নিয়ান্ডারথালদের প্রাচীন ডিএনএ আমাদের কী জানায়?

লেখাটি বিভাগে প্রকাশিত

জীবন্ত জীবসত্তার খুঁটিনাটি বুঝতে পারার সবচেয়ে মোক্ষম হাতিয়ার হলো ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড)। আমাদের জেনেটিক কোড আমাদের পরিচয় সম্পর্কে বিস্তৃত ধারণা দেয়। যেমন — আমরা কী, কোথা থেকে এসেছি, কারা আমাদের নিকটাত্মীয়, ইত্যাদি। জীববিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায় বিবর্তন সম্পর্কিত গবেষণায়, ডিএনএ’র ভূমিকা সবচেয়ে তাৎপর্যবহ। কিন্তু সমস্যার ব্যাপার, ডিএনএ ভঙ্গুর অণু, যা সময় গড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। বেশিরভাগ প্রাচীন জীবাশ্মের ক্ষেত্রে, জীবাশ্ম থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ দারুণ দুঃসাধ্য ব্যাপার। তাই, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাম্প্রতিককালে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রজাতিসমূহের তথ্য উদ্‌ঘাটন বিজ্ঞানীদের পক্ষে সম্ভবপর। এমনই একটি প্রজাতি হচ্ছে, হোমো স্যাপিয়েন্সের মতো আরেকটি মানবপ্রজাতি। নাম হোমো নিয়ান্ডারথাল

হোমো নিয়ান্ডারথাল; ছবি: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

হোমিনিন হিসেবে নিয়ান্ডারথালদের জীবাশ্মই সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিল। ১৮২৯ সালে বেলজিয়ামের এনজিস অঞ্চলে একটি মানব শিশুর খুলি আবিষ্কৃত হয়েছিল, যা পরবর্তীতে নিয়ান্ডারথাল হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। তবে নিয়ান্ডারথাল জীবাশ্ম হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রথম আবিষ্কারটি ঘটে ১৮৫৬ সালে, জার্মানির নিয়ান্ডার উপত্যকার একটি জায়গা থেকে। সেখান থেকেই এর নামকরণ হয় ‘নিয়ান্ডারথাল’। নিয়ান্ডারথালরা হোমো স্যাপিয়েন্স কিংবা আধুনিক মানুষ থেকে প্রায় পাঁচ লক্ষ বছর পূর্বে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিবর্তিত হয়েছিল আফ্রিকা মহাদেশের বাইরে। হোমো স্যাপিয়েন্সের বেশিরভাগ পূর্বপুরুষই আজ থেকে প্রায় লাখ খানেক বছর আগ অবধি অবস্থান করত আফ্রিকার ভূখণ্ডে। এরপরই তারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এই সময়ের মধ্যে, নিয়ান্ডারথালরা অভিযোজনের মাধ্যমে কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে পেরেছিল, যা তাদেরকে ইউরোপ ও এশিয়ার শীতল পরিবেশে বেঁচে থাকতে ব্যাপক সহযোগিতা করেছিল।

প্রাক-নিয়ান্ডারথাল খুলি; ছবিসূত্র: উইকিমিডিয়া কমনস

নিয়ান্ডারথাল মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ

ডিএনএ সবচেয়ে ভালোভাবে সুরক্ষিত থাকে শীতল এবং শুষ্ক পরিবেশে। সর্বপ্রথম যে নিয়ান্ডারথাল ডিএনএকে বিশ্লেষণ করা হয়েছিল, তা হলো নিয়ান্ডারথাল মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ। প্রাণীকোষের মোট দুই স্থানে ডিএনএ বিদ্যমান। তা হলো, নিউক্লিয়াস এবং মাইটোকন্ড্রিয়া। এক্ষেত্রে মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের। কারণ, সন্তান এই ডিএনএ শুধু মায়ের থেকে পায়, বাবার কাছ থেকে নয়। গবেষকরা নিয়ান্ডারথাল মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ আধুনিক মানুষ ও শিম্পাঞ্জির মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ তুলনা করে দেখেছেন, নিয়ান্ডারথালের মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ বাকি দুই প্রজাতির চেয়ে আলাদা।

মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ; ছবিসূত্র: জিনোম ডট গভ

সম্পূর্ণ নিয়ান্ডারথাল মাইটোকন্ড্রিয়াল জিনোম সিকোয়েন্সিং

নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী সভান্তে প্যাবো ও তাঁর দল সর্বপ্রথম সম্পূর্ণ নিয়ান্ডারথাল মাইটোকন্ড্রিয়াল জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে সক্ষম হয়েছিলেন। প্রায় ৩৮ হাজার বছর পূর্বের ডিএনএ নমুনাটি সংগ্রহ করা হয়েছিল ক্রোয়েশিয়ার ভিনডিজা গুহা থেকে। এরপর তারা আরও নিয়ান্ডারথাল মাইটোকন্ড্রিয়াল জিনোম সংগ্রহ করে গবেষণা চালান। ওই বিশ্লেষণে দেখা যায়, নিয়ান্ডারথাল মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ একে অপরের থেকে ২০.৪ বেস (ক্ষার) দ্বারা পৃথক। এবং তাদের মধ্যে বৈচিত্র্যতা আধুনিক মানুষের তিনভাগের একভাগ মাত্র। এই স্বল্প বিচিত্রতা ইঙ্গিত দেয়, তারা জনসংখ্যায় ছিল অল্প। এই গবেষণা থেকে আরও জানা যায়, প্রায় ২ লক্ষ ৭০ হাজার বছর পূর্বে অন্য হোমিনিন সাথে নিয়ান্ডারথাল মিলিত হয়ে জিন আদান-প্রদান করেছিল।

           নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী সভান্তে প্যাবো ; ছবিসূত্র: গ্রেটি ইমেজ

নিয়ান্ডারথাল নিউক্লিয়ার ডিএনএ

২০১৪ সালে সম্পন্ন করা হয় নিয়ান্ডারথালদের সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্সিং। এই নমুনাটি সংগ্রহ করা হয়েছিল সাইবেরিয়ার আলটাই পর্বত থেকে। বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, এই ডিএনএ ছিল একজন নারীর। তার পিতা-মাতা সম্পর্কে ছিল সৎ ভাই-বোন। ক্ষুদ্র জনসংখ্যার হওয়ায়, তাদের মাঝে অজাচারের বৈশিষ্ট্য ছিল লক্ষণীয়। তৎকালীন সময়ে, নিয়ান্ডারথালদের সাথে আধুনিক মানুষ এবং ডেনিসোভানদের খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তবে, আধুনিক মানুষের চেয়ে শিম্পাঞ্জির ডিএনএর সাথে অধিক মিল পাওয়া যায় তাদের। নিয়ান্ডারথাল এবং স্যাপিয়েন্সরা বিচ্ছিন্ন হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৫ লক্ষ ৫০ হাজার বছর পূর্বে।

জিন এবং বিবর্তন

ডিএনএতে অবস্থিত কোডিং, নন-কোডিং সিকোয়েন্সগুলো বিবর্তনে এক গুরু দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু সিলেক্টিভ প্রেশারের কারণে নিয়ান্ডারথালদের কিছু জিনে পরিবর্তন আসে, যা আধুনিক মানুষকে প্রতিকূল অবস্থায় টিকে থাকতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীরা ডিএনএতে এমন ৭৮ টি জিন (লোকাস) খুঁজে পেয়েছেন, যেখানে নিয়ান্ডারথাল এবং স্যাপিয়েন্সরা ভিন্নতা প্রদর্শন করে। এরমধ্যে ৫টি জিনে পুরো এক সিকোয়েন্স পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল, যার ফলে পুরো প্রোটিনের গঠনেই এসেছিল পরিবর্তন। সে জিনগুলো হলো, এসপিএজি১৭ (SPAG17) – যা শুক্রাণু চলাচলে সাহায্য করত, পিসিডি১৬ (PCD16) – যা ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করত, টিটিএফ১ (TTF1) – সাহায্য করত রাইবোজোমাল জিন ট্রান্সক্রিপশনে, আরপিটিএন (RPTN) – যা পাওয়া যেত ত্বক, চুল এবং ঘাম গ্রন্থিতে। এই বৈশিষ্ট্যসমূহ আধুনিক মানুষের বিবর্তনে সাহায্য করলেও, পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল নিয়ান্ডারথালদের জন্য। এছাড়াও কিছু শক্তি বিপাকীয়, জ্ঞান বিকাশ, শারীরিক বিকাশ সম্বলিত জিনও ছিল এই তালিকায়, যা নিয়ান্ডারথালদের বদলে বিবর্তনে সাহায্য করেছে হোমো স্যাপিয়েন্সদের।

