ডাইনোসরের ভ্রুণ যখন পাখির ডিমের মতো

ডাইনোসরের ভ্রুণ যখন পাখির ডিমের মতো

বিজ্ঞানীরা নভম্বরের মধ্যবর্তী সময়ে অন্তত ৬৬ মিলিয়ন বছর আগের একটি সংরক্ষিত ডাইনোসর ভ্রূণ আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন, যেটি মুরগির বাচ্চার মতো ডিম থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। জীবাশ্মটি দক্ষিণ চীনের গ্যাঞ্জোতে পাওয়া গিয়েছিল এবং এটি একটি দাঁতবিহীন থেরোপড ডাইনোসর বা ওভিরাপ্টোরোসরের অন্তর্গত, যাকে গবেষকেরা “বেবি ইংলিয়াং” নামে অভিহিত করেছেন।

গবেষণার যৌথ লেখক এবং চায়না ইউনিভার্সিটি অফ জিওসায়েন্সেস (বেইজিং) এর অধ্যাপক লিডা জিং বলেছেন, “ডাইনোসর ভ্রূণটি ইংলিয়াং গ্রুপের পরিচালক  লিয়াং লিউ ২০০০ সালের দিকে পেয়েছিলেন। ২০১০ সালে ইংলিয়াং স্টোন ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম এর কর্মীরা স্টোরেজের মাধ্যমে সাজান এবং নমুনাগুলি আবিষ্কার করেন।“

ডাইনোসরের পুরানো জীবাশ্ম

আইসায়েন্স জার্নালের একটি গবেষণাপত্রের সহ-লেখক ও বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ফিওন ওয়াইসুম মা এএফপিকে বলেছেন, “এটি ইতিহাসে পাওয়া সেরা ডাইনোসর ভ্রূণগুলির মধ্যে একটি”। মা এবং তার সহকর্মীরা দেখতে পান যে বেবি ইংলিয়াং এর মাথা তার শরীরের নীচে ঝুঁকে আছে, পা দু’পাশে এবং পিঠ কুঁচকানো। পুরো ব্যাপারটা এমন একটি ভঙ্গিকে ইঙ্গিত করে যা আগে ডাইনোসরে দেখা যায়নি, তবে এটি আধুনিক পাখির মতো।

পাখিদের মধ্যে এই ঘটনাটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং একে “টাকিং” বলা হয়। ছানারা তাদের মাথা ডান পাখার নিচে ঠেকিয়ে রাখে এবং মাথা স্থির রেখে তাদের ঠোঁট দিয়ে ডিমের খোলস ফাটানোর চেষ্টা করে। যে ভ্রূণগুলি নিজেদেরকে ভাঁজ করতে ব্যর্থ হয়, অসফল ডিম ফুটে তাদের মৃত্যুর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মা বলেছেন, “এটি নির্দেশ করে যে আধুনিক পাখিদের মধ্যে এই ধরনের আচরণ প্রথম তাদের ডাইনোসর পূর্বপুরুষদের মধ্যে বিকশিত হয়েছিল এবং সেখান থেকেই উদ্ভূত হয়েছিল”।

ওভিরাপ্টোরোসরস (যার অর্থ “ডিম চোর টিকটিকি”) ছিল পালকযুক্ত ডাইনোসর, যারা ক্রিটেসিয়াস যুগের শেষের দিকে এশিয়া এবং উত্তর আমেরিকায় বাস করত। তাদের ঠোঁটের আকার এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনশীল ছিল। এদের উচ্চতা সর্বোচ্চ প্রায় ৮ মিটার (২৬ ফুট) পর্যন্ত হতো।

বেবি ইংলিয়াং এর মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত উচ্চতা প্রায় ২৭ সেন্টিমিটার (১০.৬ ইঞ্চি) লম্বা, যেটি ইংলিয়াং স্টোন ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে ১৭ সেন্টিমিটার লম্বা ডিমের ভিতরে রয়েছে। গবেষকদের বিশ্বাস, প্রাণীটি ৬৬ থেকে ৭২ মিলিয়ন বছরের পুরানো। সম্ভবত কোনো কাদার স্তর এই ডিমটাকে সংরক্ষিত রেখেছিল, যা যুগ যুগ ধরে মৃতভোজী প্রাণী থেকে ঐ ডিমকে রক্ষা করেছিল। বেবি ইংলিয়াংকে অন্যান্য থেরোপড, লম্বা-গলাযুক্ত সরোপড ডাইনোসর এবং পাখির ভ্রূণের সাথে তুলনা করে বেশ কিছু বিষয়কে সামনে আনা হয়েছে, যেগুলো জৈব বিবর্তনকে ইঙ্গিত দেয়।

ওভিরাপ্টোরোসরস । ছবিঃ টুইটার

এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিভ ব্রুসেট এক বিবৃতিতে বলেছেন, “ডিমের মধ্যে থাকা এই ডাইনোসরের ভ্রূণটি আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর জীবাশ্মগুলির মধ্যে একটি। এই ছোট্ট প্রসবপূর্ব ডাইনোসরটি দেখতে” ডিমে কুঁচকানো একটি বাচ্চা পাখি” এর মতো, যা প্রমাণ করে যে আজকের পাখিরা  তাদের বৈশিষ্ট্যগুলি ডাইনোসর থেকে পেয়েছে।”

মূল গবেষণা দলটি বেবি ইংলিয়াংকে আরও বিস্তারিতভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য উন্নত স্ক্যানিং কৌশল ব্যবহার করে তার মাথার খুলির হাড় সহ এর সম্পূর্ণ কঙ্কাল চিত্রিত করার আশায় আছেন। কারণ শরীরের অংশ এখনও শতভাগ স্পষ্ট হয়নি। তাই সামনের দিন গুলোতে এই ডাইনোসর নিয়ে কিছু নতুন চমক আসতে চলেছে, যেগুলো হয়ত বা অনেক রহস্য উন্মোচন করে দিবে কিংবা তুলে ধরবে নতুন কোনো প্রশ্ন। 

মূলঃ Perfectly preserved dinosaur embryo was preparing to hatch like a bird এবং Exquisitely preserved embryo found inside fossilized dinosaur egg

ইংরেজিতে কন্টেন্ট রাইটার হয়ে গড়ে তুলতে পারেন নিজের ফ্রিল্যান্স-ক্যারিয়ার।

কীভাবে? দেখুন ফ্রি-মাস্টারক্লাস ভিডিও

তাহসিন আলম উৎস
লিখতে লিখতে শিখতে চাই। বর্তমানে বিজ্ঞান ব্লগের পাশাপাশি সায়েন্টিয়া সোসাইটি, বিজ্ঞান পত্রিকা, হিগজিনো সায়েন্স সোসাইটি এবং বোসন বিজ্ঞান সংঘ এর সাথে যুক্ত আছি। আমি সেই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, যেখানে প্রতিটা সমাজে বিজ্ঞানশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণের জয়ধ্বনি বাজবে। আর এই লক্ষ্যে বিজ্ঞানের একজন সৈনিক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি।