জেমস ওয়েব টেলিস্কোপঃ একটি ইঞ্জিনিয়ারিং মার্ভেল

এইতো, দুই বছর আগে ২০২২ এর ১১ জুলাই পুরো পৃথিবীবাসীকে তাক লাগিয়ে দেয় নাসা, ১৩ বিলিয়ন আলোক বর্ষ দূরের অসংখ্য গ্যালাক্সির এক অদেখা মহাবিশ্বের ছবি প্রকাশ করে। মানবজাতি এর আগে কখনও এই কল্পনাতীত দূরের মহাবিশ্বকে এতো স্পষ্ট করে দেখতে পায়নি। এটাকে তারা নামকরণ করেন “Webb’s First Deep Field” নামে। মহাবিশ্বের বিশালতা নিয়ে এ ছবিটি মানবজাতিকে নতুন করে জানান দেয়। নাসার এডমিনিস্ট্রেটর বিল নেলসনের ভাষ্যে,

“আপনি আঙ্গুলের ডগায় একটি ছোট্ট বালিকণা নিয়ে সেটি মাথার ওপরের বিশাল আকাশের দিকে ধরলে আকাশের যতোখানি জায়গা এই ক্ষুদ্র বালিকণাটি দখল করবে, ঠিক সেই কল্পনাতীত ক্ষুদ্র অংশটিই হচ্ছে এই ছবিটি। মহাবিশ্বের মাত্র একটি ক্ষুদ্রতম বিন্দু।”

পৃথিবীবাসী জানলো, এ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে মহাশূন্যে ভেসে আমাদের প্রতিনিয়ত পাঠানো শুরু করেছে এই বিশাল মহাজগতের অদেখা সব জগতের ছবি।

চিত্র ১- শিল্পীর চোখে মহাকাশে ভাসমান জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। কৃতজ্ঞাঃ ig.space

জেমস ওয়েব স্পেস টেলেস্কোপ বা সংক্ষেপে JWST কে হাবল টেলিস্কোপের উত্তরসূরী হিসেবে পাঠানো হয়েছে ২০২১ এর ক্রিসমাসের রাতে অনন্ত নক্ষত্ররাজীকে আরও বিশদভাবে জানার জন্য। এটি নেক্সট জেনারেশন স্পেস টেলিস্কোপ (Next Generation Space Telescope বা NGST), যার নামকরণ করা হয়েছে নাসার দ্বিতীয় এডমিনিস্ট্রেটর (১৯৬১-১৯৬৮) এবং অ্যাপোলো অভিযানে মূখ্য ভূমিকা রাখা James E. Webb এর নামে।

আমাদের এই পর্যবেক্ষণশীল মহাবিশ্বের সব কোণে আরও গভীরভাবে আমাদের দৃষ্টি ফেলতেই নাসা, ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি (ESA), এবং কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি (CSA) এর কোলাবরেশানে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এ প্রজেক্টটি ডেভেলপ করা হয়েছে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারে বা ১ লাখ কোটি টাকায়। ৬.৫-মিটার ব্যাসের সেগমেন্টেড আয়না এবং চারটি অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি(NIRCam, NIRSpec, Fine Guidance Sensor, MIRI) সহ, এটি ইনফ্রারেড স্পেকট্রামে (অবলোহিত আলোক তরঙ্গে) পর্যবেক্ষণের জন্য এখন অবধি সবচেয়ে কার্যক্ষম টেলিস্কোপ হিসেবে স্বীকৃত। এর পূর্বে পৃথিবীতে উদ্ভাবিত হওয়া সবচেয়ে আধুনিক টেলিস্কোপের কাছেও মহাবিশ্বের যেসব কোণ ছিলো মোটামুটি অদৃশ্য, ম্লান বা প্রায় অপর্যবেক্ষণযোগ্য—সেসব অঞ্চলে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ খুব চমৎকার ফলাফল দিতে সক্ষম হয়েছে। এটি বিগ ব্যাং এর পর গঠিত প্রথম গ্যালাক্সির আলো পর্যন্ত ধারণ করতে সক্ষম। টেলিস্কোপটি পৃথিবী থেকে ১.৫ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দ্বিতীয় ল্যাগ্রেঞ্জ বিন্দু (L2) কক্ষপথে স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে এটি সূর্য ও পৃথিবীর সাথে সমানুপাতিক অবস্থানে থেকে স্থিতিশীলভাবে কাজ করতে পারে। শুধু তাই-ই না, এটি দূরের নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণকারী গ্রহের বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ করতে পারবে, বাতাসে গ্যাস অনুসন্ধান করতে পারবে, যা জীবনের উপস্থিতি নির্দেশ করতে পারে।

