নাসা জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ থেকে প্রথম ছবি উন্মোচন করেছে।
গত ১১ জুলাই (২০২২) আমেরিকার রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসে একটি অনুষ্ঠানে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের প্রথম চিত্রগুলির একটি প্রকাশ করেছেন।
মহাবিশ্বের প্রাচীনতম ছায়াপথগুলির মধ্যে অনেকগুলি বিভিন্ন ঝকঝকে ছায়াপথ এখানে দৃশ্যমান।৷
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হোয়াইট হাউসের ইভেন্টে ছবিটি উন্মোচন করে মুহুর্তটিকে “ঐতিহাসিক” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন যে এটি “আমাদের মহাবিশ্বের ইতিহাসে একটি নতুন জানালা” খুলে দিয়েছে।
নাসা , ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি এবং কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি এক সাথে মঙ্গলবার, ১২ জুলাই তারিখে মেরিল্যান্ডের নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টার থেকে থেকে শুরু হওয়া একটি টেলিভিশন সম্প্রচারের সময় জেমস ওয়েবের প্রথম ছবি এবং স্পেকট্রোস্কোপিক ডেটার সম্পূর্ণ সেট প্রকাশ করবে।
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের এই প্রথম ছবিটি এখন পর্যন্ত দূরবর্তী মহাবিশ্বের গভীরতম এবং তীক্ষ্ণতম ইনফ্রারেড ছবি। ওয়েবের ফার্স্ট ডিপ ফিল্ড নামে পরিচিত গ্যালাক্সি ক্লাস্টার SMACS 0723-এর এই চিত্রটি বিশদভাবে ধরা পড়ছে। ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগে গ্যালাক্সি ক্লাস্টারটি যেমন ছিলো, তা এই চিত্রে ধরা পড়েছে। কিন্তু কিছু কিছু বস্তু থেকে আরো পুরনো আলো ধরা পড়েছে এই ছবিতে। যা প্রায় ১৩ বিলিয়ন বছর পুরনো!
এই গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের সম্মিলিত ভর একটি মহাকর্ষীয় লেন্স হিসাবে কাজ করে যা এটির পিছনে আরও অনেক দূরবর্তী ছায়াপথকে বিবর্ধিত করে।
ওয়েবের নিয়ার ইনফ্রারেড ক্যামেরা সেই দূরবর্তী ছায়াপথগুলিকে তীক্ষ্ণ ফোকাসে নিয়ে এসেছে। তাদের রয়েছে ক্ষুদ্র, ক্ষীণ কাঠামো যা আগে কখনও দেখা যায়নি। তারার ক্লাস্টার এবং ছড়িয়ে থাকা বৈশিষ্ট্যগুলি সহ প্রথমবারের মতো ওয়েবের দৃশ্যে উপস্থিত হয়েছে৷ এই ছবির কিছু কিছু অবজেক্টের আলো ১৩ বিলিয়ন বছরেরও আগের মহাবিশ্বকে থেকে এসেছে।
ওয়েবের চিত্রটি আকাশের একটি অংশ জুড়ে রয়েছে। আপনি হাতে বালির দানা রেখে আকাশের দিকে তাক করলে তা যে কৌণিক দূরত্ব পাবে, সেটুকুর ছবি ফুটে এসেছে এই ছবিতে। সামনে আরো ছবি একে একে প্রকাশ করা হবে। বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে শক্তিশালী স্পেস টেলিস্কোপ থেকে প্রাপ্ত প্রথম ছবিগুলি ওয়েবকে তার পূর্ণ শক্তি প্রদর্শন করবে। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ ইনফ্রারেড মহাবিশ্বকে উন্মোচন করার মিশন শুরু করতে প্রস্তুত। গবেষকরা শীঘ্রই ছায়াপথের ভর, বয়স, ইতিহাস এবং রচনাগুলি সম্পর্কে আরও জানতে শুরু করবেন – কারণ ওয়েব মহাবিশ্বের প্রথম দিকের ছায়াপথগুলি খুঁজছেন৷
এই ছবিটির নাম রাখা হয়েছে “ওয়েবের প্রথম ডিপ ফিল্ড”। SMACS 0723 গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের ছবি তোলার জন্য যদিও কাছাকাছি ক্লাস্টারের ভর ব্যবহার করা হচ্ছে যার অভিকর্ষ ক্ষেত্রের কারণে পেছনের আলোক-উৎস থেকে নিঃসরিত আলো বেঁকে যায়। এর মাধ্যমে অত্যন্ত দূর ও ক্ষীণ গ্যালাক্সিপুঞ্জের ডিপ ফিল্ড ছবি তোলা সম্ভব।
এই পদ্ধতিটি আগেও ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু ওয়েবের তোলা ছবি আগেরগুলোর চেয়ে বহুগুণে ভালো। নিচে ওয়েবের তোলা এই ছবিটির একাংশ বড় করে দেখানো হলো যেখানে আপনি এই গ্যালাক্সিগুলোর বিস্তারিত দেখতে পারবেন। এখানে সেই লেন্সিং এর প্রভাবটিও দৃশ্যমান।
ওয়েবের আরো চারটি ছবি প্রকাশিত হযেছে যার মধ্যে আছে (বিস্তারিত লেখা):
- কারিনা নীহারিকা যা মহাবিশ্বের অন্যতম বড় ও উজ্জ্বল নীহারিকা।
- WASP-96b যা একটি দৈত্যাকার গ্রহ।
- এইট-বার্স্ট নিহারিকার একটি অংশ যেখানে একটি মৃতপ্রায় তারার গ্যাস-মেঘ দৃশ্যমান।
- স্টেফান’স কুইন্টেট যা সর্বপ্রথম আবিস্কৃত কমপ্যাক্ট গ্যালাক্সি গ্রুপ।
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ কর্তৃক গৃহীত শত শত কোটি বছর আগের আলোকরশ্মি দিয়ে তৈরি প্রথম যে ছবিটি বিশ্ব দেখছে, ওই স্পেস টেলিস্কোপ গবেষণা দলে আছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জ্যোতির্পদার্থবিদ লামীয়া আশরাফ মওলা। কানাডাপ্রবাসী এই বাংলাদেশি বিজ্ঞানী গবেষণা করছেন টরন্টো ইউনিভার্সিটির ডানল্যাপ ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্সে, লামীয়া ২০২০ সালে যোগ দেন জেমস ওয়েব প্রকল্পে। তিনি এই প্রকল্পে কাজ করছেন কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সির হয়ে।
তথ্যসুত্রঃ
NASA’s Webb Delivers Deepest Infrared Image of Universe Yet
First images from Nasa’s James Webb space telescope reveal ancient galaxies
Leave a Reply