person holding petri dish

পেনিসিলিন এর জন্ম নিয়ে দু’কথা


লিখেছেন

লেখাটি বিভাগে প্রকাশিত

১৯২৮ এর সেপ্টেম্বরের এক সকাল। তার কান্ট্রি হাউজ ধুনে (The Dhoon) ছুটি কাটিয়ে ফ্লেমিং তার কাজে ফিরলেন সেইন্ট মেরি হাসপাতালে। ছুটিতে যাওয়ার আগে তিনি কিছু পেট্রি-ডিশ রেখে যান তার কাজ করার বেঞ্চের এক পাশে যেন তার অনুপস্থিতিতে তার সহকর্মী Stuart Craddock তার বেঞ্চে কাজ করতে পারেন। ছুটি থেকে ফিরে আলেকজান্ডার তার দীর্ঘ দিনের পড়ে থাকা পেট্রি-ডিশগুলো দেখছিলেন এবং বাছাই করছিলেন কোন প্লেটগুলো তিনি ব্যবহার করতে পারবেন। এগুলোর বেশীর ভাগই ছিল দূষিত(contaminated) । ফ্লেমিং প্রতিটি ডিশকে লাইজলের ট্রেতে চুবিয়ে রাখলেন জীবাণুমুক্ত করতে। একদিন ডিশের গাদা থেকে ডিশগুলো বাছাই করার সময় তাঁর সাবেক সহকারী , D. Merlin Pryce , তার সাথে দেখা করার জন্যে আসলেন। ফ্লেমিং এই সুযোগে প্রাইস চলে যাওয়াতে তাকে কি পরিমাণ অতিরিক্ত কষ্ট করতে হয়েছে এ নিয়ে অভিযোগ করে বসলেন। প্রমাণ দেখাতে তিনি তার লাইজলে রাখা প্লেটগুলো থেকে কয়েকটা খুজে বের করলেন যেগুলোতে লাইজল লাগেনি। বলে রাখা দরকার যে লাইজল জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে। নির্দিষ্ট একটা প্লেট খুজে তিনি যখন প্রাইসকে দেখাতে যাচ্ছিলেন তখন তিনি একটা অবাক করা কিছু খেয়াল করলেন। তিনি দেখলেন যে তার প্লেটে এক ধরণের ছত্রাক  জন্মেছে,যেটা আসলে ততোটা অবাক হওয়ার মত ব্যাপার না । যাইহোক, ফ্লেমিং এর কাছে মনে হল যে এই ছত্রাক ডিশে থাকা Staphylococcus aureus কে ধ্বংস করতে পারে। তিনি এই ছত্রাক এর ক্ষমতা নিয়ে মোটামুটি একটা আন্দাজ করলেন।

ফ্লেমিং এই ছত্রাকটি জন্মানোর জন্যে এবং এর কি উপাদান ব্যাক্টেরিয়ার প্রাণ নাশক হিসেবে কাজ করে তা জানতে আরো কয়েক সপ্তাহ ব্যায় করেন এবং  ছত্রাক বিশেষজ্ঞ (Mycologist) C. J. La Touche (যার অফিস ছিল ফ্লেমিং এর নিচ তলায় )এর সাথে যোগাযোগ করে তিনি নিশ্চিত হলেন যে  ছত্রাকটি ছিল  পেনিসিলিয়াম। আর তাই ফ্লেমিং ছত্রাকের কার্যকর ব্যাক্টেরিয়া প্রতিরোধি  উপাদানের নাম দেন পেনিসিলিন (penicillin)।

কিন্তু ছত্রাকটি এসেছিলো কোথা থেকে?

খুব সম্ভবত নিচতলায় La Touche এর অফিস থেকেই। La Touche তখন জন ফ্রিম্যান এর জন্যে ছত্রাকের  বিশাল স্যাম্পল সংগ্রহ করছিলেন যিনি অ্যাযমা নিয়ে গবেষণা করছিলেন এবং হয়তো সেখান থেকে কিছু ছত্রাক উড়ে গিয়ে ফ্লেমিং এর প্লেটে বাসা বাধে।

ফ্লেমিং তারপর এই ছত্রাকটি নিয়ে অসংখ্য পরীক্ষা করেন এবং ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার উপর প্রয়োগ করেন এবং বিস্ময় নিয়ে দেখলেন যে তা ব্যাক্টেরিয়াগুলোকে প্রচুর পরিমাণে ধ্বংসও করতে পারে। তিনি আরো কিছু ভিন্ন পরীক্ষা করে দেখেন যে এই  ছত্রাকগুলো  নন-টক্সিক। ফ্লেমিং তার ‘wonder drugs’ এর সন্ধানে ছিলেন। এটাই কি তার সেই ‘wonder drug’ ? না, ফ্লেমিং এর কাছে তা মনে হয়নি। যদিও তিনি জানতেন যে এই ছত্রাক এর কিছু সম্ভাবনা আছে কিন্তু রসায়নবিদ না হওয়ায় তিনি কার্যকর ব্যাক্টেরিয়া প্রতিরোধী উপাদান (active antibacterial element) penicillin কে আলাদা করতে এবং উপাদানটিকে মানব শরীরে ব্যবহার উপোযোগী করার জন্যে দীর্ঘক্ষণ কার্যকর রাখতে ব্যর্থ হন।