প্রশ্ন আসতে পারে, এই জেমস ওয়েব টেলিস্কোপকে ইনফ্রারেড রশ্মির মাধ্যমে মহাবিশ্ব পর্যবেক্ষণ করতে ডিজাইন করা হয়েছে কেন? দৃশ্যমান আলোতেই না কেন? এর কারণ হচ্ছে, এই ইনফ্রারেড রশ্মির মাধ্যমে আমরা মহাজাগতিক ধুলো এবং গ্যাস ক্লাউড ভেদ করে ভয়ংকর রকমেরও দূরে থাকা গ্যালাক্সি, গ্যালাক্সি ক্লাস্টারগুলোকে দেখতে সক্ষম হই যা দৃশ্যমান আলোয় সম্ভব হতো না। যেটা ছিলো হাবলের অন্যতম বড় সীমাবদ্ধতা। এই ইনফ্রারেড রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য লম্বা হওয়ায়, এটির মাধ্যমে মহাজাগতিক ধুলো-মেঘের ভিতরে আমরা দেখতে সক্ষম যেখানে নক্ষত্র এবং গ্রহমণ্ডল তৈরি হচ্ছে। এতে করে গ্রহ-নক্ষত্রের জন্ম-মৃত্যু নিয়ে আমরা প্রতিনিয়তই নতুন কিছু জানতে পারবো, দেখতে পারবো— এবং পেয়েও যাচ্ছি। এবার চলুন জানা যাক, কীভাবে কাজ করে বিজ্ঞানের এই মার্ভেলাস শিল্পটি।

শুরুতে নজর দেয়া যাক এর গঠনে। দূরবর্তী গ্যালাক্সি এবং নক্ষত্র থেকে আসা কল্পনাতীত ক্ষীণ আলো ধারণের জন্য জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (JWST) এর একটা বিশালাকার Primary Mirror বা প্রাথমিক আয়না রয়েছে। যদিও পূর্বে উল্লেখ করেছি, তাও এখানে আবার উল্লেখ করছি যে, এই প্রাথমিক আয়নার ব্যাস ৬.৫ মিটার (প্রায় ২১.৩ ফুট), যা এর পূর্বসূরি হাবল টেলিস্কোপের চেয়ে অনেক বড়। এই আয়না ১৮টি ষড়ভুজাকার অংশ নিয়ে গঠিত, সবগুলো একত্রে কাজ করে অত্যন্ত সংবেদনশীল আলোকসংগ্রাহী পৃষ্ঠ তৈরি করে। প্রাথমিক আয়নার সুস্পষ্ট অ্যাপারচার হল ২৫ বর্গমিটার, যে কারণে আমাদের JWST-কে মহাবিশ্ব থেকে প্রচুর পরিমাণে আলো সংগ্রহ করতে পারে। চিত্র নং ২-এ জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ আর তার উত্তরসুরী হাবল টেলিস্কোপের তুলনা দেখানো হলো।

চিত্র ২- JWST এর এই বিশাল মিরর পাঠানোটা ছিলো বেশ চ্যালেঞ্জিং কাজ, যেহেতু এতো বিশাল আয়না এর আগে মহাকাশে পাঠানো হয়নি। ছবি ঋণঃ নাসা

