বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার এই যুগে বাংলাদেশও ধীরে ধীরে ম্যারাথনের পথ অতিক্রম করছে । এই ধারাকে অব্যাহত রাখতে বিভিন্ন অলিম্পিয়াডের প্রত্যক্ষ ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। তন্মধ্যে জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড অন্যতম। প্রতিবছর বহু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করে নিজের দক্ষতার জানান দেয়। আমরা বিগত বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড গোল্ড, সিলভার এবং ব্রোঞ্জ পদক লাভ করেছি। তাই দিনে দিনে আগ্রহী প্রতিযোগিতা সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এসব অলিম্পিয়াডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড। তবে সবারই একটা প্রশ্ন থাকে, কীভাবে জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের জন্য নিজেকে তৈরি করব? তো, আজকের লেখায় আমি এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আমি এবং আমার সহযোদ্ধারা কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি এবং বাংলাদেশ বায়োলজি অলিম্পিয়াড কমিটি প্রস্তুতির ব্যাপারে কী বলে, এ সবকিছু নিয়ে একটা পূর্নাঙ্গ আলোচনা করব। তো, দেরি না করে শুরু করা যাক।
কোনো কিছুকে নিজের করে নিতে চাইলে বা একটা বিষয়কে বুঝতে হলে সেই ব্যাপারটাকে অনুভব করতে হয়, উপলব্ধির পরিসীমায় আনতে হয়। যতক্ষণ না পর্যন্ত আমি সকালে ঘুম থেকে ওঠার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে না পারবো, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি স্বেচ্ছায় আগ্রহ নিয়ে সকালে হাঁটাহাঁটি করার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারব না। অলিম্পিয়াডে ভালো স্কোর অর্জন করতে হলে এই ব্যাপারটা বুঝতে হবে।
জীববিজ্ঞানকে অনুভব করতে হবে এবং বাস্তব ঘটনাগুলোর মাঝে বিজ্ঞানের এই ‘কাটখোট্টা’ শাখাটিকে খুঁজে বের করতে হবে। অলিম্পিয়াডে ম্যাডেল পেতে হবে-এই চিন্তা বাদ দিয়ে প্রথমে ‘জীববিজ্ঞান’ জিনিসটাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে। যদি তুমি এই ধাপে সফল হতে পারো, তাহলে বুঝে নাও, তুমি জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে একটা বিশেষ অবস্থান দখল করতে পারবে, পারবেই!
আজকাল সাই-ফাই মুভির বদৌলতে আমরা মিউটেশনের মতো জীববিজ্ঞানের কিছু মজার বিষয় সম্পর্কে সহজেই ধারণা পাচ্ছি। তবে সেই জিনিসগুলোকে বাস্তবজীবনে অনুসন্ধান করতে হবে। যেমন, ধরো, এক টুকরো পাউরুটি মনের ভুলে তুমি অসংরক্ষিত অবস্থায় কোথাও রেখে দিলে। পরে দেখলে যে ওর উপরে কেমন জানি একটা আস্তরণ পড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে তোমার মনে হতে পারে যে ঐখানে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়েছে। কিন্তু, গভীরে গিয়ে অনুসন্ধান করলে তুমি বুঝতে পারবে যে, এটার পেছনে এক ধরণের ছত্রাক দায়ী।
এরকম বহু উদাহরণ আমাদের মধ্যে এবং আশে-পাশে রয়েছে। এভাবে তুমি জীববিজ্ঞানকে খুঁজতে খুঁজতে ওই ফিলোসফিক্যাল টার্মটাকে ধরতে পারবে। এরপর থেকে সাপ দেখলে ক্রিস্টি মনে হবে। মেয়েদের বেনী করা চুল দেখলে ডিএনএ মনে হবে। হে, জাস্ট কিডিং! দেখো, শেখার ব্যাপারটা হবে মজার।
