বিবর্তনের ব্যাপারে খুব প্রচলিত একটা দাবি হচ্ছে, বিবর্তনকে দেখানো যায় না। প্রজাতির বিবর্তন মূলত জানতে হয় পরোক্ষ প্রমাণের ভিত্তিতে। এ নিয়ে প্রথম পর্বে বিস্তারিত বলেছি। প্রজাতির বিবর্তন ঘটে খুব দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে। তবুও, আমাদের নাকের ডগায়-ই এমন সব বিবর্তন ঘটে গেছে বা যাচ্ছে, যেগুলি প্রকৃতির এই অনিবার্য বাস্তবতাকে আমাদের সামনে আরও পরিস্কার করে দেয়। যেমন আছে মাইক্রো বিবর্তনের নজির, তেমনি আছে ম্যাক্রো বিবর্তনের নজির। ম্যাক্রো বিবর্তন সাধারণত দীর্ঘ সময় ব্যবধানে হয়ে থাকে। সেটা কয়েক হাজার থেকে শুরু করে কয়েক লাখ, এমনকী কয়েক কোটি বছর ধরে ঘটতে পারে। তাই মাইক্রো বিবর্তনকে জানতে, চিনতে এবং প্রমাণ জন্যে আমরা ফসিল রেকর্ড, জিনতত্ত্ব, এবং হোমোলোগাস প্রমাণের দ্বারস্থ হই। তবে, মাঝে মাঝে নানান প্রাকৃতিক পরিস্থিতির কারণে কখনো কখনো ম্যাক্রো বিবর্তন খুব দ্রুত গতিতে ঘটতে পারে, বিশেষ করে যদি কোনো সংকটময় বা পরিবেশগত চাপ থাকে। স্পিসিয়েশন তথা প্রজাতির বিবর্তনের ঐতিহাসিক প্রমাণ অসংখ্য। আজ অবধি ফসিল রেকর্ড, জেনেটিক্স, হোমোলজির ওপর ভিত্তি করে অসংখ্য প্রজাতির উদ্ভব নিয়ে জানা গেছে। এ নিয়ে লিখতে শুরু করলে কয়েকশো ভলিউমের এনসাইক্লোপিডিয়া হয়ে যাবে। এ অংশে আমরা চারপাশে ঘটে চলা মাইক্রো এবং ম্যাক্রো বিবর্তনের নানান নজির; দিনদুপুরে আমাদের মধ্যেই ঘটে চলা ন্যাচারাল সিলেকশানের বেশ কিছু উদাহরণ পেশ করেছি। দেখাবো ল্যাবেও কীভাবে ঘটানো গেছে বিবর্তন। ম্যাক্রো তথা বৃহৎ বিবর্তনের উদাহরণে টানা হয়েছে কম সময়ে ঘটা বিবর্তনের উদাহরণগুলি।
মাছের আকার কমে যাওয়া
বিশ্বজুড়ে মাছের পপুলেশনের আকার ছোট হয়ে আসা নিয়ে উদ্বেগ ক্রমবর্ধমান। সমস্যাটা বেশ জটিল, যেহেতু অনেক দেশের মৎস্য আইন মাছের জনসংখ্যা রক্ষার জন্য জেলেদেরকে ছোট মাছ জালে উঠলে সেটাকে জলাশয়ে ফিরিয়ে দিতে এক প্রকার বাধ্য করে। অপ্রাপ্তবয়স্ক মাছ ধরা নিষেধ বাংলাদেশেও। এই আইনের পেছনে যুক্তি হলো, কোনো নির্দিষ্ট প্রজাতির স্বাভাবিক আকারের চেয়ে ছোট আকৃতির মাছ সাধারণত অপ্রাপ্তবয়স্ক মাছ, যাদের প্রজনন করার সুযোগ হয়নি। যদি তাদের পানিতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়, তারা প্রজননক্ষম হয়ে তাদের প্রজাতির পরবর্তী প্রজন্মের অবদান রাখতে পারে।
সমস্যা হচ্ছে, এই পদ্ধতি প্রথম বেশ ভালো কাজ করলেও, একসময় এটা আমাদের অজান্তেই মাছের দীর্ঘমেয়াদী এক বিবর্তনীয় পরিবর্তনের দিকে ধাবিত করে। একসময় বিশ্বজুড়েই রিপোর্ট আসতে থাকে যে অনেক প্রজাতির মাছ প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরও ছোট রয়ে গেছে! মানে মাছ প্রাপ্ত বয়স্ক হচ্ছে, হয়েছে—কিন্তু আকৃতিতে ছোটই রয়ে গেছে। আগে এমনটা হতো না। সমস্যা হচ্ছে, দিনকে দিন ছোট হয়েই যাচ্ছে।
