ক্যান্সার শব্দটি শুনলেই এর ভিতরটা কেমন যেন আঁতকে উঠে। কেননা ক্যান্সার হলো পৃথিবীর অন্যতম প্রধান মরণব্যধী। কোন কারণে আমাদের দেহে স্বাভাবিক কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে গেলেই ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়। কোন নির্দিষ্ট একটা জায়গায় ক্যান্সার হওয়ার পর তা ধীরে ধীরে দেহের অন্যত্র ছড়িয়ে পরে। ২০১৫ সাল নাগাদ প্রায় ৯০.৫ মিলিয়ন মানুষ ক্যান্সার রোগে ভোগছে। প্রতিবছর প্রায় ১৪.১ মিলিয়ন মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং ক্যান্সারের ফলে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৮.৮ মিলিয়ন। ২০১২ সালে প্রায় ১,৬৫,০০০ অনুর্ধ্ব ১৫ বছর বয়সি শিশুর ক্যান্সার রোগ ধরা পরে। মানবদেহে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা উলেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়।
কোন রোগীর ক্যান্সার হয়েছে কি না এবং সেটি কী ধরনের ক্যান্সার, এটি বোঝার জন্য প্রথমে রোগীর দেহ থেকে নমুনা টিস্যুর বায়োপসি করে ডিএনএ সংগ্রহ করে তারপর পরীক্ষা করে দেখতে হয়। পুরো পদ্ধতিটি অনেক জটিল, অসম্ভব ব্যয়বহুল এবং বেশ সময়সাপেক্ষ। বেশির ভাগ ক্যান্সারের ক্ষেত্রে আগে বোঝা যাবে এমন কোন টেস্ট নেই। তাই অনেক ক্ষেত্রে রোগীর ক্যান্সার ধরা পরে এমন পর্যায়ে যখন তার মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত। প্রায় ১০ টি ক্যান্সারঘটিত মৃত্যুর মাঝে ৯টির ক্ষেত্রেই দেখা যায় ক্যান্সার ধরা পরেছে অনেক বিলম্বে। ক্যান্সার দেহের যেকোন অঙ্গে হতে পারে এবং একেক অঙ্গের ক্যান্সার একেক রকম। এজন্য বর্তমানে ভিন্ন ভিন্ন ক্যান্সারে ভিন্ন ভিন্ন টেস্ট করানো হয়। এসকল সমস্যা সমাধানের জন্য বিজ্ঞানীরা এতদিন এমন একটি সার্বজনীন বায়োমার্কার সন্ধান করছিলেন যা সকল ক্যান্সারের কমন (সাধারণ) বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করবে এবং সেটি রক্ত, মুখের লালা, মূত্রের মত শরীরের তরল পদার্থে পাওয়া যাবে।

কিভাবে কাজ করে ১০ মিনিটের এ টেস্ট?
মানবদেহের সকল কোষে একই ডিএনএ বিদ্যমান। কিন্তু ক্যান্সার সৃষ্টি হলে কোষের ডিএনএ তে উল্লখযোগ্য পরিবর্তন (এপিজেনেটিক) লক্ষ করা যায়। মূলত এই পরিবর্তন আসে ডিএনএ তে বিদ্যমান মিথাইল গ্রুপের বিন্যাসে। আমরা আগেই জেনেছি যে জিনের বহিঃপ্রকাশ নিয়ন্ত্রণে এই মিথাইল গ্রুপ একটি গুরুত্বপূর্ণ এপিজেনেটিক ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। সাধারণ কোষের ডিএনএ-তে থাকা মিথাইল গ্রুপ বিন্দু বিন্দু এক ধরনের প্যাটার্ন তৈরি সুসজ্জিত অবস্থায় থাকে। কিন্তু যেসব কোষে ক্যান্সার হয়েছে, সেসব কোষের ডিএনএ-তে বেশিরভাগ অংশ জুড়ে গুচ্ছবদ্ধ মিথাইল গ্রুপ দেখা যায়, স্বাভাবিক কোষের মত ক্রমিক সাজসজ্জা মেনে চলে না। ক্যান্সার কোষের ডিএনএ এর এই বৈশিষ্ট্যকে মিথাইলস্কেপ বলে। বিজ্ঞানীরা এই মিথাইলস্কেপকে বায়োমার্কার হিসেবে ব্যবহার করলেন। কোষের ডিএনএ তে মিথাইলস্কেপ আছে কিনা জানতে পারলেই উনারা বলতে পারবেন কোষটি ক্যান্সার আক্রান্ত কিনা। তরল দ্রবণে সুস্থ কোষের ডিএনএ অধিক জমাট বাঁধলেও ক্যান্সার কোষের ডিএনএ জমাট বাঁধে না। এই জামাট বাঁধা অবস্থা নির্দেশনের জন্য গবেষকরা দ্রবণে স্বর্ণের ন্যানোপার্টিক্যাল ব্যবহার করেন। সুস্থ কোষের ডিএনএ সহ দ্রবণে স্বর্ণের ন্যানোপার্টিক্যাল মেশানোর পর লবণ যোগ করলে দ্রবণ গোলাপী থেকে নীল রঙ ধারণ করে কিন্তু ক্যান্সার কোষের ডিএনএ ও স্বর্ণ মেশানো দ্রবণে লবণ যোগ করলে দ্রবণের রঙে কোন পরিবর্তন হয় না। এই পদ্ধতির মাধ্যমে গবেষকরা কোন জটিল বা ব্যবয়বহুল পদ্ধতি ছাড়াই মাত্র কয়েক মিনিটে রোগীর যেকোণ ডিএনএ নমুনা ত্থেকে ক্যান্সারের উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারেন।
nature.com
উত্তর জানান