দিকে দুই খেলোয়ার থাকে, যারা বিপরীত পক্ষ থেকে আসা “বল” একটা “প্যাডেল” দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করে। প্রতি খেলোয়ার মূলত এই প্যাডেলকে উপরে বা নিচে সরানোর নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। খুবই সরল একটা খেলা। খেলাটা আপনি চাইলে কম্পিউটারের বিরুদ্ধেও খেলতে পারবেন।
কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিশ-ব্রেইন প্রজেক্টে একদলা ব্রেন-অর্গানয়েডকে পং খেলা শেখানোর উদ্যোগ শুরু হয়। গবেষকর প্রায় আট-লাখ স্নায়ুকোষকে একটা কম্পিউটার চিপের সাথে যুক্ত করে ব্রেন অর্গানয়েডের খেলা শিখে যাওয়ার ক্ষমতা দেখে তব্দা খেয়ে গিয়েছিলেন। তাদের প্রজেক্টকে পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়ার মিলিটারি অনুদান দেয়, এবং তারা কর্টিকাল ল্যাবস নামক একটি কোম্পানী শুরু করেন। কর্টিক্যাল ল্যাবসের গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরা এমন একটি ব্রেন অর্গানয়েড বানালেন, যা সফলভাবে পং খেলা শিখলো আর কম্পিউটারের বিপরীতে খেলে ফেললো। এরা যে খেলতে শিখে গেলো শুধু তাই নয়, অনেক ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চেয়েও এদের কৃতিত্ব বেশি।
ইনসাইডার হলো বিজ্ঞান ব্লগের একটি সদস্য প্রোগ্রাম। বিজ্ঞান ব্লগে প্রতি মাসে কিছু বিশেষ প্রবন্ধ প্রকাশিত হবে। এগুলো লিখছেন আরাফাত রহমান ও সুজয় কুমার দাশ। এই লেখাগুলো কেবল মাত্র লগইন করে পড়া যাবে। আপনি যদি বিজ্ঞান ব্লগের ইনসাইডার হতে চান, তাহলে এই পেজে গিয়ে আমাদের বার্তা দিন। বার্তা পাওয়ার পর আপনার সাথে ইমেইলে যোগাযোগ করা হবে।
Leave a Reply