সাধারণত অপ্রাপ্তবয়স্ক মাছেরাই আকার আকৃতিতে ছোট হয়। কিন্তু, বেশ বিরল হলেও প্রাপ্তবয়স্ক মাছও খর্বাকৃতির হতে পারে। এবং এই আকৃতি খর্ব হওয়ার জিন পরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে প্রায়ই টুকটাক খর্বাকৃতির এডাল্ট মাছ দেখতে পাওয়া অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা না। যেমন আমাদের মানুষদের মধ্যেও অস্বাভাবিকভাবে ছোট মানুষ প্রায়ই দেখা মেলে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী এভাবে এডাল্ট মাছদের আকৃতি ছোট হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা বেশ উদ্বেগ সৃষ্টি করে।
ড. ডেভিড ও’কোনোভারের গবেষণা:
যাদের এ ব্যাপারে গবেষণাখানি পড়ার ইচ্ছে বা শক্তি আছে, কেবল তাঁরাই এ অংশটা পড়তে পারেন। নাহয় পরবর্তী অংশে সহজ ব্যখ্যায় চলে যেতে পারেন।
কীভাবে মাছেরা নিজেদের আকৃতি কমিয়ে ফেলেছে, এই ব্যাপারটা খতিয়ে দেখতে বিখ্যাত ম্যারিন বায়োলজিস্ট David O. Conover এবং তাঁর সহযোগী Stephane B. Munch গবেষণায় নেমে পড়লেন। ড. ডেভিড ও’কোনোভারের প্রাথমিক ধারণা ছিলো, বড় মাছগুলোকে যখন ধরা হয় এবং ছোট মাছগুলোকে ছেড়ে দেওয়া হয়, তখন ভবিষ্যতের প্রজন্মে ছোট মাছের বৈশিষ্ট্য বেশি পরিমাণে ট্রান্সফার হয়। কারণ, বড় মাছেরা প্রজনন করার আগেই অতিরিক্ত মৎসচাষের বলি হয়ে জালে ধরা পড়ে। প্রজননের হারের চেয়ে মাছ ধরার পরিমাণ বেশি হওয়ায় বড় আকৃতির এডাল্ট মাছেরা কমে যাচ্ছিলো। তাই মাছদের টিকে থাকার স্বার্থে, এই মাছ ধরার পদ্ধতিটা সময়ের সাথে সাথে, মাছদের আকার ছোট হয়ে যাওয়ার দিকে পরিচালিত করেছে।
এই অনুকল্প যাচাই করার জন্য, ডঃ ডেভিড ও’কোনোভার এবং তার দল আটলান্টিক সিলভারসাইডস নামক এক প্রজাতির মাছ নিয়ে একটি নিয়ন্ত্রিত গবেষণা পরিচালনা করেন। এ প্রজাতিটি উত্তর আমেরিকার আটলান্টিক উপকূলে সাধারণত পাওয়া যায়। এ পরীক্ষায় তারা তিনটি একুরিয়াম নেন। তিনটা একুরিয়ামেই সমান সংখ্যক মাছ(১ হাজার) নেন একই প্রজাতির। তারপর এই তিনটা একুরিয়ামকে ৩ গ্রুপে বিভক্ত করেন তাঁরা। প্রতিটাতেই একই রকম খাবার, একই রকম পরিবেশ নিশ্চিত করেন। এবং এদেরকে পুরোপুরি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার মতোও পর্যাপ্ত সময় দেন। কিন্তু, এদের প্রজনন শুরুর পূর্বে এই ৩ টা গ্রুপে ৩ টা ভিন্ন ভিন্ন কাজ করা হয়ঃ
- প্রথম গ্রুপে বড় মাছগুলো প্রজননের আগে সরিয়ে নেওয়া হয় একুরিয়াম থেকে।
- দ্বিতীয় গ্রুপে (নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ) মাছগুলো এলোমেলোভাবে সরানো হয়। মানে বড়-ছোট মিলিয়েই এলোপাতাড়িভাবে মাছ সরানো হয় একুরিয়াম থেকে।
- তৃতীয় গ্রুপে কেবল ছোট মাছগুলো সরিয়ে নেওয়া হয় প্রজননের পূর্বে।
মাছগুলো প্রতিবার প্রজনন করার পর সে একুরিয়ামগুলোতে একই কাজ করা হতে থাকে। এভাবে চার প্রজন্ম পর ড. ডেভিড ও’কোনোভার এবং তাঁর দল এক অদ্ভুতুড়ে ফলাফল প্রত্যক্ষ করেন। তাঁরা দেখতে পান যে এই আটলান্টিক সিলভারসাইডস মাছের প্রজাতিটা প্রথম গ্রুপে(যেখানে ধারাবাহিকভাবে প্রজননের পূর্বেই বড় মাছগুলো সরানো হচ্ছিলো) এডাল্ট অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও আকৃতিতে অনেক ছোট রয়ে যায়। কতোটুকু ছোট?
