২০২৫ এর জানুয়ারিতে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. সৈয়দ উদ্দিন একটি বিজ্ঞান বক্তৃতা দেবেন। রেজিস্ট্রেশন করে ফেলুন এই লিঙ্ক থেকে: https://cassa.site/event/colloquium-3/

তথাকথিত “জাঙ্ক-ডিএনএ” অনুকল্প কি বাতিলের পথে?

লেখাটি , , বিভাগে প্রকাশিত

মানব জিনোম সিকোয়েন্সিং এর পর, ২০০০’র দশকে, আমাদের ডিএনএ-র অর্ধেকেরও বেশিকে ধরে নেয়া হতো অপ্রয়োজনীয়। বলা হতো এগুলো বিবর্তনের “বাতিল মাল”, নষ্ট হয়ে যাওয়া “ভাঙা-জিন”, জিনোমের কারাগারে আটকে পড়া ভাইরাসের ডিএনএ-ফসিল যেগুলোর প্রকাশ “চুপ” করে দেয়া হয়েছে। ভাবা হতো, এসব বাতিল ডিএনএ জীবের কোন প্রয়োজনে আসে না, বিবর্তনের সাথে সম্পর্কহীন।

তব গত দশকে অনেকগুলো গবেষণা একে একে দেখাচ্ছে যে এসব “বাতিল ডিএনএ”-র একটি অংশ একদম অকেজো নয়। আমাদের সম্পুর্ণ জিনোমের তুলনায় জিনের পরিমাণ খুবই কম, মাত্র ২ শতাংশ, যারা বিভিন্ন প্রোটিন তৈরি করতে পারে। কিছু তথাকথিত ‘অকেজো’ ডিএনএ বিভিন্ন জিনের প্রকাশ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে বলে জানা যাচ্ছে। তবে এসব ডিএনএ নিয়ন্ত্রক-অনুক্রম দেহের জরুরী নাকি ক্ষতিকর ভূমিকা পালন করে; নাকি আকস্মিকভাবে এগুলো জিনোমের অংশ হিসেবে যুক্ত হয়েছে, যে বিভিন্ন জীব এদের বাদ দিয়ে বেঁচে থাকতে পারে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিতর্ক এখনো চলমান। 

সেই ২০১৩ সালে ENCODE প্রজেক্টের গবেষণা থেকে নন-কোডিং ডিএনএ যে অকেজো নয় বরং গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে তা নিয়ে আলোড়ন ও বিতর্ক তৈরি হয় (পড়ুন: নন-কোডিং ডিএনএ রহস্য / খান ওসমান)। এর পরে নন-কোডিং ডিএনএ নিয়ে আরো গবেষণা হয়েছে। আজকের এই লেখাতে আমরা “জাঙ্ক ডিএনএ” অনুকল্প সমর্থন করে না এমন বেশ কিছু নতুন গবেষণার কথা জানবো।

জাঙ্ক-ডিএনএ যখন স্তন্যপায়ী-বিকাশের জন্য অপরিহার্য

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কেলি ও ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক জাঙ্ক ডিএনএ-র একটি অন্যতম উপাদান ট্রান্সপোজন নিয়ে কাজ করেছেন। ট্রান্সপোজন মূলত “স্বার্থপর” ডিএনএ অনুক্রম যারা জিনোমের বিভিন্ন অংশে নিজেদের সংযুক্ত করে। ট্রান্সপোজনের একটা নির্দিষ্ট পরিবারই রয়েছে বিভিন্ন প্রাচীন ভাইরাসের ডিএনএ থেকে উৎপত্তি হওয়া। এইসব ভাইরাস যখন পোষককে আক্রমণ করেছিলো, তখন তাদের কারো কারো ডিএনএ পোষকের জিনোমে সংযুক্ত হয়ে যায়। পোষক ও ভাইরাস জিনোমের দীর্ঘ টানাপোড়নে একসময় এই “বিদেশী” অনুক্রমগুলো ট্রান্সপোজনে পরিণত হয়। এই গবেষণা বলছে, ভাইরাস থেকে উৎপত্তি হওয়া এইসব ট্রান্সপোজন ইঁদুরের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। যখন গবেষকরা ইঁদুরের জিনোম থেকে এই ট্রান্সপোজনগুলো মুছে ফেলেন, তখন তাদের অর্ধেকেরও বেশি ছানা জন্মের আগেই মারা যায়।

স্তন্যপায়ী প্রাণীদের জন্যেও “বাতিল” ডিএনএ-র উপস্থিতি জীবন-মৃত্যুর বিষয় হতে পারে, তার সর্বপ্রথম এই গবেষণাতে দেখা যায়।

মানুষের জিনোমে প্রোটিন কোডিং জিনের পরিমাণ মাত্র ১.৫-২% এর মতো। বাকি সবই নন-কোডিং ডিএনএ।

