জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে বিভিন্ন ধরণের প্রশ্ন দেখতে পাওয়া যায়। কখনো কখনো সারণিতে তথ্য থাকে এবং সেটার আলোকে প্রশ্নের অপশনগুলো যাচাই করতে হয়। এই ব্লগ পোস্টে আমি এমনই ৩টি প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রশ্ন তিনটি মূলত আচরণবিদ্যা, বায়োসিস্টেম্যাটিক্স ও কোষতত্ত্বের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা।
১. একটি ল্যাবের ৩টি জীবের ব্যাপারে সাধারণ কিছু তথ্য সারণিভুক্ত করা হয়েছে।
A. উইপোঁকার বিপরীত আচরণও জীবজগতে পরিলক্ষিত হয়
B. ল্যাবের কুকুরটির উদ্দীপনায় সাড়া দেওয়াটা সহজাত বৈশিষ্ট্য
C. মৌমাছির প্রজননকার্যে একটি রানী মৌমাছি ও একটি পুরুষ মৌমাছি অংশগ্রহণ করে
D. সারণির মতোই প্রাণিজগতে স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য বজায় থাকায় প্রাণীরা আজও টিকে আছে
সমাধানঃ
A. উইপোকার আচরণটি মূলত আলোর প্রতি সাড়া দিয়ে চলা, যাকে ফটোট্যাক্সিস বলে। যেহেতু, আলোক উৎসের দিকে উইপোকার সরণ ঘটেছে, তাই এটি পজিটিভ ফটোট্যাক্সিস। কিন্তু, যদি কোনো প্রাণী আলোক উৎস বা আলোকিত পরিবেশ থেকে দূরে সরে যায়, তাহলে তাকে নেগেটিভ ফটোট্যাক্সিস বলে। যেমনঃ অন্ধকার জায়গায় লাইট জ্বালালে তেলাপোকা অন্ধকার স্থানের দিকে দৌড় দেয়, যেটি উইপোকার আচরণের সম্পূ্র্ণ উল্টো। সুতরাং, এই অপশনটি True.
B. একটি জীবের সহজাত বৈশিষ্ট্য ঐগুলো, যেগুলো সে জন্ম থেকেই ধারণ করে। কিন্তু, কুকুর জন্ম থেকে কোনো নামের প্রতি সাড়া দেয় না। তবে ধীরে ধীরে একে পোষ মানিয়ে প্রশিক্ষণ দিলে এটি প্রশিক্ষক বা তার মালিক কর্তৃক নির্ধারিত নাম শুনে সাড়া দিতে পারে। অর্থাৎ, এই অপশনটি False.
C. মৌমাছির প্রজননে মুখ্য ভূমিকা পালন করে রানী মৌমাছি। এটি জীবনে একবার বিশেষ প্রক্রিয়ায় (Nuptial flight বা বৈবাহিক উড্ডয়ন) পুরুষ মৌমাছির কাছ থেকে শুক্রাণু সংগ্রহ করে। এই শুক্রাণু ব্যবহার করে বা না করে মৌমাছি নিষিক্ত ও অনিষিক্ত দু’ধরণের ডিম পাড়তে পারে। এরপর অনিষিক্ত ডিম থেকে পুরুষ মৌমাছির এবং নিষিক্ত ডিম থেকে কর্মী ও নতুন রানী মৌমাছির জন্ম হয়। সুতরাং, এই অপশনটি True.
D. সারণিটি প্রাণীদের আচরণের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য ও বৈচিত্র্যকে তুলে ধরেছে, যেটি প্রাণিজগতে হর হামেশাই দেখা যায়। একেক জীব একেক রকম বৈশিষ্ট্য ধারণ করে এবং এই ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রাণীদের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা তৈরি হয়, যা প্রাণীদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখে।
২. সাইফ বিভিন্ন অঞ্চলের প্রাণীদেরকে নিয়ে গবেষণা করছে। সে একটি নাতিশীতোষ্ণ এলাকায় গিয়ে ৩ ধরণের প্রাণী সংগ্রহ করে তাদের ব্যাপারে সাধারণ কিছু তথ্য সারণিভুক্ত করে।
A. X এর দেহে শ্বসনতন্ত্র ও পৌষ্টিকনালি অনুপস্থিত
B. Y জীবটি অন্তঃপরজীবী হিসেবে আমাদের রক্তে বসবাস করে
C. Z উপাঙ্গ ও পুঞ্জাক্ষি বিশিষ্ট
D. প্রাণী তিনটির দেহে নটোকর্ড থাকে
সমাধানঃ
A. নেমাটোডা (Nematoda) পর্বের প্রাণীদের দেহে প্রকৃ্ত সিলোম থাকে না এবং এরা সাধারণত দ্বি-পার্শ্বীয় প্রতিসম। অর্থাৎ, X নেমাটোডা পর্বের প্রাণী। এ পর্বের প্রাণীদের দেহে শ্বসনতন্ত্র না থাকলেও সম্পূর্ণ পৌষ্টিকনালি বিদ্যমান। অর্থাৎ, এই অপশনটি False.