মনে আছে, তৃতীয় গ্রুপটায় তাঁরা কেবল ছোট মাছ গুলি সরিয়ে নিচ্ছিলো? হ্যাঁ, সেই তৃতীয় গ্রুপের চেয়ে প্রথম গ্রুপের এডাল্ট মাছগুলি আকৃতিতে গড়ে অর্ধেক হয়ে যায়!
প্রাপ্তবয়স্ক মাছদের ছোট হয়ে যাওয়ার কারণ:
এ অংশটা তাদের জন্যেই, যারা উপরে এতোক্ষণ ডেভিড ও’কোনোভারের একাডেমিক, কাঠখোট্টা এক্সপেরিমেন্ট টা কোনদিকে আমাদের নির্দেশ করেছে তা বুঝেন নি। আমাদের এই প্রথম একুরিয়ামটা হচ্ছে পৃথিবীর জলাশয় সমূহ। যেখানে জেলেরা কেবল বড় মাছগুলিকেই ধরতো। ছোট মাছ ছেড়ে দিতো। এবং প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফলে কয়েক জেনারেশন পর মাছেরা নিজেদের সারভাইভালের স্বার্থে আকৃতিতে ছোট হয়ে যায় স্থায়ীভাবে। এতে তাদের অ্যালিল ফ্রিকোয়েন্সিতেও এটা এস্টাব্লিশড হয়ে যায়। কীভাবে ছোট হয়? বলেছিলাম না? এডাল্ট মাছও আকারে ছোট হতে পারে। তবে রেয়ার। একুরিয়ামের মাছগুলিকে সরানো হয়েছিলো এডাল্ট হওয়ার পর। এর মানে সেখানে বড় এডাল্ট মাছের পাশাপাশি টুকটাক ছোট এডাল্ট মাছও ছিলো। বড় মাছগুলিকে তাই সরিয়ে ফেলার পর ছোট আকৃতির এডাল্ট মাছগুলিই তাদের বেঁটে হওয়ার জিন ট্রান্সপার করেছে নেক্সট জেনারেশনে। এভাবে একসময় সে ট্যাংকের পুরো পপুলেশনেই সব বেঁটে এডাল্ট মাছ পাওয়া যায়।
বাস্তবেও অনেকটাই তাই-ই ঘটে। জেলেরা বড় মাছ ধরলো। ছোট মাছ ছেড়ে দিলো। ছোটমাছগুলির কেউ কেউ “বাচ্চা” মাছ ছিলো না। এরা এডাল্ট বেঁটে মাছ ছিলো। আকার ছোট থাকায় এডাল্ট মাছ হওয়া সত্ত্বেও জেলেরা বাচ্চা মাছের সাথে সাথে এই বেঁটে দেরও ফেলে দিয়েছে পানিতে। এরা আরামসে পানিতে ঘুরে বেড়ালো আর প্রজনন করলো, তাদের পরবর্তী প্রজন্মগুলিও তাদের মতই বেঁটে হলো, এবং জেলেদের রাডার থেকে দূরে রইলো। আর বড় আকৃতির মাছগুলি প্রতিবারই জালে আটকা পড়লো। বাজারে চড়াদামে বিক্রিও হলো।
একসময় আকারে বড় হওয়া মাছের চেয়ে এডাল্ট হওয়ার পরও বেঁটে মাছের পরিমাণ বেড়ে গেলো। এভাবে কোনো কোনো মাছের পুরো প্রজাতির অ্যালিল ফ্রিকোয়েন্সিও পাল্টে যেতে পারে। যা পরবর্তীতে সে প্রজাতির আকার আকৃতিতে স্থায়ী পরিবর্তন নিয়ে আনতে পারে। যারা অ্যালিল ফ্রিকোয়েন্সি কী তা এতক্ষণে ভুলে গেছেন, তারা উপরে আরেকটু পড়ে আসুন। এবার আশা করি পরিস্কার হয়েছে।
চোখের সামনেই দেখে ফেললাম কীভাবে মাছেরা নিজেদের আকৃতি কমিয়ে নিয়েছে নিজেদের টিকিয়ে রাখার স্বার্থে। ডঃ ডেভিড ও’কোনোভারের এ গবেষণাটা Sustaining Fisheries Yields Over Evolutionary Time Scales শিরোনামে প্রকাশিত হয় বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জার্নাল, সায়েন্স জার্নালে। তথ্যসূত্র অংশে দিয়ে দিচ্ছি। পড়ে দেখতে পারেন [১]।