    নিয়ান্ডারথাল; ছবি: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

নিয়ান্ডারথাল-স্যাপিয়েন্স আন্তঃপ্রজনন

প্রাচীনকালে আফ্রিকায় বসবাস করেনি, এমন হোমো স্যাপিয়েন্সদের মাঝে ১-৪% নিয়ান্ডারথাল জিন পাওয়া যায়। কারণ, নিয়ান্ডারথালরা বিবর্তিত হয়েছে আফ্রিকার বাইরে। ২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, আজ থেকে প্রায় এক লাখ বছর পূর্বে স্যাপিয়েন্স এবং নিয়ান্ডারথালের মাঝে আন্তঃপ্রজনন ঘটেছিল। যার ফলে নিয়ান্ডারথালদের অনেক জিন আধুনিক মানুষের মাঝে বিদ্যমান। কিন্তু এখানে প্রশ্ন থাকতে পারে, স্যাপিয়েন্স-নিয়ান্ডারথালের মাঝে আন্তঃপ্রজনন ঘটলে, আধুনিক মানুষের মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএতে নিয়ান্ডারথালের ডিএনএ পাওয়া যায় না কেন? এর কয়েক রকম সম্ভাব্য উত্তর থাকতে পারে।

প্রথমত, যে-সব আধুনিক মানুষের নিয়ান্ডারথাল মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ ছিল, সে বংশ পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়ে থাকতে পারে। দ্বিতীয়ত তখনকার সামাজিক রীতিনীতি ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার ধারণা নেই। তখন যদি এমন রীতি প্রচলিত থেকে থাকে যে, শুধু নিয়ান্ডারথাল পুরুষ এবং স্যাপিয়েন্স নারীর মাঝেই বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে, তাহলে একটা সমস্যা বেঁধে যায়। সেটা হলো তাদের সন্তান-সন্ততিতে নিয়ান্ডারথাল মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ আসার সম্ভাবনা নেই। কারণ, মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ শুধু মাতা থেকেই সন্তানে প্রবাহিত হয়। তাই, পিতা নিয়ান্ডারথাল হওয়ায় নিউক্লিয়ার ডিএনএতে নিয়ান্ডারথাল জিন জায়গা করে নিলেও মাইটোকন্ড্রিয়াতে পারেনি। তৃতীয়ত, সময়ের সাথে নির্দিষ্ট জিনগুলো ‘জেনেটিক ড্রিফট’-এর কারণে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ, কোনো বিশেষ হ্যাপ্লোটাইপ বা মাইটোকন্ড্রিয়াল রূপান্তর স্বাভাবিক বিবর্তনেই হারিয়ে যেতে পারে।

           নিয়ান্ডারথাল (বাঁয়ে) ও স্যাপিয়েন্স; ছবি: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

লাল-চুলো, ফ্যাকাশে-চর্মযুক্ত নিয়ান্ডারথাল

প্রাচীন ডিএনএ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে, নিয়ান্ডারথালদের চেহারার পুনর্গঠন করা হয়েছে। স্পেন ও ইতালি থেকে প্রাপ্ত দুই নিয়ান্ডারথাল ডিএনএ ব্যবহার করে মেলানোকোর্টিন ১ রিসেপ্টর বা এমসিআর১ (MCR1) জিনের একটি খণ্ডাংশ সিকোয়েন্সিং করেছেন বিজ্ঞানীরা। এমসিআর১ হল এক প্রকার রিসেপ্টর জিন, যা মেলানিনের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে, সেই সাথে এটি চুল এবং ত্বকের রঙের জন্য দায়ী। নিয়ান্ডারথালদের এই রিসেপ্টর জিনে একটি মিউটেশন ঘটে, যা পরিবর্তন করে ফেলে একটি অ্যামাইনো এসিডকে। যার ফলে, কার্যকরতা কমে যায় প্রোটিনের, তৈরি করে লাল চুল এবং ফ্যাকাশে ত্বকের একটি ফেনোটাইপ। তো বিজ্ঞানীরা কীভাবে জানল যে, এই ফেনোটাইপটি দেখতে কেমন? আধুনিক মানুষেও এমসিআর১-এর অনুরূপ মিউটেশন পাওয়া যায়, যার ফলে তাদের চুল লাল এবং ত্বক ফ্যাকাশে বর্ণের হয়। তবে মনে রাখা জরুরি, সব নিয়ান্ডারথালের চুল লাল ছিল না। স্পেন ও ইতালির কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলের নিয়ান্ডারথালদের ডিএনএ-তে এই মিউটেশন পাওয়া গেছে মাত্র।

