যেমন লাগলো ট্যকিয়ন (ম্যাগাজিন)

লেখাটি বিভাগে প্রকাশিত

বাংলাদেশে বেশ কিছু বিজ্ঞান বিষয়ক ম্যাগাজিন রয়েছে। আর সেই ভান্ডারেই অন্যতম সংযোজন ছিল বিজ্ঞান প্ল্যাটফর্ম ‘ট্যকিয়ন’ এর বিশেষ ম্যাগাজিন। জুলাই সংখ্যার এই ম্যাগাজিনটিতে ছিল গবেষক, চিকিৎসক, শিক্ষার্থী ও বিজ্ঞানকর্মীদের টুকটাক লেখনি ও প্রবন্ধ। কেমন লাগলো এই ম্যাগাজিন? চলুন, ম্যাগাজিনের ভেতরে ডুব দেওয়া যাক এবং দেখে নেওয়া যাক ভালো-মন্দ! 

ম্যাগাজিন পরিচিতি

ম্যাগাজিনটিতে মূলত জ্যোতির্বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কিছু প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। প্রথম লেখাটি ছিল নিউক্লিয়ার ওয়েপনস এর উপরে। এটা একটি যুগোপযোগী লেখা। এরপর ছিল পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ নিয়ে একটি বিজ্ঞান সংবাদ। তারপর ‘ডেঙ্গু জ্বরের কথকতা’ শিরোনামে একটি চমৎকার প্রবন্ধ রয়েছে, যেটা  মূলত একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের লেখা। প্রতিবছর বাংলাদেশে অনেক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী মারা যাচ্ছেন। তাই লেখাটি আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটের সাথে ভালোই খাপ খাইয়েছে। এরপর পেলাম অসাধারণ একটি এক্সপেরিমেন্টের গল্প। সেটি হলো কীভাবে কলা থেকে কলার ডিএনএ আলাদা করে মাইক্রোস্কোপ ছাড়াই দেখা সম্ভব তার একটা পরীক্ষণ। আগ্রহী বিজ্ঞানপ্রেমীরা বাসায় ট্রাই করে দেখতে পারেন। 

এরপর একটি জরুরি প্রতিবেদন ছিল, যেখানে ট্যকিয়নের নিজস্ব জরিপে আমাদের দেশের আত্মহত্যা পরিস্থিতির নানান দিক উঠে এসেছে। এরপর একে একে পড়লাম GNN (এটা এক ধরণের অ্যালগরিদম), শীতকালে মুখ দিয়ে ধোঁয়া বের হওয়ার কারণ এবং চুল পাকার ফ্যাক্টর সম্পর্কে। এছাড়াও ম্যাগাজিনটিতে ছিল মাইক্রোচিপ, মিথোজীবীতা এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে অসাধারণ কিছু লেখনি। মাঝে আবার জানতে পারলাম পৃথিবীর মহাকাশ থেকে একদিন হঠাৎ করেই ৩টি তারা উধাও হয়ে গিয়েছিল। তাছাড়াও ম্যাগাজিনটিতে ছিল ক্রিপ্টোগ্রাফি ও ইমিউনোলজির প্রাথমিক কিছু আলোচনা। 

নতুন জানলাম

ম্যাগাজিনটি পড়ার পরে অনেক অজানা ব্যাপার-স্যাপারের সাথে পরিচিত হয়েছি, নতুন করে জেনেছি ও বুঝেছি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমার মনে হয়, যেকোনো বয়সের বিজ্ঞানপ্রেমী পাঠকেরা ম্যাগাজিনটি পড়লে আমার মতোই নতুন নতুন কিছু বিষয় জানতে পারবেন। যেমনঃ

১. ডেঙ্গুর ভাইরাসের কোনো এক ধরণের প্রকরণের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হলে অন্য প্রকরণের বিরুদ্ধেও সেটি কাজ করতে পারে।
২. ঔষধ ডিজাইন, রাস্তার মডেলিং, সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যালগিরদম তৈরি সহ নানান কাজে বর্তমানে গ্রাফ নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহৃত হচ্ছে।
৩. ব্ল্যাকহোল পর্যবেক্ষণের জন্য সরাসরি রেডিও টেলিস্কোপ ব্যবহার না করে রেডিও ইন্টারফেরোমিটার ব্যবহার করা হয়, যা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে স্থাপিত ৮টি টেলিস্কোপের সংযোগের সমন্বয়ে গঠিত।
৪. গত শতাব্দীর জনসংখ্যা বিস্ফোরণের অন্যতম প্রধান কারণ হলো হেবার-বস উদ্ভাবিত নাইট্রোজেন থেকে অ্যামোনিয়া তৈরির পদ্ধতি।
৫. আলোর মতো প্রোটন-নিউট্রন ও ইলেক্ট্রনেরও কণা ও তরঙ্গ উভয় ধর্মই রয়েছে।
৬. প্রেম ও পারিবারিক সমস্যার কারণে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে ওঠে। 

ভালো লাগা

ম্যাগাজিন হিসেবে ‘ট্যকিয়ন’ বেশ আকর্ষণীয়। বর্তমান দুনিয়ার সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয়গুলো নিয়ে ম্যাগাজিনটি তৈরি করা হয়েছে। আর বেশিরভাগ লেখাই ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে সেরা ছিল। এছাড়াও ছবি ও গ্রাফিক্সও অসাধারণ হয়েছে। পাঠক হিসেবে ম্যাগাজিনটি বিজ্ঞানের অনেক কিছুকে একসাথে পরিচয় করিয়ে দিতে সক্ষম। মনের মধ্যে কৌতুহল ও প্রশ্ন জাগিয়ে তুলতেও বিশেষ ভূমিকা আছে এই ম্যাগাজিনটির। 