প্রারম্ভিক প্রজাতিকরণঃ আপেল ম্যাগট মাছি
ম্যাক্রো বিবর্তনের উদাহরণে ঢোকার পূর্বে প্রারম্ভিক প্রজাতিকরণ (incipient speciation)-এর একটি উদাহরণ দেখে নিই আমরা। এক্ষেত্রে, আপেল ম্যাগট মাছি(Rhagoletis pomonella) চমৎকার, নীবিরভাবে পর্যবেক্ষণকৃত একটি উদাহরণ। একই সাথে এটা সিম্প্যাট্রিক স্পিসিয়েশনেরও একটা উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। সহজভাবে বললে, প্রারম্ভিক প্রজাতিকরণ বলতে আমরা বুঝি, যে দশায় একটি প্রজাতির দুটি জনগোষ্ঠী আলাদা প্রজাতিতে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে। পোষক পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট বাস্তুসংস্থানিক চাপ এবং আচরণগত ও জেনেটিক পরিবর্তনগুলো স্পষ্টতই নির্দেশ করে যে, তারা একসময় সম্পূর্ণ আলাদা প্রজাতিতে পরিণত হতে পারে [২]।
এই আপেল ম্যাগট মাছি মূলত উত্তর আমেরিকায় উদ্ভুত একটি প্রজাতি। এটা সাধারণত হথর্ন গাছের (Crataegus species) ফলকে আক্রান্ত করতো। কিন্তু উনিশ শতকে ইউরোপীয় উপনিবেশবাদীরা যখন আপেল গাছের (Malus domestica) চাষ শুরু করে, তখন একটা বিস্ময়কর বিবর্তনমূলক পরিবর্তন ঘটে এদের মধ্যে। এ বিবর্তনীয় পরিবর্তনসমূহ দেখে নেয়া যাক চলুনঃ
১. পোষক পরিবর্তন এবং বাস্তুসংস্থানিক প্রজাতিকরণ: আগেই বলেছি আমরা, ইউরোপীয় কলোনাইজাররা আপেল গাছ চাষের পূর্বে এই মাছিরা কেবলমাত্র হথর্ন ফলেই ডিম পাড়ত। কিন্তু আপেল গাছ আসার পরে এদের পপুলেশনের একাংশ তাদের ডিম হথর্নের পরিবর্তে আপেলের উপর পাড়া শুরু করে। একে আমরা বলতে পারি ‘হোস্ট শিফট’ বা বাংলায় পোষক পরিবর্তন। সময়ের সাথে সাথে, আপেলের উপর ডিম পাড়া মাছিগুলি হথর্নের উপর ডিম পাড়া মাছি থেকে আলাদা হতে শুরু করে, কারণ আপেল হথর্নের আগে পেকে যায়। এই পেকে যাওয়ার সময়ের পার্থক্য এদের দুটি পপুলেশনকে আলাদা সময়ে প্রজনন করতে বাধ্য করে বলা যায়। যার ফলে তাদের মধ্যে এক বিশেষ প্রকার প্রজনন বিচ্ছিন্নতার সৃষ্টি হয়। এটাকে বলা হয় সময়ভিত্তিক বিচ্ছিন্নতা (temporal isolation)।
২. জেনেটিক পার্থক্য: আপেল ম্যাগট মাছিদের আলাদা হয়ে যাওয়া এ দুটি পপুলেশনের ডিএনএ সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এদের ঘ্রাণ সংবেদী (olfactory) সিস্টেমে প্রভাব ফেলা জিন ও বিকাশকালীন সময়ের (developmental timing) সাথে সম্পর্কিত জিনগুলি আলাদাভাবে বিবর্তিত হচ্ছে। ঘ্রাণ সংবেদী সিস্টেমের জন্য দায়ী জিন গুলি আলাদাভাবে বিবর্তিত হচ্ছে কারণ, দুটি পপুলেশন দুটি আলাদা ফলের গন্ধের প্রতি সাড়া দিয়ে সঠিক