নিমর‍্যাভিড

লেখাটি , বিভাগে প্রকাশিত

আজ থেকে চল্লিশ মিলিয়ন বছর আগের কথা। আমাদের চেনা পৃথিবী তখন ইওসিনের মধ্যভাগে। পৃথিবীর উষ্ণ আর ভেজা জলবায়ু ক্রমশ শীতল আর শুষ্ক হয়ে উঠছে। সবুজ সবল গাছে ছেয়ে যাওয়া বন-জঙ্গল ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছিল ঝোপ-ঝাড় আর খোলা তৃণভূমিতে। সে সময় উত্তর আমেরিকা আর এশিয়ায় দাবড়িয়ে বেড়াত একদল মাংসাশী প্রাণী। আমেরিকান জীবাশ্মবিদ এডওয়ার্ড ড্রিংকার কোপ এদের নাম রাখেন নিমর‍্যাভিড। এদের পেশীবহুল শরীরে ছিল বিড়ালের মতই লেজ আর ছোট ছোট চারটা পা। পায়ের থাবায় ছিল নখরযুক্ত আঙুল। উপরের পাটিতে মুখের পেছনের দিকে যেখানে মোলার দাঁত থাকে, সেখানে ছিল ছুড়ির মতন ধারালো দাঁত। আর সামনের দিকে মাংস ছেড়ার জন্যে অভিযোজিত বড়সড় দুইটা ক্যানাইন দাঁত। বিড়ালের সাথে সাদৃশ্য থাকায় প্রথম দিকে এদের বিড়াল গোত্রের প্রাণী বলেই ধরা হয়েছিল। কিন্তু ১৮৮০ সালের দিকে বিড়ালের সাথে এদের শারীরিক গঠনের কিছু পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায়।

আমেরিকান জীবাশ্মবিদ এডওয়ার্ড ড্রিংকার কোপ।

বিড়ালের মধ্যকর্ণে অডিটরি বুলা নামে একটা অংশ আছে, যা সেপ্টাম দিয়ে দুইটা অংশে বিভক্ত থাকে। কিন্তু নিমর‍্যাভিডের মধ্যকর্ণে ছিল অসিফাইড বুলা, যা কোনো সেপ্টাম দিয়ে বিভক্ত নয়। অন্তঃকর্ণের ভেতরের গঠন, দাঁত, স্নায়ু এবং রক্তনালির গঠনেও পার্থক্য আছে। বিড়াল পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে হাঁটে। কিন্তু নিমর‍্যাভিড হাঁটত ভালুকের মতন পায়ের পাতায় ভর দিয়ে। তাছাড়া বিড়ালের পায়ে চারটা আঙুল থাকলেও,  নিমর‍্যাভিডদের পায়ে ছিল পাঁচটা আঙুল। এইসব পার্থক্যের দরুন এদের রাখা হয়েছে ফেলিফর্ম নামের সম্পূর্ণ আলাদা একটা গোত্রে। দেখতে বিড়ালের মতন কিন্তু বিড়াল না হওয়ায় এদের “ফলস সেবার-টুথড ক্যাটস (false sabre-toothed cats)” বলা হয়। আমেরিকার ওরেগন প্রদেশ এর পূর্বদিকে প্রায় পাঁচটা কাউন্টি জুড়ে আছে পূর্ব ওরেগন উঁচু মরুভূমি। এই অঞ্চলের অধিকাংশই ঘেসো আর শুষ্ক জমিতে ছেয়ে আছে। আর আছে সারি সারি পাহাড়। শিকার ধরতে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকবার জন্যে তেমন ব্যবস্থা নেই। কিংবা লাফিয়ে উঠবার জন্যে তেমন উঁচু কোনো গাছও নেই।