এভাবে তুমি জীববিজ্ঞানকে খুঁজতে কবে কীভাবে তা বুঝে গেলে, সেটা করাও শুরু করলে। এখন, তুমি কৌতুহলী! তুমি জীববিজ্ঞানকে অনুধাবন করতে পারছো। এবার তোমার লক্ষ্য হবে জীববিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়গুলা শেখা। তোমাকে পড়তে হবে, জানতে হবে। আমি কিন্তু মুখস্ত করার কথা বলছি না। মুখস্ত করতে গেলেই বিপদ! বুঝে পড়ো, কৌতুহল মিশিয়ে পড়ো এবং জানার লক্ষ্যে পড়ো। অনেকেই (আমার মনে হয় প্রায় অধিকাংশই) জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের সিলেবাস বের করে সে অনুসারে পড়ার চেষ্টা করে। কিন্তু, তুমি হয়ত বা জানো না, এই অলিম্পিয়াডের নির্দিষ্ট কোনো সিলেবাস নেই। অলিম্পিয়াড কমিটি প্রদত্ত সিলেবাসে কিছু পয়েন্ট উল্লেখ করা আছে, কিন্তু দিনশেষে সিলেবাস একটাই আর তা হলো জীববিজ্ঞান। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে টুক-টাক ফিজিক্স-কেমিস্ট্রির বিষয়গুলোও লাগে! ঐ ব্যাপারে পরে বলব।
এখন আসি, জীববিজ্ঞান শেখার কথায়। তুমি এখন প্রশ্ন করতে পারো, সিলেবাস তো পুরো জীববিজ্ঞান, আমি শুরু করব কোত্থেকে? যদি তুমি নবম-দশম শ্রেণির হয়ে থাকো, তবে ঐ লেভেলের পাঠ্যপুস্তকটি (জীববিজ্ঞানের) পড়া শুরু করো। আর যদি তুমি এর চেয়েও নিচের শ্রেণির হও, তাহলে তুমি যেই শ্রেণিতে পড়ো, সেই শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের জীববিজ্ঞান অংশটা পড়ো। আবারো বলি, না বুঝে রোবটের মতো ইনপুট নিবে না। পড়বে, বুঝবে এবং শিখবে।
তুমি যদি বুঝে পড়ো, তাহলে প্রতিটা ক্ষেত্রেই তোমার সামনে বেশ কিছু প্রশ্ন এসে হাজির হবে। তুমি ভুলেও সেগুলোকে অবজ্ঞা করবে না, বরং যেভাবেই হোক সমাধান করার চেষ্টা করবে। যেমনঃ কোষ বিভাজন সম্পর্কে জানতে গিয়ে তুমি পড়লে যে মিয়োসিস কোনো প্রজাতির টিকে থাকার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়। এখন, এখানে একটা “কেন” থেকেই যায়। তোমার উচিৎ এই “কেন” এর উত্তর অনুসন্ধান করা। তাহলেই তুমি জানতে পারবে যে যৌন জনন সংঘটিত হয় এমন সকল জীবে মিয়োসিসের মাধ্যমে জিনগত বৈচিত্র্য সৃষ্টি হয়। যদি কোনো প্রজাতির জীবদের মধ্যে বৈচিত্র বেশি থাকে, তাহলে নতুন কোনো পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর মতো যোগ্যতা কারও না কারও মধ্যে থাকার সম্ভাবনা বেশি হবে। তখন যদি কোনো বড়-সড় বিপদ বা দুর্যোগ আসে, তবুও কিছু সদস্যের বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই মিয়োসিস কোনো জীবের জিনগত বৈচিত্র্য সৃষ্টি করে প্রজাতির টিকে থাকার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়। এভাবে যদি উত্তর খুঁজে খুঁজে তুমি প্রস্তুতি নিতে পারো, তাহলে খুব সহজেই জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের প্রশ্নগুলোর সার্জারি করতে পারবে।
মনে-প্রাণে, বুঝে-শুনে তুমি তোমার লেভেলের জীববিজ্ঞান আয়ত্ত করলে। কিন্তু, সিলেবাস যেহেতু “জীববিজ্ঞান”, তাই এখনো আরো অনেক কিছু পড়া যেতে পারে। এবার, তুমি একটু উপরের লেভেলের বইটা সংগ্রহ করবে এবং তোমার কাছে যেগুলো সহজ ও মজাদার মনে হয়, সেগুলো পড়ে শেষ করে ফেলো। প্রথমেই কঠিন কিংবা দুর্বোধ্য কিছু ঘাটতে যেও না, তাহলে সামনে এগোনোর স্পহা হারিয়ে যেতে পারে। যা পড়বা, মন থেকে পড়বা। কখনো জোর করে বেশি কিছু পড়তে যাবে না, তাহলে মৌলিক বা সবচেয়ে জরুরী বিষয়গুলোই পাকায়ে যাবে।
