আমি নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন আমাদের জীববিজ্ঞানের শিক্ষক অলিপ স্যারের মুখ থেকে প্রথম ‘স্টেম সেল’ নামটা শুনি। তখন একে সাদাসিধে কোষই মনে করেছিলাম। পরে বুঝতে পারি যে এটা মোটেও অতটা সহজ-সরল নয়ঃ আর এই প্যাঁচাইলে মার্কা কোষের উপর ভিত্তি করেই আমরা সবাই দাঁড়িয়ে আছি। স্টেম সেল নিয়ে ইতিমধ্যে বহু গবেষণাপত্র আর বই লেখা হয়ে গিয়েছে। সামনের দিনে হয়ত বাংলায় বিচিত্র সব কল্পগল্পও লেখা হবে। এটা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার যে প্রতিবছর অক্টোবরের দ্বিতীয় বুধবার ‘স্টেম কোষ সচেতনতা দিবস’ পালন করা হয়। তবুও বাংলাদেশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে কেন যেন এই টার্মটা অতটা পরিচিত নয়।
কী এই স্টেম সেল?
লেখার জন্য যেই হাত ব্যবহার করি, ভাবার জন্য যেই মস্তিষ্ক কিংবা রক্ত পাম্প করার কাজে নিয়োজিত হৃৎপিন্ড অথবা রক্ত নিজেই যেসব কোষ দ্বারা গঠিত সবকিছুর গোড়া হলো এই স্টেম সেল। কেতাবি ভাষায় বললে, এটি হলো জীবের ঐ ধরণের কোষ, যার মধ্যে সাধারণত অন্য ভিন্ন ধরণের কোষে রূপান্তরিত হওয়ার সুপারপাওয়ার আছে। এরা বিভাজিত হয়ে নির্দিষ্ট অংশের টিস্যুর মেরামত করার কাজ করতে সক্ষম। আবার এরা পরিবর্তিত হয়ে কানের কোষ, যকৃতের কোষ ইত্যাদি হয়ে যেতে পারে।
এই যে আমি কিংবা আপনি এতো বিশাল (উচ্চতা যা-ই হোক, একটা কোষের তুলনায় তো অনেক বড়, তাই না?) দেহের অধিকারী, এই দেহটা কোত্থেকে এলো? উসাইন বোল্ট কিংবা স্টিফেন হকিং-যার কথাই চিন্তা করেন না কেন তার দেহ কিন্তু সৃষ্টি হয়েছে একটি মাত্র কোষ থেকে, যাকে আমরা ‘জাইগোট’ নামে চিনি। এই জাইগোট বিভাজিত হতে হতে এক সময় ব্লাস্টোসিস্টে পরিণত হয়। এর মধ্যে থাকা কোষগুলোই স্টেম সেল, যা কোষীয় রূপান্তরের মাধ্যমে হাত, মস্তিষ্ক বা হৃৎপিন্ডের কোষে পরিণত হয় (একারণেই জাইগোটের জিনোম আর পুরো মানবদেহের সবগুলো কোষের জিনোম একই)। একবার স্টেম কোষ যখন হাতের কোষে পরিণত হয়ে যায়, তখন আবার রিভার্স করে উলটে গিয়ে স্টেম কোষে পরিণত হতে পারে না। একে লিনিয়েজ রেস্ট্রিকশন বলে। এমনকি হাতের কোষ পায়ের কোষ কিংবা মস্তিষ্কের কোষেও রূপান্তরিত হতে পারে না।
পোটেন্সি
পাঠকেরা হয়ত ভাবছেন যে এই পোটেন্সি আবার কী! একদম ভেঙে-চুড়ে সহজ করে বললে পোটেন্সির মানে দাঁড়ায় ‘সম্ভাবনা’ বা ‘সক্ষমতা’। একটা স্টেম কোষ কয় রকম বা কী রকম কোষে রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা বা ক্ষমতা ধারণ করে, সেটাকেই ঐ স্টেম কোষের পোটেন্সি বলা হয়। এই পোটেন্সি বুঝার জন্য আমাদেরকে আগে স্টেম কোষের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে বুঝতে হবে।