এই গবেষণার অন্যতম বিজ্ঞানী লিন হে-র মতে, বিভিন্ন সময়ে ভাইরাস ডিএনএ আমাদের জিনোমে সংযুক্ত হয়ে পোষক জিনের নিয়ন্ত্রক হিসেবে অভিযোজিত হয়ে নতুন ভূমিকা পালন করে। কিন্তু বিবর্তনের অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে এসব অনুক্রমের ভূমিকা প্রায়ই উপেক্ষা করা হয়। তিনি বলেন:

ইঁদুরের নিষিক্ত ভ্রুণের বেড়ে ওঠার প্রথম দিকে বিভিন্ন কোষের বিস্তার ও মায়ের জরায়ুতে ভ্রুণের রোপন ঠিক কখন হবে, তা নিয়ন্ত্রণ করে এই ট্রান্সপোজনটি।  গবেষকদল মানুষ সহ  অন্য সাতটি স্তন্যপায়ীর মধ্যেও দেখেছেন ভাইরাস থেকে আসা এই নিয়ন্ত্রক-অনুক্রম একই ধরনের কাজের সাথে যুক্ত। ধারণা করা হচ্ছে, আদিম ভাইরাসের “বুনো” অনুক্রমকে সকল স্তন্যপায়ীর ভ্রুণের বেড়ে ওঠার একটা খুব-গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য অনেক আগেই জিনোমে “পোষ মানানো” হয়েছে।

ট্রান্সপোজন মুছে ফেললে ইঁদুর-ভ্রুণের বিকাশে দেরি হয়। একই জরায়ুতে স্বাভাবিক ভ্রুণের (WT বা ওয়াইল্ড টাইপ) চেয়ে ট্রান্সপোজন মিউট্যান্ট (Cdk2ap1ΔMT2B2/ ΔMT2B2) ছোট আকার দেখা যাচ্ছে। সূত্র মূল গবেষণাপত্র।

ইঁদুর ও মানুষের জিনোমের মাঝে প্রোটিন-লেখা জিনের ৯৯% মিল — মানুষ ও ইঁদুর খুবই সাদৃশ্যপূর্ণ। তাহলে মানুষ ও ইঁদুরের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? অন্যতম বড় পার্থক্য হলো জিনের নিয়ন্ত্রণে। মানুষ ও ইঁদুরে একই জিন থাকলেও সেগুলো ভিন্ন ভিন্ন ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। জিন নিয়ন্ত্রণের এসব বৈচিত্র্য তৈরির ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে ট্রান্সপোজন, যা আমাদের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে পার্থক্য কোন জায়গায় তা বোঝার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।

এ গবেষণার আরেক বিজ্ঞানী, ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের প্রফেসর টিং ওয়াঙ সহমত প্রকাশ করে বলেন,

“এই গবেষণা দেখায় যে বিবর্তন কতোটা অপ্রত্যাশিত পথে কাজ করতে পারে। বহুদিন ধরে ভাবা হতো ট্রান্সপোজন মূলত অপ্রয়োজনীয় জেনেটিক বস্তু, কিন্তু এগুলো তো স্তন্যপায়ীদের জিনোমের একটা বড় অংশ ধরে আছে। অনেকগুলো গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে ট্রান্সপোজন মানব জিনোম বিবর্তনের একটা চালিকাশক্তি। তবে আমার জানামতে আমাদের গবেষণাতেই প্রথম দেখা গেল যে জাঙ্ক-ডিএনএর এক অংশ মুছে ফেলার কারণে প্রাণঘাতী ফেনোটাইপ তৈরি হয়, যা দেখায় যে নির্দিষ্ট ট্রান্সপোজন অপরিহার্য হতে পারে।”

উল্লেখ্য যে, মানুষের প্রায় ৫০% গর্ভপাত নির্ণয় করা হয় না বা কোন জেনেটিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। এই গবেষণার সাথে যুক্ত পোস্টডক্টোরাল ফেলো এন্ড্রু মডজেলেস্কি মনে করেন, এসব গর্ভপাতের সাথে ট্রান্সপোজনের কোন সম্পর্ক আছে কি না তা খুঁজে দেখা যেতে পারে।

প্রজাতির উদ্ভব: জাঙ্ক-ডিএনএ সংস্করণ

দ্বিতীয় যে গবেষণার কথা উল্লেখ করবো, সেটা একটি মাত্র গবেষণাপত্রের ভিত্তিতে নয়। ম্যাসাচুসেটেস ইউনিভার্সিটির হোয়াইটহেড ইন্সটিটিউটের ইউকিকো ইয়ামাশাইতার নের্তৃত্বে এক গবেষকদল বেশ কয়েকবছর ধরেই ধারাবাহিক গবেষণাতপত্র প্রকাশ করে যাচ্ছেন এই বিষয়ে। তারা গবেষণা করেন স্যাটেলাইট ডিএনএ নিয়ে। তাদের ধারাবাহিক গবেষণায় উঠে এসেছে যে স্যাটেলাইট ডিএনএ-ও জাঙ্ক বা বাতিল ডিএনএ নয়, বরং তারা কোষে জরুরী ভূমিকা পালন করে। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে স্যাটেলাইট ডিএনএ কোষীয় প্রোটিনের সাথে যুগ্মভাবে কাজ করে কোষের সব ক্রোমোজমকে একটি নিউক্লিয়াসের মধ্যে একসাথে রাখার জন্য।