এরপরে কিছু এক্সট্রা বা সহায়ক বই পড়তে পারো। এখন তুমি প্রশ্ন করতে পারো, “ভাইয়া, কোনটা দিয়ে শুরু করবো?” এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর আমার কাছে নেই। কারণ, তুমি জীববিজ্ঞান কতটুকু জানো বা কতটুকু জানার ঘাটতি আছে, সেগুলোর উপর নির্ভর করে, তুমি কোন বইগুলা পড়বে। আমি তোমাকে কয়েকটা নাম বলে দিতে পারি, যেগুলোর রিভিউ পড়ে বা দেখে তুমি প্রয়োজনানুসারে সংগ্রহ করতে পারো। প্রথমেই যেই বইটার কথা বলবো, সেটা হলো Campbell Biology. এই ইংরেজী বইটাতে বেশ কিছু চমৎকার আলোচনা ফুটে উঠেছে। তোমাকে যে এই বইটা পড়তেই হবে, তা বলছি না। কারণ, একে তো বই ইংরেজীতে লেখা, তার উপর আবার দাম প্রায় ১৪,৫০০ টাকা! একারণে অনেকের জন্য এই বইটাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। তার মানে এই নয় যে তুমি পিছিয়ে গেলে! অনেকে বাংলায় লেখা (মূলত Campbell Biology এর আদলে তৈরি) “ক্যাম্পবেল বায়োলজি” পড়ে থাকে। তবে এই বাংলা বইটাতে মূল Campbell Biology এর খুব সামান্যই আলোচনা করা হয়েছে। তাছাড়া এখানে প্রাণরসায়ন কিংবা খাঁটি জীববিজ্ঞানের আলোচনা সেভাবে করা হয়নি, বরং মৌলিক রসায়ন দিয়েই বইয়ের অধিকাংশ আলোচনা করা হয়েছে।
তুমি “জীবনের গল্প” (প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ড) সংগ্রহ করতে পারো। প্রথম খন্ডের প্রথমার্ধে তেমন কিছু নেই, যেটা অলিম্পিয়াডে কাজে দেবে। তবে বিজ্ঞানের জন্ম হয় কীভাবে, সে ব্যাপারে কিছু ধ্যান-ধারণার সাথে পরিচিত হতে পারবে। আর শেষার্ধে জীববিজ্ঞানের ৫টি স্তম্ভের কথা বলা হয়েছে, যেগুলো ছাড়া আধুনিক জীববিজ্ঞান প্রায় অচল। দ্বিতীয় খন্ডে জীববিজ্ঞান বিষয়ক ১৬টি নির্বাচিত প্রবন্ধ রয়েছে। প্রবন্ধভিত্তিক আলোচনাগুলোতে ভাইরাস, কৃ্ত্রিম প্রাণ, ন্যানোচিকিৎসা, পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিং প্রভৃতি বিষয় চমৎকার ভাবে ফুটে উঠেছে।
ড. মোঃ শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া স্যারকে হয়ত কেউ কেউ চিনে থাকবে, যিনি জীববিজ্ঞান নিয়ে বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। এগুলোর মধ্যে “মানবদেহে জিনের খেলা”, “জিন জগতে আরেকবার” এবং “মানুষ নিয়ে বিজ্ঞান” বই ৩টি তোমাকে অলিম্পিয়াডে বিশেষভাবে সহায়তা করতে পারবে। এই বইগুলো ছাড়াও জীবনের গাণিতিক রহস্য, চমক ভাইয়ার লেখা গল্পে গল্পে জেনেটিক্স (১ম ও ২য় খন্ড), জীববিজ্ঞানের যত জিজ্ঞাসা-১, Fundamentals of Biochemistry, শারীরতত্ত্ব-সবাই পড়ো, জেনেটিক্সঃ বংশগতিবিদ্যার সহজ পাঠ, Animal Physiology, Plant Biology (Written by Thomas L Rost), Brock Biology of Microorganism ইত্যাদি বই পড়তে পারো।
