ধেয়ে আসছে সৌরজগতের সবচেয়ে বড় ধুমকেতু


লিখেছেন

লেখাটি , , বিভাগে প্রকাশিত

২০ শে অক্টোবর, ২০১৪ সালে ভোর হবার কিছু আগে চিলির আটাকামা মরুভূমিতে অবস্থিত একটি টেলস্কোপ রাতের আকাশের একটি ছবি তুলেছিল। ছবি প্রসেস করার সেই ছবিতে দেখা যায় যে সূর্যের আলো বেশ বড় কোন কিছুর উপরে পরে প্রতিফলিত হচ্ছে এই প্রতিফলিত আলো কোথা থেকে এলো গবেষকরা তা বোঝার চেষ্টা করছিলো। আর প্রতিফলিত আলোর সেই অদ্ভুত বিন্দুটি যে একটি বিশাল আদিম ধূমকেতু তা চিহ্নিত করতে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের প্রায় সাত বছর সময় লেগেছে। 

এই ধুমকেতুটি এত বড় যে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা পূর্বে এটিকে একটি বামন গ্রহ বলে ভুল করেছিলেন। সম্ভবত আধুনিক টেলিস্কোপ দিয়ে পর্যবেক্ষন করা এটি সবচেয়ে বড় ধুমকেতু। ধুমকেতুটির নাম বার্নার্ডিনেলি-বার্নস্টাইন (C/2014 UN271)। 

An image taken by the Dark Energy Survey shows Comet Bernardinelli-Bernstein in October 2017.

ডার্ক এনার্জি সার্ভে (DES) দ্বারা ২০১৪ সালে ২৯.৩ এইউ দূরত্বে প্রথম পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল। আগস্ট ২০১৩ থেকে জানুয়ারী ২০১৯ পর্যন্ত এই ডার্ক প্রকল্প চলেছিল এই ডিইএস প্রকল্পের আওতায় আকাশের ৫০০০ বর্গ-ডিগ্রি এলাকার ম্যাপিং করা হয়। এই ম্যাপ তৈরী করার সময় তারা নেপচুনের কক্ষপথের বাইরে ৮০০ টিরও বেশী অজানা বস্তু আবিষ্কার করেন বার্নার্ডিনেলি-বার্নস্টেইন ধূমকেতু ছিল সেই অজানা বস্তুর মধ্যে একটি। পরবর্তীতে জ্যোতির্বিজ্ঞানী পেড্রো বার্নার্ডিনেলি এবং গ্যারি বার্নস্টেইন চিলির সেরো টোলোলো ইন্টার-আমেরিকান অবজারভেটরিতে ডার্ক এনার্জি সার্ভে দ্বারা সংগৃহীত আর্কাইভাল ডেটাতে এই ধুমকেতুটি খুঁজে পান।এবং তাদের নামে ধুমকেতুটির নামকরন করা হয়। 

আবিষ্কারের পর থেকে, বস্তুটি স্থল-ভিত্তিক টেলিস্কোপ এবং হাবলের মতো মহাকাশ-ভিত্তিক টেলিস্কোপ সহ বিস্তৃত যন্ত্র ব্যবহার করে গবেষনা এবং পর্যবেক্ষন করা হয়েছে। এটি এখনও অনেক দূরে এবং দেখতে পাওয়া কঠিন, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ধূমকেতুর বরফের নিউক্লিয়াসের আনুমানিক ব্যাস প্রায় ৮৫ মাইল (১৩৭ কিঃমিঃ) জুড়ে বিস্তৃত। এবং এটি গড় ধূমকেতু কোরের চেয়ে প্রায় ৫০-গুণ বড়।এটি এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত বৃহত্তম ধূমকেতু বলে মনে করা হয়। পূর্বে ধূমকেতুর সবচেয়ে বড় নিউক্লিয়াস ছিলো C/2002 VQ94,(লিনিয়ার) যা ২–২ সালে দেখা গিয়েছিল এবং অনুমান করা হয়েছিল এই ধুমকেতুর নিউক্লিয়াসটি প্রায় ৬০ মাইল (৯৬ কিঃমিঃ) জুড়ে বিস্তৃত। 

ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস (ইউসিএলএ) এর গ্রহ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ডেভিড জেউইট বলেন “আমরা সবসময় সন্দেহ করেছি যে এই ধূমকেতুটির আকার অনেক বড় হতে হবে কারণ এটি এত দূরত্বে থেকেও এত বড় এবং উজ্জ্বল (বিশাল আকারের অনুমানটি কতটা সূর্যালোক প্রতিফলিত করে তার উপর ভিত্তি করে অনুমান করা হয়েছে)। তথ্য বিশ্লেষণে জানা গেছে যে ধুমকেতুটি বর্তমানে সূর্য থেকে ২ বিলিয়ন মাইল (৩.২ বিলিয়ন কিমি) দূরে, উর্ট মেঘের মধ্য দিয়ে দ্রুত গতিতে প্রায় ২২,০০০ প্রতি ঘন্টায় (৩৫,৪০৫ কিঃমিঃ) ছুটে চলছে।