নিমর‍্যাভিড এর একটা বিরল কঙ্কাল।

এখানে কিছু কিছু জায়গায় উদ্ভিদ বলতে আছে কেবল মরচে রঙের লাইকেন এর স্তর। এই মরুভূমিতেই আজ থেকে পঁয়ত্রিশ মিলিয়ন বছর আগে বাস করত নিমর‍্যাভিডের দল। অবিশ্বাস্য শোনালেও এই কথা সত্যি। আসলে সেসময় ওরেগন ছিল ঘন জঙ্গল। এমনকি এখানে কলা গাছও জন্মাতো। গবেষকদের কাছে আছে এর কিছু জীবাশ্ম নমুনা। জীবাশ্ম রেকর্ড বলে, বারো মিলিয়ন বছর জুড়ে সাতটা পরিচিত নিমর‍্যাভিডের গণ উত্তর আমেরিকায় বাস করত। তেইশ মিলিয়ন বছর আগে এরা বিলুপ্ত হয়ে যায়। ফসিল রেকর্ড বলে, এরপর প্রায় সাড়ে ছয় মিলিয়ন বছর জুড়ে এই মহাদেশে আর কোনো বিড়াল ছিল না। উত্তর আমেরিকায় আমাদের চেনা বিড়াল প্রজাতিরা বসবাস শুরু করে আজ থেকে সাড়ে ষোলো মিলিয়ন বছর আগে। তবে এখনও উত্তর আমেরিকায় বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বিড়াল প্রজাতিটি টিকে আছে। এর নাম জাগুয়ার, বৈজ্ঞানিক নাম- প্যান্থেরা অনকা (Panthera onca)। ধারণা করা হয়, আজ থেকে প্রায় এক মিলিয়ন বছর আগে এরা ইউরেশিয়া থেকে বেরিং স্থল সেতু হয়ে এখানে এসেছিল, নিমর‍্যাভিড’দের বিলুপ্তির অনেক বছর পর। নিমর‍্যাভিড’দের বিলুপ্ত হয়ে যাবার কারণ কি? পরবর্তীতে কি করেই বা উত্তর আমেরিকায় বিড়াল বসবাস শুরু করল? 

জাগুয়ার (Panthera onca)

ভয়ানক অবয়ব 

ছোট চেহারা আর প্রসারিত বড় বড় কর্তন দাঁত দুটির কারণে নিমর‍্যাভিড’দের অবয়ব নিশ্চয় বেশ ভয়ানক দেখাতো। তবে বাস্তুতন্ত্রে এদের ভূমিকা ছিল আধুনিক বিড়ালদের মতই। এদের দৈহিক আকারে রকমফের ছিল। বর্তমান নর্থ ডাকোটা, সাউথ ডাকোটা, এবং ওয়াইমিং প্রদেশে বাস করত ইউসমিলাস নামের নিমর‍্যাভিড প্রজাতি। এরা উচ্চতায় এক মিটার এর মতন ছিল। অপরদিকে পশ্চিম উত্তর আমেরিকার নিমরাভাস’রা লম্বায় ছিল আধা মিটারের মতন। নিমরাভাস নামের অর্থ হচ্ছে প্রাচীন শিকারি। ন্যানোসমিলাসের ফসিল পাওয়া যায় নেব্রাস্কায়। এরা সাইজে ছিল আধুনিক ববক্যাটদের মতন। ববক্যাট হচ্ছে এক প্রজাতির বনবিড়াল যারা সাইজে একটা পোষা বিড়ালের দ্বিগুণ হবে। অন্যান্য আরও নিমর‍্যাভিডের প্রজাতি বাস করত পাথুরে পাহাড় থেকে শুরু করে উত্তর আমেরিকার পশ্চিম উপকূল জুড়ে। এদের মধ্যে আছে পোগোনোডন, হপলোফোনাস, ডাইনিকটিস এবং ডিনেলুরাস। পোগোনোডন মানে হল “ফলার ন্যায় দাঁত”, হপলোফোনাস মানে “হিংস্র খুনি” আর ডাইনিকটিস মানে “ভয়ংকর বিড়াল”। ডাইনিকটিস সর্বশেষ নিমর‍্যাভিড প্রজাতি গুলোর মধ্যে একটি, তেইশ মিলিয়ন বছর আগ অবধি এরা টিকে ছিল। 

