ফার্মাসিস্টদের নিয়ে যত জিজ্ঞাসা

লেখাটি , বিভাগে প্রকাশিত

ফার্মাসিস্ট নিয়ে বলতে গিয়ে প্রথমেই বলতে হয় ফার্মাসিস্ট কী? আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের ধারণা ফার্মাসিস্ট মানেই একজন ওষুধ দোকানদার বা বিক্রেতা। ওষুধ বিক্রেতাও এক প্রকার ফার্মাসিস্ট, তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বলতে গেলে সেই চিত্রটা ভিন্ন।

একজন সাধারণ ছাত্র বা অন্য পেশায় কাজ করা মানুষ ৩-৪ মাসের ওষুধের দোকানে কাজ শিখে অর্থাৎ ওষুধ বিক্রির কাজ শিখে হয়ে যাচ্ছে ফার্মাসিস্ট। আবার কোনো কোনো ওষুধের দোকানে ওষুধ বিক্রির পাশাপাশি চলে নানাবিধ চিকিৎসার কাজ। আবার কেউ কেউ নিজেই রোগের কথা শুনে ভালো/মন্দ বা স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় না রেখে দিচ্ছেন নানা রোগের ওষুধ, রোগীরাও সাদরে সেই সেবা গ্রহণ করে চলেছেন। তাহলে এর নামই কী ফার্মাসিস্ট? ফার্মাসিস্ট এতো সহজ সাবলীল পেশা? যার ৩-৪ মাসের ঔষধ বিক্রির প্রাকটিক্যাল ধারণা থেকে তার পরিচয়ে যুক্ত হয় ফার্মাসিস্ট তকমা?

তাহলে আসলে ফার্মাসিস্ট কাদেরকে বলা হয়?

ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদ বলতে স্বাস্থ্যখাতের সেইসব পেশাদার ব্যক্তিদেরকে বোঝায় যারা ঔষধের যাচাইকরণ, সূত্রায়ন, প্রস্তুতি, বৈশিষ্ট্য, সংরক্ষণ, মানবদেহে ঔষধের প্রয়োগ, প্রভাব ও আন্তঃক্রিয়া, ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান রাখেন এবং কীভাবে ঔষধ প্রয়োগ করলে রোগীর সর্বোচ্চ লাভ হয়, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ন্যূনতম হয় এবং দেহের অন্যান্য পদার্থের সাথে ঔষধের ক্ষতিকর আন্তঃক্রিয়া এড়ানো যায়, সে বিষয়ে  একজন লাইসেন্সধারী ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী পরামর্শ প্রদান করেন।

ঔষুধ শিল্পের সাথে জড়িত পেশাজীবিদের তিনটি শ্রেনীতে বিভক্ত করা হয়েছে। সেগুলো হলো:

ক. গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট (এ গ্রেড)

খ. ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট (বি গ্রেড)

গ. ফার্মেসি টেকনিশিয়ান (সি গ্রেড)।

গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট (এ গ্রেড) কারা?

– বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল কর্তৃক অভিস্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মেসি বিষয়ে স্নাতক (বি.র্ফার্ম) ডিগ্রিধারী যে সকল ব্যক্তি বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল থেকে এ ক্যাটাগরিতে নিবন্ধিত হয়েছে তারাই গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট ।

– নিবন্ধন সনদপত্র পেতে হলে গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্টদেরকে (এ গ্রেড) বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিলে আবেদন করতে হবে।

ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট (বি গ্রেড) কারা?

– বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল কর্তৃক অভিস্বীকৃত ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (IHT) হতে ডিপ্লোমা-ইন-ফার্মেসি ডিগ্রিধারী ব্যক্তিদের ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট (বি গ্রেড) হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে।

– নিবন্ধন সনদপত্র পেতে হলে ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্টদেরকে (বি গ্রেড) বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিলে আবেদন করতে হবে।

– মাধ্যমিক (এসএসসি) বা সমমানের পরীক্ষায় জীববিজ্ঞানসহ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উর্ত্তীণ যে কেউ ডিপ্লোমা-ইন-ফার্মেসি কোর্স ভর্তি হতে পারে।

 ফার্মেসি টেকনিশিয়ান (সি গ্রেড) কারা?

– বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল কর্তৃক পরিচালিত ফার্মেসি সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন কোর্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সে সকল ফার্মেসি টেকনিশিয়ান।

– মাধ্যমিক (এস.এস.সি) বা স্বীকৃত সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর, বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল ও বাংলাদেশ কেমিস্টস এন্ড ড্রাগিস্টস সমিতি (বিসিডিএস) কর্তৃক যৌথভাবে পরিচালিত ত্রৈ-মাসিক ফার্মেসি সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন র্কোসের প্রশিক্ষণ সফলভাবে সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিলের অধীনে ফার্মেসি সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ফার্মেসি টেকনিশিয়ান হিসাবে নিবন্ধিত হওয়ার যোগ্য হবে।

উন্নতবিশ্বে ফারমাসিস্ট বলতে কিন্তু এ গ্রেড ফার্মাসিস্টদেরকেই বোঝানো হয় ।

এ গ্রেড ফার্মাসিস্ট বা বি ফার্ম পড়াশোনাঃ

ব্যাচেলর অফ ফার্মাসি ডিগ্রি ৪ বছর মেয়াদি ডিগ্রি। অন্যদিকে ব্যাচেলর অফ ফার্মাসি প্রফেশনাল ডিগ্রি ৫ বছরের দেওয়া হয়ে থাকে। উল্লেখ্য যে, এখন ৫ বছর মেয়াদি ডক্টর অফ ফার্মাসি ডিগ্রিকে আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়।

৫ বছরের বি. ফার্ম প্রফেশনাল কোর্সের সঙ্গে সিলেবাসে অনেক সাদৃশ্য থাকলেও ৫ বছরের ফার্ম ডি. কোর্সে ক্লিনিক্যাল ফার্মাসি ও হসপিটাল ফার্মাসির উপর জোর দেয়া হয় এবং এ ডিগ্রির সিলেবাস অনেক আধুনিক।

ফার্মেসি প্রোগ্রামের বি.ফার্ম কোর্সে প্রতি বছর দুটি করে সেমিস্টার (দ্বি-সেমিস্টার) রয়েছে। চার থেকে আট সপ্তাহের ইন-প্ল্যান্ট/ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রশিক্ষণ ফার্মেসি পাঠ্যক্রমের বাধ্যতামূলক অংশ সঙ্গে হসপিটাল ট্রেনিংও  আছে। 

ব্যাচেলর অফ ফার্মাসির পর মাস্টার্স অফ ফার্মাসি ডিগ্রি নিতে হয়। এটি সাধারণত ১-২ বছরের হয়ে থাকে।

ফার্মাসিস্টদের কাজের ক্ষেত্রকে বিবেচনা করে ফার্মাসিস্টদেরকে  চার ভাগে ভাগ করা যায় –

রিটেইল ফার্মাসিস্টঃ রিটেইল ফার্মাসিস্টদের কাজ হলো, প্রেসক্রাইবড ও নন-প্রেসক্রাইবড ওষুধ, সার্জিক্যাল সাপ্লাই ও ওষুধের হিসাব রাখা এবং ট্রেনিং স্টাফ তৈরি করা। হেলথ কেয়ার প্রফেশনাল হিসেবেও তারা কাজ করতে পারেন।

হসপিটাল ফার্মাসিস্টঃ হসপিটাল ফার্মাসিস্টরা সাধারণত যুক্ত থাকেন কোন হাসপাতাল কিংবা নার্সিং হোমের সঙ্গে। ঔষধের মজুদ ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে লেবেলিং আর প্রয়োজনীয় বাজেট প্রস্তুতির কাজ তাকে করতে হয়। তবে বাংলাদেশে নীতিমালার অভাবে এ কাজ ডাক্তাররা করে থাকেন।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফার্মাসিস্টঃ ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে প্রোডাকশন, কোয়ালিটি কন্ট্রোল, ম্যানুফ্যাকচারিং বা সেলস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের দায়িত্বে থাকেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফার্মাসিস্টরা। বাংলাদেশের মোট ৮৫ ভাগ ফার্মাসিস্ট এ খাতে কাজ করে থাকেন।

রিসার্চ ফার্মাসিস্টঃ রিসার্চ ফার্মাসিস্টরা ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সের যেকোন দিক অথবা বিশেষ কোন ঔষধ নিয়ে তারা গবেষণা করে থাকেন। আমাদের দেশে এ খাতে গবেষণা খুব কম হয়। তবে বড় কয়েকটি কোম্পানি ব্যবসায়িক স্বার্থে কিছু গবেষণার কাজ করছে।

ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদরা প্রায়শই রোগীদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রশ্নসমূহের জন্য প্রথম যোগাযোগ বিন্দু হিসেবে কাজ করেন। সুতরাং রোগীদের ঔষধ ব্যবস্থাপনার মূল্যায়ন ও রোগীদের চিকিৎসকদের কাছে অর্পণ বা দিকনির্দেশনা করার ব্যাপারে ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এই ভূমিকাগুলির কয়েকটি নিচে দেওয়া হল:

  • রোগীভিতিক ঔষধ ব্যবস্থাপনা, যার মধ্যে ঔষধসেবনবিধি পর্যালোচনা এবং পর্যবেক্ষণ অন্তর্ভুক্ত।
  • অনির্ণীত বা নির্ণীত রোগাবস্থাবিশিষ্ট রোগীদের মূল্যায়ন করা এবং রোগীভিত্তিক ঔষধ ব্যবস্থাপনার চাহিদাগুলি নিরূপণ করা।
  • রোগগুলির অবস্থা বিশেষ পর্যবেক্ষণ, যেমন বৃক্ক (কিডনি) এবং যকৃতের বৈকল্য থাকলে ঔষধের মাত্রা নির্ধারণ করা।
  • ঔষধ মিশ্রিতকরণ।ঔষধীয় তথ্য প্রদান।
  •  রোগীদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ এবং পরামর্শ প্রদান করা
  • ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যাবহার কারিগর এবং অন্যান্য কর্মীদের তত্ত্বাবধান করা।
  • ব্যবস্থাপত্র সাপেক্ষে লভ্য ঔষধ বিতরণের তত্ত্বাবধান
  • ব্যবস্থাপত্র ছাড়া লভ্য ঔষধের বিধান এবং পরামর্শ প্রদান
  • রোগীদের এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের জন্য ঔষধের সর্বোত্তম ব্যবহারের উপর শিক্ষা এবং কাউন্সেলিং (যেমন, সঠিক ব্যবহার, মাত্রাতিরিক্ত ঔষধ পরিহার)
  • প্রয়োজন হলে অন্যান্য স্বাস্থ্য পেশাদারদের রেফারেল করা ।
  • টিকাদান পরিচালনা করে জনস্বাস্থ্যের প্রসার করা
  • ঔষধের সূত্রায়ন
  • ঔষধ নির্মাণের জন্য রোগীভিত্তিক পরীক্ষণ নকশা করা
  • নিরাপদ ঔষধ নীতির বিকাশের জন্য কেন্দ্রীয়, রাজ্য বা স্থানীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাথে কাজ করা।
  • সাহায্যকারী লেবেলসহ সমস্ত ওষুধের লেবেলের সঠিকতা নিশ্চিত করা
  • উপসর্গ মূল্যায়ন সম্প্রদায়-ভিত্তিক স্বাস্থ্য উদ্বেগের জন্য ঔষধের বিধান এবং জীবনযাত্রার পরামর্শের দিকে পরিচালিত করে (যেমন মাথা ঠান্ডা, বা ধূমপান বন্ধ করা)
    •         ঔষধ গবেষণা করা।
    •         ঔষধ উৎপাদনের সামগ্রিক প্রক্রিয়ার পরিকল্পনা তৈরি করা
    •         ঔষধের মান পরীক্ষা করা ও উন্নয়ন ঘটানো
    •         আইন ও নিয়ম মোতাবেক ঔষধ তৈরি করা হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে নজর রাখা
    •         ঔষধের বিপণনে মার্কেটিং দলকে সাহায্য করা
    •         ঔষধের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা

উন্নত দেশে তাদের ভুমিকাঃ

উন্নত বিশ্বের হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসকের পাশাপাশি গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট থাকা আবশ্যক। রোগীর দেহে যেকোনো ওষুধ প্রয়োগের একমাত্র অধিকার রাখেন ফার্মাসিস্ট। উন্নত বিশ্ব যেমন আমেরিকা, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপসহ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, থাইল্যান্ড কিংবা নেপালে একজন গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টকে এমবিবিএস চিকিৎসকের মতো পাঁচ বছর মেয়াদি সম্মান কোর্স এবং এক বছর ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিসে ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে ছয় বছর পড়াশোনা করতে হয়। এই কোর্সের মূল লক্ষ্য হলো একজন ফার্মাসিস্টকে সেভেন স্টারে রূপান্তর করা। একজন হাসপাতাল গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট রোগীদের মোট সাত ধরনের সেবা প্রদান করেন। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, ওষুধ গ্রহণের নিয়মাবলি, ক্ষেত্রবিশেষে ওষুধ প্রক্রিয়াকরণ, বিতরণ ইত্যাদি সেবার মাধ্যমে কেয়ারগিভার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হয়।