                 হোমো নিয়ান্ডারথাল; ছবি: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

ভাষা এবং এফওএক্সপি২ জিন

এফওএক্সপি২ (FOXP2) জিন কথা বলা এবং ভাষার সাথে সম্পৃক্ত। এই জিনে মিউটেশনের ফলে আধুনিক মানুষদের কথা বলা এবং মুখমণ্ডলীয় পেশি নিয়ন্ত্রণে শুরুতে দেখা দিয়েছিল সমস্যা। আধুনিক মানুষ এবং নিয়ান্ডারথালদের এফওএক্সপি২ জিন সিকোয়েন্সে একই ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে।

তো, তাদের মধ্যে এই পরিবর্তন আসলো কীভাবে? একটা সম্ভাব্য উত্তর হতে পারে এমন, জিন ফ্লো বা জিন প্রবাহের মাধ্যমে দুই প্রজাতির মধ্যে বাহিত হয়েছে এই জিন। আরেকটা উত্তর হলো,  উদ্ভূত এফওএক্সপি২ জিন আধুনিক মানুষ এবং নিয়ান্ডারথাল উভয়ের পূর্বপুরুষেই উপস্থিত ছিল এবং এর প্রসারণ ঘটেছে উভয় প্রজাতির জনসংখ্যাতেই। তবে নিয়ান্ডারথাল এবং মানুষের মধ্যে একই হ্যাপ্লোটাইপের উপস্থিতির মানে এই নয় যে, নিয়ান্ডারথালদের আধুনিক মানুষের মতো জটিল ভাষা আয়ত্তের ক্ষমতা ছিল। এমন প্রমাণ বিজ্ঞানীরা এখনো পাননি। ভাষা বিকাশে অনেকগুলো উপাদান কাজ করে, যার মধ্যে একটি হলো জিন। অন্যগুলো পরিবেশ, শিক্ষা, সমাজ, এবং সাংস্কৃতিক চর্চা।এফওএক্সপি২ জিনে নিয়ান্ডারথালদের নিজস্ব অনন্য প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। ভাষা বিকাশে অনেকগুলো উপাদান কাজ করে, যার মধ্যে একটি হলো জিন।

হোমো নিয়ান্ডারথাল; ছবি: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

তেতো স্বাদের উপলব্ধি

তেতো বা তিক্ত স্বাদ উপলব্ধির ক্ষমতা নিয়ন্ত্রিত হয় টিএএস২আর৩৮ (TAS2R38) জিন দ্বারা। এল সিদরন নামক জায়গা থেকে প্রাপ্ত নিয়ান্ডারথালের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তার মধ্যে এই জিনের উপস্থিতি ছিল, তবে তা হেটারোজাইগাস হিসেবে। অর্থাৎ, তার তিক্ত জিনিস স্বাদের উপলব্ধি হেমোজাইগাসওয়ালা (দুই কপিযুক্ত টেস্টিং অ্যালিল) লোকের থেকে কম। মানুষের মধ্যেও এই হোমোজাইগাস এবং হেটারোজাইগাস টেস্ট অ্যালিল বিদ্যমান। শিম্পাঞ্জির ক্ষেত্রেও তেতো স্বাদ গ্রহণের ভিন্নতা দেখা যায়। তাই, বলা যায় হোমো নিয়ান্ডারথালেরাও তেতো স্বাদ উপলব্ধি করতে পারত।

শারীরিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা

গবেষণা থেকে দেখা গেছে, নিয়ান্ডারথাল ডিএনএ বর্তমানে আমাদের শারীরিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় অবদান রেখেছে। মানব জিনোমের এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আধুনিক মানুষের জিনোমে নিয়ান্ডারথাল জিনের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। বিশেষ করে ডিএনএর যে অংশটুকু জীবাণুর বিরুদ্ধের প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে তোলে, সে অংশ আধুনিক মানুষ পেয়েছে নিয়ান্ডারথাল থেকে। যখন মানুষ এবং নিয়ান্ডারথালের মাঝে আন্তঃপ্রজনন ঘটেছে, তখন রোগের বিরুদ্ধে জেনেটিক রেসিন্ট্যান্ট প্রবাহিত হয়েছে তাদের সন্তান-সন্ততিতে। যেটা তাদের দিয়েছে রোগের বিরুদ্ধের বাড়তি লড়াইয়ের সুবিধা।

রক্ত জমাট বাঁধা, বিষণ্নতা, এবং অ্যালার্জি

নিয়ান্ডারথালেরা আধুনিক মানুষকে এমন অনেক জিন দিয়েছে, যা পূর্বে উপকারী হলেও বর্তমানে বিভিন্ন স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার সাথে জড়িত। এর মধ্যে একটি জিন রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। প্রাচীন হোমো স্যাপিয়েন্সরা শিকারে শরীর থেকে প্রায়শই রক্ত ঝড়াতো। এইক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাঁধার জিন অধিক দরকারি। কিন্তু আধুনিক জগতের মানুষ শিকারী-সংগ্রাহী জীবন থেকে বেরিয়ে আসায়, এই রক্ত জমাট বাঁধার জিন হিতে বিপরীত করতে পারে। আমাদের বিষণ্নতার জিনও নিয়ান্ডারথালদের থেকে এসে থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। এমন অনেক জিন আছে, যা নিয়ান্ডারথালে প্রকাশ পায়নি, কিন্তু পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় হোমো স্যাপিয়েন্সে প্রকাশ পেয়েছে ঠিকই। অ্যালার্জির জিন, আর বিষণ্নতার জিন এমন দুইটি উদাহরণ। যেগুলো, নিয়ান্ডারথালে প্রকাশ না পেলেও বর্তমান মানুষে এসে প্রকাশ পাচ্ছে।

ধারণা করা হয়, আজ থেকে প্রায় সাড়ে চার লাখ বছর পূর্বে উদ্ভব ঘটেছিল মানুষের আরেকটি প্রজাতি হোমো নিয়ান্ডারথালের। প্রায় সাড়ে তিন লাখ বছর পৃথিবীর ধূসর মাটিতে ছিল তাদের পদচারণা। এমনকি আধুনিক মানুষদের সাথে একইসাথে তারা বসবাস করেছে সবুজ-শ্যামল এই ধরণীতে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, জলবায়ু পরিবর্তন, হোমো স্যাপিয়েন্সদের আগ্রাসী মনোভাব, চরম প্রতিযোগিতা, আধুনিক মানুষের সাথে আন্তঃপ্রজনন, কিংবা ক্ষুদ্র জনসংখ্যা থাকায় পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে গেছে এই মানব প্রজাতি।

তথ্যসূত্র:







বিজ্ঞান নিউজলেটার

যুক্ত হোন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞান নিউজলেটারে!
আমরা সাপ্তাহিক ইমেইল নিউজলেটার পাঠাবো। 
এ নিউজলেটারে বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবরাখবর থাকবে। থাকবে নতুন লেখার খবরও।


Loading

লেখাটি 103-বার পড়া হয়েছে।

ইউটিউব চ্যানেল থেকে

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য লেখা


নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান? হোস্টিং ও ডোমেইন কেনার জন্য Hostinger ব্যবহার করুন ৭৫% পর্যন্ত ছাড়ে।

আলোচনা

Leave a Reply

বিজ্ঞান অভিসন্ধানী: পঞ্চাশ জন বিজ্ঞান লেখকের লেখা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই ই-বুকটি। আপেক্ষিকতা তত্ত্ব থেকে শুরু করে ডিএনএর রহস্য, গণিত, এমনকি মনোবিজ্ঞানের মতো বিশাল বিষয় ব্যাপ্তির পঞ্চাশটি নিবন্ধ রয়েছে দুই মলাটের ভেতরে।
বিজ্ঞান অভিসন্ধানী: আপেক্ষিকতা তত্ত্ব থেকে শুরু করে ডিএনএর রহস্য, গণিত, এমনকি মনোবিজ্ঞানের মতো বিশাল বিষয় ব্যাপ্তির পঞ্চাশটি নিবন্ধ রয়েছে দুই মলাটের ভেতরে। ।