শিল্পীর কল্পনায় ন্যানোসমিলাস।

নিমর‍্যাভিড বিলুপ্ত হওয়ার সাড়ে ছয় মিলিয়ন বছর পর আধুনিক বিড়ালদের উদ্ভব হয়েছিল। তবে নিত্য নতুন ফসিল আবিষ্কারের ফলে গ্যাপটা সাড়ে ছ মিলিয়নের এদিক-সেদিক হবে আরকি। হতেও পারে এই সময়ের ভেতরেও নিমর‍্যাভিড টিকে ছিল, আমরা হয়ত এখনো এদের জীবাশ্ম খোঁজে পাই নি। আসলে জীবাশ্ম তৈরি হতে যথোপযুক্ত পরিবেশ লাগে। সুতরাং এও হতে পারে এই সাড়ে ছ মিলিয়ন বছরে বাস করা নিমর‍্যাভিডদের কোনো ফসিলই গঠিত হয় নি। কিংবা আমরা হয়ত এরই মধ্যে এদের জীবাশ্ম পেয়েও গেছি, কিন্তু আমরা এখনো তা বুঝে উঠতে পারি নি। তবে কেউ কেউ মনে করেন জীবাশ্ম আবিষ্কার হয়ত এই ক্যাট গ্যাপ এর সময় সীমা কমিয়ে আনতে পারেন, কিন্তু ক্যাট গ্যাপ থেকে যাবে। প্রশ্ন হচ্ছে নিমর‍্যাভিডের দল কি করে গুটি গুটি পায়ে হেঁটে উত্তর আমেরিকা পৌঁছায় এবং তারপর হারিয়ে যায়! একটা তত্ত্ব বলছে, এদের হারিয়ে যাবার পেছনে আগ্নেয়গিরি দায়ী। পাথুরে পর্বতমালার একেবারে পূর্বদিকে প্রচুর পরিমাণে নিমর‍্যাভিডের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। বোঝাই যায় একসময় এই অঞ্চল জুড়ে এদের বিচরণ ছিল রমরমা। সে সময় এখানকার ভূমির নীচ দিয়ে ঘটে চলছিল বিরাট পরিবর্তন। পঞ্চাশ থেকে পঁচিশ মিলিয়ন বছর আগে, উত্তর আমেরিকার নীচ দিয়ে বিস্তৃত হচ্ছিল ফ্যারালন নামের এক প্রাচীন টেকটনিক প্লেট। আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম প্রান্তে প্যাসিফিক প্লেটের সাথে ফ্যারালন প্লেটের সংঘর্ষে ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। 

ডাইনিকটিস এর কঙ্কাল।

ফলশ্রুতিতে আজকের কলোরাডো, উটাহ, নেভাদা এবং দক্ষিণে মেস্কিকোতে অন্তত ডজন খানেক আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ঘটে। এর মধ্যে সবচাইতে বড় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ঘটে কলোরাডোতে, আটাশ মিলিয়ন বছর আগে। ফলত সেখানে পঁচাত্তর কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তৈরি হয় এক বিশাল গর্ত, যা লা গ্যারিটা কালডেরা (La Garita Caldera) নামে পরিচিত। আগ্নেয়গিরির ছাই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রায় পাঁচ হাজার ঘন কিলোমিটার আবর্জনা দিয়ে জায়গাটা ঢেকে ফেলে। বিষয়টা অনুমান করতে ১৯৮০ সালে ওয়াশিংটনের মাউন্ট সেন্ট হেলেনসে ঘটে যাওয়া আগ্নেয়গিরির কথা ভাবতে পারেন। তখন কেবল আড়াই কিউবিক কিলোমিটার আবর্জনা নিষ্কাশিত হয়েছিল।

লা গ্যারিটায় এত শক্তিশালী বিস্ফোরণ হবার কারণ এর সিলিকা সমৃদ্ধ ম্যাগমা। সিলিকার পরিমাণ যত বেশী থাকবে বিস্ফোরণও তত বেশী শক্তিশালী হবে। এর কারণ অধিক পরিমাণ সিলিকার উপস্থিতি তরল শিলার সান্দ্রতা বাড়িয়ে দেয়। ফলত তা শোষণ করে অধিক পরিমাণ সালফার আর কার্বন-ডাই-অক্সাইড। তারপর যখন গলিত পদার্থগুলো বেরিয়ে আসে এবং ডিকম্প্রেশ করে, তখন গ্যাসীয় বুদ্বুদ তৈরি হয়ে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণ এতই শক্তিশালী ছিল যে, কেবল মাত্র ছাইয়ের তাপেই মারা পড়ত লা গ্যারিটার আশপাশে অন্তত দেড় শ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে সবকিছু। সেই সাথে ছড়িয়ে পড়া ছাই অন্তত বছর দুয়েকের জন্যে বায়ুস্তরে ভালো মতন সূর্যের আলো আর তাপ পৌঁছতে দেয় নি। পুরো ঘটনাটা জীব বৈচিত্র্যের জন্যে হুমকিস্বরূপ ছিল। নিমর‍্যাভিডদের ক্ষেত্রেও তাই। ছাইয়ের আস্তরণ থেকে নিমর‍্যাভিডদের বেশ ভালো কিছু জীবাশ্ম নমুনার সন্ধান মেলে। দশ মিলিয়ন বছরের আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে টিকে থাকা অবশ্যই এক একটা নিমর‍্যাভিড এর জন্যে কঠিন ছিল। কিন্তু একেবারে সব নিমর‍্যাভিড হারিয়ে যাবার ঘটনা ব্যাখ্যায় এই কারণ যথেষ্ট না। তাহলে কি কারণে নিমর‍্যাভিডের সকল প্রজাতি একেবারে বিলুপ্ত হয়ে গেল? 

