এ বছর বোসন বিজ্ঞান সংঘ জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। এটা আমার জন্য বেশ গর্বের ছিল। কারণ আমি বায়োলজি সেক্রেটারি হিসেবে ক্লাবটির সাথে যুক্ত আছি। তো, ভাবলাম এই অর্জন এবং ক্লাব নিয়ে ক্লাবের সভাপতি মাজেদুর রহমান সৌরভ ভাইয়ের সাথে টুকটাক আলোচনা করি। যেই কথা, সেই কাজ; হালকা আলাপ হলো। আর সেটাকেই ব্লগে তুলে ধরতে চলেছি। তার আগে বলে নিই, উনি বিজ্ঞান প্রজন্ম ও গণিত ইশকুল এর একজন কলাম রাইটার, বাংলাদেশ ম্যাথমেটিক্যাল অলিম্পিয়াড এর একাডেমিক টীম মেম্বার এবং Dhaka University Research Society এর টীম মেম্বার।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2022/12/image.png?resize=1024%2C768&ssl=1)
হ্যালো, ভাইয়া। বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করে ইতিমধ্যে আপনি বেশ সুনাম অর্জন করেছেন। বোসন বিজ্ঞান সংঘের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তপ, আপনার যাত্রাটা শুরু হয়েছিল কবে? কীভাবে?
আমার যাত্রাটা সর্বপ্রথম শুরু হয় বোসন বিজ্ঞান সংঘের সাথে। আমি ২০১৪ সালে ম্যাথ অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে তৃ্তীয় হয়েছিলাম। সেখান থেকেই ক্যাম্পার হিসেবে বোসন বিজ্ঞান সংঘের সাথে আমার যুক্ত হওয়া। তখন সদস্য হিসেবে বোসন বিজ্ঞান সংঘে আসতাম এবং সবগুলো ক্যাম্পেই অংশগ্রহণ করতাম। এরপর ২০১৬ সালে গণিত সম্পাদক হিসেবে কার্যনির্বাহী কমিটিতে কাজ করার সুযোগ হয়। এরপর ধীরে ধীরে যুগ্ম সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি পদে এসেছি।
বোসন বিজ্ঞান সংঘ তো এবার জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। আপনি ক্লাবের হয়ে সেই অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেছিলেন। সেসময় অনুভূতিটা কেমন ছিল?
আমরা ৮ বছরের বেশি সময় ধরে বিজ্ঞান ও গণিত নিয়ে কাজ করছি। ২০১৯ সালে আমরা বাংলাদেশ ম্যাথমেটিক্যাল অলিম্পিয়াডের কাছ থেকে বেস্ট ম্যাথ ক্লাবের পুরষ্কার পাই। এরপর এতদিন পরে এসে আমরা জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড পেলাম। তো, বোসন বিজ্ঞান সংঘের পক্ষ থেকে এই অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করাটা আমার জন্য একটা সম্মানের ব্যাপার ছিল। আসলে আমরা কনফিডেন্ট ছিলাম। কারণ বহুদিন ধরেই বোসন বিজ্ঞান সংঘ কাজ করে যাচ্ছে। তাই খুব বেশি অবাক হইনি। তবে অ্যাওয়ার্ড গ্রহণের সময় আমি অনেক হ্যাপি ছিলাম।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2022/12/image-1.png?resize=1024%2C576&ssl=1)
বোসন বিজ্ঞান সংঘ কোন উদ্দেশ্যে কী নিয়ে কাজ করছে? ভবিষ্যতে এই ক্লাবটিকে আমরা কোথায় দেখতে পাবো?
বোসন বিজ্ঞান সংঘের যাত্রা শুরুতে আমাদের যেই স্লোগান ছিল, “জ্ঞানের আলোয় উন্মোচিত হোক চেতনার নতুন দিগন্ত’ আমরা সেই উদ্দেশ্যকে সাথে নিয়েই কাজ করেছি এবং করে যাচ্ছি। প্রথম দিকে ক্লাবটির লক্ষ্য ছিল টাঙ্গাইল জেলার শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে এবং অলিম্পিয়াডগুলো থেকে ভালো কিছু অর্জন করবে। সেই সাথে আমরা চেষ্টা করেছি শিক্ষার্থীদের মাঝে বিজ্ঞান ও গণিতকে আনন্দদায়ক বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করার। এখন আমরা চেষ্টা করছি, ঐসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিজ্ঞানের আলো পৌঁছে দিতে, যেসব স্থানের স্কুল-কলেজে এখনো অলিম্পিয়াড কালচার গড়ে ওঠেনি।
বিজ্ঞানমনষ্ক জাতি গঠনের জন্য জামাল নজরুল ইসলাম স্যার, জামিলুর রেজা স্যার, মুনির হাসান স্যার-ওনাদের যে আন্দোলন, সেই ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং ঐ উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত করতেই আমরা কাজ করছি। এছাড়াও আরেকটি বিষয় এখানে লক্ষণীয়। বাংলাদেশ ম্যাথমেটিক্যাল অলিম্পিয়াডের একার পক্ষে পুরো বাংলাদেশে গণিতের আনন্দকে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা চেষ্টা করেছি টাঙ্গাইলের শিক্ষার্থীদের মাঝে এই আনন্দ পৌঁছে দিতে। এখন আমাদের লক্ষ্য পুরো বাংলাদেশ।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2022/12/image-2.png?resize=1024%2C683&ssl=1)
এখন যদি কোনো ছাত্র-ছাত্রী বোসন বিজ্ঞান সংঘের সাথে যুক্ত হতে চায়, সেক্ষেত্রে তারা কী করতে পারে? প্রসেসটা কী?