বারো বছর পর

সাল ১৯৪০, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বিতীয় বছর। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এর দু’জন বিজ্ঞানী,অস্ট্রেলিয়ান Howard Florey এবং জার্মান Ernst Chain পেনিসিলিন নিয়ে কাজ শুরু করলেন। নতুন রাসায়নিক পদ্ধতি ব্যাবহারের মাধ্যমে তাঁরা পেনিসিলিয়াম থেকে এক ধরণের বাদামী বর্ণের পাওডার তৈরী করতে সক্ষম হলেন যেটা তার  ব্যাক্টেরিয়াকে ধ্বংস করার ক্ষমতা  অনেক দিন ধরে রাখতে পারে। তাঁরা এই পাওডারটি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন এবং দেখতে পান যে এটির ব্যবহার নিরাপদ। শীঘ্রই যুদ্ধে চিকিৎসায় এর চাহিদা বাড়তে লাগলো এবং সাথে সাথে এর উৎপাদন ও।

চিকিৎসায় পেনিসিলিনের উপস্থিতির কারণে অনেক প্রাণ বাঁচল যা হয়ত পেনিসিলিন ছাড়া সম্ভব হতোনা কারণ অনেক সামান্য ক্ষতও এর আগে প্রাণঘাতী ছিল। পেনিসিলিন বর্তমানে ডিফথেরিয়া, গ্যাংগ্রীন,নিউমোনিয়া, সিফিলিস,যক্ষা  সারাতেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

যদিও ফ্লেমিংই পেনিসিলিন আবিষ্কার করেন কিন্তু Howard Florey আর Ernst Chain এর অবদান ছাড়া তিনি এটাকে ব্যাবহার যোগ্য করতে পারতেন না। ১৯৪৫ এ যদিও তিনজনকেই নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়, তথাপি ফ্লেমিংকেই এখনো পেনিসিলিন এর আবিষ্কর্তা হিসেবে সম্মান জানান হয়।

source : Alexander Fleming Discovers Penicillin by Jennifer Rosenberg, about.com guide







বিজ্ঞান নিউজলেটার

যুক্ত হোন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞান নিউজলেটারে!
আমরা সাপ্তাহিক ইমেইল নিউজলেটার পাঠাবো। 
এ নিউজলেটারে বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবরাখবর থাকবে। থাকবে নতুন লেখার খবরও।


Loading

লেখাটি 568-বার পড়া হয়েছে।

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য লেখা

  • আইনস্টাইন জিগজ্যাগ

    আইনস্টাইন জিগজ্যাগ

  • ডাইনোসর বিলুপ্ত না হলে কেমন হতো পৃথিবীর ভবিষ্যৎ

    ডাইনোসর বিলুপ্ত না হলে কেমন হতো পৃথিবীর ভবিষ্যৎ

  • মুরগির মাংসে শনাক্ত ইশেরিশিয়া আলবার্টিঃ  অজান্তেই বাড়ছে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের ঝুঁকি

    মুরগির মাংসে শনাক্ত ইশেরিশিয়া আলবার্টিঃ অজান্তেই বাড়ছে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের ঝুঁকি

  • আদতেই কি ফিরে এসেছে ডায়ার নেকড়ে?

    আদতেই কি ফিরে এসেছে ডায়ার নেকড়ে?

  • ভুল নিদানে সন্তান হত্যার দায়ঃ একটি করুণ কেস স্টাডি

    ভুল নিদানে সন্তান হত্যার দায়ঃ একটি করুণ কেস স্টাডি

  • কমোডো ড্রাগন: উপকথার ড্রাগনদের পৃথিবীতে বিচরণ!

    কমোডো ড্রাগন: উপকথার ড্রাগনদের পৃথিবীতে বিচরণ!


নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান? হোস্টিং ও ডোমেইন কেনার জন্য Hostinger ব্যবহার করুন ৭৫% পর্যন্ত ছাড়ে।

আলোচনা

Responses

  1. সুন্দর একটা পোস্টের জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।।

    1. Antifungal Sharif Raihan Avatar
      Antifungal Sharif Raihan

      ধন্যবাদ।

  2. আপনার লেখার ধরণটা আমার ভালো লেগেছে। গল্পের ছলে ঘটনা বলে বলে বিজ্ঞান সম্পর্কে জানতে সবসময়েই ভালো লাগে। স্ট্যাফ. অরিয়াসের বৈজ্ঞানিক নামটা কিন্তু ইটালিক হবে। আর ছবিগুলোতে বলে দিলে ভালো হয় যে কে আসলে কোন বিজ্ঞানী। আগামীতে কোন লেখা পাচ্ছি আপনার? ভালো থাকুন।

    1. Antifungal Sharif Raihan Avatar
      Antifungal Sharif Raihan

      ধন্যবাদ আরাফাত ভাই, ভুলগুলোর ব্যাপারে সামনে সাবধান থাকব……মজা করে কিছু লিখতে পারব মনে হলেই লিখব সামনে……ভাল থাকবেন আপনিও

Leave a Reply to শাহেদCancel reply