আমাদের এই স্টেম সেলগুলো হলো অবিশেষায়িত কোষ। হাত-পা বা কিডনি-লিভারের কোষগুলো কিন্তু বিশেষায়িত। কারণ এরা নির্দিষ্ট অংশে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট কাজ করার জন্য নিয়োজিত। এদের একটাই ধরণ, একটাই মৌলিক রূপ। কিন্তু স্টেম কোষের ঐরকম বাঁধা-ধরা সিলেবাস নেই। যার যেমন সক্ষমতা, সে তেমন অন্য কোষে রূপান্তরিত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে একটা স্টেম সেল অসংখ্যবার বিভাজিত হতে পারে।
সবচেয়ে সম্ভাবনাময় স্টেম কোষ হলো ‘টটিপটেন্ট স্টেম কোষ’। এরা অমরাসহ যেকোনো ধরণের কোষ তৈরিতে সক্ষম। হোক মাথা, হোক পা, যা কিছু আছে সবকিছুর কোষ এখান থেক সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু এ ধরণের কোষের বাচ্চারা (এই কোষ থেকে হওয়া অন্য নতুন স্টেম কোষ) একটা বৈশিষ্ট্য হারায়ে ফেলে। ওরা অমরা তৈরি করতে পারে না, কিন্তু অন্য প্রায় সব কোষ তৈরিতে সক্ষম। এই বাচ্চাদের কিউট নাম হলো ‘প্লুরিপোটেন্ট স্টেম কোষ’। আবার কিছু স্টেম সেল আছে, যারা নির্দিষ্ট অঙ্গ বা কোষকলার একাধিক কোষ তৈরি করে। এরা মূলত পরস্পরের আত্মীয় এমন কোষই তৈরি করে থাকে। এদেরকে ‘মাল্টিপোটেন্ট স্টেম কোষ’ বলা হয়। যেমনঃ অ্যামনিওটিক স্টেম সেল।
আরেক ধরণের স্টেম সেলের পরিধি খুবই ছোট। এরা যেকোন এক ধরণের কোষেই রূপান্তরিত হতে পারে। এদের রূপান্তর ক্ষমতা প্রায় জিরোর কাছাকাছি, তবে এরা বিভাজিত হয়ে কোনো কাজে ব্যাকআপ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে। যেমনঃ ত্বকীয় কোষ। একটা অঙ্গের চামড়া কেটে গেলে আবার আশপাশের প্রতিবেশীদের বিভাজনে ঐ ক্ষত পূরণ হয়ে যায়। এই প্রতিবেশীরাই স্টেম সেল, যাকে ‘ইউনিপোটেন্ট স্টেম কোষ’ বলা হয়।
এবার যদি পোটেন্সির ক্রম বিবেচনা করি, তাহলে এটা হবে-
টটিপোটেন্সি > প্লুরিপোটেন্সি > মাল্টিপোটেন্সি > ইউনিপোটেন্সি
রকমফের
চিন্তা করে দেখুন, আমাদের মানুষদের মধ্যেই কত রকমের বিভাজন। কেউ বড় তো কেউ ছোট, কেউ রাজা তো কেউ প্রজা, কেউ ফর্সা তো কেউ শ্যামলা! তাহলে যেই কোষ থেকে এই মানুষের সৃষ্টি, সেই স্টেম কোষের প্রকারভেদ থাকবে না-সেটা কি হয়? আমাদের আজকের গল্পের নায়ক স্টেম সেলকে অবস্থার ভিত্তিতে মোটামুটি তিন ভাগে ভাগ করা সম্ভব।
প্রথমেই আছে ভ্রুণীয় স্টেম কোষ (Embryonic Stem Cell)। এটিকে ব্লাস্টোসিস্টের (প্রাথমিক ভ্রূণ) কোষ থেকে পাওয়া যায়। এই কোষ থেকেই আমাদের বিশাল দেহের সব অঙ্গের কোষ গঠিত হয়। সেই হিসেবে একে ‘সব কোষের আদিপিতা’ বলাই যায়। ব্লাস্টোসিস্টের এই কোষগুলো এন্ডোডার্ম, এক্টোডার্ম ও মেসোডার্ম থেকেই আমাদের বিভিন্ন টিস্যু ও অঙ্গ গঠিত হয়। ভ্রুণীয় স্টেম কোষ অসংখ্যবার বহুদিন যাবৎ বিভাজিত হতে পারে। এদের অনুলিপনের সময় এদের বংশগতীয় বস্তুতে মিউটেশন ঘটে না। তবে এই ‘মাস্টার’ কোষটির একটি বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত; আর সেটি হলো অমরা তৈরির ক্ষমতা। একারণে এরা প্লুরিপোটেন্ট।