হোস্ট বা পোষক খুঁজে বের করে। অন্যদিকে আপেল খাওয়া মাছিরা দ্রুত বড় হয়, কারণ আপেল তুলনামূলকভাবে আগেই পাকে। অন্যদিকে হথর্ন খাওয়া মাছিরা ধীরে বিকশিত হয়, হথর্ন ফলের ধীর পাকানোর সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে। এই জীবনচক্রের ভিন্নতা তৈরি হওয়ার কারণে এদের ডেভেলপমেন্টাল টাইমিং বা বিকাশকালীন সময়ের সাথে সম্পর্কিত জিনগুলি আলাদাভাবে বিবর্তিত হওয়ার কারণ হচ্ছে। যা পরবর্তীতে এক বড়সড় বিবর্তনীয় পরিবর্তনের দিকে ধাবিত করতে পারে এদের [৩]।
৩. প্রজনন সঙ্গী নির্বাচন: আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ হলো, আপেল-ভিত্তিক এবং হথর্ন-ভিত্তিক মাছিগুলি তাদের নিজ নিজ পোষক প্রজাতির মাছিদের সাথেই মিলিত হতে পছন্দ করে। এর ফলে দুটি পপুলেশনের মধ্যে জিন প্রবাহ (gene flow) কমে যায়, যেটা প্রজাতিকরণের প্রক্রিয়াকে আরো দ্রুত করে দেয়। বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, এই প্রক্রিয়াটি আসোর্টেটিভ মেটিং (assortative mating) নামে পরিচিত, যেখানে কোনো পপুলেশনের সদস্যরা নিজেদের ধরণের সঙ্গীর সাথে মিলন করতে পছন্দ করে।
পলিপ্লয়েডের মাধ্যমে চোখের সামনে প্রজাতির পরিবর্তন
আমরা জানি যে, সাধারণত ম্যাক্রো বিবর্তন বেশ লম্বা সময় নেয়। কারণ, আমাদের চোখের সামনে প্রাকৃতিকভাবে এলোপাতাড়িভাবে মিউটেশনের মাধ্যমে এক প্রজাতি থেকে সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতি সৃষ্টি হতে লম্বা সময়ের প্রয়োজন হয়। সেজন্যে আমাদের দ্বারস্থ হতে হয় ডিএনএ-র অভ্যন্তরে থাকা জিনের কাছে, দেখতে হয় কীসব ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে যা বিবর্তনের সাক্ষ্য বহন করে। কিংবা কখনো ফসিল দেখে আমরা বিবর্তনের বাস্তবতা উদ্ধার করি। কিন্তু, গত একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা উদ্ভিদের বেশ কিছু বিবর্তন চোখের সামনেই পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছি। চোখের সামনেই বিবর্তনের জাদুতে পুরোপুরি আলাদা প্রজাতিতে বিবর্তিত হয়ে যেতে দেখেছি বিভিন্ন উদ্ভিদকে।
এর মধ্যে ট্র্যাগাপোগন নামক একটি মুলার মতো উদ্ভিদের গল্প বলবো আজকে। গত শতকের ১৯১০ এর পূর্বে কখনো উত্তর আমেরিকায় এ উদ্ভিদের কোনো প্রজাতি ছিলো না। ১৯১০ থেকে ১৯৩০ এর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন আর আইডাহো রাজ্যে এই ট্র্যাগাপোগনের তিনটি প্রজাতি—Tragopogon dubius, Tragopogon pratensis এবং Tragopogon porrifolius এর চাষ করা হয়। তারপর মাত্র ২০/৩০ বছর যেতে না যেতেই ঘটে গেলো এক বিস্ময়কর ঘটনা!