লা গ্যারিটা কালডেরা (La Garita Caldera)

আজ থেকে তেইশ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে শুরু হয়েছিল ব্যাপক ঠান্ডা আর শুষ্কতার যুগ। বন-জঙ্গল সব ঘেসো জমিতে রূপান্তরিত হচ্ছিল। ফলে নিমর‍্যাভিডদের শিকার প্রাণীসব দলে দলে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছিল। শিকার নেই,  সুতরাং শিকারিদেরও (নিমর‍্যাভিড) নাম লেখাতে হল বিলুপ্তির খাতায়। নিমর‍্যাভিডরা কেনো মানিয়ে নিতে পারলো না? কারণ, এরা ছিল হাইপারকার্নিভোরাস বা অতি মাত্রায় মাংসাশী প্রাণী। অর্থাৎ তাদের অধিকাংশ খাদ্যই ছিল মাংস। এদের মুখের গড়ন ছিল মাংস কাঁটা-ছেড়ার জন্যে বিশেষায়িত। শিকারের দেহকে ফালা ফালা করে দেবার জন্যে মুখের সামনের দিকে ছিল ছুড়ির মতন কর্তন দাঁত। এরা প্রায় নব্বই ডিগ্রি কোণে মুখ খুলতে পারতো, ফলে সহজেই এরা শিকারের দেহে দাঁত বসাতে পারতো। কর্তন দাঁতের পেছনে এদের এক জোড়া কার্নাশিয়াল দাঁতও আছে। ত্রিভুজাকার এই দাঁতজোড়া বেশ ধারালো এবং একটার সঙ্গে অন্যটা বেশ খাপে খাপ ফিট হয়ে যায়। নিচের দাঁতটা উপরেরটার পাশ দিয়ে ঘেঁষে যাবার সময় একটা আরেকটাকে সামান্য শান দেয়াও হয়ে যায়। মায়ের স্তন্য পান করা বন্ধ করে দেয়া থেকে শুরু করে মারা যাবার আগ অবধি তারা এভাবেই কার্নাশিয়াল জোড়া ব্যবহার করতে থাকে।  

হাইপারকার্নিভোরাস হওয়ার বিপদ  

ইতিহাসে অনেক প্রাণীদেরকেই পৃথিবীর পাঠ চুকিয়ে বিদেয় নিতে হয়েছিল হাইপারকার্নিভোরাস হওয়ার কারণে। নিমর‍্যাভিডদের ক্ষেত্রেও হয়ত সেরকমটা হয়েছিল। অতি মাংসাশী হবার কারণে, উত্তর আমেরিকায় অনেক গুলো বন্য কুকুর প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল এগারো হাজার বছর আগে। এমনকি এখনো অনেকগুলো বড় শিকারি প্রাণীর দল টিকে আছে কারণ এরা মাংস ছাড়াও অন্যান্য খাবার খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। যেমন কৃষ্ণকায় ভাল্লুকের দল প্রায় সবকিছুই খেতে পারে। এমনকি এরা আবর্জনাও খায়। আর একারণেই এরা বড় শহরতলির আশপাশে বসবাসের চেষ্টা করে। কিছু গবেষণা বলছে শেষদিকে কিছু নিমর‍্যাভিড পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করেছে। ঘন বন-জঙ্গলের পরিমাণ কমে যাওয়ায় শিকার ধরতে এদের পাড়ি দিতে হতো লম্বা পথ। দৌড়াতে হতো বেশ দ্রুত। অলিগোসিনের একটা শেষ নিমর‍্যাভিড, ডিনাইলুরাস, এর দেহের গঠন অনেকটা আজকের চিতার মতন ছিল। বিশেষ করে এর মাথার খুলির ঢালটা  চিতার মতই। দ্রুত গতিতে দৌড়ানোর জন্যে এদের পায়ে স্বতন্ত্র ব্যান্ড বা বাঁক ছিল। উচ্চ গতিতে দৌড়ানোর জন্যে অভিযোজিত সকল প্রাণীর মধ্যেই এমন ব্যান্ড দেখা যায়। ডাইনেলুরাসদের সাইনাসের গহ্বর অন্যান্য নিমর‍্যাভিডদের তুলনায় বেশ বড় ছিল। ফলে দৌড়াবার সময় এর অধিক পরিমাণ অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারতো। 