JWST-এর ফোকাল দৈর্ঘ্য হল ১৩১.৪ মিটার, যেটার কারণে এই ইঞ্জিনিয়ারিং মার্ভেল অত্যন্ত দূরবর্তী বস্তু থেকে অত্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে আলোকে ফোকাস করতে সক্ষম হয়। প্রাথমিক আয়না বেরিলিয়াম দিয়ে তৈরি, যা হালকা ওজনের এবং শক্তিশালী। এই মিররটির প্রতিটি অংশ পাতলা সোনার প্রলেপ দিয়ে আবৃত, যা মূলত অবলোহিত আলো প্রতিফলনের ক্ষমতা বাড়ায়। প্রাথমিক আয়নার মোট ওজন বেশ কম, মাত্র ৭০৫ কিলোগ্রাম। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের অপটিক্যাল রেজল্যুশন প্রায় ০.১ আর্ক-সেকেন্ড। এর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের পরিসর ০.৬ থেকে ২৮.৫ মাইক্রন পর্যন্ত, যা দৃশ্যমান আলো থেকে মধ্য-অবলোহিত আলো পর্যন্ত বিস্তৃত, এবং এর ফলে আমাদের এ টেলিস্কোপটি কাছাকাছি দূরত্বের নক্ষত্র থেকে শুরু করে মহাবিশ্বের সবচেয়ে দূরবর্তী গ্যালাক্সি পর্যন্ত মহাবিশ্বের অকল্পনীয় বিস্তৃত অঞ্চল পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম।

জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের ছবি ধরণের প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল। এটা কাজ করে চারটি অত্যাধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে। তা হচ্ছেঃ

  • Near Infrared Camera (NIRCam),
  • Near Infrared Spectrograph (NIRSpec),
  • Mid Infrared Instrument (MIRI),
  • Fine Guidance Sensors অথবা Near Infrared Imager Slitless Spectrograph (FGS/NIRISS)

এটুকু যেহেতু ধৈর্য্য ধরে পড়ে ফেলেছেন, এবার চলুন জেনে নেয়া যাক এই চারটি আধুনিক যন্ত্রপাতির কার্যাবলী কী কী, কীভাবে কাজ করে, কীভাবেই বা মহাবিশ্বের প্রাচীনতম অবস্থার ছবি আমাদের চোখের সামনে এনে হাজির করতে পারে।

. নিরক্যাম (NIRCam- Near Infrared Camera)

নিয়ার-ইনফ্রারেড রেঞ্জে(০.৬ থেকে ৫ মাইক্রন) আলোর প্রতি সংবেদনশীল এই যন্ত্রটি জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের প্রধান ইমেজিং ডিভাইস। এর প্রধান ভূমিকা হলো নক্ষত্র, গ্যালাক্সি এবং অন্যান্য মিলিয়ন-বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের মহাজাগতিক বস্তু থেকে আলো সংগ্রহ করা। মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের কারণে দূরবর্তী বস্তুর আলো প্রায়শই রেডশিফটেড হয়, এই ক্ষেত্রে নিরক্যাম ইনফ্রারেড তরঙ্গদৈর্ঘ্য সনাক্ত করার মাধ্যমে চমৎকারভাবে মহাবিশ্বের শুরুর দিকের প্রাচীনতম গ্যালাক্সি এবং নক্ষত্র জন্ম নেয়া অঞ্চলগুলি পর্যবেক্ষণ করতে পারে। যেটি আমরা হাবলে সেভাবে পাইনি। আমাদের এ নিরক্যাম বেশ কিছু অত্যাধুনিক ডিটেক্টরের মাধ্যমে কল্পনাতীত ম্লান আলো ধারণ করে খুব দূরবর্তী সব গ্রহ-নক্ষত্র, নেবুলা ইত্যাদি মহাজাগতিক বস্তুর অত্যন্ত ডিটেইল্ড ছবি দিতে পারে। সাধারণত, আমাদের সৌরজগতের বাইরের কোনো গ্রহ(এক্সোপ্ল্যানেট)কে পর্যবেক্ষণ করতে গেলে যে সমস্যাটা হয়, তা হচ্ছে নক্ষত্রের উজ্জ্বল আলোর কারণে সে গ্রহটি প্রায় দেখা-ই সম্ভব হয় না। যেহেতু গ্রহের নিজস্ব আলো নেই, এবং প্রায় সব স্টার সিস্টেমই অসম্ভব দূরত্বে অবস্থিত, তাই আমাদের চোখে কেবল একটা স্টার সিস্টেমের নক্ষত্রই দৃষ্টিগোছর হয়। অনেকটা স্টেডিয়ামের ফ্লাড লাইটে জোনাকী খোঁজার মতো। সনাতন পদ্ধতিতে(ট্রানসিশান মেথডে) আমরা সাধারণত গ্রহটি নক্ষত্র দিয়ে পাস করার সময় সে গ্রহ দ্বারা শোষিত হতো, সেটুকু থেকে গ্রহটির ভর, আকার ইত্যাদি পরিমাপ করতাম। কিন্ত, জেমস  ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ এ বিরাট সমস্যাটি সমাধান করে দিয়েছে। নিরক্যাম করোনাগ্রাফ(coronagraph) দিয়ে সজ্জিত। এই করোনাগ্রাফ উজ্জ্বল নক্ষত্রগুলির আলো ব্লক করে দিতে পারে, এতে করে আমরা  সেই নক্ষত্রগুলির চারপাশে থাকা ম্লান বস্তু যেমন এক্সোপ্ল্যানেট পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম। বিশেষত, এটি এক্সোপ্ল্যানেটের বায়ুমণ্ডল পর্যবেক্ষণ ও সেসব গ্রহে প্রাণের সন্ধান করা সংক্রান্ত গবেষণায় বেশ বড়সড় একটি পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। সম্ভাব্যভাবে বাসযোগ্যতা বা এমনকি জীবনের লক্ষণ সনাক্ত করতে পারে। আজকাল আমরা যেসব কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরের যতো প্রাচীন গ্যালাক্সি, নক্ষত্র কিংবা নক্ষত্রের জন্মস্থান নেবুলাগুলো দেখতে পাচ্ছি JWST এর মাধ্যমে, তা এই নিরক্যাম থেকে প্রাপ্ত ডেটা থেকেই।