যৌক্তিক, উপকারী, নিরাপদ এবং কম খরচে ওষুধ, মেডিকেল ডিভাইস, বিভিন্ন উপকরণ কিংবা সেবা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় একজন গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টকে। স্থানীয় কিংবা আন্তর্জাতিকভাবে ফার্মাসিস্ট ওষুধনীতি কিংবা স্বাস্থ্য নীতিমালা তৈরিতে সহায়তা করে থাকেন। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবার লক্ষ্যগুলোকে অর্জনে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ থেকে মূল্যায়নে ভূমিকা রাখতে পারে একজন ফার্মাসিস্ট। রোগী ও চিকিৎসকের মধ্যে সংযোগ ঘটানোর সর্বোত্তম মাধ্যম হলেন একজন ফার্মাসিস্ট। বিশেষ করে চিকিৎসক প্রদত্ত প্রেসক্রিপশন (চিকিৎসকের দেওয়া ব্যবস্থাপত্র) অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণে রোগীকে সহায়তার মূল কাজটি একজন ফার্মাসিস্ট করে থাকেন। ফলে রোগী প্রেসক্রিপশন পাওয়ার পর থেকে ফার্মাসিস্টদের কাছে ওষুধবিষয়ক সমস্যার সঠিক নির্দেশনা প্রদান করেন। এককথায় ঐসব দেশে চিকিৎসক আর রোগীদের মধ্যকার ব্রিজ হিসেবে কাজ করে।

বাংলাদেশে ফার্মাসিস্টদের কেন প্রয়োজন?

শুধু কি ফিজিশিয়ান, নার্স ও টেকশিয়ান দ্বারাই রুগিকে সুচিকিৎসা দেওয়া যায়? ফিজিশিয়ান রুগির রোগ নির্ণয় আর নার্স রুগিকে দেখাশোনা করলেই কি রুগি আরোগ্য লাভ করতে পারে! ঔষুধের যথাযথ ব্যবহারের কি কোন গুরুত্ব নেই। আসলে চিকিৎসাসেবা বিষয়টি আমরা সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারিনি, আর সে কারণে এটি আমাদের দেশে মারাত্মকভাবে অবহেলিত। এক্ষেত্রে আমরা শুধু বুঝি ডাক্তার আর নার্স – যারা প্রয়োজনীয় সেবা দিতে যথেষ্ট। এই ভ্রান্ত ধারণা নিয়েই চলছে স্বাস্থ্যসেবার তথাকথিত উন্নয়ন। এভাবেই চলছে আমাদের দেশের চিকিৎসাসেবা। সুচিকিৎসা পেতে হলে WHO এর পরামর্শ অনুযায়ী ফিজিশিয়ান, ফার্মাসিস্ট, নার্স ও টেকনিশিয়ানকে এক সাথে রুগিকে সেবা দিতে হবে। সেখানে আমাদের দেশে সাধারণ জনগণকে ফার্মাসিস্ট ব্যতিত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।স্বাস্থ্যসেবার মূল বিষয় হলো “রোগ-ঔষুধ তত্ত্ব ” অর্থাৎ রোগ হলে ঔষুধ গ্রহণ করতে হবে। ফিজিশিয়ান রোগ নির্ণয় করে দেওয়ার পর রুগি যে ঔষুধ গ্রহণ করে আরোগ্য লাভ করে তা কিন্তু একজন ফার্মাসিস্টের হাত থেকেই তৈরি। আর এই ঔষুধ গ্রহণের মাত্রা, ঔষুধের কার্যকারিতা, ঔষুধের সঠিক ব্যবহার, ঔষুধের পার্শ্বপতিক্রিয়া সম্পর্কে একজন “ঔষুধ বিজ্ঞানি” অর্থাৎ ফার্মাসিস্ট ছাড়া আর কে ভাল জানতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, হসপিটালে ও কমিউনিটি ক্লিনিকে গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োজিত থাকলে বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ যেমন (ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্ত চাপ, স্টোক, হৃদরোগ ইত্যাদি) দীর্ঘমেয়াদী ঔষধ গ্রহণে যে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় তা ৬৭ শতাংশ কমানো যায়। তাহলে ফারমাসিস্ট যে কতটা জরুরী তা  আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশের সম্মান অর্জন করেছে। উন্নয়নের অনেকগুলো সূচক এখন ঊর্ধ্বমুখী তাই স্বাস্থ্যসেবাকেও এগিয়ে নিতে হবে। কর্মক্ষম দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরির লক্ষ্যে এবং যথাযথ ওষুধের ব্যবহার নিশ্চিতকরণে সকল হাসপাতালে গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। অন্যদিকে কমিউনিটি ফার্মেসি চালুর মাধ্যমে ওষুধের অবাঞ্ছিত ব্যবহার বন্ধ করে সঠিক এবং কার্যকরী চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব যা সুস্থ জাতি গঠনে অপরিহার্য। বাংলাদেশে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে ‘হসপিটাল ফার্মাসিস্ট’ চালু করার একটি সরকারি গেজেট প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে আজ অবধি সেই গেজেটের বাস্তবায়ন হয়নি। WHO নির্দেশনা অনুসারে, বিশ্বের ফার্মাসিস্টদের ৫৫ শতাংশ কাজ করবেন ‘কমিউনিটি ফার্মাসিস্ট’ হিসেবে, ৩০ শতাংশ ফার্মাসিস্ট কাজ করবেন হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায়, ৫ শতাংশ কাজ করবেন সরকারি সংস্থায়, ৫ শতাংশ শিক্ষা কার্যক্রমে এবং ৫ শতাংশ কাজ করবেন বিভিন্ন ঔষুধ কোম্পানিতে। অথচ বাংলাদেশের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ফার্মাসিস্টরা কাজ করছেন বিভিন্ন ঔষুধ কোম্পানিতে।