দ্বিতীয় আরেক ধরণের স্টেম সেল হলো পরিণত স্টেম কোষ (Adult Stem Cell)। ১৯৬৩ সালে দেহে এ ধরণের কোষের অস্তিত্বের প্রমাণ মেলে। বাচ্চা থেকে বুড়ো সবার দেহেই এমন কোষ থাকে। তাহলে এখানে ‘পরিণত’ কথাটা বলা হলো কেন? কারণ পরিণত স্টেম কোষ বলতে যে দেহে স্বাভাবিকভাবেই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে গড়ে উঠেছে, সেই দেহে থাকে। ব্লাস্টুলা, গ্যাস্ট্রুলা বা ভ্রুণে এগুলো থাকে না।
যাহোক, পরিণত স্টেম কোষ যেহেতু দেহের সবখানেই উপস্থিত, তাই এর বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে। যেমনঃ অন্ত্রের স্টেম কোষ হলো ইন্টেস্টাইনাল স্টেম সেল, অস্থিমজ্জাতে অবস্থানকারী রক্ত উৎপাদনকারী স্টেম কোষ হলো হেমাটোপোয়েটিক স্টেম সেল, স্তন্যপায়ীদের দুগ্ধ উৎপাদনকারী গ্রন্থিতে অবস্থানকারী স্তন বিকাশের স্টেম কোষগুলো হলো ম্যাম্মারি স্টেম সেল এবং স্নায়ুকোষ উৎপাদনকারী স্টেম কোষ হলো নিউরাল স্টেম সেল। এছাড়াও রয়েছে মেসেনকাইমাল স্টেম সেল, এন্ডোথেলিয়াল স্টেম সেল, টেস্টিকুলার স্টেম সেল ইত্যাদি। এসব স্টেম কোষ সাধারণত মাল্টিপোটেন্ট বা ইউনিপোটেন্ট ধাঁচের হয়ে থাকে।
আরও এক ধরণের বিশেষ স্টেম কোষ রয়েছে, যাকে উদ্দীপিত প্লুরিপোটেন্ট স্টেম কোষ (Induced Pluripotent Stem Cell) বলা হয়। অনেকে আবার একে রূপান্তরিত স্টেম সেলও বলে থাকে। কারণ ইউনিপোটেন্ট দেহকোষকে জেনেটিক রিপ্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে প্লুরিপোটেন্সি ফ্যাক্টর সক্রিয় করে দিয়ে এ ধরণের প্লুরিপোটেন্ট স্টেম কোষে পরিণত করা হয়। এই চমকপ্রদ পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেন শিনিয়া ইয়ামানাক (ভদ্রলোক অবশ্য এর জন্য নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন)। এ ধরণের স্টেম কোষগুলো ভ্রুণীয় স্টেম কোষের মতো বিভিন্ন ধরণের কোষ উৎপাদন করতে পারে। ভ্রূণীয় স্টেম কোষে যেহেতু শুধু ভ্রুণেই পাওয়া যায়, তাই উদ্দীপিত প্লুরিপোটেন্ট স্টেম কোষ এটার অভাব পূরণ করতে পারবে এবং প্লুরিপোটেন্সট স্টেম সেল সহজলভ্য হবে।
ক্যান্সারের মাঝে স্টেম কোষ
অন্ত্রে অবস্থানরত ইন্টেস্টাইনাল স্টেম সেল কিংবা স্তনগ্রন্থিতে অবস্থিত ম্যাম্মারি স্টেম সেল থেকে ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে। এই স্টেম কোষগুলো ‘ক্যান্সার স্টেম সেল’ হিসেবে রূপ নেয় এবং টিউমারে অবস্থান করে টিউমারের বৃদ্ধি সাধন করে। এই ধরণের স্টেম সেলগুলো বেশ ভয়ংকর। কারণ এরা অপ্রতিসমভাবে বিভাজিত হয়, মানে একটা স্টেম সেল দুটো ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কোষে পরিণত হয়। এখন মনে হতে পারে, এতে ক্ষতি কোথায়? আসলে ঐ দুটো ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কোষের একটি হলো ক্যান্সার স্টেম কোষ এবং অন্যটি হলো ক্যান্সার কোষ। বুঝতে পারলেন?