আমি স্যাটেলাইট ডিএনএ-কে মজা করে “তোতলা-ডিএনএ” বলি। কারণ স্যাটেলাইট ডিএনএ হলো ছোট ডিএনএ অনুক্রম যাদের ধারাবাহিকভাবে পুনরাবৃত্তি হতে থাকে। ইয়ামাশিতার দল সাত-আট বছর আগে যখন স্যাটেলাইট ডিএনএ নিয়ে গবেষণা করা শুরু করেন, তখন তাদের বিবর্তন নিয়ে কোন আগ্রহই ছিলো না। কিন্তু বিজ্ঞানে গবেষণার প্রকৃতিই এমন, যে একটা বিষয় নিয়ে গবেষণা কোন পূর্বধারণা ছাড়া শুরু করলেও এমন একটা সূত্র পাওয়া যায় যা একদমই অপ্রত্যাশিত। সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণাপত্রে তার গবেষকদল প্রস্তাব করেছেন যে, স্যাটেলাইট ডিএনএ সম্ভবত এমনভাবে ক্রোমোজম সংগঠিত করে যে আলাদা প্রজাতির মধ্যে প্রজননের ফলে টেকসই সন্তান অসম্ভব।

চিত্র: স্যাটেলাইট ডিএনএ হলো একই অনুক্রমের বারবার ও পরপর পুনরাবৃত্তি।

বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে স্যাটেলাইট ডিএনএ-র পরিমাণ অসম। এমনকি প্রোটিন কোডিং জিনের মাঝে ৯৮-৯৯% মিল থাকলেও জাংক ডিএনএ-র অংশ ভীষণ আলাদা হতে পারে। জিনোমের সবচেয়ে দ্রুত বিবর্তিত হওয়া অংশ হলো “জাংক”-ডিএনএ। কিন্তু কিছু দিন আগেও ভাবা হতো, “যেহেতু এগুলো জাঙ্ক, তোমার-আমার জাঙ্ক আলাদা হলে কী এমন এসে যায়?” কিন্তু গবেষনা অগ্রগতির সাথে সাথে ইয়ামাশিতা ও তার গবেষকদল সূত্র পেতে শুরু করেন যে এসব পুন‍ঃক্রম হওয়া “বাতিল” ডিএনএ সম্ভবত নতুন প্রজাতী উদ্ভবে (speciation) ভূমিকা রাখতে পারে।

ফলের মাছি ড্রসোফিলা মেলানোগেস্টার একটা নির্দিষ্ট স্যাটেলাইট ডিএনএ যুক্ত হয় এমন একটা প্রোটিন হলো Prod। বিজ্ঞানীরা যখন এই Prod প্রোটিনটা মুছে ফেললেন, দেখা গেল মাছির ক্রোমোজম নিউক্লিয়াসের বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মাইক্রোনিউক্লি নামের ছোট ফুটকির মতো একটা গঠনে। আরো দেখা গেল যে এর ফলে মাছিও মারা পড়ছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে দেখলেন যে এই নির্দিষ্ট স্যাটেলাইট অনুক্রমটি ড্রসোফিলা মেলানোগেস্টারের নিকটতম আত্মীয়-প্রজাতীর মধ্যে অনুপস্থিত। এই পর্যবেক্ষণ তাদেরকে প্রথম রহস্যের সূত্র দিলো।

যদি স্যাটেলাইট ডিএনএ-র একটা ক্ষুদ্র অংশ মাছির এক প্রজাতীর বেঁচে থাকার জন্য জন্য প্রয়োজনীয় হলেও অন্য প্রজাতীতে অনুপস্থিত হয়ে থাকে, তাহলে হয়তো এই দুই প্রজাতি একই কাজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন স্যাটেলাইট ডিএনএ নিয়ৈ বিবর্তিত হয়েছে। তখন ইয়অমাশিতা ও গবেষকদলের সন্দেহ হলো যে দুইটি প্রজাতির মধ্যে প্রজননের অক্ষমতার পেছনে হয়তো স্যাটেলাইট ডিএনএ-র এই পার্থক্য একটা কারণ। 

স্যাটেলাইট ডিএনএ স্বাভাবিক মাছির ক্রোমোজম একত্রিত রাখে। কিন্তু এটা না থাকলে ক্রোমোজম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যায় ও মাইক্রোনিউক্লিয়াস নামক গঠন দেখা যায়। ছবিসূত্র: মূল গবেষণাপত্র।

