হ্যালো, সবার কী অবস্থা? আগের একটি ব্লগ পোস্টে আমি জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতির ব্যাপারে একটি সম্পূর্ণ গাইডলাইন লিখেছিলাম। এরপর অনেকের অনুরোধে নমুনা প্রশ্ন নিয়েও কয়েকটি পর্বে বিশেষ আলোচনা করেছিলাম। সবার কাছ থেকে একদিকে যেমন পজিটিভ ফিডব্যাক পাচ্ছিলাম, তেমনি শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়ে একটা ছোট্ট আর্টিকেল লেখারও অনুরোধ পেয়েছিলাম। তো, আজকের সব আলোচনা হবে জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতিপর্বের উপসংহারের আগের ব্যাপারগুলো নিয়ে।
ঝালাই করো
গাইডলাইনে আমি বারবার মৌলিক জীববিজ্ঞানের উপর গুরুত্ব দিয়ে কথা বলেছিলাম। যদি মৌলিক বিষয়গুলো (কোষের কার্যাবলি, জিন-অ্যালিল, অঙ্গসংস্থানিক বৈশিষ্ট্য, সিমবায়োসিস ইত্যাদি) ঠিকঠাক মতো, বুঝে পড়া যায় তাহলে অর্ধেক কাজই শেষ হয়ে যায়। আর প্রস্তুতি পর্বের শেষ দিকে এসেও এসব বিষয়ের উপর জোর দিতে হয়। আঞ্চলিক পর্যায়ে সাধারণত এসব টপিক নিয়েই প্রশ্ন করা হয় আর জাতীয় পর্যায়ে এগুলোকে কিছুটা টাচ করে প্রশ্ন তৈরি করা হয়ে থাকে। তাই যেসব বিষয় পড়লে একইসাথে আরও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানা যায়, ঐসব টপিক গুরুত্বের সাথে পড়ে নিজেকে ঝালাই করে নিতে হবে। তবে না বুঝে মুখস্ত করাই যাবে না। এখানে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত!
একটু লিখতে পারো
অনেক সময় কঠিন বিষয়গুলোকে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। আবার বংশগতির ক্ষেত্রে কার্তেসীয় গুণজের মতো বংশ পরম্পরায় জিন ট্রান্সফারের বিষয়টিও প্রাক্টিস করার দরকার পড়ে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি হলো কলম চালানো। মনে করো, তুমি জীবের শ্রেণিবিন্যাস ভিত্তিক বৈশিষ্ট্যগুলো মনে রাখতে পারছ না। এক্ষেত্রে তুমি নিজ হাতে ছক তৈরি করে বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে ঐগুলো লিখতে পারো। এতে করে তোমার মস্তিষ্ক ঐ বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়ে কাজ করার মতো প্রচুর স্কোপ পাবে। এতে করে তুমি সেগুলোকে খুব আয়ত্ত্বে আনতে পারবে।
আবার থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত বাবা ও সুস্থ মায়ের সন্তানেরা কি থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হবে কিনা এই টাইপের বিষয়গুলোও টুকটাক প্রাক্টিস করতে পারো। আসলে কলম চালানোর ফায়দা হলো নিজেকে যাচাই করা আর আত্মবিশ্বাস বৃ্দ্ধি। তাই লেখার চেষ্টা করবে, যাতে করে শেখা জিনিসটা মস্তিষ্কে শক্ত অবস্থান নেয়।
যদি থাকে ঘাটতি
এমন হতে পারে যে কোনো টপিক হয়ত বা তোমার ঠিকমতো পড়া হয়নি কিংবা আরেকটু মেহনত করলে বেশি ফায়দা পাওয়া যেতো। সেক্ষেত্রে এ পর্যায়ে এসে সেই অংশটুকু আবার পড়বে। ঘাটতি থাকা বা কঠিন অংশগুলো বুঝতে অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। ঐ সময়ে তুমি জীববিজ্ঞানের শিক্ষকের সাথে সমস্যাটা নিয়ে আলোচনা করতে পারো। এছাড়াও বিজ্ঞান ব্লগ ফোরাম, Bangladesh Biology Olympiad, ব্যাঙের ছাতার বিজ্ঞান, ট্যাকিয়ন-বিজ্ঞান গ্রুপ, বিজ্ঞান পত্রিকা ফোরাম, থিংক বাংলা ফেসবুক গ্রুপে কিংবা প্রশ্নোত্তরে বিজ্ঞান, সায়েন্সবী নামের প্রশ্নোত্তর সাইট দু’টিতে প্রশ্ন করতে পারো। এভাবে ধীরে ধীরে সমস্যা সমাধান কিংবা প্রাক্টিস করতে করতে পুরো ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে। একটা বিশেষ পরামর্শ থাকবে, কখনোই কোনো পর্যায়ে ঘাটতি রেখে, কম শিখে পরের ধাপে পা দিবে না।