  যেখানে উন্নত দেশগুলোতে কতশত ফিজিশিয়ান, ফার্মাসিস্ট ও নার্স একত্রে কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে আমাদের দেশের অপূর্ণ চিকিৎসা ব্যাবস্থার নাজেহাল অবস্থার কথা কে না জানে কারন আমাদের দেশে ডাক্তার আর নার্স গুটিকয়েক । তাই দেশকে এগিয়ে নিতে হলে, অপূর্ণ চিকিৎসা ব্যবস্থাকে সুগঠিত করতে হবে এবং সরকারি ভাবে হসপিটালে ফার্মাসিস্টদের কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে। ফিজিশিয়ান যেমন রোগ নির্ণয়ে বিশেষজ্ঞ তেমনি ঔষুধ নির্ণয়ের বিশেষজ্ঞ হলেন ফার্মাসিস্ট।

স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরেও সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। আমাদের রোগ হলে সাধ্যের মধ্যে ঔষুধ পাচ্ছি ঠিকই কিন্তু ঔষুধের যথাযথ ব্যবহার করতে পারছি না। তাই বাংলাদেশ সরকারের উচিত দেশের সরকারি হসপিটাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকে গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট দের কাজে লাগানো। ফার্মাসিস্টদের অর্জিত জ্ঞানকে স্বাস্থ্যসেবায় সরকারি ভাবে কাজে লাগানোর সুযোগ করে দিলে সুস্থ থাকবে জনগণ, স্বাস্থ্য খাতে এগিয়ে যাবে দেশ।

লেখাটি পূর্বে দৈনিক দেশচিত্রে প্রকাশিত।

তথ্যসূত্রঃ 

লেখাটি 1,258-বার পড়া হয়েছে।


আলোচনা

Responses

  1. Ayesha Noor Avatar
    Ayesha Noor

    একজন pharmacist হতে গেলে কোন কোন চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন হতে হয় ঐ ব্যাপারে একটু তথ্য দেন দয়া করে

  2. এর উপকারিতা সম্পর্কে আমাকে একটু জানাবেন প্লিজ

Leave a Reply

ই-মেইলে গ্রাহক হয়ে যান

আপনার ই-মেইলে চলে যাবে নতুন প্রকাশিত লেখার খবর। দৈনিকের বদলে সাপ্তাহিক বা মাসিক ডাইজেস্ট হিসেবেও পরিবর্তন করতে পারেন সাবস্ক্রাইবের পর ।

Join 908 other subscribers