বোসন বিজ্ঞান সংঘের সাথে যুক্ত হওয়া খুবই সহজ। আমরা চেষ্টা করি, বছরে দু’বার মেম্বার নেওয়ার। অনলাইনে ফর্ম পূরণের মাধ্যমে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা বোসন বিজ্ঞান সংঘের সাথে যুক্ত হতে পারবে। এছাড়াও আরও একটি উপায় আছে। সেটি হলো আমাদের ক্লাব যেই কর্মশালা বা ক্যাম্পেইনের আয়োজন করে, সেখানে অংশগ্রহণ করা। এতে করে তারা আমাদের ক্যাম্পার হিসেবে যুক্ত হতে পারবে।
আমরা বিশ্বাস করি, আমরা নিজেরা শিখব এবং অন্যদেরকে শিখাবো। এখানে আসতে হলে যে কাউকে প্রোগ্রামার হতে হবে কিংবা অলিম্পিয়াডিয়ান হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। যার আগ্রহ আছে সে আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারবে। এরপর আমাদের যতটুকু রিসোর্স আছে, ততটুকু দিয়ে আমরা তাকে সাহায্য করব নতুন কিছু জানতে ও শিখতে।
বাংলাদেশের বর্তমান বিজ্ঞানশিক্ষা পরিস্থিতি পরিবর্তনে আপনার পরিকল্পনা কী? আর এক্ষেত্রে বোসন বিজ্ঞান সংঘ কী ভূমিকা রাখবে?
দেখুন, পুরো বাংলাদেশের বিজ্ঞানশিক্ষা পরিবর্তন নিয়ে আমরা কাজ করি না। আমরা মূলত শিক্ষার্থীদেরকে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী করাতে কাজ করি। আমাদের দেশের সংস্কৃতি যেরকম, তাতে শিক্ষকেরা একমুখী পাঠদানে অভ্যস্ত। তবে এ অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছে। আমি বিশ্বাস করি যদি বাংলাদেশের বিজ্ঞান সংগঠনগুলো কন্টিনিয়াসলি কাজ করে যেতে পারে, তবে বিজ্ঞানশিক্ষা পরিস্থিতিতে একটা সিগনিফিকেন্ট পরিবর্তন আসবে। এর ফলে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি হবে, যেখানে আমাদের শিক্ষার্থীরা আনন্দের সাথে বিজ্ঞান ও গণিত শিখবে, সেগুলো নিয়ে গবেষণা করবে এবং শুধুমাত্র নম্বরের জন্য নয়, বরং জানার জন্য শিখবে। আশা করি, বোসন বিজ্ঞান সংঘ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ক্লাবটি আরও বেশি বেশি কর্মশালার আয়োজন করবে, আরও বেশি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে বিজ্ঞান ও গণিতকে তুলে ধরবে, যাতে করে বিজ্ঞান জিনিসটা ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে সহজ ও প্রাণবন্ত মনে হয়।
![](https://i0.wp.com/bigganblog.org/wp-content/uploads/2022/12/image-3.png?resize=1024%2C683&ssl=1)
আগামীর বিজ্ঞানকর্মীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন, যাতে তারাও বিজ্ঞান ও গণিতকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সামনে রিপ্রেজেন্ট করার অনুপ্রেরণা পায়।
আসলে প্রত্যেক বিজ্ঞানকর্মী, যারা বিজ্ঞান ও গণিত নিয়ে কাজ করে, তাদের একটা আইডিওলজিক্যাল জায়গা থাকে। আমি বলব, তারা যেন সবসময় এটা ধরে রেখে কাজ করে যায়। আর যদি এভাবেই তারা এগিয়ে যায় এবং নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করে, তাহলে বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের পথ সুগম হবে। আর এক্ষেত্রে প্রয়োজন সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
Leave a Reply