এগিয়ে থাকতে হলে
তুমি যদি নিজের আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে নিজেকে সবার চেয়ে একটু এগিয়ে রাখতে চাও, তবে একটা কাজ করতে পারো। বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য ম্যাগাজিন বা ওয়েব জার্নালের জীববিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধগুলো পড়তে পারো। এ ব্যাপারে আমি মূল গাইডলাইনেও বেশ কিছু কথা লিখেছিলাম। যাহোক, যেহেতু এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির কথা বলছি, তাই এ পর্যায়ে এসে তুমি সহজভাবে প্রস্তুতি নিবে। যদি প্রস্তুতিপর্বের কোথাও তুমি জার্নাল বা ম্যাগাজিন না পড়ে থাকো, তাহলে শেষ দিকে এসে এই কাজটা করতে খানিকটা বিরক্তিও লাগতে পারে। একারণে তুমি যে বিষয়গুলো ঝালাই করেছিলে, সেগুলোর উপর যেসব প্রবন্ধ খুঁজে পাবে, সেগুলোই পড়বে। এতে করে অলিম্পিয়াডের প্রশ্নগুলোর মুখোমুখি হওয়ার সময় এক্সট্রা কনফিডেন্স পাওয়া যাবে। যারা জাতীয় জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে সেরা পার্ফরমেন্স দেখায়, তাদের অধিকাংশই সাধারণত এই পদ্ধতি অবলম্বন করে। তবে জোর করে অতিরিক্ত চাপ নিয়ে কোনো ম্যাগাজিন বা জার্নাল পড়ার দরকার নেই, যতটুকু পড়বে, স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে পড়বে। তা না হলে লাভের বদলে লোকসান হবে।
প্রশ্নের সার্জারি
নিজেকে যাচাই করার একমাত্র পন্থা হলো প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া এবং সমস্যা সমাধান করা। কিন্তু, এটা কীভাবে করবে? তোমাকে যেটা করতে হবে, সেটা হলো জীববিজ্ঞান বিষয় যত প্রশ্ন সামনে পাবা, সবগুলো বুঝে-শুনে সমাধান করার চেষ্টা করবে। পাঠ্যবইয়ের অনুশীলনী দিয়ে শুরু করতে পারো। অনলাইনেও বেশ কিছু প্রশ্ন পাবে, সেগুলোও সমাধান করতে পারো। আর অলিম্পিয়াডের প্রশ্ন তো আছেই!

শেষ মুহুর্তে এসে তোমরা বন্ধুরা নিজেরা একে অপরকে প্রশ্ন করতে পারো। এতে করে Problem Solving Skill তৈরি হবে, যেটা তোমাকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। যদি কোনো প্রশ্ন সমাধান না করতে পারো, তাহলে বিজ্ঞান ব্লগের প্রশ্নোত্তর সাইট কিংবা সায়েন্সবী এর ওয়েবসাইটে গিয়ে টুক করে প্রশ্নটা করবা। এরপর কেউ না কেউ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেই।
শেষ সপ্তাহ
অলিম্পিয়াডের আর মাত্র ১ সপ্তাহ বাকি! এমন সময়ে কী করবে? অনেককেই দেখেছি যে এই সময়টাতে অনেক কিছু নতুন করে মুখস্ত করা শুরু করে, নতুন বই পড়ে-আরও কত কী! আমি মনে করি এই সময়টা নতুন কোনো কিছু ইনপুট দেওয়ার জন্য ব্যয় করা ঠিক নয়। কারণ শেষ দিকে এসে নতুন জিনিস সহজে নৌকায় ওঠানো যায় না, অনেক সময় নতুন জিনিসের ভারে পুরানো বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হারিয়ে যায়। আর এতো চাপ নেওয়ার কী দরকার? মুক্ত জ্ঞানচর্চার জন্যই তো অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়। তাই এতো প্যারা নিয়ে পাগল দওয়ার দরকার নেই। সবকিছু স্বাচ্ছন্দ্যে করবে। Simplicity is the best.
পরিসমাপ্তি
তো, এটাই! আশা করি, শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়ে এই ব্লগ পোস্টটি তোমাকে সহায়তা করবে। আমি তোমাদের অনুরোধ রাখতে পেরেছি। আজ এ পর্যন্তই। খুব শীঘ্রই নতুন কিছু নিয়ে আসব। ততদিন জীববিজ্ঞান নিয়ে ধ্যান করতে থাকো। আর যদি এই লেখাটি ভালো লাগে, তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলো না কিন্তু!
Leave a Reply to রহমাতুল্লাহ আল আরাবীCancel reply