মাছির দুই প্রজাতির ডিএনএ স্যাটেলাইট অনুক্রমে পার্থক্য ঠিকমতো বোঝার জন্য প্রথমেই গবেষকরা ফলের মাছির জাতিজনিক বৃক্ষের (ফাইলোজেনেটিক ট্রি) শরণাপন্ন হলেন। তারা ফলের মাছি দুইটি ঘনিষ্ঠ-আত্মীয় বের করলেন, ড্রসোফিলা মেলানোগেস্টার এবং ড্রসোফিলা সিমুলানস। এই দুইটি প্রজাতি দুই থেকে তিন মিলিয়ন বছর পূর্বে আলাদা হয়ে গিয়েছিলো।

এই দুইটি প্রজাতির মধ্যে কৃত্রিমভাবে প্রজনন করা যায়। কিন্তু সাধারণত সে বংশধররা হয় মারা যায় অথবা তারা নতুন প্রজননে অক্ষম হয়ে থাকে। যখন তারা এই দুই প্রজাতির সংকর (হাইব্রিড) বংশধরের দেহকলা পরীক্ষা করলেন, তখন খেয়াল করলেন এদের ফেনোটাইপ একদম ঐ আগে উল্লিখিত স্যাটেলাইট সিকোয়েন্স মুছে ফেলা মাছির কোষের মতো। এদের ক্রোমোজমও নিউক্লিয়াসের বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

মজার ব্যপার হলো, বিজ্ঞানীরা দুই প্রজাতী মাছি-পিতামাতার নির্দিষ্ট কিছু জিনে মিউটেশন ঘটিয়ে স্বাস্থ্যবান হাইব্রিড মাছির বংশধর তৈরি করতে পারলেন। এসব জিনের নাম দেয়া হলো হাইব্রিড ইনকম্প্যাটিবিলিটি জিন। দেখা গেল এই জিনগুলো স্যাটেলাইট ডিএনএ-র ওখানেই অবস্থিত। আরো গবেষণায় দেখা গেলো এই জিনগুলো হাইব্রিডদের ক্রোমোজম প্যাকেজ করার প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত। 

তাদের গবেষণা থেকে বোঝা গেল, যেহেতু স্যাটেলাইট ডিএনএ-তে বেশ দ্রুত মিউটেশন হয়, স্যাটেলাইট ডিএনএতে যেসব প্রোটিন যুক্ত হয়ে ক্রোমোজমকে একত্রিত রাখবে সে প্রোটিনগুলোকেও দ্রুত বিবর্তিত হতে হবে। ফলশ্রুতিতে, উভয় প্রজাতীই নিজস্ব “কৌশল” তৈরি করে স্যাটেলাইট ডিএনএ-র সাথে কাজ করার জন্য। যখন দুইটি প্রজাতির একই কাজের কৌশল ভিন্ন হয়ে যায়, তখন উদ্ভব হয় সংঘাত, যা কি না ক্রোমোজমকে নিউক্লিয়াসের বাইরে ছড়িয়ে ফেলে।

জাঙ্ক ডিএনএ কি মানব মস্তিষ্ককে অনন্য বানায়?

শিম্পাঞ্জী বিবর্তনীয় দিক দিয়ে মানুষের সবচেয়ে কাছের আত্মীয় (পড়ুন আত্মীয়তার প্রমাণাদি / মাহাথির তুষার) । মানুষ ও শিম্পাঞ্জীর ডিএনএ-র মাঝে মিল ৯৮.৮%। এত মিল থাকা সত্ত্বেও মানুষ ও শিম্পাঞ্জির মস্তিষ্কে পার্থক্য দৃষ্টকটু। আমাদের মস্তিষ্ক শরীরের তুলনায় যতটুকু প্রয়োজন তার চাইতে সাতগুণ বেশি বড়, যেখানে শিম্পাঞ্জীর মস্তিষ্ক শরীরের প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র দুইগুণ বড় (পড়ুন আমরা কীভাবে অন্যদের থেকে বড় মস্তিষ্ক পেলাম / সুজয় কুমার দাস)।

তৃতীয় গবেষণাটা হয়েছে সুইডেনে। লান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ঠিক কোন ডিএনএ মানুষ আর শিম্পাঞ্জির মস্তিষ্ককে আলাদা বানায় তা খুঁজতে দেখেন উত্তর নিহিত আছে ডিএনএ-র জিন-বিহীন অংশে।

তবে তারা জ্যান্ত মানুষ বা শিম্পাঞ্জী নিয়ে কাজ করেন না। বরং তারা  গবেষণা করেন স্টেম সেল নিয়ে। স্টেম কোষ হলো বিশেষ ধরনের কোষ যেখান থেকে শরীরে অন্য সকল বিশেষায়িত কোষ তৈরি হয় (পড়ুন আগামীর চিকিৎসার অস্ত্র: স্টেম সেল / এফ, এম, আশিক মাহমুদ )। এই স্টেমকোষগুলো মূলত ত্বকের কোষ থেকে রিপ্রোগ্রাম করে বানানো। তারপর এদেরকে ব্রেন কোষ হিসেবে বিকশিত করা হয় এবং এই প্রক্রিয়াটা পর্যবেক্ষণ করা হয়। এই গবেষকদলের নেতৃত্বে আছেন প্রফেসর জ্যাকবসন। তিনি অন্যান্য সহকর্মীদের নিয়ে স্টেম কোষ থেকে মানুষ ও শিম্পাঞ্জি মস্তিষ্কের কোষ তৈরি করে এদের মধ্যে পার্থক্য খোঁজা শুরু করেন।