চিত্র ৩- নিরক্যাম এর বাহ্যিক কাঠামো। কৃতজ্ঞতাঃ নাসা

. নিরস্পেক (NIRSpec- Near Infrared Spectrograph)

নিরক্যামের বিপরীতে নিরস্পেক ইমেজ ক্যাপচার করার জন্য নয়, বরং স্পেকট্রোস্কপি করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। অর্থাৎ এটি আলোকে তরঙ্গদৈর্ঘ্যে বিভক্ত করে। স্পেকট্রোস্কপি মহাজাগতিক বস্তুর শারীরিক ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য বুঝতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেমন তাদের গঠন, তাপমাত্রা এবং গতি। নিরস্পেক নিরক্যামের মতো একই রেঞ্জের তরঙ্গদৈর্ঘ্যে (০.৬ থেকে ৫ মাইক্রন) কাজ করে। তবে এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো, এটি একসাথে ১০০টি অবজেক্ট পর্যবেক্ষণ করতে পারে। ব্যাপারটা একটা মাইক্রোশাটার অ্যারের মাধ্যমে সম্ভব হয়, যা হাজার হাজার ছোট ছোট সেল নিয়ে গঠিত। এই ছোট্ট সেলগুলির একেকটার ব্যসার্ধ মানুষের চুলের ব্যসার্ধের সমান প্রায়। এরা পৃথকভাবে খোলা ও বন্ধ করা যায় নির্দিষ্ট অবজেক্ট নির্বাচন করার জন্য। এর ফলে আমরা একই দৃশ্যমান ক্ষেত্রের মধ্যে একাধিক নক্ষত্র বা গ্যালাক্সির বিস্তারিত স্পেকট্রাল বিশ্লেষণ করতে পারি। এতে করে, টেলিস্কোপের দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। নিরস্পেকের স্পেকট্রোস্কোপিক ডেটা আমাদের নক্ষত্র গঠন প্রক্রিয়া, গ্যালাক্সির ক্যামিক্যাল কম্পোজিশন এবং দূরবর্তী কোয়েসারদের আচরণ বুঝতে সাহায্য করে।

 

চিত্র ৪- নিরস্পেকের মাইক্রোশাটার সেল। কৃতজ্ঞতাঃ নাসা।

. ফাইন গাইডেন্স সেন্সর (FGS)