শিল্পির চোখে বার্নার্ডিনেলি-বার্নস্টাইন

বরফের বস্তুটির তাপমাত্রা প্রায় -৩৫৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট (-২১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বর্তমানে এই ধূমকেতুটি নিয়ে আরও বিশদ গবেষনা করেছেন এবং সূর্যের দিকে এর যাত্রাপথ সম্পর্কে নতুন করে গননা করছেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, বর্তমান গতিতে, ধূমকেতুটি তার বর্তমান অবস্থান থেকে নেপচুনের কক্ষপথের ঠিক পাশ দিয়ে ২০৩১ সালের ২৩ শে জানুয়ারী শনির কক্ষপথের কাছে পৌছাবে। 

বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে ধূমকেতুটি সূর্যের ১০.৯৭ AU এর মধ্যে, এবং শনির কক্ষপথের বাইরে গ্রহটির পাশ দিয়ে যাবে (অ্যাস্ট্রোনোমিকাল ইউনিট বলতে পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যকার দূরত্ব একক হিসেবে ধরা হয়)। ধুমকেতুটি প্লুটোর চাঁদ চ্যারনের মতো উজ্জ্বল হবে, এর মানে হল যে মানুষ টেলিস্কোপের মতো সরঞ্জাম ব্যবহার না করে ধূমকেতু দেখতে পাবে না। গবেষকরা ধূমকেতুর গতিপথ গণনা করে দেখতে পান ধূমকেতুটি শেষ ৩.৫ মিলিয়ন বছর আগে, সূর্যের ১৮ AU এর মধ্যে এসেছিল। 

This diagram compares the size of the icy, solid nucleus of comet C/2014 UN271 (Bernardinelli-Bernstein) to several other comets. Image credit: NASA / ESA / Zena Levy, STScI.
বার্নার্ডিনেলি-বার্নস্টাইন ধূমকেতুর সাথে অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ধূমকেতুর তুলনা

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেছেন এটি একটি নতুন ধূমকেতু এই অর্থে যে ১৮ AU- এর কাছাকাছি আগে কোন ধুমকেতু আসার প্রমাণ নেই। বিশাল ধূমকেতুটি নিয়ে গবেষনার জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রচুর সময় পাবেন এটি পৃথিবীর আরও কাছাকাছি আসতে এক দশক সময় নিবে। শিলাটিকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বিজ্ঞানীরা প্রাথমিক সৌরজগতের রাসায়নিক গঠন সম্পর্কে আরও কিছুটা বুঝতে সাহায্য করতে পারে। কারণ উর্ট মেঘের গভীরে থাকা ধূমকেতুগুলি তুলনামূলকভাবে অপরিবর্তিত বলে মনে করা হয়, কারণ তারা কোটি কোটি বছর ধরে সূর্য থেকে দূরে আছে।

এই ধরনের বেশিরভাগ দীর্ঘমেয়াদী ধূমকেতু উর্ট ক্লাউড থেকে আসে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন ধূমকেতু বার্নার্ডিনেলি-বার্নস্টেইন আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে দূরবর্তী অঞ্চল উর্ট মেঘ থেকে ভ্রমণ করছে যেখানে বিপুল সংখ্যক ধূমকেতু বাস করে। এটা মনে করা হয় যে এই বিশাল, মেঘের মধ্যে থাকা ধূমকেতুগুলি সূর্যের কাছাকাছি তৈরি হয়েছিল কিন্তু আমাদের সৌরজগতের নবজাত দৈত্যাকার গ্রহগুলির সাথে মহাকর্ষীয় মিথস্ক্রিয়া দ্বারা পরবর্তীতে অনেক দূরে সরে গিয়েছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে এই আকারের আরো অনেক অনাবিষ্কৃত ধূমকেতু উর্ট ক্লাউডে অপেক্ষা করছে। 

তথ্যসুত্রঃ 

The ‘megacomet’ Bernardinelli-Bernstein is the find of a decade. Here’s the discovery explained. | Space

Largest comet ever observed bumps Hale-Bopp from pedestal | Live Science

লেখাটি 170-বার পড়া হয়েছে।


নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান? হোস্টিং ও ডোমেইন কেনার জন্য Hostinger ব্যবহার করুন ৭৫% পর্যন্ত ছাড়ে।

আলোচনা

Leave a Reply

ই-মেইল নিউজলেটার

বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবর সম্পর্কে আপডেট পেতে চান?

আমরা প্রতি মাসে ইমেইল নিউজলেটার পাঠাবো। পাক্ষিক ভিত্তিতে পাঠানো এই নিউজলেটারে বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবরাখবর থাকবে। এছাড়া বিজ্ঞান ব্লগে কি কি লেখা আসলো, কি কি কর্মযজ্ঞ চলছে, সেটার খবরও থাকবে।







Loading