হ্যাঁ, জাস্ট স্কোর পেতে হলে আঞ্চলিক পর্যায়ের জন্য এতো বই পড়ার কোনো দরকার নেই। আর জাতীয় পর্যায়ের জন্য ইংরেজি বই না পড়েও অনেকে ভালো স্কোর অর্জন করে। কিন্তু জীববিজ্ঞান শিখতে গেলে বা অলিম্পিয়াডের আসল উদ্দেশ্যতে পৌঁছাতে হলে কিংবা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেকে নিয়ে যেতে হলে এই বইগুলো তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করবে। তার মানে এই নয় যে এই বইগুলো মাথায় আপলোড করে দিলেই IBO (International Biology Olympiad) এ গোল্ড মেডেল নিশ্চিত! আসলে আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে মৌলিক জীববিজ্ঞান সবচেয়ে বেশি জরুরি। তবে পরবর্তী ধাপগুলো তে গিয়ে তোমাকে অবশ্যই Advanced Biology এর সাথে সাক্ষাৎ করতে হবে।
এবার আসি ম্যাগাজিন, জার্নাল বা ওয়েবসাইটের কথায়। প্রথমেই বলে নেই, আঞ্চলিক কিংবা জাতীয় পর্যায়ে এসবের প্রভাব খুব বেশি একটা নেই। তবে SAQ (Biology Olympiad এর একটা ধাপ, এটা নিয়ে ২য় এবং ৫ম অধ্যায়ে কথা হবে) কিংবা International পর্যায়ে এগুলোর গুরুত্ব কম না। তবে কোন দিক থেকে শুরু করবে, এটা নির্ভর করে তোমার ক্যাটাগরি এবং ভাষাগত দক্ষতার উপর। খুব ছোট হয়ে তুমি অনেক বড় বা জটিল বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের ব্যাখ্যা নাও বুঝতে পারো। আবার হায়ার-সেকেন্ডারি ক্যাটাগরির প্রতিযোগী হলে, খুবই সাধারণ প্রবন্ধ পড়লে, সেটা কাজে নাও দিতে পারে। জার্নাল বা ম্যাগাজিনের বিষয়টা সাধারণত বড়দের ক্ষেত্রেই বেশি জরুরি। জুনিয়র ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করলে যে এগুলো জরুরি না, তা বলছি না।
তবে যেকোনো ওয়েবসাইটের আর্টিকেল পড়ে সেটা নিয়ে অলিম্পিয়াড যুদ্ধে অংশগ্রহণ করাটা ঠিক হবে না। কারণ বাংলায় বিভিন্ন ওয়েবসাইটে একই টপিকের উপর পরস্পর বিরোধী বা আদিম যুগের আবিষ্কারের উপর প্রাধান্য দিয়ে (ঐসব লেখায় আধুনিকতাকে তুলে ধরা হয় না) প্রবন্ধ লেখা হয়। তুমি বিজ্ঞান ব্লগের প্রবন্ধগুলো পড়তে পারো। জীববিজ্ঞান নিয়ে যা আছে, সব পড়তে বলছি না। যেটা তোমার ভালো লাগবে, সহজ মনে হবে, সেটাই পড়, মনের উপর জোর দিও না। এছাড়াও আমার আরো পছন্দের কয়েকটি বাংলা ওয়েবসাইট রয়েছে। যেমনঃ বিজ্ঞান, সায়েন্সবী, বিজ্ঞানচিন্তা (প্রতিমাসে এটির ম্যাগাজিনও বের হয়) ইত্যাদি। এগুলো বেশ চমৎকার আর বিশ্বস্ত ফোরাম। Scientia Society এর ফেসবুক পেইজে জীববিজ্ঞান নিয়ে প্রচুর লেখা আছে, সেগুলো ঘেটে দেখতে পারো। মজা পাবে, শিখতেও পারবে।
এবার বলব ইংরেজি ওয়েব জার্নালের কথা। আমার কাছে সবথেকে ভালো লাগে Nature এবং Live Science. এছাড়াও Science Daily, Science| AAAS, Scientific American, Science News ইত্যাদি আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন বা জার্নালগুলো বেশ জনপ্রিয়। এসব সাইটের আর্টিকেলগুলো থেকে আমি নিজেও অনেক কিছু শিখেছি। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, এই ম্যাগাজিনগুলোর আর্টিকেলে একটা ক্ষুদ্র টপিকের (যেমনঃ জিন, স্টেম সেল, ক্যাপসিড) উপরেই চমৎকার কিছু কথা লেখা থাকে। ছাত্র, শিক্ষক, গবেষক, লেখক- সকল পর্যায়ের বিজ্ঞানপ্রিয় মানুষেরা এসব জার্নাল ফলো করে। তাই বলে তুমি জোর করে, কষ্ট করে দাঁতভাঙা ইংরেজী পড়তে গিয়ে স্পৃহা হারিয়ে ফেলো না। যেটা ভাল্লাগবে, সেটাই পড়। আমি বলি, তুমি উপভোগ করো, স্বাচ্ছন্দ্যে পড়ো। প্যারা নিয়ে না, chill করে পড়। Feel and chill!
