গুগলের LaMDA (Language Model for Dialogue Applications) একটি অত্যাধুনিক চ্যাটবট, যেটি বুদ্ধিমান মানুষের মতো ব্যবহারকারীর টেক্সটগুলোর সাপেক্ষে জবাব প্রদান করে। গুগলের প্রাক্তন সফ্টওয়্যার প্রকৌশলী ব্লেক লেমোইনের মতে, ল্যামডা AI ডেভেলপারদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করেছে; এটি সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে। তবে লেমোইনের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা তার ঐ বক্তব্যের পরে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে।
কম্পিউটার সায়েন্স এর বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ এবং ফিউচারিস্টরা এটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন। ধারণা করা হচ্ছে আজ থেকে কয়েক যুগ পরে AI সংবেদনশীল হতে পারবে, তবে আবেগপ্রবণ হতে পারবে কিনা সে ব্যাপারে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। সংবেদনশীলতা আর আবেগের মধ্যে পার্থক্য করা হচ্ছে কেন?
দেখুন, উদ্ভিদ কিন্তু সংবেদনশীল কিন্তু আবেগপ্রবণ নয়। তবে মানুষ একইসাথে দুইটাই। এখন AI সিস্টেমও যদি মানুষের মতো এই দুই বৈশিষ্ট্য পেয়ে যায়, তাহলে সেটা যে শুধু ইতিবাচক দিকই বয়ে আনবে, এমনটা নয়। এমনও হতে পারে যে তারা আমাদেরকে শাসন করবে এবং নিজেদের কলোনি গঠন করবে। সেই আলোচনা না হয় অন্যদিন করব।
সংবেদনশীলতার প্রশ্নে ফিরে আসা যাক। AI এখন পর্যন্ত “মুখস্ত” করার পর্যায়ে আছে, যাকে গবেষকেরা Deep Learning বলে থাকেন। শুধুমাত্র কুকুর-বিড়াল আলাদা করে চেনাতেই তাদের প্রচুর ট্রেইনিং আর ডেটা লাগে। সেক্ষেত্রে সংবেদনশীলতার ব্যাপারটা বেশ জটিলই হবে। সংবেদনশীলতার সাথে নিউরনের ভেতরে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কিছু বিষয় খুঁজে পাওয়া যায়। তাই AI System যদি সংবেদনশীল হতে চায়, তবে তাকে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং সম্পন্ন হতে হবে। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটিং কেবল শুরুর দিকে রয়েছে। এ ব্যাপারে এখনো প্রচুর গবেষণার প্রয়োজন।
আবার লেমোইন সাহেবের কথায় আসি। তিনি কেন ল্যামডা নিয়ে এতো সিরিয়াস? আসলে তার কাছে মনে হয়েছে যে ল্যামডার চ্যাটবটটি সিদ্ধান্ত নিতে “পারদর্শী”। তিনি এসবের স্বপক্ষে বেশ কিছু প্রমাণ গুগলের সামনে উপস্থাপন করলে গুগল সেগুলোকে খারিজ করে দেয়। লেমোইন সংবেদনশীলতায় অবাক হয়ে বলেন, “আমি মনে করি এই প্রযুক্তিটি আশ্চর্যজনক হতে চলেছে। এটি সবার উপকারে আসবে।“
লেমোইনই একমাত্র প্রকৌশলী নন যিনি এসব নিয়ে কথা বলছেন। অ্যাগুয়েরা ওয়াই আর্কাস ল্যামডার ব্যাপারে বলেছেন, “নিউরাল নেটওয়ার্কগুলি মানব মস্তিষ্কের অনুকরণ করে চেতনার দিকে এগিয়ে চলেছে। আমি আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়া অনুভব করেছি। আমি ক্রমশ অনুভব করছিলাম যে আমি বুদ্ধিমান কিছুর সাথে কথা বলছি।”
আর্কিটেকচার, কৌশল এবং ডেটার পরিমাণে অগ্রগতির কারণে আজকের বৃহৎ নিউরাল নেটওয়ার্কগুলি চিত্তাকর্ষক ফলাফলগুলি তৈরি করে, যার ফাংশন মানুষের বক্তৃতা এবং সৃজনশীলতার কাছাকাছি অবস্থান করছে। কিন্তু এই ধারণা গুলো খুব বেশি রঙিন হয়ে যাচ্ছে আর গুগলও অনেকক্ষেত্রে এর বিরোধিতা করছে। যদি ল্যামডার মাধ্যমেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংবেদনশীলতার জগতে প্রবেশ করে, তবে তা বিজ্ঞানের জগতে হবে নতুন এক অধ্যায়, আর মানব সভ্যতার জন্য হুমকি হলেও হতে পারে।
তথ্যসূত্রঃ The Google engineer who thinks the company’s AI has come to life
Leave a Reply