১৯৯০ সালে হাবল মহাকাশ দূরবীন একটি ছবি ধারন করে,এবং এই ছবিটি ১৯৯৫ সালে প্রকাশ করে।
ছবিতে দেখা যায় আয়োনিত হাইড্রোজেন, সাথে মহাজাগতিক ধুলার বিশাল তিনটি স্তম্ভ মহাকাশের বুকে পিলারের মত দাঁড়িয়ে আছে। এদেরকে বলে evaporating gaseous globules (EGGs).
সেই সাথে আরো দেখা যায় এই পিলারের অভ্যন্তরে নতুন নক্ষত্রের জন্ম হচ্ছে। এই পিলারের নাম দেয়া হয় “The Pillars of Creation” বা “সৃষ্টির স্তম্ভ”।
আসুন দেখা যাক বিস্ময়কর এই বস্তুটি কি?
এটি আসলে M-16 নামের একটি মুক্ত নক্ষত্রস্তবক (Open star cluster), কে ঘিরে থাকা বিশাল একটি নিহারীকা এর নাম ঈগল নিহারীকা।এর অন্য নাম গুলো হচ্ছে স্টার কুইন, NGC-6611 IC-4703.
১৭৪৫ সালে সুইস জ্যোতির্বিদ ফিলিপলোয়েস ডি চেসোক্স M-16 নক্ষত্রস্তবকটি আবিস্কার করেন।কিন্তু তিনি তখন এই স্তবকটির চারিদিক নিহারীকা দ্বারা পরিবেস্টিত দেখতে পাননি।
চার্লস মেসিয়ার ১৭৬৪ সালের জুন মাসে নিহারীকা পরিবেস্টিত অবস্থায় নক্ষত্র স্তবকটি আবিস্কার করেন। এবং তার তালিকায় একে ১৬ নাম্বার দিয়ে চিহ্নিত করেন। M-16 নক্ষত্র স্তবকটির ব্যাস ১৫ আলোকবর্ষ। আর ঈগল নিহারীকা ৭০ আলোকবর্ষ এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে আছে।
এই নিহারীকাটির উচ্চতা ৯.৫ আলোকবর্ষ, নিহারীকাটির বয়স ৫.৫ মিলিয়ন বছর। নিহারীকাটি আমাদের সৌরজগতের থেকেও বড়।
এই নিহারীকাটি মহাকাশের বড় একটি নক্ষত্রের আতুরঘর এর অভ্যন্তরে প্রচুর নক্ষত্রের জন্ম হচ্ছে।
নিহারীকাটির চারিপাশে ২০টি বিশাল আকারে নবীন নক্ষত্র আছে এদের তাপ এবং আলোতে নিহারীকাটির গ্যাস উতপ্ত হয়ে উজ্জল আলো ছড়াতে থাকে।
ছবিতে নিহারীকাটির নীল রঙ অক্সিজেনকে উপস্থাপন করে,লাল সালফার এবং সবুজ নাইট্রোজেন এবং হাইড্রোজেন উভয় গ্যাসকে উপস্থাপন করে।
এই নিহারীকাটির অবস্থান উত্তর -পূর্ব আকাশের সার্পনেস কুডা (সাপ) নক্ষত্র মন্ডলে এই মন্ডলটিকে জুন মাসে সবথেকে ভালো ভাবে দেখা যায়।
ভালো মানের বাইনোকুলার দিয়ে ঈগল নিহারীকার যুগল নক্ষত্র HD-168076 উজ্জলতা ৮.২ খুব সহজেই শনাক্ত করতে পারবেন।
মাঝারী আকারের দুরবীন দিয়ে এর তিনটি স্তম্ভকে দেখতে পাবেন আর একদম অন্ধকার স্থান থেকে M-16কে খালিচোখে দেখা যায়। নিহারীকিটির দৃশ্যমান উজ্জলতা ৬, পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব ৭০০০ আলোকবর্ষ।
ঈগল নিহারীকার বর্তমান যে আকৃতি আমরা দেখতে পাই, তা আজ থেকে ৬০০০ বছর আগে একটি বিশাল নক্ষত্রের বিস্ফোরন (Super Nova)ফলে এই পিলারের আকার পরিবর্তন হয়ে গেছে।আমরা আরো অনেক অনেক বছর পরে এই পরিবর্তিত আকার দেখতে পাবো।
মজার ব্যপার হলো আমরা বর্তমানে যে ঈগল নিহারীকাকে দেখছি তা অতীতের ঈগল নিহারীকা।
পিলারস অফ ক্রিয়েশন এর কিছু মজার তথ্য
- সবথেকে বাম দিকের যে বড় পিলারটি দেখা যাচ্ছে সেটির দৈর্ঘ্য মোটামুটি পাচ আলোকবর্ষ (যা আমাদের সৌরজগতের ব্যাসের প্রায় ৩.৫ গুণ)।
- আর আঙ্গুলের মত প্রসারিত অংশটি আমাদের সৌর জগতের চেয়েও বড়।
- ২০০৭ সালে স্পিটজার মহাকাশ দূরবীনের পর্যবেক্ষনে জানা যায় যে এই পিলারস অফ ক্রিয়েশন গ্রেট পিরামিড নির্মাণেরও আগে এর গ্যাসীয় কলামগুলি ভেঙে পড়েছিল।
- পিলার অফ ক্রিয়েশন ৭,০০০ বছর আগে নাক্ষত্রিক বিস্ফোরণ (Super Nova) কবলে পরে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে (হাবল অনুসন্ধানের নেতৃত্বদানকারী নাসার জ্যোতির্বিদ পল স্কোয়েনের মতে, স্তম্ভের ডগায় তরুন নক্ষত্রগুলি আরও বড় হওয়ার সাথে সাথে তাদের বিকিরণ আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং ধীরে ধীরে তাদের চারপাশের গ্যাসকে ধ্বংস করে দেবে।
- যেহেতু এই পিলার আমাদের থেকে ৭,০০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এর ধ্বংসের আলো এখনো আমাদের নিকট এসে পৌঁছায়নি, যা আসতে আরো হাজার বছর সময় লাগবে।
- এর মানে আমরা বর্তমানে যে পিলারস অফ ক্রিয়েশনটি দেখছি তা প্রকৃতপক্ষে ৭,০০০ বছরের অতীত।
- অনেকে তাই একে পিলারস অফ ডেস্ট্রাকশন বা ধ্বংসের পিলারও বলে থাকে।
- স্পিটজারের মহাকাশ দূরবীনের অনুমান অনুযায়ী আগামী ১০০০-২০০০ বছর পরে পৃথিবী থেকে দেখা মিলবেনা এই বিখ্যাত মহাজাগতিক স্তম্ভের।
তথ্যসুত্রঃ
The Pillars of Creation | NASA
A starry night in the Pillars of Creation | Astronomy.com
Eagle Nebula ‘Pillars of Creation’
Behold! See the Hubble telescope’s iconic ‘Pillars of Creation’ view in infrared | Space
Leave a Reply