সবসময় পড়ে না, বরং দেখে-শুনেও শেখা যায়। জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের উপরে ইন্টারনেটে হাজারো ভিডিও আছে, যেগুলো দেখেও অনেককিছু শেখা যায়। আবার, তোমার সিনিয়র ভাইয়া-আপুরা কীভাবে অলিম্পিয়াডে ভালো স্কোর অর্জন করেছিল, সেই গল্প শুনেও তুমি অনেককিছু শিখতে পারো। এই পয়েন্টটাই আমাকে জাতীয় পর্যায়ে বিজয় এনে দিতে বেশ সহযোগিতা করেছিল। এর পাশাপাশি, তোমার আশে-পাশে যারা অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করছে, তাদের প্রস্তুতি-পর্বের কথা শুনতে পারো। সেগুলো তোমাকে পরিপূরক হিসেবে “অতিরিক্ত সাহায্য” প্রদান করবে।
জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে “বায়োক্যাম্প” নামে একটি পর্যায় থাকে, যেটার জন্য শক্ত প্রস্তুতির প্রয়োজন পড়ে। এখানে মূলত জৈবপ্রযুক্তি, মাইক্রোবিয়াল ইকোলজি, বায়োসিস্টেমেটিক্স, বায়োইনফরমেটিক্স, প্রাণীর শারীরবৃত্ত ও শারীরস্থান, বাস্তুবিদ্যা এবং কোষবিদ্যা অত্যন্ত জরুরি। আর এগুলোর জন্য একেবারেই ভিন্ন ধরণের প্রস্ততি নিতে হয়। এই ধাপে তোমাকে উচ্চতর জীববিজ্ঞানের সাথে আলিঙ্গন করতে হবে।
আচ্ছা, ভাইয়া, পাঠ্যবই পড়লাম, সহায়ক বই পড়লাম, ম্যাগাজিন পড়লাম, কিন্তু আমি কতটুকু পারছি বা জানি সেটা কী করে বুঝব? নিজেকে ঝালাই করে নিতে হলে তোমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন কাটা-ছেঁড়া করতে হবে। অনেককেই দেখেছি যে প্রথমেই “জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড সংকলন” বইটা সংগ্রহ করে সেখানকার প্রশ্নগুলো সমাধান করতে শুরু করে। আমার ব্যক্তিগত মত হলো, প্রথমেই অলিম্পিয়াডের প্রশ্ন ভাঙচুর করতে যাওয়ার দরকার নেই।
তুমি যখন তোমার পাঠ্যবইয়ের একটা অধ্যায় পড়বে, তখন সেই অধ্যায়ের অনুশীলনীতে থাকা বহুনির্বাচনী বা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর বের করো (গাইড বই দেখে না, নিজে থেকে চেষ্টা করো)। এরপর যখন তোমার অনেক কিছুই পড়া বা জানা হয়ে যাবে, তখন বিভিন্ন ওয়েবসাইটের জীববিজ্ঞান বিষয়ক প্রশ্নগুলো দেখো, ফ্রি কুইজে অংশগ্রহণ করো। তারপর ধীরে ধীরে আঞ্চলিক, জাতীয় এবং অন্যান্য পর্যায়ের প্রশ্নগুলো সমাধান করার চেষ্টা করো। যখন এভাবে ক্রমানুসারে একটার পর একটা ধাপ সফলতার সাথে অতিক্রম করতে পারবা, তখন তোমার আত্নবিশ্বাস অনেকখানি বেড়ে যাবে। আর যদি কোনো প্রশ্ন সমাধান করতে না পারো, তাহলে কী করবে? তখন তুমি ইন্টারনেট বা ঐ প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট বই ঘেঁটে উত্তর বের করার চেষ্টা করবে। যদি সেখানেও কোনো আশানুরূপ ফল না পাও, তাহলে কৌতুহলী সাইটে গিয়ে প্রশ্নটা লিখে দিতে পারো। এরপর আমরা সবাই মিলে ঐ প্রশ্নকে সার্জারি করার চেষ্টা করবো।
তো, এতক্ষণ প্রচুর কথা বললাম! এভাবে প্রস্তুতি নিলে তুমি শুধু অলিম্পিয়াডেই নয়, বরং জীববিজ্ঞানের বাউন্ডারিতে অনেক ভালো একটা স্থান দখল করতে পারবে। তার মানে এই নয় যে জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে বিজয়ী হতে হলে তোমাকে আমার দেওয়া ইন্সট্রাকশনগুলো ফলো করতেই হবে। আরেকটা বিষয় মনে রাখবে, অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন অফ দ্যা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য নয়, বরং জীববিজ্ঞান শেখার জন্য পড়ো এবং জানো। আশা করি, তুমি অসাধারণ কিছু করে দেখাতে পারবে। শুভ কামনা রইল!
আরও পড়োঃ
জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের নমুনা প্রশ্ন || পর্ব-১
জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের নমুনা প্রশ্ন || পর্ব-২
জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের নমুনা প্রশ্ন। পর্ব-৩
জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
Leave a Reply