দেখা গেল, মানুষ ও শিম্পাঞ্জী তাদের ডিএনএ-র একটা নির্দিষ্ট অংশ আলাদা প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করে। এই অংশটা আবার মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই অংশটা হলো ডিএনএ-র গাঠনিক প্রকরণ (স্ট্রাকচারাল ভ্যারিয়েন্ট) যা মূলত বেশ লম্বা পুনরাবৃত্তিমূলক ডিএনএ। এটাকে পূর্বে “বাতিল ডিএনএ” বলে গণ্য করা হতো, ভাবা হতো এর কোন কাজ নেই। 

“আগে গবেষকরা ডিএনএর প্রোটিন তৈরি করা জিন অংশ নিয়ে গবেষণা করতেন যেটা আমাদের মোট ডিএনএ-র মাত্র ২%। তারা প্রোটিনের মাঝে পার্থক্য খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাতেন। কিন্তু নতুন গবেষণা বলছে যে পার্থক্য নিহিত আছে প্রোটিন কোডিং করে না এমন জিনের মধ্যে”।

প্রফেসর জ্যাকবসন, লান্ড বিশ্ববিদ্যালয়, সুইডেন

এই গবেষণা অনুসারে বোঝা যাচ্ছে যে মানুষের মস্তিষ্কের বিবর্তন ও জেনেটিক প্রক্রিয়া সম্ভবত আগে যা ভাবা হয়েছিলো তার চেয়ে অনেক বেশি জটিল। এই গবেষণা বলছে মস্তিষ্ক গঠন প্রক্রিয়ার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ ৯৮% “বাতিল” ডিএনএ দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। 

উপসংহার

জিনোম বায়োলজির (জিনোমের জীববিজ্ঞান) জন্য বর্তমান সময়টা খুবই উত্তেজনাময়। নতুন সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তির মাধ্যমে এখন দীর্ঘ রিড সিকোয়েন্সিং করে পূর্ণাঙ্গ জিনোম অনুক্রম সহজেই তৈরি করা যাচ্ছে। পাশাপাশি সিকোয়েন্সিং এর খরচ কমার সাথে সাথে অনেকগুলো জিনোম সিকোয়েন্সিং করে তুলনা করা তেমন কঠিন কিছু না। এসব প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে আমরা জিনোমের জীববিজ্ঞান নিয়ে এমন সব প্রশ্ন করতে পারছি, যেটা আগে কখনো সম্ভব ছিলো না (পড়ুন: পৃথিবীর সব জিনোম-তথ্য নিয়ে আমরা যা করতে পারি / আরাফাত রহমান)। জিনোম জীববিজ্ঞানের সাম্প্রতিক গবেষণায় তথাকথিত “জাঙ্ক ডিএনএ” এর কাজ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। আগামীর গবেষণা থেকে আরো তথ্যপ্রমাণ পেলে একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া সম্ভব হবে। 

গবেষণাপ্রবন্ধের তালিকা:

লেখাটি 584-বার পড়া হয়েছে।


নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান? হোস্টিং ও ডোমেইন কেনার জন্য Hostinger ব্যবহার করুন ৭৫% পর্যন্ত ছাড়ে।

আলোচনা

Responses

  1. একটা কাজ করলে ভালো করতেন, শুরুতেই junk DNA বলতে কি বোঝেন, সেটা ব্যাখ্যা করে নিতেন। আবর্জনা DNA আর প্রোটিন গঠন সঙ্কেত বহন না করা DNA এক নয়। জিনোমের যে যে অংশগুলি প্রোটিন তৈরির সংকেত বহন করেনা, সেই অংশগুলিকে কি আমরা আবর্জনা ডিএনএ বলবো? না। DNA-এর যে সমস্ত অংশগুলি জিন নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে তারা অনেক সময়ই এই প্রোটিন তৈরির সংকেত বহন না করা অংশগুলির মধ্যেই থাকে। অর্থাৎ ব্যাপারটা এরকম যে জিনোমের কিছু ডিএনএ প্রোটিন তৈরি সংকেত বহন করে, কিছু অংশ এই জিনগুলি কে নিয়ন্ত্রণ করে, আর কিছু অংশ আবর্জনা। আর এক প্রজাতি থেকে আরেক প্রজাতির ক্ষেত্রে এই শেষোক্ত আবর্জনা DNA-এর পরিমাণে বিপুল তারতম্য দেখতে পাওয়া যায়।

    আর ঠিক এইকারণেই কোন জীব খুব জটিল হলেও তার জিনোমের আকার যে অন্য সরল জীবের থেকে বেশী হবে সেটা নয়। আর এটাই C-Value Paradox, আর এই paradox এর সমাধান হোল junk DNA. অ্যামিবার জিনোম মানুষের থেকে প্রায় একশ গুণ বড়। যদি Junk DNA নাই থাকবে তাহলে এই বিশাল জিনোমের বাকি অংশগুলো কি কাজ করে?