এর মানে একটা ক্যান্সার স্টেম সেল বিভাজিত হয়ে ক্যান্সার স্টেম সেলও বানাচ্ছে। কেমোথেরাপি বা কোনো ক্যান্সার ধ্বংসকারী ওষুধ প্রয়োগ করে সরাসরি প্রজিনেটর সেল বা ক্যান্সার কোষটিকে মেরে ফেলতে পারলেও সহজে ক্যান্সার স্টেম সেলগুলোকে মারা যায় না। কারণ ওদের কোষঝিল্লীতে এমডিআর (MDR) ট্রান্সমেমব্রেন প্রোটিন নামক দারোয়ান থাকে, যারা ক্যান্সারের ড্রাগগুলোকে ঘাড় ধাক্কা দেয়। ফলে এরা ঢুকতে পারে না এবং স্টেম সেলগুলো নিরাপদ থাকে। আর ওরাই নতুন নতুন ক্যান্সার কোষ তৈরি করতে থাকে। এরপর ক্যান্সার কোষগুলো রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে যদি ক্যান্সার স্টেম সেলগুলোকে টার্গেট করে থেরাপি দেওয়া হয়, তাহলে আর নতুন ক্যান্সার কোষ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
সম্ভাবনা ও সমস্যা
স্টেমকোষের সম্ভাবনা নিয়ে একটা ‘সায়েন্স ফিকশন’ লিখে ফেলা সম্ভব। আর ইতিমধ্যে ওসিরিস থেরাপিউটিকস (Osiris Therapeutics) এবং এসিটি বায়োটেকনোলজি (ACT Biotechnology) এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো স্টেম সেল নিয়ে অসাধারণ কিছু করে দেখিয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, প্লুরিপোটেন্ট ও টটিপোটেন্ট স্টেম কোষগুলো দিয়ে একটা দেহ বানিয়ে ফেলা সম্ভব। এগুলো দিয়ে অনেক ধরণের কোষ উৎপাদন করা যাবে, যেগুলো আবার প্রয়োজনের সময় বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। বর্তমানে রিসার্চ ক্লোনিং বা থেরাপিউটিক ক্লোনিং এর মাধ্যমে স্টেম সেল উৎপাদিত হচ্ছে।
ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের একটি গবেষণা বলছে, আমাদের স্টেম সেলকে অগ্ন্যাশয়ের আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্সের বিটা কোষে পরিণত করা সম্ভব। এতে কী লাভ? এই বিটা কোষ যেহেতু ইনসুলিন, গ্লুকাগন এবং সোমাটোস্ট্যাটিন হরমোন নিঃসরণ করে, সেহেতু এর মাধ্যমে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। স্টেম কোষ দিয়ে বিজ্ঞানীরা হৃৎপিন্ড ও ফুসফুসের ক্ষতিগ্রস্ত কোষ মেরামত করে দেখিয়েছেন। জাপানে সর্বপ্রথম হৃদরোগের চিকিৎসায় আইপিএস (iPS) কোষের (এটা আসলে উদ্দীপিত প্লুরিপোটেন্ট স্টেম কোষ) ব্যবহার করা হয়েছিল। যদিও হার্ট অ্যাটাক ও ক্রোনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হৃৎপিন্ড ও ফুসফুসে স্টেম সেলের ব্যবহার এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি, তবে এটি গবেষকদেরকে বেশ আশা জুগিয়েছে।
শুধু তা-ই নয়, পারকিনসন’স ডিজিজের চিকিৎসাতেও স্টেম কোষ ব্যবহারের পরীক্ষা চলছে। মস্তিষ্কের ডোপামিন হরমোন প্রস্তুতকারী স্নায়ুকোষগুলো যদি ডোপামিন তৈরি করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এই রোগটি দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে ভ্রূনীয় স্টেম কোষকে ডোপামিন প্রস্তুতকারী স্নায়ুকোষে রূপান্তরিত করা সম্ভব। আর এই কোষগুলোই পারবে পারকিনসন’স ডিজিজে আক্রান্ত মস্তিষ্কের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে। ঠিক এই কাজটাই সুইডেনের লান্ড ইউনিভার্সিটির একদম গবেষক করে দেখিয়েছেন।
এখানেই কিন্তু স্টেম কোষের ফ্যান্টাসি শেষ নয়। স্পাইনাল কর্ড ও শ্বাসনালীর ক্ষত সারানো, ব্ল্যাড ক্যান্সার নিরাময়, লিভার সিরোসিস রোগের চিকিৎসা ইত্যাদি ক্ষেত্রে স্টেম কোষের ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাওয়া গেছে। এতসব কিছুর পরে বিজ্ঞানীরা চিকিৎসাবিজ্ঞানের নতুন বিপ্লবের আশা করছেন। কিন্তু কিছু পথের কাঁটা এই যাত্রায় বাধা হতে পারে।
আসলে সমস্যাটা হয়েছে ভ্রূণীয় স্টেম সেলকে নিয়ে। গবেষণার জন্য ভ্রূণ সংগ্রহ ও ব্যবহারের পরিধি নিয়ে অনেকের আপত্তি আছে। ভ্রুণ সংগ্রহ করে নিষেকে কাজে না লাগা ভ্রুণগুলো বিজ্ঞানীরা স্টেম কোষের গবেষণায় ব্যবহার করেছেন। এক্ষেত্রে কিছু ভ্রুণ গবেষণায় সরাসরি ব্যবহৃত হয়, আবার কিছু ভ্রূণকে নষ্ট করে ফেলা হয়। সমস্যাটা এখানেই! বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা ও মানবাধিকার কর্মীদের মতে, ঐ ভ্রূণগুলো আসলে মানবশিশুর প্রাথমিক রূপ। তাই সেগুলোকে নষ্ট করে প্রস্ফুটিত হওয়ার সুযোগ না দেওয়ার মানে হলো প্রাণ কেড়ে নেওয়া। একে অনেকে আবার হত্যার শামিল মনে করছেন।
একারণে ভ্রুণীয় স্টেম সেলের গবেষণায় যথেষ্ট সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু পরিণত স্টেম সেল নিয়ে কোনো আপত্তি নেই। তবে কালচার মিডিয়ামে এদের সংখ্যাবৃদ্ধি করা অনেক কঠিন, যেটা আবার ভ্রুণীয় স্টেম কোষের ক্ষেত্রে বেশ সহজ। এতসব ঝামেলার কারণে এখন উদ্দীপিত স্টেম কোষ বা আইপিএস (iPS) নিয়ে বিজ্ঞানীরা বেশ আগ্রহী। এরপরো কিছু প্রতিবন্ধকতা থেকেই যায়। হয়ত অদূর ভবিষ্যতে সেগুলোর সমাধান হবে।
শেষ কথা
আজকের দিনে রোগীদেরকে স্টেম কোষ ব্যবহার করে স্টেম সেল থেরাপি দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও গড়ে উঠেছে কর্ড ব্ল্যাড ব্যাংক এবং অ্যামনিওটিক স্টেম সেল ব্যাংক। আমাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০১৪ সাল থেকে স্টেম সেল থেরাপি শুরু হয়। ২০১৭ সালে গড়ে ওঠে ‘বাংলাদেশ স্টেম সেল অ্যান্ড রিজেনারেটিভ মেডিসিন সোসাইটি’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটির এক দল গবেষক ইতিমধ্যে স্টেম সেল থেরাপির নতুন এক পদ্ধতিও আবিষ্কার করে ফেলেছেন। এভাবেই স্টেম কোষের যাত্রায় বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। দেশ এবং দেশের বাইরে এই যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে, তা চিকিৎসাবিজ্ঞানের জগতে এক নতুন বিপ্লবের সাক্ষী হয়ে থাকবে।
Leave a Reply