B. নেফ্রিডিয়া (রেচনাঙ্গ) ও সিটা (চলাচলে সহায়তাকারী অংশ) অ্যানেলিডা (Annelida) পর্বের প্রাণীদের বৈশিষ্ট্য। এরা স্বাদু পানি, অগভীর সমুদ্র বা সেঁতসেঁতে মাটিতে বসবাস করে। কিছু প্রজাতি পাথর ও মাটিতে গর্ত খুঁড়ে বসবাস করে। কিন্তু কোনো প্রাণীই আমাদের রক্তে অন্তঃপরজীবী হিসেবে বসবাস করে না। সুতরাং, এই অপশনটি False.
C. আমরা জানি, আর্থ্রোপোডা (Arthropoda) প্রাণিজগতের সবচেয়ে বৃহত্তম পর্ব। এ পর্বের প্রাণীদের দেহে উপাঙ্গ, পুঞ্জাক্ষি ও অ্যান্টেনা থাকে। সুতরাং, Z উপাঙ্গ ও পুঞ্জাক্ষি বিশিষ্ট। অর্থাৎ, এই অপশনটি True.
D. আগের তিনটি অপশনের বর্ণনা থেকে বোঝা গেছে যে নেমাটোডা, অ্যানেলিডা এবং আর্থ্রোপোডা এই ৩ পর্বের তথ্য সারণিভুক্ত হয়েছে। আমরা জানি যে শুধুমাত্র কর্ডাটা (Chordata) পর্বের প্রাণীদের দেহে নটোকর্ড থাকে। তাই প্রাণী ৩টির দেহে নটোকর্ড থাকা অসম্ভব। সুতরাং, এই অপশনটি False.
৩. জুবায়ের উদ্ভিদের কয়েক ধরণের টিস্যুকে তার গবেষণার জন্য স্যাম্পল হিসেবে ব্যবহার করছে। টিস্যুগুলো পাট, নিটাম ও আম থেকে সংগৃহীত। জুবায়ের টিস্যুগুলোর কোষের বৈশিষ্ট্য P, Q ও R শ্রেণির পাশে বসিয়ে একটি সারণি তৈরি করেছে।
A. একাধিক P মিলিত হয়ে রেজিন ক্ষরণ করে
B. Q কোষটি নিটাম থেকে সংগৃহীত
C. R এর নিউক্লিয়াস ছোট ও কোষপ্রাচীর পুরু
D. P ও Q একত্রে পরিবহন কলাগুচ্ছ গঠন করে
সমাধানঃ
A. P কোষের বৈশিষ্ট্যগুলো হলো-
- লিগনিন যুক্ত কোষপ্রাচীর বিদ্যমান
- কোষ গুলো বেশ শক্ত
- পরিণত অবস্থায় মৃত
- কোষটি পাটের
এই বৈশিষ্ট্যগুলো সরাসরি স্কেলরেনকাইমা (Sclerenchyma) টিস্যুর কোষ গুলোর বৈশিষ্ট্যের সাথে হুবহু মিলে যায়। এই টিস্যুর মূল কাজ হলো দৃঢ়তা প্রদান ও সঞ্চয়। আর ক্ষরণের কাজটি করে থাকে নিঃস্রাবী টিস্যু (Secretory Tissue)। একাধিক তরুক্ষীর কোষ (নিঃস্রাবী টিস্যুর কোষ) মিলিত হয়ে রেজিন ক্ষরণ করেন। এক্ষেত্রে P এর কোনো ভূমিকা নেই। অর্থাৎ, এই অপশনটি False.
B. আমরা জানি, সিভকোষে নিউক্লিয়াস না থাকায় সঙ্গীকোষ (Companion Cell) ওর কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ, Q সঙ্গীকোষ। ফার্ণ এবং নগ্নবীজী উদ্ভিদের ফ্লোয়েম টিস্যুতে সঙ্গীকোষ থাকে না। সুতরাং, নিটাম যেহেতু নগ্নবীজী উদ্ভিদ, তাই Q কোষটি নিটাম থেকে সংগৃহীত নয়। অতএব, এই অপশনটি False.
C. R বিভাজন ক্ষমতাসম্পন্ন, যারা মানে দাঁড়ায় এটি ভাজক টিস্যুর কোষ। আমরা জানি যে এ ধরণের কোষগুলোর নিউক্লিয়াস বড় এবং কোষপ্রাচীর সাধারণত সেলুলোজ নির্মিত হওয়ায় তা পাতলা। মানে R এর নিউক্লিয়াস ছোট এবং কোষপ্রাচীর পুরু নয়। সুতরাং, এই অপশনটি False.
D. পূর্বের অপশনগুলো থেকে বোঝা গেছে যে P স্কেলরেনকাইমার কোষ এবং Q ফ্লোয়েমের সঙ্গীকোষ। এরা দু’জনে মিলে পরিবহন কলাগুচ্ছ বা ভাস্কুলার বান্ডল গঠন করবে না, কারণ জাইলেম ও ফ্লোয়েম একত্রে অবস্থান করে ভাস্কুলার বান্ডল গঠন করে। অর্থাৎ, এই অপশনটি False.
এটা নিয়ে নমুনা প্রশ্ন বিষয়ক ৩টা ব্লগ পোস্ট লিখে ফেললাম। আশা করি, এগুলো পড়ে তোমরা উপকৃত হতে পেরেছো। হয়ত বা এটাই শেষ পর্ব। আরও কি এধরণের প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করা উচিৎ?
Leave a Reply