    এবার দেখুন, “যখন গবেষকরা ইঁদুরের জিনোম থেকে এই ট্রান্সপোজনগুলো মুছে ফেলেন, তখন তাদের অর্ধেকেরও বেশি ছানা জন্মের আগেই মারা যায়।” এর কারণটা কি? এর একটা কারণ হোল মিউটেশন লোড। জাঙ্ক ডিএনএ খানিকটা shock absorber এর মতন কাজ করে।

    মানুষের মধ্যে যে হারে মিউটেশন ঘটে, তার তুলনায় মানুষের জিনোম অনেক বড়। আর এইজন্য প্রতি প্রজন্মে ক্ষতিকর মিউটেশনের সংখ্যা অনেক কম। যদি পুরো জিনোমের মধ্যে অপরিহার্য তথ্য সংরক্ষিত থাকতো তাহলে তাহলে প্রতি প্রজন্মে অনেক বেশী ক্ষতিকারক মিউটেশন দেখা যেত। অর্থাৎ সমস্ত জিনোম selection pressure বা নির্বাচনী চাপের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। মোটামুটি গণনা করে দেখা যায়, মানুষের জিনোমের মাত্র 1-20% জিন অপরিহার্য তথ্য বহন করে, বাকি অংশ নিরপেক্ষভাবে কোন selection pressure বা প্রাকৃতিক নির্বাচনী চাপ ছাড়াই বিবর্তিত হয়।

    এবার আসি ENCODE এর কথায়। “Biochemical activities” এবং “biological functions”-এর মধ্যে তফাত আছে। তারা কিভাবে এই দুটি বিষয় ব্যবহার করে এখান থেকে দেখুন http://ewanbirney.com/2012/09/encode-my-own-thoughts.html, এটি Ewan Birney-এর একটি ব্লগ।

    এনকোড 2 (ENCODE 2) ফলাফল 2012 সালে প্রকাশিত হয়। সেখানে দাবী করা হয় মানুষের জিনোমের 80% পর্যন্ত কার্যকর। এবার https://www.nature.com/articles/s41586-020-2449-8 এখানে Perspectives on ENCODE নিবন্ধটি দেখুন, সেখানেও আগের দাবীর সম্পর্কে কিছু বলা নেই। সেখানে যা বলা হয়েছে তার সার সংক্ষেপ মোটামুটি এই রকম:

    20,225 প্রোটিনের সঙ্কেত বহনকারী জিন
    37595 এমন জিন যারা প্রোটিন তৈরির সঙ্কেত বহন করে না
    2,157,387 মুক্ত ক্রোমাটিন অঞ্চল
    1,224,154 ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর সংযুক্ত হবার যোগ্য অংশ

    এখানেও দেখুন https://www.nature.com/articles/d41586-020-02139-1
    “Less than 2% of the human genome encodes proteins. A grand challenge for genomic sciences has been mapping the functional elements — the regions that determine the extent to which genes are expressed — in the remaining 98% of our DNA. The Encyclopedia of DNA Elements (ENCODE) project, among other large collaborative efforts, was established in 2003 to create a catalogue of these functional elements and to outline their roles in regulating gene expression. In nine papers in Nature, the ENCODE consortium delivers the third phase of its valuable project.”

    তারা কিন্তু আর junk DNA নিয়ে কোন কথা বলছে না।

    এই জন্য বললাম প্রথমেই junk dna কি সেটা সঞ্জায়িত করলে ভালো করতেন। প্রোটিন তৈরির সঙ্কেত বহন না করা মানের JUNK DNA নয়।

    মোদ্দা কথাটা হোল JUNK DNA is still JUNK… আর DNA র এই অংশ প্রাকৃতিক নির্বাচন নিরপেক্ষ ভাবে বিবর্তিত হয়। মানুষের জিনোমেও এরকম গুচ্ছের selfish DNA বা jumping gene এর দেহাবশেষ বা ফসিল পরিলক্ষিত হয়।