ফাইন গাইডেন্স সেন্সর (FGS) নিশ্চিত করে যেন JWST তার মহাকাশে তাক করা লক্ষ্যবস্তুতে অত্যন্ত স্থিতিশীল ও সঠিক লক বজায় রাখতে পারে। মহাকাশ টেলিস্কোপগুলির সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রয়োজন যাতে চিত্র ঝাপসা না হয়, বিশেষ করে যখন অত্যন্ত ম্লান ও দূরবর্তী বস্তু পর্যবেক্ষণ করা হয়। FGS জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ তার লক্ষ্যবস্তুতে থাকা নক্ষত্রগুলিকে নিরবচ্ছিন্নভাবে ট্র্যাক করে এই কাজটি সম্পন্ন করে এবং টেলিস্কোপের অবস্থান সামঞ্জস্য করার জন্য বাস্তব সময়ের ফিডব্যাক প্রদান করে। । এটি টেলিস্কোপকে দীর্ঘ সময়ের জন্য তার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্টভাবে ফোকাস রাখতে সক্ষম করে, যা দীর্ঘ এক্সপোজার পর্যবেক্ষণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেন সংগৃহীত ডেটা যতটা সম্ভব স্পষ্ট ও বিস্তারিত হয়, সেটার জন্য FGS অবজারভেটরির জটিল নিয়ন্ত্রণ সিস্টেমের সাথে মিলিতভাবে কাজ করে। FGS ছাড়া, টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণ অনেক কম সুনির্দিষ্ট হবে, যার ফলে ছবির গুণমান খারাপ হবে।

. MIRI (মিডইনফ্রারেড ইনস্ট্রুমেন্ট)

মিড-ইনফ্রারেড ইনস্ট্রুমেন্ট বা MIRI ৫ থেকে ২৮ মাইক্রন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো ক্যাপচার করে। MIRI-র মাধ্যমে এটি দূরবর্তী স্টার সিস্টেম, ব্রাউন ডোয়ার্ফ, এবং প্রোটোস্টারের মতো ঠান্ডা জ্যোতিষ্কের রেডিয়েশন পর্যবেক্ষণ করতে পারে। দীর্ঘ অবলোহিত তরঙ্গ ধূলিকণা ভেদ করতে সক্ষম হওয়ায় আমাদের JWST মিড-ইনফ্রারেড ইনস্ট্রুমেন্টের মাধ্যমে মহাশূন্যের ধূলিময় অঞ্চল যেমন নতুন নক্ষত্র ও গ্রহ তৈরী হওয়া অঞ্চল প্রোটোপ্ল্যানেটারি ডিস্ক পর্যবেক্ষণ করতে পারি আমরা। এছাড়াও MIRI গ্যালাক্সির অভ্যন্তরীণ অঞ্চলের ছবি সংগ্রহে সহায়তা করে, যা নিকটবর্তী গ্যালাক্সির কেন্দ্রস্থল এবং নক্ষত্র গঠনের অঞ্চল সম্পর্কে ব্যাপক তথ্য দেয়। এর স্পেকট্রোস্কপিক ক্ষমতা মহাজাগতিক বস্তুগুলোর রাসায়নিক উপাদান বিশ্লেষণ করতে সহায়তা করে, যা গ্রহ ও গ্যালাক্সির গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আমাদের চমৎকার সব ইনসাইট দেয়।

এই চারটি যন্ত্র একত্রে JWST-কে মহাবিশ্বের অত্যন্ত জটিল পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম করে, যা পূর্বে অসম্ভব ছিল। ছবি গ্রহণ ও স্পেকট্রোস্কপি সংযুক্ত করার মাধ্যমে JWST আমাদের মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচনে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করছে— তারকা ও গ্যালাক্সির জন্ম থেকে শুরু করে দূরবর্তী এক্সোপ্ল্যানেটের বায়ুমণ্ডল অধ্যয়ন পর্যন্ত।

তথ্যসূত্রঃ

লেখাটি 36-বার পড়া হয়েছে।


নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান? হোস্টিং ও ডোমেইন কেনার জন্য Hostinger ব্যবহার করুন ৭৫% পর্যন্ত ছাড়ে।

আলোচনা

Leave a Reply

ই-মেইল নিউজলেটার

বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবর সম্পর্কে আপডেট পেতে চান?

আমরা প্রতি মাসে ইমেইল নিউজলেটার পাঠাবো। পাক্ষিক ভিত্তিতে পাঠানো এই নিউজলেটারে বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবরাখবর থাকবে। এছাড়া বিজ্ঞান ব্লগে কি কি লেখা আসলো, কি কি কর্মযজ্ঞ চলছে, সেটার খবরও থাকবে।







Loading