শিল্পীর কল্পনায় ডিনাইলুরাস।

এসব বিবর্তনও  নিমর‍্যাভিডদের টিকে থাকার জন্যে যথেষ্ট ছিল না। ফলত আজ থেকে তেইশ মিলিয়ন বছর আগে তারা চিরতরে হারিয়ে যায় উত্তর আমেরিকা থেকে। দীর্ঘ সাড়ে ছয় মিলিয়ন বছর এই মহাদেশে বিড়ালের অস্তিত্ব ছিল না। ঠান্ডা জলবায়ু নিমর‍্যাভিডদের বিলুপ্ত হয়ে যাবার অন্যতম কারণ ছিল। কিন্তু এই ঠান্ডা জলবায়ুই পরবর্তীতে উত্তর আমেরিকায় বিড়ালদের সফলতার পথ প্রশস্ত করেছিল। হিমবাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কমে যায়, ফলে উন্মুক্ত হয় বেরিং স্থল সেতু যা সাইবেরিয়া আর আলাস্কাকে যুক্ত করে। এই সেতু পাড়ি দিয়ে উত্তর আমেরিকা পৌঁছায় সিউডেলুরাস নামে এক জাতের বিড়াল। বনবিড়ালের সমান সাইজের এই বিড়ালরা বেশ দক্ষ ভাবে গাছে চড়তে পারে। উত্তর আমেরিকার একটা কনিফার বনে এরা বিস্তার লাভ করেছিল। বারবোরোফেলিডস নামের আরেকটা বিড়াল সদৃশ গ্রুপও পরবর্তীতে উত্তর আমেরিকা পৌঁছায়। নতুন গবেষণা বলছে এরাও এক জাতের নিমর‍্যাভিডই ছিল যাদের উদ্ভব হয়েছিল আফ্রিকায়। এই বিড়াল এবং ফেলিফর্মরাই অবশেষে উত্তর আমেরিকায় দীর্ঘ ক্যাট গ্যাপের অবসান ঘটায়। তবে আজ থেকে পাঁচ মিলিয়ন বছর আগে বারবোরোফেলিডসও হারিয়ে যায় উত্তর আমেরিকা থেকে। টিকে যায় সিউডেলুরাসরা। এরাই হচ্ছে উত্তর আমেরিকার পাহাড়ি সিংহ থেকে শুরু করে ববক্যাটদের সাধারণ পূর্বপুরুষ। এমনকি বাসাবাড়িতে আরাম সোফায় স্থান পাওয়া তুলতুলে ফ্লাফবল বিড়ালদেরও সাধারণ পূর্বপুরুষ এই সিউডেলুরাসরাই।

তথ্যসূত্র: নিউ সায়ন্টিস্টি ম্যাগাজিন এর “এন আমেরিকান ক্যাটাসট্রফি” প্রবন্ধ আলকে লেখা।

                              

লেখাটি 40-বার পড়া হয়েছে।

ই-মেইলে গ্রাহক হয়ে যান

আপনার ই-মেইলে চলে যাবে নতুন প্রকাশিত লেখার খবর। দৈনিকের বদলে সাপ্তাহিক বা মাসিক ডাইজেস্ট হিসেবেও পরিবর্তন করতে পারেন সাবস্ক্রাইবের পর ।

Join 897 other subscribers