    1. ধন্যবাদ আপনার বিস্তারিত মন্তব্যের জন্য। লিটারেচারে আসলে এখন “জাঙ্ক ডিএনএ” কথাটা ব্যবহার করা হয় না, এটা মূলত শুরুর দিকে ব্যবহৃত হতো। এখন non-functional DNA বা এই জাতীয় পরিভাষা ব্যবহৃত হয়। আপনি এলোমেলো মিউটেশনের যে প্রক্রিয়াটা বললেন, এটাই একমাত্র কাজ না। জিনোম বায়োলজির সাম্প্রতিক অনেকগুলো গবেষণায় বিভিন্ন non-functional DNA এর বিভিন্ন ধরনের কাজ উঠে আসছে, আমি এই লেখাতে মাত্র তিনটি গবেষণার কথা বললাম, ২০২১ সালের। আমাদের ল্যাবের গবেষণা থেকেও একটি বিশেষ ব্যক্টেরিয়ার ট্রান্সপোজন এলিমেন্টের ক্রোমোজম ব্যালান্সিং একটি মডেল প্রস্তাব করা হবে। তথাকথিত জাঙ্ক ডিএনএ এর কাজ নিয়ে গবেষণাগুলো এখনো বিভিন্ন প্রশ্ন নিষ্পত্তি করতে পারে নি, সুতরাং আগে থেকে ‘junk DNA is still junk’ এধরণের সঙ্কীর্ণ মডেল মাথায় রাখা ঠিক হবে বলে আমি মনে করি না। পরিশেষে, কিভাবে জাঙ্ক ডিএনএ ধারণা থেকে সরে এসে বিবর্তনের পরিচালক হিসেবে এদেরকে ভাবা হচ্ছে সেটা জানার জন্য এই রিভিউটা যুক্ত করে দিলাম:

      A Brief History of the Status of Transposable Elements: From Junk DNA to Major Players in Evolution
      https://academic.oup.com/genetics/article/186/4/1085/6063643?login=true

      আবারো ধন্যবাদ সুন্দর আলোচনার জন্য।

  2. Amit Mondal Avatar
    Amit Mondal

    আপনি যে বললেন, “লিটারেচারে আসলে এখন “জাঙ্ক ডিএনএ” কথাটা ব্যবহার করা হয় না, এটা মূলত শুরুর দিকে ব্যবহৃত হতো। এখন non-functional DNA বা এই জাতীয় পরিভাষা ব্যবহৃত হয়।”, এই কথাটার সাথে সম্পূর্ণ একমত। এই জন্য বলেছিলাম যে লেখার শুরুতেই আপনি Junk DNA বলতে কি বঝাচ্ছেন সেই কথাটা যুক্ত করে দিন।

    এবার আসি C value paradox এর গল্পে। এটা তো আপনি নিশ্চয় জানেন যে আমাদের জিনোমের মধ্যে বেশ খানিকটা অংশ এমন যা প্রাকৃতিক নির্বাচনী সংকট ছাড়াই genetic drift এর মাধ্যমে বিবর্তিত হয়। আরেকটা বিষয় তো নিশ্চয় জানেন যে মানুষের জিনোম যে পরিমাণ মিউটেশন লোডের সম্মুখীন হয়, তাতে সকল জিনের যদি কোন biological function (biological activity নয়) থাকতো তাহলে আমাদের মিলিয়ন সংখ্যক অপত্যের জন্ম দিলে সামান্য কিছু অপত্য ভূমিষ্ঠ হতো।

    Carsonella ruddii এর জিনোম সব থেকে ছোট (159,662 base pairs of DNA and 182 protein-coding genes)। Paris japonica এর জিনোম 149 billion base pairs, মানুষের জিনমের 50 গুণ। marbled lungfish এর জিনোম 130 billion base pairs, Amoeba dubia-র জিনোম 670 billion base pairs, যেখানে মানুষের মাত্র 2.9 billion base pairs। যদি non functional DNA (বা junk DNA) নাই থাকবে তাহলে, অন্য ভাষায় জিনোমের সমস্ত অংশের যদি কোন না কোন biological function থাকবে, তাহলে যে এই বিশাল পার্থক্যের কারণ কি?

    আরেকটা কথা class 1 বা class 2 transposons মাত্রেই যে non functional DNA সে কথা কিন্তু আমি বলি নি। Non functional DNA তৈরির ক্ষেত্রে এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনি তো নিশ্চয় জানেন অনেক সময় এই jumping gene গুলি মিউটেশনের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

    আপনার সমস্ত লেখার প্রতিটি কথার সাথে কিন্তু আমার দ্বিমত নেই। সমস্যাটা হোল, আপনার লেখা পড়ে মনে হচ্ছে আপনি বলতে চাইছেন junk dna বলতে সেই অংশগুলি যারা কোন প্রোটিন তৈরির সঙ্কেত বহন করে না। কিন্তু সেটা নয়। আপনি যে সেটা জানেন না সেটা হতে পারে না। কিন্তু আপনার লেখায় সেই কথা উঠে আসে নি।