৫০ এর দশকে বোটানিস্টরা লক্ষ্য করলেন, সে মাঠে ইউরোপ থেকে আনা তিনটি প্রজাতি ছাড়াও আরও দুটি পুরোপুরি নতুন প্রজাতির ট্র্যাগাপোগন উদ্ভিদ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে [৪]। যেখানে ঐ গোটা মহাদেশেই এই উদ্ভিদ ছিলো না, সেখানে কেবল এক মোটামুটি এক/দেড় দশকেই ভোজবাজির মতো এ দুটো নতুন প্রজাতির কীভাবে উদয় হলো, এমনকী এরা বাকি ৩ টি প্রজাতির কারোর সাথেই প্রজননক্ষম না— তা জানতে গবেষকরা নেমে পড়লেন।
বিজ্ঞানীরা খুব বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলেন, এখানে মাত্র এক দশকের একটু বেশি সময়ের মাঝেই একটা ম্যাক্রো বিবর্তন ঘটে গেলো। জিনে খোঁজ চালিয়ে দেখা গেলো আমাদের নতুন সে দুটি প্রজাতি, Tragopogon mirus এবং Tragopogon miscellus আসলে পূর্বের ৩ টি প্রজাতি থেকে এসেছে পলিপ্লয়ড সংকরায়ণের মাধ্যমে। নতুন তৈরি হওয়া দুটি প্রজাতি:
- Tragopogon mirus – T. dubius ও T. porrifolius এর পলিপ্লয়ড সংকরায়নে তৈরি
- Tragopogon miscellus – T. dubius ও T. pratensis এর পলিপ্লয়ড সংকরায়নে তৈরি
পলিপ্লয়ড সংকরায়নে আসলে হয়টা কী বলি, সাধারণত সন্তানেরা তাদের প্রতিটি বৈশিষ্ট্যের জন্য তাদের মা-বাবার প্রত্যেকের থেকে একটা করে ক্রমোজোম পায়। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে ঘটলো অদ্ভুত ঘটনা। ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার দুই বিখ্যাত উদ্ভিদবিজ্ঞানী ড. ডগলাস সল্টিস এবং ড. পামেলা সল্টিস বিস্তারিত গবেষণা করে দেখেন যে মিউটেশনে ফলে নতুন প্রজাতি দুটোর মধ্যে তাদের দুজিনের প্যারেন্ট স্পিসিজ থেকে এক সেটের বলে দুই সেট করে ক্রোমোজম এসেছে। এর ফলে এরা নিজেদের মধ্যে প্রজননক্ষম হলেও তাদের বাবা মা প্রজাতি অর্থাৎ T. dubius, T. porrifolius এবং T. paretensis তিনটি প্রজাতির সাথে প্রজনন করতে পাছে না।
এর মানে দাঁড়াচ্ছে, আমাদের চোখের সামনেই এখানে মিউটেশনের ফলশ্রুতিতে সম্পূর্ণ নতুন দুটি প্রজাতির উদ্ভব হলো [৫]। একই ভাবে আজকের দিনে আমরা ল্যাবে বসেই কৃত্রিমভাবে পলিপ্লয়েড সংকরায়ন সহ অন্যান্য সংকরায়নের সাহায্যে বিভিন্ন নতুন নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটাতে পারছি।
আমাদেরই বানানো প্রজাতি
বিবর্তন যে আদতেই ঘটে, এবং সেটা প্রকৃতির খামখেয়ালীপনার পাশাপাশি আমাদের ইচ্ছেতেও যে ঘটে, সেটা অনেকেরই জানা নেই। বিভিন্ন জাতের ধান, গম, ভুট্টা আজকে যে রূপে আমরা দেখতে পাই তা মোটেও এমন ছিলো না। কয়েক হাজার বছর আগেও এগুলো সাধারণ ঘাস ছিল (যেমন ভুট্টা এসেছে teosinte নামক এক প্রকার বুনো ঘাস থেকে)। হাজার হাজার বছর আগে আমরাই নিজেদের সুবিধার্থে নানান ভাবে সংকরায়ন ও সিলেক্টিভ ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে উন্নত সব ধান, ঘম, ভুট্টা সহ অনেক ফসল সবজি গাছের প্রজাতির উদ্ভব ঘটিয়েছি। বড় পাতা, মোটা ডাটা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে মানুষেরই করা কৃত্রিম নির্বাচনের মাধ্যমে হাজার বছর আগের Brassica oleracea নামক একপ্রকার বুনো বাঁধাকপি থেকে আজকের দিনে আমরা পেয়েছি ব্রকুলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পাতাকপি(Kale) ইত্যাদি। আমাদের বাগানে যেসব ডালিয়া, আইরিস, টিউলিপ ইত্যাদি ফুল দেখি—সেসবের অনেক কিছুই আজকের বর্তমান রূপে ছিলোই না। বুনো ফুলদেরই নানান রকমের সিলেক্টিভ ব্রিডিং, আর্টিফিশিয়াল সিলেকশান, সংকরায়ন ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা অনেক অনেক ফুল আনতে পেরেছি। সিলেক্টিভ ব্রিডিংয়ের মাধ্যমেই প্রাচীন কাল ধরে গৃহপালিত নেকড়েদের থেকে আমরা একটি উপ-প্রজাতির উদ্ভব ঘটিয়েছি, যারা আজকের দিনে আমাদেরই পরম বন্ধু, Canis lupus familiaris, অর্থাৎ কুকুর। চোখের সামনেই মানুষ নিজের অজান্তেই বিবর্তন দেখেছে অনেকবার।
বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে এখন আমরা ল্যাবেই কতো কতো উন্নত প্রজাতির ফসল উদ্ভাবন করতে পারছি। শুধু কি ফসল? গোটা বহুকোষী পোকামাকড়ও বানানো সম্ভব হয়েছে। তারওপর এখন এসেছে CRISPR জিন প্রযুক্তি। আমরা নিজেরাই এখন জিনের পরিবর্তন ঘটিয়ে জীবদেহে আকাঙ্খিত পরিবর্তন আনতে পারবো এমনকী, নতুন প্রজাতিও আনতে পারবো। এইতো ২০২১ সালেই ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার একদল গবেষক ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু রোগ বহন করা এডিস মশার (Aedes aegypti) ডিএনএ এডিট করে এদের কে ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় ছেড়ে দিলেন। সেসব মশা পরবর্তীতে যতো মশার সাথে মিলে প্রজনন করবে, তাদের সন্তান বন্ধ্যা হয়ে জন্মাবে। এতে করে কোথাও মশা অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেলে তা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে [৬]। এমনকী, ল্যাবরেটরিতে সেই কবেই নতুন প্রজাতির প্রাণ সৃষ্টি সফলভাবে করা সম্ভব হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৭১ সালে ডবজনস্কি এবং পাভলভস্কি তাঁদের ড্রোসোফিলা (ফলের মাছি) নিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে একটি নতুন প্রজাতির উৎপত্তি ঘটাতে পেরেছিলেন [৭]।
ল্যাবে ঘটানো প্রজাতিকরণের আলোচনা যখন আসলো, তখন উইলিয়াম র্যাটফ্লিক ও তাঁর দল জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে MuLTEE এর ওপর করা এক প্রকার আলোড়ন সৃষ্টি করা স্টাডিটারটার ব্যাপারে বলার লোভ সামলাতে পারছি না। এই আলোচনাটা একটুখানি বিস্তারিত হবে। আপনি চাইলে না পড়ে পরবর্তী প্যারায় চলে যেতে পারেন। তো হলোটা কী, উইলিয়াম র্যাটফ্লিক আর তাঁর দল বুঝতে চেয়েছেন, কীভাবে প্রাচীন পৃথিবীতে অক্সিজেনবিহীন পরিবেশে একেবারে সাধারণ এককোষী জীব ধীরে ধীরে আরও জটিল বহুকোষী জীব হয়ে ওঠে এবং “ডারউইনিয়ান” প্রক্রিয়ায় ক্রমাগত বিবর্তিত হতে থাকে। তাঁরা Saccharomyces cerevisiae নামক একপ্রকার এককোষী ইস্ট নেন। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে এটাকে বহুকোষী জীবে বিবর্তিত করা। তিনটি ভিন্ন পরিবেশে এই পরীক্ষা চালানো হয়—একটি অক্সিজেন ছাড়া (অ্যানেরোবিক), একটি শুধুমাত্র অক্সিজেনযুক্ত (অব্লিগেটলি অ্যারোবিক), এবং আরেকটি মিশ্র (মিক্সোট্রফিক) পরিবেশ।
৩,০০০ প্রজন্ম ধরে তারা লক্ষ্য করেন, কীভাবে অ্যানেরোবিক (অক্সিজেনবিহীন) পরিবেশে আমাদের এই এককোষী “স্নোফ্লেক ইস্ট” বিশাল আকারের বহু কোষী জীবে বিবর্তিত হয়। আকারে তাদের এককোষী পূর্বপুরুষদের তুলনায় ২০,০০০ গুণ বড় এবং প্রায় ১০,০০০ গুণ বেশি শক্তিশালী হয়। এমনকি নতুন শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্যও লাভ করে। এই বিবর্তনের পেছনে কারণ হচ্ছে বেশ কিছু নতুন এডাপ্টিভ মেকানিজম, যেগুলি আগে দেখা যায়নি। এই অভিযোজনগুলো এতটাই ইম্পেক্টফুল ছিল যে, এর ফলে এদের পূর্বপুরুষদের থেকে এদের প্রজনন বিচ্ছিন্নতা ঘটে এবং সম্পূর্ণ একটি নতুন প্রজাতির বহু কোষী জীবের জন্ম দেয়। গবেষণাটি বিশ্ববিখ্যাত ন্যাচার জার্নালে De novo evolution of macroscopic multicellularity শিরোনামে প্রকাশিত হয় [৮]। র্যাটফ্লিকের ভাষ্যে,