বিজ্ঞান জনপ্রিয়তাকরণের জন্য যেভাবে লেখালেখি করা উচিৎ, বিজ্ঞানের বিভিন্ন কাটখোট্টা বিষয়গুলোকে যেভাবে তুলে ধরা দরকার, তা অনেকাংশেই এই ম্যাগাজিনে পেয়েছি। আর সবচেয়ে বড় কথা কথা হলো স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়-যেকোনো পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এই ম্যাগাজিনটি থেকে উপকৃত হতে পারবে। শিক্ষক ও লেখকদের জন্যও ট্যকিয়নের ম্যাগাজিনটি কাজে দেওয়ার মতো হতে পারে। সর্বোপরি, ম্যাগাজিনটি চমৎকার ও অসাধারণ!

কিছু এদিক-সেদিক

একটি বই বা ম্যাগাজিনে সাধারণত কিছু অসামঞ্জস্যতা, সীমাবদ্ধতা বা মুদ্রন ত্রুটি থেকেই যায়। ট্যকিয়নের এই ম্যাগাজিনটিও তার ব্যতিক্রম নয়। যেমনঃ 

  • ‘দ্যা ফিজিক্স বিহাইন্ড নিউক্লিয়ার ওয়েপনস’ এ অনেক বেশি ইংরেজী শব্দের ব্যবহার হয়েছে, যেই টার্মগুলোর সাথে আমরা সাধারণত অপরিচিত। ওগুলোর সুন্দর বাংলা অর্থ উল্লেখ করলে অথবা বাংলায় একটু কৌশলগতভাবে বুঝালে আরও ভালো হতো। অন্যান্য কিছু লেখাতেও এই বিষয়টা লক্ষণীয়।
  • পৃঃ১০ এ লেখা হয়েছে, “আমরা যেটাকে ডেঙ্গু জ্বর বলে থাকি, সেটার উচ্চারণ আসলে ডেঙ্গু”। এখানে শেষ শব্দটা ডেঙ্গু নয়, ডেঙ্গি হওয়ার কথা। একই পৃষ্ঠার ২য় কলামের প্রথম বাক্যে বলা হয়েছে যে ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক হলো এডিস গোত্রের মশা। তবে এটা গোত্র নয়, গণ হবে।
  • ‘মানবদেহে যেভাবে জীবাণু খুন করে’ শিরোনামের লেখাটি উচ্চ মাধ্যমিকের জীববিজ্ঞানঃ ২য় পত্র (গাজী আজমল-গাজী আসমত) বইয়ের ৪০৮-৪২১ পৃষ্ঠার বিভিন্ন আলোচনাকে একটি এদিক-সেদিক করে লেখা হয়েছে। কাজটা প্রায় প্লেজারিজমের মতো হয়ে গিয়েছে।
  • কয়েকটা লেখায় তথ্যসূত্র ছিল না। এটা যুক্ত করা হলে আরও গোছালো হতো। তাছাড়াও কিছু কিছু জায়গার শব্দসজ্জায় দুর্বলতা দেখা গিয়েছে। এছাড়াও ম্যাগাজিনটিতে প্রবন্ধের পাশাপাশি বিজ্ঞান বিষয়ক কবিতা/কমিক্স/কুইজ যোগ করা হলে সব দিক দিয়ে মোটামুটি পূর্ণতা পেতো।

সবশেষে

কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞান কীভাবে এলো? ব্যাকটেরিয়া মিথোজীবীতায় কেমন আচরণ করে? আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যাক্তির সাথে আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিৎ? এরকম কয়েক হালি প্রশ্নের উত্তর মিলবে এই ম্যাগাজিনটিতে। সাধারণ কৌতুহলী পাঠক অথবা শিক্ষার্থী হিসেবে যদি কেউ এই ম্যাগাজিনটি পড়ে, তবে সে নিশ্চয়ই নতুন কিছু জানতে পারবে এবং উপকৃ্ত হবে। ট্যকিয়নের এই ম্যাগাজিনটি পড়লে শুধুমাত্র কৌতুহলই মিটবে না, বরং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নতুন সব ভাবনাও জন্ম নিবে। তাই ম্যাগাজিনটি সংগ্রহ করুন, পড়ুন এবং নিজের জ্ঞানভান্ডারকে সমৃদ্ধ করুন। বুয়েনা সুয়্যার্তে!

এক নজরে-

ম্যাগাজিনের নাম- ট্যকিয়ন
প্রকাশকাল- এপ্রিল, ২০২৪
পৃষ্ঠা- ৪৮
শুভেচ্ছামূল্য- ১০০ টাকা

লেখাটি 66-বার পড়া হয়েছে।


নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান? হোস্টিং ও ডোমেইন কেনার জন্য Hostinger ব্যবহার করুন ৭৫% পর্যন্ত ছাড়ে।

আলোচনা

Leave a Reply

ই-মেইল নিউজলেটার

বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবর সম্পর্কে আপডেট পেতে চান?

আমরা প্রতি মাসে ইমেইল নিউজলেটার পাঠাবো। পাক্ষিক ভিত্তিতে পাঠানো এই নিউজলেটারে বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবরাখবর থাকবে। এছাড়া বিজ্ঞান ব্লগে কি কি লেখা আসলো, কি কি কর্মযজ্ঞ চলছে, সেটার খবরও থাকবে।







Loading