    কোষ বিভাজনের সময় DNA এর সমস্ত অংশই তো বিভাজিত হয়। এটাও একটা specific biochemical activity (biological function নয়) তো বটেই। আর সেটা তো জানাই সেই কবে থেকে। regulator gene সম্পর্কে জানতে চাইলে ২০০৫ সালের এক খানা medical biochemistry বই (যেখানে আপনি একজন বিজ্ঞানী হয়ে যত বিস্তারিত পড়েন, তত বিস্তারিত পড়ানো হয় না) খুলে দেখুন, সেখানেও পেয়ে যাবেন এই কথা। বলার অর্থ হোল DNA এর সমস্ত অংশই যে প্রোটিন তৈরির সঙ্কেত বহন করে না, তেমনি DNA এর বেশ কিছু অংশ যে বিভিন্ন কাজের নিয়ন্ত্রক সেই কথা অনেকদিন থেকেই জানা। আর এই অংশগুলির মিউটেশন হলে কি কি ভাবে cancer cell তৈরি হয় সে নিয়েও তো অনেক গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে inactive sequence mutation এর ফলে তারা cell differentiation এ বাধা দেয় ও cancer cell তৈরি হয়। এটাও যে খুব নতুন কথা টা নয়। Medical college এ পড়ার সময় এই কথা বহু জায়গায় পেয়ে যাবেন। AIIMS বা PGI Chandigarh এর entrance exam এ এই গুলো catch question বলতে পারে।

    এবার আপনি যে লেখাটি দিলেন সেখানেই দেখুন লেখা, “Some sequences will be found to play major roles while others will undoubtedly be found to be only selfish.” এটা অবশ্যই সঠিক কথা। কিছু অংশের কাজ হয়তো আমরা খুঁজে পাবো আর বেশ কিছু অংশ non functional বা অকার্যকর।

    এবার দেখুন পরের অংশ, “Such research is likely to have a major impact in the field of cancer, some of the phenomenology of which involves both epigenetic processes and TE reactivation”, এখানে কথাটা বলছে reactivation, কারণ তারা inactive বা non functional থাকে।

    একথা তো আপনি একমত হবেনই যে, জিনোমের বৈচিত্র্যে TE এর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক TE এর যে কোন কাজ থাকবে না, এমন তো হতে পারে না। বেশ কিছু অংশের যে biological function থাকবেই সে বশয়ে তো সন্দেহ নেই, নইলে প্রজাতির মধ্যে বৈচিত্র্য হবে কেন? কিন্তু বেশ কিছু অংশ আছে যারা মিউটেশনের কারণে biologically non-functional, আর সেটা হওয়াটাই স্বাভাবিক।

    যাইহোক, আপনার সাথে খুব বেশী জায়গায় দ্বিমত নই। কিন্তু যদি JUNK DNA না থাকে, অর্থাৎ আদর্শ কোষের প্রায় সমস্ত DNA-এর যদি কোন না কোন biological function থাকে (যেমন gene regulation, protein coding, chromosome structure maintenance etc.) তাহলে, পেঁয়াজের মানুষের থেকে প্রায় পাঁচগুণ base pair (haploid genome size of roughly 16 billion base pairs) এর দরকার পড়ে কেন? pufferfish আর lungfish এর জিনোমের আকার প্রায় 350 গুণ পার্থক্য কেন? আবার একই প্রজাতির বিভিন্ন সদস্যের জীবে জিনোমের আকার ভিন্ন কেন?

    আপনি যদিও এই বিষয়ে গবেষণা করছেন, আর তাই আপনি এই বিষয়ে আমার থেকে অবশ্যই অনেক বেশী জ্ঞান রাখেন। কিন্তু তবু এটা আমি কিছুতেই মানতে পারলাম না ““জাঙ্ক-ডিএনএ” অনুকল্প বাতিলের পথে”।

    1. আপনার বক্তব্য বুঝতে পেরেছি। ডিএনএ-র কিছু অংশ থাকবেই যাদের আসলেই কোন কাজ নেই বা এখনো জাঙ্ক। তারপরেও একটা ‘কিন্তু’ থাকে, কারণ সম্প্রতি De Novo জিন তৈরি হতে দেখা গেছে পূর্বের নন-ফাংশনাল অংশ থেকে, সুতরাং আজকের ‘জাঙ্ক’ আগামীর কো-অপ্ট করা জিন হতে পারে, সেটাও কিন্তু বিবর্তনের অংশ হিসেবেই। এটা ঠিক যে দুইটা কাছের প্রজাতির জিনোমের মধ্যে নন-ফাংশনাল ডিএনএ-র যে পার্থক্য দেখা যায় তা বিশ্ময়কর। আমি লেখাটাতে একটা অনুচ্ছেদ যুক্ত করে দেবো যাতে পরিস্কার হয় যে প্রজাতির একটা বড় সংখ্যক ডিএনএ থাকবেই যেখানে কোন কাজ খুঁজে পাওয়া যায় না। আবারো ধন্যবাদ বিস্তারিত মন্তব্যের জন্য।

Leave a Reply

ই-মেইল নিউজলেটার

বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবর সম্পর্কে আপডেট পেতে চান?

আমরা প্রতি মাসে ইমেইল নিউজলেটার পাঠাবো। পাক্ষিক ভিত্তিতে পাঠানো এই নিউজলেটারে বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবরাখবর থাকবে। এছাড়া বিজ্ঞান ব্লগে কি কি লেখা আসলো, কি কি কর্মযজ্ঞ চলছে, সেটার খবরও থাকবে।







Loading