“একক-কোষযুক্ত জীবের বিবর্তনে একটুখানি হস্তক্ষেপ করেই আমরা জানতে পেরে গেলাম কীভাবে তারা ক্রমান্বয়ে আরও জটিল এবং সমন্বিত বহু কোষযুক্ত জীব হিসাবে বিকশিত হলো। একই সাথে, সেই প্রক্রিয়াটি পর্যায়ক্রমে অধ্যয়নও করতে পারি। আমরা আশা করি এটা বহু কোষযুক্ত আবিষ্কারের দীর্ঘ গল্পের প্রথম অধ্যায় মাত্র, কারণ আমরা মিউল্টিতে (MuLTEE) স্নোফ্লেক ইয়েস্টের বিবর্তন অব্যাহত রাখছি।” [৯]
ল্যাবে নতুন প্রজাতি উদ্ভাবনের এমন অসংখ্য গল্প আমি আপনাদের শোনাতে পারবো। এইতো সেই ২০২০ সালে ল্যাবে ঘটা খুব দ্রুত স্পিসিয়েশন ঘটার একটা চমৎকার নজির দেখান ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সান ডিয়েগো এবং মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানীরা। মাত্র এক মাসের মধ্যেই গবেষকরা ব্যাকটেরিওফেজ ল্যাম্বডা নামক একটি ভাইরাসকে দুটি সম্পূর্ণ পৃথক ভাইরাস প্রজাতিতে বিবর্তিত করেছেন, যেগুলো প্রতিটি আলাদাভাবে E. coli ব্যাকটেরিয়ার ভিন্ন রিসেপ্টর সংক্রমণ করতে বিশেষায়িত [১০]। প্রজাতিকরণের ওপর গোটা একটা বই লিখা হলে এমন অসংখ্য উদাহরণ নিয়ে আপনাদের সাথে গল্প করতাম। বিবর্তন ঘটে। ঘটে বলেই আমরা নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ঘটাতে পারি। তেমনিভাবে প্রকৃতিতেও ঘটে। বিবর্তন মানেই কেবল বানর থেকে মানুষ আসার মিথ্যা দাবি না। বিবর্তন তারচেয়েও অনেক বেশি কিছু। এটা আমাদের গল্প। আমরা, যারা শ্বাস নিই, প্রেমে পড়ি, বেড়ে ওঠি, পৃথিবীর পথ ধরে হাঁটি, সমুদ্রতলে প্রবাল হয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকি, কিংবা আকাশে উড়ে বেড়াই, সেরেঙ্ঘাটিতে শিকার খুঁজি, শিকারি থেকে দৌড়ে পালাই—আমাদের সবার গল্প। আমাদের প্রবন্ধটা শেষ হলো।
তথ্যসূত্র:
[১] David O. Conover, Stephan B. Munch, Sustaining Fisheries Yields Over Evolutionary Time Scales .Science297,94-96(2002).DOI:10.1126/science.1074085
[২] Jiggins, C. D., & Bridle, J. R. (2003). Speciation in the apple maggot fly: a blend of vintages? Trends in Ecology & Evolution, 19(3), 111–114. https://doi.org/10.1016/j.tree.2003.12.008
[৩] Feder, J. L., Berlocher, S. H., Roethele, J. B., Dambroski, H., Smith, J. J., Perry, W. L., Gavrilovic, V., Filchak, K. E., Rull, J., & Aluja, M. (2003). Allopatric genetic origins for sympatric host-plant shifts and race formation in Rhagoletis. Proceedings of the National Academy of Sciences, 100(18), 10314–10319. https://doi.org/10.1073/pnas.1730757100
[৪] Ownbey, M. (1950). Natural Hybridization and Amphiploidy in the Genus Tragopogon. American Journal of Botany, 37(7), 487–499. https://doi.org/10.2307/2438023
[৫] Soltis, P. S., & Soltis, D. E. (2009). The role of hybridization in plant speciation. Annual Review of Plant Biology, 60(1), 561–588. https://doi.org/10.1146/annurev.arplant.043008.092039
[৬] https://www.sciencedaily.com/releases/2021/06/210602091401.htm
[৭] DOBZHANSKY, T., PAVLOVSKY, O. Experimentally Created Incipient Species of Drosophila. Nature 230, 289–292 (1971). https://doi.org/10.1038/230289a0
[৮] Bozdag, G.O., Zamani-Dahaj, S.A., Day, T.C. et al. De novo evolution of macroscopic multicellularity. Nature 617, 747–754 (2023). https://doi.org/10.1038/s41586-023-06052-1
[১০] https://today.ucsd.edu/story/biologists_watch_speciation_in_a_laboratory_flask
Leave a Reply